এই ৮টি খাবার খেতে থাকুন। নরমাল ডেলিভারির পথে হাঁটলে যাত্রা সহজ হবে অনেকটাই!

এই ৮টি খাবার খেতে থাকুন। নরমাল ডেলিভারির পথে হাঁটলে যাত্রা সহজ হবে অনেকটাই!

ছুটির দিনে, গাড়ি হাঁকিয়ে লম্বা একখানা রোড ট্রিপ করার প্ল্যান করছেন। আসা-যাওয়া মিলিয়ে প্রায় ১০/১২ ঘণ্টার ড্রাইভ, দু’জনে হাতে হাত,পথের ধারে সবুজের হাতছানি বা কুলকুল বয়ে চলা নদী। ভাবলেই আপনার মনটা যেন কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে। আগামী প্ল্যানের দিবাস্বপ্ন দেখতে দেখতে হঠাৎ মনে পড়লো “রাস্তা তো অনেকখানি, গাড়িতে ভালো করে তেল ভরে নিতে হবে মনে করে, নয়তো বেচারা টানবে কী করে?” (Foods to Prepare for Labor and Delivery)

শিরোনাম প্রসবের প্রস্তুতিতে খাবার সংক্রান্ত, আর আমি শুরু করেছি বেড়াতে যাওয়া, গাড়িতে তেল ভরানো নিয়ে উপন্যাস। বড্ড বেয়াড়া ধরনের খাপছাড়া প্রতিবেদন মনে হচ্ছে, তাই না? রাগ না করে একটু বোঝার চেষ্টা করুন দেখি!

বেড়াতে যাওয়া, গাড়ির তেল এগুলো তো রূপক মাত্র। পুরো প্রতিবেদনটাই আপনার জন্য সাজানো (How to Prepare for Labour)। আর চার মাস পরেই ফুটফুটে এক সন্তানের জন্ম দিতে চলেছেন আপনি। “মা” হওয়ার জন্য আপনি মনের দিক থেকে পুরোদমে প্রস্তুত। শরীরের দিক থেকেও তো ততটাই প্রস্তুত থাকতে হবে, তাই না? নতুন মা হচ্ছেন আপনি, আবার আপনার ইচ্ছে নরমাল ডেলিভারি করাবেন। এই স্বাভাবিক প্রসব বা নরমাল ডেলিভারিতে মায়ের বিপুল পরিমাণে এনার্জি ক্ষয় হয়। প্রসব যন্ত্রণা যদি ১০-১২ ঘণ্টা ধরে চলে, সেক্ষেত্রে শরীরকে কত এনার্জির জোগান দিতে হয় (Foods that Make Labor Easier), আন্দাজ করতে পারছেন?

এজন্যই “গাড়িতে তেল ভরা”র কথা বলেছিলাম। লং ড্রাইভে যাওয়ার আগে যেমন গাড়িতে তেল ভরে তাকে প্রস্তুত করছেন, ঠিক তেমনি নিজেকেও প্রস্তুত করবেন  প্রেগন্যান্সির ৯ মাস হয়ে গেলেই। বলাই বাহুল্য, এনার্জি বা শক্তি সঞ্চয়ের জন্য আপনাকে ‘তেল’ খেতে হবে না। খেতে হবে বিশেষ পুষ্টিকর ও শক্তিবর্ধক খাবার (Best Foods to Eat Before Labor)। যে সব খাবার খেলে এই ভরা সময়ে আপনি পুরো পুষ্টিগুণ পাবেন, আবার সপ্তাহ কয়েক পরে প্রসবের ধকল নেওয়ার জন্য শরীর তৈরি হয়ে যাবে, কষ্টও কমবে। দরকারের সময় পেশীর শক্তিতে বা এনার্জিতে কোনও ঘাটতি হবে না, আজ সেই নিয়েই আমাদের আলোচনা। আগে থাকতে দেখে নিন একনজরে।

 

 

নরমাল ডেলিভারি চান? তা হলে জেনে নিন গর্ভাবস্থায় কী কী খেতেই হবে আপনাকে! (What to Eat for Normal Delivery in 9th Month)

 

প্রসব-প্রক্রিয়া সহজ করবে যে আটটি খাবার (Foods to Prepare for Labor and Delivery)

 

#1.খেজুর: এটি একটি বহু পুরানো টোটকা। বলা হয়, আসন্ন প্রসবা যেসব মায়েরা নিয়মিত খেজুর খান, তাদের প্রসবকালে কষ্ট অপেক্ষাকৃত কম হয়। গর্ভবতী মায়েদের ওপর করা একটি গবেষণা থেকে দেখা গেছে, ডেলিভারির একমাস আগে থেকে যেসব মায়েরা নিয়মিত ৬-৭ টি করে খেজুর খেয়েছেন; তাদের ক্ষেত্রে প্রসবযন্ত্রণা কোনও ওষুধ ছাড়া স্বতঃস্ফূর্তভাবেই উঠেছে (How to Prepare for Labour)। প্রসব পীড়া দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হয়নি অর্থাৎ সন্তান জন্ম দিতে কষ্টও তুলনামূলক কম হয়েছে।

 

#2. স্কিন ও হাড় সমেত চিকেনের স্যুপ: স্কিন সমেত মুরগির মাংস ও হাড় দিয়ে যে স্যুপ রান্না হয়, সেটা ডেলিভারির একমাস আগে থেকে নিয়মিত খাওয়া বিশেষ উপকারী। হাড় ও স্কিন-সহ মাংস রান্না করলে এই প্রাণীজ প্রোটিনের পুরোটাই সদ্ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে রান্না হলে খাবারের মাধ্যমে বেশি পরিমাণে অ্যামিনো অ্যাসিড, হায়ালিউরোনিক অ্যাসিড এবং প্রয়োজনীয় মিনারেলস শরীরে ঢোকে (Food for Normal Delivery)। শুধুমাত্র এই স্কিন ও হাড় সমেত মুরগির স্যুপ থেকেই বেশ বড় মাত্রায় প্রোটিন, মিনারেলস ও অন্যান্য পরিপোষক হবু মায়ের শরীর পেয়ে যায়। এই মাংসর সাথে আপনি ইচ্ছে করলে কিছু ভেজিটেবলস যোগ করে সেটা আরও সুস্বাদু করে খেতে পারেন।

 

#3. লিভার: প্রাণীজ প্রোটিনের আরেক অন্যতম উৎস হল লিভার। মহিলাদের শরীরে জননতন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে এই লিভার। শুধু কি তাই? প্রসবের পরে মায়ের শরীর তাড়াতাড়ি সারিয়ে তুলতেও লিভার বিশেষ উপকারী। সমস্ত বি ভিটামিন, ভিটামিন ডি,কে, ই এবং এ, আয়রনের মতো পরিপোষকে সমৃদ্ধ এই লিভার। প্রসবের সময় মায়ের যে রক্তক্ষয় হয়, সেই রক্ত পুনরায় তৈরি করতে লিভার বিশেষ সাহায্য করে। এছাড়া, এটি অক্সিজেনেশন ফুড (Oxygenation food) হিসেবেও পরিচিত।

 

#4. দই ও প্রোবায়োটিক খাবার: প্রোবায়োটিক জাতীয় খাবার-দাবার শরীরকে বিভিন্ন ভিটামিন শোষণে সাহায্য করে। এর মধ্যে ভিটামিন-কে অন্যতম। এর ফলে, অন্য সব খাবার থেকে পাওয়া ভিটামিন শরীর সহজেই শোষণ করে নেয় এবং পরিপোষকের চাহিদা মিটিয়ে নিতে পারে। বিভিন্ন কালচারড ডেয়ারি প্রোডাক্ট, ইওগারট, বা সাধারণ টক দই, ডেলিভারির আগে নিয়মিত খাওয়া প্রয়োজন।

 

আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় খাদ্যতালিকায় রাখতেই হবে যেসব খাবার

 

#5. মিষ্টি আলু: ডেলিভারির আগে খাওয়া শুরু করুন মিষ্টি আলু। মিষ্টি আলু শরীরকে হায়ালিউরোনিক অ্যাসিড তৈরি করতে প্রয়োজনীয় স্টার্চ ও ইস্ট্রোজেন সরবরাহ করে। মিষ্টি আলু থেকে আসা পরিপোষক পদার্থ মায়ের শরীরে ইস্ট্রোজেনের নকল করতে পারে। এর ফলে, প্রসব প্রক্রিয়া চলাকালীন মায়ের শরীর বেশি মাত্রায় অক্সিটোসিন (oxytocin), ইস্ট্রোজেন (estrogens) এবং প্রষ্টাগ্ল্যানডিনস (prostaglandins) তৈরি করতে পারে এবং প্রসব-প্রক্রিয়া সহজ হয়। এছাড়াও, মিষ্টি আলু প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেলসে সমৃদ্ধ।

 

#6.কলা: কলার মধ্যে উদ্ভিজ্জ হায়ালিউরোনিক অ্যাসিড বর্তমান। আবার প্রাকৃতিক চিনির উৎস হল এই কলা। হবু মা শরীরে গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজের চাহিদা মেটাতে নিয়মিত খেতে পারেন কলা। কলায় যে শুধু উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম থাকে, তাই নয়, এতে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি বর্তমান। প্রসবের সময় যত এগিয়ে আসে, হবু মায়েদের মধ্যে প্রি-এক্লাম্পশিয়া হওয়ার ঝুঁকি তত বেড়ে যায়। যার ফলে অনেকসময় সময়ের আগেই শিশুকে জন্ম দিতে হয়। কলায় উপস্থিত বি ভিটামিন, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম এই প্রি-এক্লাম্পশিয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে (Foods to Prepare for Labor and Delivery)।

 

#7.বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার: আমন্ড বাদাম, কুমড়ো বীজ, সূর্যমুখীর বীজ বা তিল ইত্যাদি আসন্ন প্রসবা মায়ের শরীরকে প্রসবের জন্য প্রস্তুত করে তোলে। কুমড়ো বীজে যে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর পরিপোষক থাকে, তাই নয়, মায়ের রক্তে ইন্সুলিনের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখে কুমড়ো বীজ। সূর্যমুখীর বীজে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-ই (Ways to Shorten Labor)। মায়ের শরীরে ভিটামিন ই-র ঘাটতি হলে সময়ের আগেই শিশুর জন্ম হয়ে যায়। এছাড়া, এই বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার হবু মাকে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, কপার, জিঙ্ক ইত্যাদি মিনারেলস ও উচ্চ মাত্রায় বি ভিটামিনের জোগান দেয়।

 

#8.জলের পরিমাণ বেশি এমন ফল: প্রসবের সময় যত এগিয়ে আসতে থাকে, মায়ের শরীরের প্লাসেন্টাও ধীরে ধীরে ম্যাচিওর হতে শুরু করে। ফলস্বরূপ, পর্যাপ্ত অ্যাম্নিওটিক তরল তৈরি করার ক্ষমতা সে হারাতে থাকে। এই তরলের মধ্যেই বাচ্চা থাকে। কাজেই প্রেগন্যান্সির শেষের দিকে মা শুধু নিজের জন্য জল খান না, বাচ্চার থাকার জায়গায় অ্যাম্নিওটিক তরল প্রতিস্থাপনেও সাহায্য করে জল ও জল জাতীয় খাবার। সেজন্য সারাদিনে প্রচুর জল তো অবশ্যই খাবেন, তার সাথে জলের পরিমাণ বেশি এমন ফল খান। শসা, তরমুজ ইত্যাদিতে জলের পরিমাণ অনেক। নিয়মিত এই ফলগুলো খেতে থাকুন ডেলিভারির আগে।

Pregnancy Diet Chart in Bengali

এর পাশাপাশি সবুজ তরি–তরকারিও খেতে হবে। যথাযথ ডায়েট মেনে খাওয়াদাওয়া করতেই হবে আপনাকে। প্রেগন্যান্সির এই শেষের পর্যায়ে নিয়মিত ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থাকুন। প্রয়োজনে আপনার খাদ্যতালিকা বা ডায়েট চার্ট আপনার ডাক্তার বা ডায়েটিশিয়ানকে দেখিয়ে নিন এবং ওনার পরামর্শেই থাকুন (Foods to Prepare for Labor and Delivery)। নতুন কোনও খাবার বা ফল এসময় ট্রাই করতে যাবেন না। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। উদ্বেগমুক্ত থাকুন।

 

আরও পড়ুনঃ সাধারণ প্রসব বা নরমাল ডেলিভারি নিয়ে যা যা আপনার জানা প্রয়োজন!

 

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null