লিসার ফেসবুক প্রোফাইলে এতদিন দু’জনের ছবি ছিল। ওর আর প্রসূনের। গত দু’দিন আগে সেখানে জায়গা করে নিয়েছে ওদের দু’জনের প্রথম সন্তান। অসংখ্য অভিনন্দন আর শুভেচ্ছায় ওর ওয়াল ভেসে যাচ্ছে। প্রথম মা হওয়ার অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে দারুণ। স্বাভাবিকভাবে ওর মনেও আনন্দের জোয়ার। তবে মা হতে যে কি পরিমাণ কষ্ট, তা ও হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। (Home Remedies For C-Section Scars)
ছোট্ট পিকুর সিজারিয়ান ডেলিভারি হয়েছে। চিকিৎসক বলেই দিয়েছেন সিজারের ব্যথা অন্তত দু’মাস থাকবে। লিসা নিজেও সিজারিয়ান শিশু ছিল। লিসার মাও ওকে এই সময় রোদে বেরোতে নিষেধ করেছেন। বেশি চলাফেরাও বারণ। ওর মনে যদিও অন্য প্রশ্ন। সিজারের ব্যথা কমে গেলেও সিজারের দাগ কতদিনে কমবে? (Natural C-section Recovery Tips ) পরের বার চিকিৎসকের কাছে চেকআপ করাতে গিয়ে ও এই প্রশ্নটাই তুললো। তখন চিকিৎসকই বিস্তারিত বুঝিয়ে দিলেন দাগ মিলিয়ে ফেলতে কী কী করা উচিত।
ডেলিভারির পর সিজারের দাগ দূর করতে বিশেষজ্ঞরা নানা চিকিৎসার কথা বলে থাকেন। এর মধ্যে একমাত্র মাসাজই বাড়িতে করা যায়। (How to Treat Your C-Section Scars At Home) তবে মাসাজের আগে মাথায় রাখতে হবে চিকিৎসকের বেশ কিছু পরামর্শ। কখন করবেন ও কীভাবে করবেন তা এক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
সিজারিয়ান ডেলিভারির পরে কয়েকমাস মায়ের অত্যন্ত যত্নে থাকা জরুরি। তাই মাসাজের যে সব উপরকণ বাজারে মেলে তার সব ক’টি মায়ের জন্য ঠিক নাও করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা এক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট উপকরণের কথা বলেন। (C-Section Scar Removal Home Remedies)
#1. অ্যালো ভেরা জেল: মাসাজ করার জন্য অ্যালো ভেরা জেল (Aloe Vera Gel) সবচেয়ে ভালো উপকরণ। পোড়া ক্ষতই হোক বা অপারেশনের দাগ— অ্যালো ভেরার শাঁস সবেতেই সমান উপকারী। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রাকৃতিক অ্যালো ভেরাই সদ্য হওয়া মায়ের ত্বকের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ। (Natural ways to Get Rid Of C-Section Scars) একান্তই দোকান থেকে কিনতে হলে দেখে নিন উৎপাদনকারী সংস্থার পক্ষ থেকে প্রোডাক্টটিকে অর্গানিক সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে কি না। তবে সবচেয়ে ভালো উপায় হল বাড়িতে অ্যালোভেরার চারা লাগিয়ে নেওয়া।
#2. ভিটামিন-ই তেল: ত্বকের নীচে কোলাজেন প্রোটিনের বিভাজন ঘটে। এই বিভাজনে সাহায্য করে ভিটামিন-ই (Vitamin-E Oil)। তবে এই নিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন ভিটামিন-ই তেল মাসাজ করলে দেরিতে হলেও কোলাজেনের উপর একটি প্রভাব পড়ে। যার ফলে কোলাজেনের বিভাজন শুরু হয়। কোলাজেনের বিভাজনই ত্বকের নীচে নতুন স্তর তৈরি করতে সাহায্য করে। যার ফলে সিজারের দাগ ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়।
#3. লেবুর রস: দাগ মিলিয়ে যেতে লেবুর ভূমিকা (Lemon Juice) বাকিদের থেকে আলাদা। অর্থাৎ এটি কোলাজেনকে ভাঙতে সাহায্য করে না। বরং এটির কাজ অনেকটা প্রাকৃতিক ব্লিচ-এর মতো। নিয়মিত লেবুর রস প্রয়োগ করলে সিজারের দাগ ব্লিচের জন্য হালকা হয়ে আসে। (Natural Remedies for C-Section Recovery) তুলোয় করে রোজ লেবুর রস নিয়ে দাগের অংশে বোলান। ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর তা ধুয়ে ফেলুন । বিশেষজ্ঞরা বলেন, সবসময় প্রাকৃতিক লেবুই ব্যবহার করা উচিত।
#4. আলুর রস: আলুর রসও (Potato Juice) লেবুর রসের মতোই কাজ করে। ব্রণ হলে অনেকেই আলু কেটে ব্রণর উপর তা বারবার বোলান। এতে আলুর রস সেখানে ছড়িয়ে পড়ে। আলুর রসও একটি প্রাকৃতিক ব্লিচ। যা দাগকে হালকা করতে সাহায্য করে। সিজারের দাগের ক্ষেত্রেও নিয়মিত আলুর টুকরো কেটে বোলান। বোলানোর ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
আরও পড়ুন: প্রসবের পরে কীভাবে জলদি সুস্থ হয়ে উঠবেন!
#5. টিব্যাগ: চা-এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সিজারের দাগ হালকা করতে খুব উপকারী। গ্রিন টি-এর ব্যাগ (Teabag) গরম জলে চুবিয়ে সরাসরি সিজার হওয়া অংশে রাখুন। (C-Section Scar Treatment) প্রতিদিন তিন থেকে চারবার ১০-১৫ মিনিট সময় ধরে এটি করলে সিজারের দাগ ধীরে ধীরে হালকা হতে থাকে।
#6. কোকোয়া বাটার: সিজারের দাগ দূর করতে আরেকটি উপকারী উপাদান হল কোকোয়া বাটার (Cocoa butter)। কোকোয়া বাটারে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সিজারের দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে কোকায়া বাটার ত্বককে আর্দ্র ও নমনীয় রাখতেও সাহায্য করে।
#7. মধু: সর্দি-কাশি, ব্রণ বা পোকার কামড় সবেতেই মধু অত্যন্ত কার্যকরী। এসবের পাশাপাশি সিজারের দাগ দূর করতেও এর ভূমিকা কম নয়। মধু (Honey) সিজার হওয়া অংশের গাঢ় দাগ দূর করতে সাহায্য করে। তাছাড়াও এটি অ্যান্টিসেপটিক প্রকৃতির উপাদান হওয়ায় এর থেকে সিজারের অংশে কোনও সংক্রমণের আশঙ্কা নেই। (C-Section Wound Care) মধুর চটচটে ভাবে অস্বস্তি না-হলে সারাদিনই ওই অংশে মধু লাগিয়ে রাখতে পারেন।
#8. সিলিকোন (Silicone): সিলিকোন ব্যবহারের মাধ্যমে সহজেই দূর করা সম্ভব সিজারের দাগ। বিজ্ঞানীমহল ইতিমধ্যেই এর ব্যবহারে সম্মতি দিয়েছেন। এটির কাজ ত্বককে আর্দ্র রাখা আর ত্বকের ক্ষত তাড়াতাড়ি শুকোতে সাহায্য করা। এটি ব্যবহার করলে সিজারের দাগ বেশি গাঢ় হয় না। (C-Section Scar Removal Home Remedies) তবে এটি ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সিজারের দাগ দূর করতে মাসাজ ছাড়াও বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত আরও বেশ কিছু উপায় আছে। তবে এগুলো ঘরোয়া সমাধান নয়। এর প্রতিটিই অপারেশন থিয়েটারে করা হয়ে থাকে। (C-Section Scar Care Basics)
আরও পড়ুন: নতুন মায়ের এমন হতেই পারে! চিন্তা নেই, মন খারাপের সমাধান আছে নাগালেই
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null