খাওয়াদাওয়া নিয়ে প্রায় সব শিশুরই অল্পবিস্তর বায়না থাকে। তবে রোশনের বায়না যেন সবাইকেই ছাপিয়ে যাচ্ছে। আট মাস বয়স থেকে ছোট্ট রোশন শক্ত খাবার খাওয়া শুরু করে। তখন থেকেই খাওয়ানোর জন্য ওর সঙ্গে রীতিমতো লড়াই করতে হয়। তবে ঝুমার ধৈর্য অনেক, সহজে হাঁফিয়ে ওঠে না। যতক্ষণ সময়ই লাগুক, প্রতিদিন সঠিক পরিমাণ খাবার না-খাইয়ে ঘুম পাড়াত না ছেলেকে। সেই ছোট্ট খুদে কিছুদিন আগে তিনের কোঠা পেরোল। কিন্তু খাওয়া নিয়ে ওর বায়না এখনও কমেনি। (Tips to handle fussy eating in children)
ঝুমা আগে এ নিয়ে তেমন না-ভাবলেও এখন ওর বেশ চিন্তা হয়। স্কুলের টিফিনও প্রতিদিন ফেরত নিয়ে আসে রোশন। খাওয়াদাওয়া নিয়ে খাবার টেবিলে আগের তুলনায় বেশি ঝামেলা হয়। শেষ পর্যন্ত ও একজন শিশুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিল। (Best Ways for Parents to Handle Fussy Eaters)
ঝুমা চিকিৎসকের কাছে জানতে চায়, বাচ্চারা খাওয়া নিয়ে এমন বায়না করে কেন? চিকিৎসক জানালেন, শিশু খাওয়াদাওয়া নিয়ে বায়না করবে, এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওদের বায়না কমতে থাকে। কচি বয়সে ওরা বুঝতে পারে না, খাওয়াদাওয়া সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য কতটা দরকারি। খাবারের আকার, গন্ধ, রং ইত্যাদি শিশুর মনে যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। এগুলো মনের মতো না-হলেই ও খাওয়া নিয়ে বায়না ধরে। কোনও খাবারের আকার, রং খুদের পছন্দের না-হলে সে তো বায়না ধরবেই।
খাবার নিয়ে বায়নার যখন অন্ত নেই, অনেক মায়েরাই বুঝতে পারেন না কীভাবে খাওয়ালে তার ছোট্ট সোনার পেট ভরবে। ঝুমার প্রশ্নে চিকিৎসক ওকে খাওয়ানোর বেশ কিছু টিপস্ দিয়ে দিলেন। (Tips For Parents Dealing with Fussy Eaters)
#1. মজাদার খাবার: একই রঙের পরিজ বা শুকনো খাবার সবসময় খুদের ভালো লাগবে কেন? বিশেষজ্ঞদের কথায়, খাবারকে মজাদার না-করে তুললে তা শিশুর কাছে মোটেই আকর্ষণীয় হয় না। তাই পরিচিত খাবারকেই একটু কায়দা করে মজাদার করে তুলতে হবে। যেমন কুকি কাটারের সাহায্যে স্যান্ডুইচ থেকে একটি স্টার কেটে ওর প্লেটে সাজিয়ে দেওয়া যেতে পারেন। এছাড়াও গাজরের পরিজের উপরে ছড়িয়ে দিতে পারেন কাজু কিসমিস।
#2. নতুন খাবার দিন: ছোট্ট সোনার প্রতিদিন একই খাবার খেতে ভালো লাগবে এমন কোনও কথা নেই। বরং রোজ রোজ এক খাবার খেলে একঘেয়ে লাগাই স্বাভাবিক। তাই প্রতিদিনই নতুন নতুন ডিশ ওর জন্য বানান। এতে হয়তো সময় বেশি লাগবে। কিন্তু ছোট্ট সোনা খাবারটা উপভোগ করবে (Picky Eater Toddler Recipes)। খাবার পছন্দের না-হলে ও সহজে মুখে তুলতেই চাইবে না।
#3. অল্প করে দিন: অনেক বাচ্চাই খাবার খেতে একেবারেই পছন্দ করে না। ওদের মনে হয়, খাবার খাওয়ার ব্যাপারটা যেন না-থাকলেই ভালো হত। বিশেষজ্ঞদের কথায়, এমন বাচ্চাদের খাবার খাওয়ানোর সময় ওদের অল্প করে খেতে দিন (How to Handle Picky Eaters)। একবারেই পুরো খাবার চোখের সামনে দেখলে ওদের ভিতরে ভয় তৈরি হয়। খাবার খেতে না-চাওয়ার জেদও বেড়ে যায়।
#4. রেসিপি বদলান: নতুন খাবার রেঁধে খুদেকে খাওয়ালেও সে বায়না করছে। কিছুতেই খেতে চাইছে না। এমন ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা ওই একই সবজি দিয়ে অন্যরকম রেসিপি ট্রাই করতে বলেন। অনেক সময় দেখা যায়, শিশু রেসিপি অপছন্দ বলেই খাবার খেতে চায় না। সেক্ষেত্রে এই পদ্ধতি কাজে দেয়। (Fussy Eater Solutions) যেমন গাজরের পরিজ দেখে খুকুমণি নাক কুঁচকালে গাজরের স্যুপ রেঁধে দিন।
#5. জোর করবেন না: খাবার খেতে না-চাইলে অনেক বাবা-মা-ই ধৈর্য ধরে রাখতে পারেন না। এর ফলে বকাবকি, জোর করা এমনটা প্রায়ই হয়। বিশেষজ্ঞদের কথায়, জোর করলে খোকা আরও জেদি হয়ে যায়। ভালোবেসে না-খাওয়ালে ও কোনও খাবারই খেতে চাইবে না। তাই খেতে না-চাইলে ওকে খাবার নিয়ে জোর করা একেবারেই উচিত নয়।
#6. পুরস্কারের লোভ না-দেখানোই ভালো: খাবার খেয়ে নিলে বিকেলে ঘুরতে নিয়ে যাব বা লজেন্স কিনে দেব, এমন লোভ অনেক বাবা-মায়েরাই দেখান। এতে পুরস্কারই ওর কাছে বেশি আকর্ষণীয় হয়ে দাঁড়ায়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তখন খুদে খাবার খেয়ে নেয়। এতে তাড়াহুড়োয় খাবার ঠিক মতো না-চিবোলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। (Tips for coping with a fussy eater )
আরও পড়ুন: ঘরোয়া খাবারে বাড়িতে তুলুন একরত্তির খিদে। হদিস রয়েছে আপনার রান্নাঘরেই!
#7. ওকেই ঠিক করতে দিন: দুপুরে লাঞ্চে বা রাতের ডিনারে কী খাবার খাওয়া যায়? ওকেই এই বিষয়ে ভাবতে দিন। আপনি শুধু কিছু অপশন দিয়ে দিন। খুদেকে এভাবে খাবারের পরিকল্পনা করতে দিলে ও ধীরে ধীরে খাবার খেতে উৎসাহ পাবে। নিজের পছন্দের খাবারগুলোই ওর পরিকল্পনায় থাকবে। এতে খাবার সময় ওর বায়নাও আস্তে আস্তে কমে যাবে।
#8. খিদে তৈরি হতে দিন: ছোট্ট খোকা বা খুকুর খিদে তৈরি না-হওয়া পর্যন্ত ওকে জোর করে না-খাওয়ানোই ভালো। বিশেষজ্ঞদের মতে, খাওয়ার জন্য জোর না-করে ওর খিদে তৈরি হতে দেওয়া ভালো। এমন হতেই পারে, সকালে বা বিকেলে ও যে খাবার খেয়েছে, তা এখনও সম্পূর্ণ হজম হয়নি। এই অবস্থায় লাঞ্চ বা ডিনার খেতে ইচ্ছে না-হওয়াই স্বাভাবিক। বরং খিদে তৈরি হলে খুদে নিজেই খেতে চাইবে বা খাওয়ার জন্য বায়না করবে (Toddlers and Fussy Eating)।
#9. বারবার অফার করুন: যে খাবার খুদে একবার দেখেই না-বলে দিয়েছে, সেই খাবার অন্য কোনও সময় অফার করে দেখতে পারেন। বারবার অফার করলে ও খাবারটা চেখে দেখার চেষ্টা করবে। অনেক সময় দেখা যায়, পুষ্টিগুণে ভরপুর হলেও খাবারটির রং বা গন্ধের কারণে তা খুদের অপছন্দ। সে সব ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি কাজ দেয়।
খাওয়ানোর নানা পদ্ধতি বলে দেওয়ার পর চিকিৎসক ঝুমাকে এই ব্যাপারে কয়েকটি দরকারি তথ্যও দিলেন।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঝুমা ঠিক করে প্রতিদিন রোশনের জন্য আলাদা আলাদা খাবার করবে। যেমন বলা তেমন কাজ। পরদিন থেকে রোশনের টিফিনেও একেক দিন একেক রকম খাবার থাকত। কয়েক দিন পর থেকে রোশন একেবারে গুড বয়। খাবার পুরো না-খেলেও অনেকটাই খেয়ে নেয়। কখনও খাবার ফেলে উঠে যায় না। রোশনের এই পরিবর্তনে ঝুমাও অত্যন্ত খুশি। এতদিনের একটা সমস্যা শেষ পর্যন্ত মিটল যে! (Tips to handle fussy eating in children)
আরও পড়ুন: সেরেলাক না-পসন্দ? খুদেকে তবে বানিয়ে দিন ওরই মন-পসন্দ খাবার। রেসিপি থাকল এখানে!
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null