সন্তানের গুড হ্যাবিটস গড়ে তুলতে পারেন আপনিই, বলছেন মনোবিদরা!

সন্তানের গুড হ্যাবিটস গড়ে তুলতে পারেন আপনিই, বলছেন মনোবিদরা!

নীহারিকার ছেলে রুকুর বয়স এখন সবে আড়াই বছর। আর কয়েক দিনের মধ্যেই ও কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হবে। ছোট্ট রুকু প্রচন্ড দুষ্টু। দুষ্টুমিতে যেমন সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখে, তেমনই বড়দের বিপদেও ফেলে। ওর এই দুষ্টুমি নিয়েই চিন্তায় রয়েছে নীহারিকা। এই ছেলে কিন্ডারগার্টেনে গেলে কী যে করবে তা ও ভেবেই পায় না। ওখানে এত দুষ্টুমি করলে কে ওকে সহ্য করবে! এসবের মধ্যেই একদিন খবরের কাগজে ও পড়ল বাচ্চাদের ভালো অভ্যাস শেখানোর ব্যাপারে। লেখাটা পড়েই ওর মনে হল এই ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। সেদিনই একজন মনোবিদের অ্যাপয়েন্টমেন্টও নিল। (Best Tips to Teach Good Habits To Children)
মনোবিদ নীহারিকার থেকে সবটা শুনে বললেন, ওকে ভালো অভ্যাস কীভাবে শেখাচ্ছেন তার উপরেই নির্ভর করবে ও কতটা শিখবে (Ways to Teach Children Good Manners)। তাই ওকে শেখানোর আগে বেশ কয়েকটি কথা মনে রাখা দরকার।

#1. নিজেই শিখুন (Learn Yourself): ছোট্ট সোনাকে যা যা শেখাবেন বলে ভেবেছেন, তা আগে নিজেকেই শিখতে হবে। যে কোনও সন্তানই বাবা-মাকে মনে মনে তার রোল মডেল ভেবেই এগিয়ে চলে। তাই ওকে কোনও কিছু শেখাতে গেলে নিজেকেই সেই অভ্যাস শিখে নিতে হবে। খুদের সামনে কখনই এমন আচরণ করা যাবে না, যা আপনি ওর মধ্যে দেখতে চান না। আপনি নিজে একবার সেই অভ্যাস মতো চললে, আপনার ছোট্ট সোনাও আপনার দেখাদেখি সে ভাবে চলবে।

#2. বারবার শেখান (Teach Her/Him Repeatedly): আপনি যাই শেখান না কেন, ও একবারেই তা শিখে নেবে এমন ভাবাটা ভুল। ছোট্ট সোনা ভুল তো করবেই। বরং বারবার একই ভুল করবে। আপনাকে প্রতিক্ষেত্রেই ওকে ঠিকটা দেখিয়ে দিতে হবে। এভাবেই ধীরে ধীরে ওর মনে অভ্যাসটা গেঁথে যাবে। একবার মনে গেঁথে গেলে আর ভুল হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।

#3. ধৈর্য ধরুন (Hold Your Patience): ছোট্ট সোনাকে নতুন কিছু শেখাতে গেলে সব সময় ধৈর্য ধরা উচিত। বেশি দিন হয়নি ও এই পৃথিবীতে এসেছে। তাই সব কিছু নিয়েই ওদের মধ্যে কৌতূহল তৈরি হওয়াই স্বাভাবিক। (Tips for Teaching Kids Manners) এ জন্য ধৈর্য হারালে চলবে না। বরং ধৈর্য ধরে ওকে ভালো করে বোঝাতে হবে। তবেই ও ঠিক জিনিসটা শেখার চেষ্টা করবে।

#4. প্রশংসা করুন (Praise Her/Him): ছোট্ট খুদে সব সময় মনে মনে চায় আপনি ওর প্রশংসা করুন। কোনও ভালো অভ্যাস ঠিক মতো পালন করার পরেও ওরা তেমনই আশা করে। তাই যে কোনও ভালো অভ্যাস পালন করতে পারলে ওকে প্রশংসা করুন। প্রশংসা না-করে এড়িয়ে গেলে ওর মনে অন্যরকম প্রভাব পড়ে। এতে হিতে বিপরীতও হতে পারে।

#5. উৎসাহ দিন (Give Her/Him Emcourage): ছোট্ট খুদে সবসময় চায় ওর পাশে ওর মা-বাবা থাকুক। এই পাশে থাকা ওদের ভরসা জোগায়। একই সঙ্গে যে কোনও কাজে উৎসাহ দেয়। তাই বাবা-মায়েরও কর্তব্য ভালো অভ্যাসে ওকে উৎসাহ জোগানো। এতে ও পরেও দ্বিগুণ উদ্যমে সেই অভ্যাসটা পালন করবে। (Ways to Encourage Good Habits in Children)

#6. লোভ দেখাবেন না (Don’t Pay Bribe): এই কথাটা মেনে চললে লজেন্স দেব, আইসক্রিম খাওয়াব— এমন লোভ সোনামণিকে একেবারেই দেখানো উচিত নয়। এতে ও ধীরে ধীরে এসবের উপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। এগুলো না-পেলে কোনও অভ্যাস বজায় রাখতেই চাইবে না। তাই সব সময় খেয়াল রাখুন এমন কোনও লোভ দেখিয়ে যাতে ওকে শেখানো না হয়।

#7. বকাবকি করবেন না (Don’t Scold Her/Him): ছোট্ট খুকু বা খোকা ভুল করেছে বলে ওকে বকাবকি করা একেবারেই ঠিক নয়। এতে ওর মনে আপনার সম্পর্কে খারাপ ধারণা তৈরি হতে পারে। বরং ভুল করলেই হাসিমুখে ওকে ঠিক জিনিসটা ধরিয়ে দিতে হবে।

#8. ধৈর্য ধরতে শেখান (Teach Her/Him to Hold Patience): খুদেকেও ধৈর্য ধরতে শেখানো প্রয়োজন। এমন অনেকেই আমাদের চারপাশে রয়েছেন, যাঁরা অন্যদের সঙ্গে মোটেই ভালো ব্যবহার করেন না। তাঁদের সঙ্গেও যেন খুদে ভালোভাবে কথা বলে, তেমনটাই শেখান। ছোট থেকেই এই ধৈর্য ধরতে শিখলে এবং ভালো ব্যবহার করতে শিখলে ভবিষ্যতে কোনও ক্ষেত্রেই ও সহজে প্রতিক্রিয়াশীল হবে না।

 

আরও পড়ুন: শুধু শেখানো নয়, শিশুর খাতিরে বদলাতে হবে আপনাদেরও। শৃঙ্খলা শিখতে হবে শিশুর সাথেই!

 

খুদেকে কিছু শেখানোর সময় কী কী মাথায় রাখা দরকার, তা তো জানা গেল।‌ এরপর মনোবিদ কোন কোন অভ্যাস ওকে শেখানো উচিত তা নিয়ে আলোচনা করলেন। ছোট্ট থেকেই খুদের এই অভ্যাসগুলো‌ শেখা উচিত (Manners Kids Should Know)। নীহারিকা ওঁর সব কথাই মনোযোগ সহকারে শুনলো।

  • ধন্যবাদ জানানো ও অনুরোধ করা: কেউ কিছু দিলে তাকে সব সময় ধন্যবাদ জানানো বা ‘থ্যাংক ইউ’ বলা ও কারও থেকে কিছু চাওয়ার সময় তাঁকে ‘প্লিজ’ বলা, এই দুই-ই খুদেকে শেখানো উচিত। এতে অন্যের প্রতি ওর মনোভাব সব সময় নরম থাকে। তাই এই দু’টি সবসময়ই ওকে প্র্যাকটিস করানো প্রয়োজন।
  • দুঃখিত বলা: কারও অপছন্দের কোনও কাজ করলে বা কোনও ভুল করলে সব সময় ক্ষমা চাওয়া বা ‘সরি’ বলা উচিত। এটি ওকে যে কোনও ভুল করার পরে বারবার মনে করিয়ে দিন। একই সঙ্গে এও মনে করিয়ে দিন, এটি মোটেই তুচ্ছ কোনও কথা নয়। বরং কথাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ‘সরি’ বলার মধ্যে দিয়েই (Good Manners for Kids) ছোট্ট সোনা সহানুভূতি প্রকাশ করতে শিখবে।
  • কথার মধ্যে কথা না-বলা: যখন দু’জন নিজেদের মধ্যে কথা বলছে, তখন তাদের মধ্যে হঠাৎ করে কথা বলা উচিত নয়। এই ভালো অভ্যাস থেকে ও শিখবে কখন কথা বলা উচিত ও কখন উচিত নয়। একমাত্র কোনও গুরুতর প্রয়োজন বলে, তবেই দু’জনের কথার মধ্যে কথা বলা যায়, এও শেখান ছোট্ট সোনামণিকে।
  • ‘এক্সকিউজ মি’ বলতে শেখান: যখনই দু’জনের মধ্যে কথা বলার পয়োজন হবে তখন খুদে যেন ‘এক্সকিউজ মি’ বলে। এমনটা বললে ওকে সহজে কেউ এড়িয়ে যেতে পারবে না। এছাড়াও কোনও কাজ করতে করতে অন্য কাজ করার কথা মনে পড়লেও ‘এক্সকিউজ মি’ বলেই ওই স্থান ছাড়া উচিত। এটা বলা একবার শিখে গেলে (Basis Good Manners) ওর উপর চাইলেও কেউ বিরক্ত হতে পারবে না।
  • অনুমতি নিতে শেখান: কোনও কাজের জন্য বা কোথাও যেতে হলে বড় কারও অনুমতি নেওয়া উচিত। এই অভ্যাসও খুদের ছোট্ট থেকেই থাকা প্রয়োজন। এতে পরে ওর উপর কেউ রেগে যেতে পারবে না। এমনকি বকাবকিও করতে পারবে না।
  • ভাগ করে নেওয়া উচিত: যে কোনও জিনিস সবার সঙ্গে সব সময় ভাগ করে নিয়ে উপভোগ করা উচিত। এমন অভ্যাস অল্প বয়স থেকেই ওকে শেখানো প্রয়োজন। এতে কোনও জিনিস একা উপভোগ করার মানসিকতা তৈরি হবে না। এছাড়াও ছোট্ট সোনামণি এতে অনেক বেশি সামাজিক হয়ে উঠবে।
  • হাঁচির সময় মুখ ঢাকা উচিত: হাঁচি বা কাশি পেলে সবসময় মুখ হাত দিয়ে ঢাকা উচিত। নয়তো নিজের জীবাণু অন্যের গায়েও ছড়িয়ে যেতে পারে। এই অভ্যাসটিও ওকে ছোট্ট থেকে শেখান। এতে পরে স্কুলে ওর সমস্যা হবে না। (Good Habits Every Parent Must Teach Their Child)
  • কারও দুর্বলতা নিয়ে মন্তব্য করা উচিত নয়: কারও দুর্বলতা নিয়ে কখনও হাসাহাসি করা উচিত নয়। এমনকী তাকে নিয়ে মন্তব্য করাও উচিত নয়। এই শিক্ষা ছোট্ট থেকেই খুদের পাওয়া উচিত। এতে ভবিষ্যতেও ও অন্যের প্রতি সমব্যথী হবে‌। তাছাড়াও কারও ব্যাপারে মন্তব্য করলেও তাতে সহানুভূতির ছোঁয়া থাকবে।

 

মনোবিদের পরামর্শ পেয়ে নীহারিকা প্রচন্ড উপকৃত হয়। সেদিন থেকেই ও নিজে এই সমস্ত অভ্যাস পালন করা শুরু করে। কিছুদিন পর থেকে রুকুকেও একে একে ওগুলো শেখাতে শুরু করে। ওকে শেখানোর সময় বারবার মনোবিদের কথাগুলো মাথায় রাখত। ঠিক মতো চেষ্টার ফলে রুকুর মধ্যে ধীরে ধীরে ভালো অভ্যাসগুলো গড়ে উঠতে শুরু করেছিল। এরপর যখন ও কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হয়, তখন আর তেমন সমস্যাই ছিল না। তখন কে বলবে কয়েক মাস আগেই এই রুকু প্রচন্ড দুষ্টু ছিল, কথাই শুনতে চাইত না! (Best Tips to Teach Good Habits To Children)

 

আরও পড়ুন: ছোট্ট সোনার মন ও শরীরের বিকাশে কোন বয়সে, কোন খেলনা দরকারি

 

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

 

 

null

null