প্রত্যেক রবিবার নিয়ম করে বাচ্চার উচ্চতা মাপছেন, দেওয়ালের কোণায় তো পেনসিলের দাগে ভর্তি হয়ে গেল দেখছি! স্কিপিং করাচ্ছেন, ঝোলার মতো জায়গা পেলেই বাচ্চাকে ঝুলতে বলছেন। কেন করছেন? যাতে ভবিষ্যতে, আপনার ছোট্ট সোনা যখন হেঁটে আসবে, আশেপাশের লোকজনের যেন মনে হয়; হ্যাঁ, কেউ একটা আসছে বটে! তাই তো? আসলে, একথা আমরাও অস্বীকার করি না যে, সুন্দর উচ্চতা মানুষের ব্যক্তিত্ব প্রচুর পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়, তাকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। এই উচ্চতা প্রধানত নির্ভর করে বাচ্চার মা-বাবার জিনের ওপর। মা- বাবা বা পরিবারের নিকটাত্মীয় বেশ লম্বা হলে বাচ্চাও লম্বা হয়। কিন্তু শুধু বংশগতির দোহাই দিয়ে থেমে থাকলে তো চলবে না। জানেন কি, ছোটবেলায় কিছু শারীরিক কসরতের পাশাপাশি, যথোপযুক্ত পুষ্টি বাচ্চার উচ্চতা বাড়াতে অনেক সাহায্য করে? (Best foods to get your child taller; Foods to increase height in children)
প্রোটিনের ভাঁড়ার ঘর হল এই ডিম। ডিমের সাদা অংশ বা অ্যালবুমিন পুরো ১০০ শতাংশই প্রোটিন। এছাড়াও, গোটা ডিমে আছে ক্যালসিয়াম, রাইবোফ্লাভিন এবং ভিটামিন বি১২। বাচ্চার খাদ্যতালিকায় নিয়মিত রাখুন ডিম। তবে রোজ ডিমের কুসুম বাচ্চাটিকে দেবেন না। সপ্তাহে ৩-৪ দিন গোটা ডিম দিন এবং বাকি দিন শুধু ডিমের সাদা অংশ খেতে দিন। ডিমের পোচ, ডিমের ওমলেট, স্ক্রাম্বলড এগস, ডিম সেদ্ধ বা পাতি ডিমের ঝোল, বাচ্চাকে ডিম খাওয়ানোর উপায় তো হাজারো।
দুধে এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য যেমন দই বা পনিরে ক্যালসিয়াম নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ থাকে, যা শিশুর বাড়-বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। শিশুর হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্যও ভালো করে এই খনিজটি। শুধু কি তাই? দুধে ভিটামিন এ,বি, ডি এবং ই আছে ভরপুর মাত্রায়। প্রোটিনেরও ভালো উৎস এই দুধ। বাচ্চাকে প্রত্যেকদিন এক গ্লাস করে দুধ খাওয়ার অভ্যেসকরান। তা সে সকালেই হোক, বা রাতে শুতে যাওয়ার আগে। মাঝে মাঝে দিতে পারেন দই, চিজ বা পনিরও।
আরও পড়ুন: শিশুর জন্য অপরিহার্য পাঁচ ভিটামিন
মুরগীর মাংস প্রাণীজ প্রোটিনের অন্যতম ভালো উৎস। বাচ্চার খাদ্যতালিকায় মুরগীর মাংস রাখলে তা বাচ্চার কোষ ও পেশী তৈরিতে সাহায্য করে।স্বাভাবিকভাবেই এর ফলে বাচ্চার উচ্চতাও বাড়ে। খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বাচ্চারা সহজেই খেয়ে নেয় মুরগীর মাংসের যে কোনও পদ। তবে রোজই বাচ্চাকে মুরগীর মাংস খাওয়া অভ্যেস করাবেন না। এক-দু’দিন ছাড়া ছাড়া ওকে মুরগীর মাংস দিন।
ওটমিল প্রোটিনে ভরপুর এবং এতে ফ্যাটের পরিমাণ খুবই কম থাকে। বাচ্চার পেশী তৈরি এবং উচ্চতা বাড়ানো, দুইয়েতেই সাহায্য করে ওটমিল। আপনার বাড়ন্ত বাচ্চার জন্য ওটমিলের থেকে ভালো প্রাতরাশ আর কীই বা হতে পারে? দুধ,ইচ্ছেমতো ফল আর ওটস দিয়ে বানিয়ে দিন স্মুদি।
ভিটামিন-এ আমাদের শরীরকে প্রোটিন সংশ্লেষণে সাহায্য করে। আবার এই ভিটামিন-এ ভরপুর মাত্রায় উপস্থিত থাকে গাজরে। গাজর কাঁচা খেলে এই ভিটামিন পুরোমাত্রায় পাওয়া যায়। তাই বাচ্চাকে স্যালাডের মধ্যে কাঁচা গাজর খেতে দিন। গাজরের রস বানিয়ে তাতে অল্প বিট নুন, চাট মশলা এবং সামান্য লেবুর রস মিশিয়েও দিতে পারেন বাচ্চাকে।
পালং শাকে যথেষ্ট ভালো মাত্রায় ক্যালসিয়াম ও আয়রন থাকে। এই দুই খনিজ বাচ্চাকে দ্রুত লম্বা হতে সাহায্য করে এবং শক্তিরও জোগান দেয়। শুধু পালং শাকই নয়, সমস্ত সবুজ সব্জি যেমন মটরশুঁটি, ব্রকলি, ঢ্যাঁড়শ ইত্যাদিও শিশুর পুষ্টিতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, ফাইবার এবং মিনারেলসে সমৃদ্ধ। বাচ্চারা সবজি খেতে না চাইলেও ভুলিয়ে ভালিয়ে ওকে খাওয়াতেই হবে কিন্তু।
ফাইবার, আয়রন, ভিটামিন, ম্যাগনেসিয়াম ও সেলেনিয়ামের অন্যতম ভালো উৎস দানা শস্য। নিয়মিত বাচ্চা যাতে এই দানা শস্য খায়, সেদিকে নজর দিন।
বাচ্চাকে তাজা মরসুমি ফল খাওয়ান। পেঁপে, কমলালেবু, পিচ ফল,আম, কলা, আপেল, তরমুজ রাখুন বাচ্চার রুটিনে। শরীরের সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো করা ছাড়াও, বাচ্চাকে লম্বা করার অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে এই ফলগুলি। বাচ্চারা এমনিই ফল খেতে খুব ভালোবাসে। ফ্রুট স্যালাড ছাড়াও বানিয়ে দিন ফলের রস বা ফ্রুট কাস্টার্ড।
প্রোটিন সমৃদ্ধ সয় বিন আপনার বাচ্চার হাড় এবং পেশী বানাবে মজবুত। কার্বোহাইড্রেট, ফোলেট, ফাইবার, ভিটামিন, প্রোটিনের গুণে সমৃদ্ধ এই সয় বিন। যে সব বাচ্চা নিরামিষ ভোজী, তাদের খাদ্যতালিকায় এই সয় বিন অবশ্যই থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: বাড়ন্ত বাচ্চার সুস্বাস্থ্যে আয়রন সমৃদ্ধ ১০টি খাবার
ঘুরতে ফিরতে দিনের যে কোনও সময় হাতে ধরিয়ে দিন একমুঠো বাদাম। প্রয়োজনীয় মিনারেলস, অ্যামিনো অ্যাসিড এবং ভিটামিনের গুণে সমৃদ্ধ এই বাদাম ভালো ফ্যাটের অন্যতম উৎসও বটে। বাড়ন্ত শিশুর বাড়- বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এই বাদাম এবং বাচ্চার উচ্চতাকেও বাড়তে সাহায্য করে।
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null