এখন এমন একটা সময়, যখন অপরাজিতার মন-মেজাজ প্রচণ্ড ভালো থাকার কথা। কারণ দ্বিতীয় বার সে মা হয়েছে। গত দু’বছর ধরে তাদের তিনজনের পরিবার। অপরাজিতা, তন্ময় আর ওদের ছেলে অর্ক। অর্কর বয়স এখন দু’বছর চার মাস। গত বছরেরর একদম গোড়ার দিকে অপরাজিতা আর অর্ক সিদ্ধান্ত নেয়, তারা দ্বিতীয় সন্তান নেবে। সব কিছুই ঠিকঠাক এগিয়েছে। এই বছরের প্রথমেই অপরাজিতা আবার মা হয়েছে। পরিবারে এসেছে তিন্নি। অপরাজিতা-তন্ময়ের ছোট্ট কন্যা সন্তান। অর্কর ছোট বোন। সব মিলিয়ে ওদের এখন সপ্তম স্বর্গে বাস করার কথা। কিন্তু সেই পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্কর মনখারাপ। এটার কথা আগে থেকে বুঝতেই পারেনি অপরাজিতা বা তন্ময়! (Helping Your Firstborn Adjust to New Siblings in Bengali, Dwitiyo sontaner songe prothom sontaner bhab koraben ki kore, Prothom sontan ki tar bhai ba bonke niye jealous, samlaben ki kore.Helping Your Firstborn Adjust to New Siblings in Bengali.)
তিন্নি যখন অপরাজিতার গর্ভে, তখন এমন কথা ভাবতেও পারেনি ওরা। তিন্নি বাড়িতে আসার পর থেকেই অর্ক একটু চুপ করে গিয়েছে। মা কি বোনকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে? তবে কি ওরা আর আমায় ভালোবাসে না? এবার কি আমার জায়গাটা বোনের জন্য বরাদ্দ হয়ে গেল?— ইত্যাদি প্রশ্নই যে অর্কর মনের মধ্যে বাসা বেঁধেছে, তা-ও বেশ বুঝতে পারছে অপরাজিতা আর তন্ময়। কিন্তু এখান থেকে বেরনোর উপায় তাদের কাছে পরিষ্কার নয়। আর সেই কারণেই তারা দ্বারস্থ হয়েছে বিশেষজ্ঞের। প্রথমে মনোবিদ। এবং তারপর মনোবিদের পরামর্শে শিশু-মনোবিদ বা চাইল্ড সাইকোলজিস্ট (child psychologist)।
অপরাজিতা-তন্ময় যে সমস্যায় ভুগছে, তা খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। আপনিও যদি ইতিমধ্যেই দুই বা তার বেশি সন্তানের মা কিংবা বাবা হন, তা হলে নিজেও টের পেয়েছেন, দ্বিতীয় সন্তান জন্মানোর পর প্রথম সন্তানের মনের হাল কেমন হয়। আর যদি আপনি এখনও তা না-হন, এবং ভবিষ্যতে সেই দিকে এগোন, তা হলে নিঃসন্দেহে পরবর্তী সময়ে এই ঘটনার মুখোমুখি আপনাকেও দাঁড়াতে হবে। এবং এটা শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের সমস্যা তা নয়, বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব বা সেলিব্রিটিদের পরিবারেও এই সমস্যা হয়েছে বলে জানা যায়। অভিনেত্রী পেনেলোপে ক্রুজের দুই সন্তান লিও এবং লুনার ক্ষেত্রে এই সমস্যা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন অভিনেত্রী। ডেভিড বেকহ্যাম এবং তাঁর স্ত্রী ভিক্টোরিয়ার ক্ষেত্রেও একই সমস্যা হয়েছে। এই কথা দিয়েই অপরাজিতা-তন্ময়কে পরামর্শ দিতে শুরু করলেন চাইল্ড সাইকোলজিস্ট। তাঁর মতে প্রথম সন্তানের ব্যবহারে কোন কোন পরিবর্তন দেখে বুঝবেন, দ্বিতীয় সন্তানকে নিয়ে তার সমস্যা হচ্ছে?
ধরুন আপনি আপনার স্বামী বা স্ত্রীকে খুব ভালোবাসেন। একদিন অফিস থেকে বাড়ি ফিরলেন। দেখলেন, অন্যজন খুব হাসিমুখে দরজা খুলে দিলেন। তারপর আপনাকে জড়িয়ে ধরে খুব আদর করে বললেন, আপনার জন্য দারুণ একটা খবর আছে। আপনার সঙ্গী হবে বলে, বাড়িতে তিনি আরেক জন স্বামী বা স্ত্রী এনেছেন। এক্ষেত্রে আপনার মনের অবস্থা কেমন হবে? আপনি রেগে যেতে পারেন। দুঃখ পেয়ে ভেঙে পড়তে পারেন। প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক হয়ে পড়তে পারেন। এর সব ক’টাই হতে পারে আপনার প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে। শুধু সে আপনার চেয়ে অনেক ছোট বলে এই প্রতিক্রিয়ার মাত্রাটা একটু কম হবে। এইটুকুই যা পার্থক্য।তবে দ্বিতীয় সন্তান আসার সময় প্রথম সন্তানের বয়স কত, তার ওপরও নির্ভর করে, সেই সময় প্রথম জনের প্রতিক্রিয়ার ধরনটা ঠিক কেমন হবে। তাকে সামলাবেন কী করে, একনজরে দেখে নেওয়া যাক সেগুলো।
বয়স ভেদে কীভাবে দুই সন্তানের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা যাবে, তা তো না-হয় জানা গেল। কিন্তু তার বাইরেও আরও কিছু কাজ থাকে, যা আপনাকে সাহায্য করবে এই সমস্যা থেকে বেরোতে। (How to help your firstborn adjust to new sibling in Bangla)
#1. ভালো কথা বারবার বলুন (repeat possitive words): ছোটজন তার দাদা বা দিদিকে খুব ভালোবাসে, ছোটজনের চোখে তার দাদা বা দিদি হল একদম হিরো— এই ধরনের কথা বারবার বলুন। এতে বড়জনের হিংসা বা নিরাপত্তাহীনতা কিছুটা হলেও কাটবে। দু’জনের মধ্যে একটা বন্ধন তৈরি হবে।
#2. বাড়ির রুটিন এক রাখুন (get back to your daily routines): বাড়িতে সন্তান এলে পুরনো রুটিনে পরিবর্তন আসবেই। কিন্তু যত দ্রুত সম্ভব আগের রুটিনে ফিরে যান। এতে প্রথম সন্তানের পক্ষে বিষয়টা মেনে নেওয়া অনেক সহজ হবে।
#3. ভাগ করে নিতে জোর দেবেন না (do not force to share): প্রথম সন্তানকে কখনও জোর করবেন না, তার খেলনাগুলো ভাই বা বোনের সঙ্গে ভাগ করে নিতে। এতে তার মনে চাপ পড়বে। ছোটজন বড়জনের খেলনা চাইলে, বড়জন যদি তাতে বাধা দেয়, তা হলে প্রথম দিকে মেনে নিন। আস্তে আস্তে তাকে তৈরি করুন ভাগ করে নেওয়ার জন্য। আর ছোটজন দাদা বা দিদির জিনিসে ভাগ পেলে, ধন্যবাদ জানাতে যেন না ভোলে, সেটাও দেখবেন।
#4. দায়িত্ব দিন (teach responsibility): ছোটজনের ডায়াপার পাল্টানো, তাকে পাইডার লাগিয়ে দেওয়া, তাকে গান শুনিয়ে ভুলিয়ে রাখা, তার ছোটখাটো জিনিসের দায়িত্ব নেওয়ার মতো কাজ বড়জনকে দিন। এতেও দু’জনের মধ্যে একটা আত্মিক বন্ধন তৈরি হবে। বড়জন বুঝতে পারবে, ছোটজন তার শত্রু নয়।
#5. একসঙ্গে যত্ন করুন (nursing them together): ধরুন একজনকে গল্প শোনাচ্ছেন বা চুল আঁচড়ে দিচ্ছেন বা ঘুম পাড়াচ্ছেন। তা হলে অন্যজনকেও এর মধ্যে জুড়ে নিন। দু’জনকে একই সঙ্গে সময় দিলে তারা পরস্পরের আরও কাছাকাছি আসবে। দু’জনের মধ্যেকার ব্যবধান কমবে।
আসলে পুরোটাই হলো মনের খেলা, অনুভূতির খেলা। আপনার প্রথম ছানাটির মনের দেখভাল আপনাকেই করতে হবে, যাতে কোনও ভাবেই দ্বিতীয়টিকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী না ভেবে বসে সে! হাতে ধরে বুঝিয়ে দিন, তুলতুলে ছোট ভাই বা বোন তারও দায়িত্ব!
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null