সায়ন্তিকা তেঁতুলের আচার খেতে খেতে কৌশানির সঙ্গে ভিডিও চ্যাট করছিল। সায়ন্তিকা এখন মোটামুটি বাড়িতেই, খুব একটা বাইরে বেরচ্ছে না। ও এখন ছ’মাসের অন্তঃসত্ত্বা। কৌশানি কথায় কথায় হঠাৎ জিজ্ঞেস করল, ‘তুই ওটা কি খাচ্ছিস রে?’ সায়ন্তিকা বলল, তেঁতুলের আচার। কৌশানি খানিক অবাক হয়েই বলল, এই সময় তেঁতুলের আচার মোটেই ভালো নয়। গর্ভবতী হওয়ার পর এটা খেলে বড়সড় বিপদও হতে পারে। সায়ন্তিকা তো অবাক! এটা জানাই ছিল না। কৌশানি বলল, শুধু তেঁতুল নয়, বেশ কয়েকটি এমন ফল রয়েছে যা এই সময় খাওয়া একদম উচিত নয়। সায়ন্তিকা জানতে চাইল, কী কী ফল খাওয়া উচিত নয়? কৌশানি এক এক করে ফলগুলোর নাম বলে দিল। সেগুলো কেন খাওয়া উচিত নয় তাও জানালো। (Fruits to Avoid During Pregnancy)
গর্ভধারণের সময় মুখের বিস্বাদ কাটাতে অনেকের কাছে এটাই প্রথম পছন্দ। আচার বা টক তেঁতুলের যে কোনও রেসিপিও এই সময় মন টানে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশি তেঁতুল খাওয়া গর্ভধারণের পর শরীরের জন্য ক্ষতিকর। (Fruits That You Should Not Eat During Pregnancy ) বিশেষত, প্রথম ট্রাইমেস্টারে তেঁতুল খাওয়া তো একেবারেই উচিত নয়। পরেও খাওয়া বিপজ্জনক।
কেন এড়ানো উচিত: গর্ভাধারণের পর মর্নিং সিকনেস ও নসিয়া কাটাতে অনেক গর্ভবতীই তেঁতুলের রেসিপি বেছে নেন। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, তেঁতুল মায়ের শরীরে প্রোজেস্টেরন হরমোনের উৎপাদন অনেকটাই কমিয়ে দেয়। এর কারণ তেঁতুলে অত্যাধিক মাত্রায় থাকা ভিটামিন সি। প্রোজেস্টেরনের উৎপাদন কমে গেলে শিশুর সময়ের আগে জন্ম অর্থাৎ প্রিটার্ম বার্থের আশঙ্কা বেড়ে যায়। এছাড়াও মায়ের গর্ভপাতও হতে পারে। এর পাশাপাশি অত্যাধিক ভিটামিন সি ভ্রুণের কোষ নষ্ট করে দিতে পারে।
ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস আর ভিটামিনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হল পেঁপে। এছাড়াও পেঁপে শরীরের রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে। তবে বিশেষজ্ঞরা গর্ভবতী মহিলাদের এই ফল বা সবজিটি এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দেন (Papaya During Pregnancy)।
কেন এড়ানো উচিত: পেঁপে খেলে শরীরের উষ্ণতা চট করে বেড়ে যায় । গর্ভবতী মহিলার ক্ষেত্রে উষ্ণতার এই হঠাৎ বৃদ্ধি ক্ষতিকারক হতে পারে। এছাড়াও পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে ল্যাটেক্স থাকে। এর প্রভাবে জরায়ুর পেশি সংকোচন দেখা দিতে পারে। এর ফলে রক্তপাত হতে পারে। তাছাড়াও এই সময় পেঁপে খেলে মিসক্যারেজের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমাতেও খেজুর খুব কার্যকরী। তবে গর্ভাবস্থায় দিনে একটি বা দু’টির বেশি খেজুর শরীরের জন্য ক্ষতিকারক (Foods to Avoid During Pregnancy)।
কেন এড়ানো উচিত: খেজুর শরীরের তাপমাত্রা খুব তাড়াতাড়ি বাড়িয়ে দেয়। এতে শিশুর জন্মের সময় সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া বেশি খেজুর খেলে জরায়ুর পেশি সংকোচন হতে পারে।
আনারসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশ কিছু রোগের বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। এতে থাকা উৎসেচক খাবার হজমে সাহায্য করে। এছাড়াও ক্যানসারের আশঙ্কা কমায়। তবে গর্ভাবস্থায় আনারস একেবারেই নিষেধের তালিকায় রাখেন চিকিৎসকরা।
কেন এড়ানো উচিত: আনারসে থাকা ব্রোমিলিন নামক উৎসেচক শরীরের কিছু প্রোটিনের গঠন ভেঙে দেয়। এটি খেলে সারভিক্সের পেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে । এমনটা হলে শিশুর সময়ের আগেই জন্ম হতে পারে। এছাড়াও আনারসের কারণে জরায়ুতে বিপজ্জনক সংক্রমণ হওয়া অস্বাভাবিক নয় (Pineapple During Pregnancy)।
তরমুজে জলের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি যেমন শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে, তেমনই শরীরের টক্সিনও সাফ করে দেয়। তবে গর্ভধারণের পর এই ফল হবু মায়েদের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।
কেন এড়ানো উচিত: তরমুজ খেলে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা কমে যায়। তাই বিশেষজ্ঞরা এটি না-খাওয়ার পরামর্শ দেন। চিকিৎসকের মতে, এই ফল তেমন ক্ষতিকারক না-হলেও এতে থাকা মিষ্টি উপাদান রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। হাই সুগার গর্ভবতী মায়ের জন্য বিপজ্জনক। এছাড়াও তরমুজের ডাইইউরেটিক ধর্মের কারণে এটি টক্সিনের সঙ্গে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় পুষ্টিদ্রব্যও শরীর থেকে বের করে দেয়।
কলার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ভিটামিন বি সিক্স ও ভিটামিন সি। এই পুষ্টিদ্রব্যগুলো হবু মায়ের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা এই ফলটি এড়িয়ে যেতে বলেন।
কেন এড়ানো উচিত: জেস্টেশনাল ডায়বেটিস রয়েছে এমন মহিলাদের জন্য কলা ক্ষতিকারক ফল। কলার মধ্যে থাকা সুগারের ভাগ রক্তে সুগারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। যা গর্ভধারণের পর বিপদ ডেকে আনতে পারে। এছাড়া কলায় রয়েছে চিটিনেজ নামক অ্যালার্জেন। যাদের এই উৎসেচকে অ্যালার্জি রয়েছে, তাদের জন্য কলা ক্ষতিকর।
আরও পড়ুন: গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস কোন ১০টি খাবার না খাওয়াই ভালো, সেটা আপনি জানেন কি?
আঙুরে রয়েছে ভিটামিন এ ও সি সহ বেশ কিছু প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। এগুলো গর্ভবতী মহিলার জন্য উপকারী। তবে আঙুর খাওয়া উচিত কি না তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে ।
কেন এড়ানো উচিত: অনেক বিশেষজ্ঞদের কথায়, আঙুর ফল সতেজ রাখতে অত্যাধিক কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। এই কীটনাশক মায়ের শরীরে গিয়ে ক্ষতিকর বিক্রিয়া ঘটাতে পারে। এছাড়াও এতে থাকা রেসভেরাট্রল নামক রাসায়নিক হবু মায়ের শরীরের জন্য ভালো নয়।
পাকা অ্যাপ্রিকট হবু মায়ের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এটি যেমন পেটের সমস্যা দূর করে, তেমনই চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। ফোলিক অ্যাসিড থাকায় এটি ভ্রুণের স্বাস্থ্যের পক্ষেও উপকারী। তবে কাঁচা অ্যাপ্রিকট মায়ের জন্য মোটেই ভালো নয়। তাই চিকিৎসক অ্যাপ্রিকট বা খুবানি খাওয়ার ব্যাপারে গর্ভবতী মহিলাদের সতর্ক করেন। (Things to Avoid during Pregnancy that Cause Miscarriage)
কেন এড়ানো উচিত: কাঁচা অ্যাপ্রিকট খেলে যেমন পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে তেমনই এটি ঝিমুনিরও কারণ। এটি মায়ের স্নায়ুতন্ত্রেও প্রভাব ফেলে। এছাড়া অত্যাধিক পরিমাণে এই ফল খেলে রেসপিরেটরি প্যারালাইসিস হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
সব ফল যে খারাপ, তা কখনই নয়। বরং অধিকাংশ ফলই হবু মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তবে কিছু টিপস ফল খাওয়ার সময় মাথায় রাখা প্রয়োজন। কৌশানি সেগুলোই সায়ন্তিকাকে জানিয়ে রাখল।
কৌশানির পরামর্শ মেনে সায়ন্তিকা তক্ষুনি তেঁতুল খাওয়া বন্ধ করে দিল। গর্ভবতী থাকাকালীন অন্য ফল খাওয়ার আগেও ও সবসময় সতর্ক থাকত। কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেও দ্বিধা করেনি। কয়েক মাস পর যখন ও মা হল, চিকিৎসক জানালো ও আর ওর সন্তান দুজনেই সম্পূর্ণ সুস্থ। খবরটা শোনার পর কৌশানি দারুণ খুশি। সায়ন্তিকাও ওকে ধন্যবাদ জানায় সঠিক সময়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য। (Fruits to Avoid During Pregnancy)
আরও পড়ুন: গর্ভাবস্থায় সুস্বাদু চিংড়ি-ভোজনে কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে, দেখে নিন একনজরে!
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null