প্রসবের পরেও দেখাচ্ছে গর্ভবতী? পেটের মেদ চটপট কমাতে কার্যকরী টোটকা!

প্রসবের পরেও দেখাচ্ছে গর্ভবতী? পেটের মেদ চটপট কমাতে কার্যকরী টোটকা!

ছ’সপ্তাহ আগে উজানি আর সৌরভের ছোট্ট পরিবারে এক নতুন সদস্য এসেছেন। সে যখন ছোট ছোট হাত-পা নাড়ে, উজানির দারুণ আনন্দ হয়। সৌরভই ওদের দু’জনের খেয়াল রাখে। দীর্ঘ দশ মাস পেটের ভিতর খুদেটার দুষ্টুমি সহ্য করেছে উজানি। গর্ভাবস্থায় যে বিধিনিষেধগুলো ছিল, এখন তার অনেকগুলোই নেই। এটা ভেবেও আনন্দ পাচ্ছে উজানি। তবে গত একবছরে খুব মুটিয়ে গিয়েছে ও। এই, ইয়াব্বড় হয়েছে পেটখানি। প্রসবের পরেও দেখলে মনে হচ্ছে, এখনও ৫ মাস যেন! (Home Remedies for Flat Tummy after Pregnancy)

দেড় বছর আগেও এদিকে ওর ফিগার দেখে রীতিমতো ঈর্ষা হত আর পাঁচজনের। খুদেটার দেখভাল করতে করতেই পুরনো সেই ফিগারেই এখন ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে উজানি (Peter Med Komanor Upay)। মনে মনে এটা স্থির করার পর ও চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করল। তিনিই বুঝিয়ে দিলেন ডেলিভারির পর পেটের অতিরিক্ত মেদ বা ফ্যাট কী ভাবে কমানো যায়।

অতিরিক্ত ফ্যাট কমাতে হলে প্রথমেই খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনতে হবে (Home Remedies to Reduce Belly Fat)। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সময় খাদ্যতালিকায় এমন খাদ্য রাখতে হবে যা একই সঙ্গে পুষ্টিকর ও পেটের মেদ কমাতেও সাহায্য করে।

 

গর্ভাবস্থার পর পেটের মেদ কমানোর ঘরোয়া, সহজ উপায় (Best Home Remedies To Get A Flat Tummy After Pregnancy)

#1. মধু ও লেবু: পেটের বাড়তি চর্বি বা মেদ কমানোর পরিকল্পনা যখন করছেন, ডায়েটের তালিকায় থাকতেই হবে মধু আর লেবু (Honey and Lemon)। স্বাদের পাশপাশি গুণেও এরা অতুলনীয়। মধু ও লেবুর ডিটক্স করার ক্ষমতা ফ্যাট কমাতে আদর্শ। সকালের ঘুম ভাঙলে অল্প গরম জলে লেবু ও মধু মিশিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা (Home Remedies to Help You Lose Belly Fat )। তবে এটি খাওয়ার আধ ঘণ্টা আগে ও পরে কোনও কিছু খাওয়া উচিত নয়।

#2. আপেল: ‘অ্যান অ্যাপেল আ ডে, কিপস্ দ্য ডক্টর অ্যাওয়ে’। এই কথাটা পেটের মেদ কমানোর ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। সন্তান হওয়ার পর ফলের ডায়েটে রাখুন আপেল। আপেলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পেকটিন, যা ফ্যাট বার্ন করতে সাহায্য করে। এছাড়াও আপেল ফাইবার জাতীয় খাবার হওয়ায় হজমের প্রক্রিয়াকে ধীর করে অনেকক্ষণ পেট ভর্তি রাখে‌।

#3. গ্ৰিন টি: সন্তান হওয়ার পর পেটের চবি ঝরানোর কথা উঠলেই যার কথা সবার আগে মনে পড়ে, তা হল গ্ৰিন টি (Green Tea)। ডায়েটিশিয়ানরাও ফ্যাট কমাতে গ্ৰিন টি খাওয়ার উপর জোর দেন (Belly Fat Komanor Tips)। গ্ৰিন টি-তে রয়েছে ক্যাফিন আর ক্যাটাকম নামক একটি ফ্ল্যাভিনয়েড, যা আসলে একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই দুই উপাদান শরীরের মেটাবলিজম বাড়িয়ে দেয়। এই বেড়ে যাওয়া মেটাবলিজমই শরীরের পেটের অতিরিক্ত ফ্যাট পোড়াতে সাহায্য করে।

#4. ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার: শুধু পেট কেন, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার সারা শরীরের ফ্যাট কমানোর পক্ষেই খুব উপকারী। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফাইবার সহজে হজমযোগ্য খাবার নয়। আর এই কারণেই এটি অনেকক্ষণ পেট ভর্তি রাখে। ফাইবার (Fiber Rich Food) শরীরের মেটাবলিজমকে বাড়িয়ে দেয়, যা ফ্যাট পুড়তে সাহায্য করে (Bhuri Komanor Tips)। পাশাপাশি এটি শরীরে ক্যালোরি শোষণও কমিয়ে দেয়। তবে ফ্যাট ঝরাতে উদ্ভিজ্জ ফাইবার বেশি উপকারী।

#5. জল খান: মা যদি শিশুকে স্তন্যপান করান, তবে বারবার জল তেষ্টা পায়। তেষ্টা মেটানো ছাড়াও জল পেটের বাড়তি মেদ বা ফ্যাট কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। ফ্যাটের কারণে শরীরে জমা টক্সিনও পরিষ্কার করে দেয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ফ্যাট কমাতে শরীরকে ডিটক্স করা খুব প্রয়োজন। তাছাড়া গর্ভাবস্থার পর পর শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ ফ্লুইড বেরিয়ে যায়। সেই ঘাটতি মেটাতেও জলই ভরসা (Stay Hydrated)।

#6. স্বাস্থ্যকর প্রোটিন: স্বাস্থ্যকর প্রোটিন শিশু ও মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ফ্যাট কমাতেও এর ভূমিকা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের কথায়, স্বাস্থ্যকর ও উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার (Healthy Protein) শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। এই বর্ধিত মেটাবলিজম ফ্যাট ঝরাতে সাহায্য করে। তাছাড়া উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকে। ফলে পেটের আশপাশে অতিরিক্ত ফ্যাট আর জমে থাকে না‌ (How to Get A Flat Stomach After Pregnancy)।

#7. কারিপাতা ও রসুন: ফ্যাট কমানোর ডায়েট চার্টে এদের নাম সাধারণত শোনা যায় না। তবে অনেক চিকিৎসকই এই দুটো একসঙ্গে খাওয়ার পরামর্শ দেন। শরীরকে ডিটক্স করতে কারিপাতার তুলনা মেলা ভার (Curry Leaves And Garlic)। আবার দুই কোয়া রসুন চিবিয়ে লেবুজল খেলে ফ্যাট বার্নিং খুব তাড়াতাড়ি হয়।

#8. কম খান তবে বারেবারে খান: মা হওয়ার পর পেটের চর্বি ও বাড়তি ওজন কমানোর মূল চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে এই কায়দায় (Toning Your Tummy After Pregnancy)। প্রত্যেক ডায়েটিশিয়ানই এই পরামর্শ দেন। সারাদিনে তিন-চারটে মিল-এ খাবার খাওয়ার বদলে সাত আটটা মিলে পুরো খাবারটা ভাগ করে নিন। দু’ঘন্টা অন্তর অল্প পরিমাণে খেয়ে পেট ভর্তি রাখুন।

 

আরও পড়ুন: প্রেগন্যান্সির পরে বাড়তি ওজন চটজলদি কমাবেন কীভাবে? রইল সহজ এবং নিরাপদ উপায়

 

ওজন কমাতে শুধু খাওয়াদাওয়ায় বিধিনিষেধ মেনে চললেই যথেষ্ট নয়। দৈনন্দিন জীবনেও আনতে হবে কিছু পরিবর্তন। ডায়েট চার্ট দেওয়ার পাশাপাশি উজানিকে সেগুলোই বুঝিয়ে দিলেন চিকিৎসক।

 

পেটের মেদ ঝরাতে বদল আনুন জীবনযাপনেও (Change in Lifestyle to Burn Belly Fat)

  • স্তন্যপান: শুনলে অবাক হতে পারেন। স্তন্যপানের সঙ্গে রোগা হওয়ার কী সম্পর্ক! বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্পর্ক রয়েছে। নিয়মিত স্তন্যপান জরায়ুকে সংকুচিত হতে সাহায্য করে। শুধু চর্বি নয়, মা হওয়ার পর জরায়ুর বেড়ে যাওয়ার কারণেও আপনার পেটের আকার বেড়ে যায়। জরায়ুকে আগের আকারে ফিরিয়ে আনতে স্তন্যপান উপকারী। (Tips for Getting a Flat Stomach After Having a Baby ) এছাড়াও স্তন্যপান করালে দিনে অন্তত ৪০০ ক্যালোরি বার্ন হবেই।

 

  • খাওয়ার সময় এগিয়ে আনুন: আর রাত করে খাওয়া নয়, বরং সাতটা-আটটার সময় রাতের খাবার সেরে ফেলুন। রাতে তাড়াতাড়ি খাবার খেলে শরীরের মেটাবলিজম যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়, যা পেটের মেদ ঝরাতে মুখ্য ভূমিকা নেয়।

 

  • হাঁটাচলা ও হালকা কাজ: গর্ভাবস্থায় পরিশ্রম কমে যায়। তাই পেটে চর্বি জমতে থাকে। মা হওয়ার পর তাই একটু হেঁটেচলে বেড়ানো ও হালকা কাজকর্ম করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা (How to Reduce Belly Fat after Delivery at Home)। হালকা কাজকর্ম হিসেবে শিশুর ডায়পার পাল্টানো, স্নান করানো ইত্যাদি করা যেতে পারে। প্রথম প্রথম হাঁটাচলার পরিমাণ একদম অল্প হওয়া উচিত‌। হাঁটাচলা ও এই হালকা কাজগুলোর মাধ্যমেই শরীরকে আবার আগের ফিগারে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

 

  • ব্যায়াম: পেটের মেদ ঝরাতে ব্যয়ামের থেকে উপকারী আর কিছুই নয়। অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় ব্যায়ামে শরীরের মেটাবলিজম অনেকটাই বৃদ্ধি পায়। যা অতিরিক্ত ক্যালোরি ঝরিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। তবে মা হওয়ার পর যে কোনও ব্যায়াম নিরাপদ নয়। বরং কিছু নির্দিষ্ট ব্যায়ামই এই অবস্থায় করা সম্ভব (Exercise to Reduce Belly After Delivery)। কোন কোন ব্যায়াম এই অবস্থায় করা সম্ভব, তা নিয়ে বিশদে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।‌

 

  • স্ট্রেস কমান: মা হওয়ার পর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল স্ট্রেস লেভেল কমানো। সন্তানের প্রতি মায়ের অসংখ্য দায়িত্ব স্ট্রেস লেভেল বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পেটে চর্ব জমা ও সর্বোপরি ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে এই বাড়তি স্ট্রেসের সম্পর্ক রয়েছে। তাই নিজের পুরোনো হবিগুলো নিয়ে সময় কাটান। এতে স্ট্রেস লেভেল কমবে।

 

চিকিৎসকের কাছ থেকে ফ্যাট ঝরানোর উপায়গুলো তো জানা গেল। তবে মা হওয়ার পরপরই কি এই উপায়গুলো অবলম্বন করা যায়? বিশেষজ্ঞদের কথায় কিছু ক্ষেত্রে একেবারেই উচিত নয়।

 

পেটের মেদ ঝরাতে তাড়াহুড়ো নয়, মাথায় রাখুন কিছু কথা (Some Tips to Remember)

  • সিজারিয়ান ডেলিভারি (Cesarean Delivery): সিজারিয়ান ডেলিভারি হলে ক্ষত সম্পূর্ণ শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বাইরের ক্ষত শুকোলেও অনেক সময় ভিতরের ক্ষত শুকোতে তুলনামূলকভাবে বেশি সময় লাগে। তাই চিকিৎসকের গ্ৰিন সিগনাল না-পাওয়া পর্যন্ত পেটের ফ্যাট ঝরানোর কথা না-ভাবাই ভালো।

 

  • ব্যায়াম: মা হওয়ার পরে পরেই পেলভিক অঙ্গগুলো যথেষ্ট দুর্বল থাকে। এই অবস্থায় ব্যায়াম করলে পেলভিক অঙ্গগুলির ক্ষতি হতে পারে। চিকিৎসকরা মা হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর কিছু নির্দিষ্ট ব্যায়াম (Exercise) করার পরামর্শ দেন। পেটের মেদ কমাতে (Reduce Tummy After Delivery) সেগুলোর উপরেই ভরসা রাখা উচিত।

 

  • ডায়েট: পেটের বাড়তি ফ্যাট ঝরানোর পরিকল্পনায় ডায়েট (Diet) থেকে মনমতো খাবার বাদ দিলে চলবে না। শিশুর পুষ্টির জন্য সেই খাবার গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তাই ডায়েট চার্টে কী কী বদল আনা দরকার তা নিয়ে আলোচনা করুন চিকিৎসকের সঙ্গে।

 

উজানি বাড়ি ফিরে সেদিন থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা শুরু করলো। মাত্র কয়েকমাসের মধ্যেই ও আবার আগের উজানি। খুদেটাকে দেখতে এসে সব বন্ধুই ওর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। উজানি যেমন সন্তানকে সামলাচ্ছে, তেমনই যত্ন নিচ্ছে নিজেরও। দেখে বোঝার উপায়ই নেই ও এখন এক সন্তানের মা! (Tips for Flat Tummy After Pregnancy)

 

আরও পড়ুন: প্রসবের পরে কী কী বা কী ধরনের খাবার খেতেই হবে নতুন মাকে, হদিস থাকল এখানে!

 

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

 

null

null