সন্তানের মা হতে চলেছেন? আর কয়েকটা মাস পরেই ছোট্ট ছোট্ট হাত পা নেড়ে আপনাকে আদরে ভরিয়ে রাখবে সে, ভেবেই যেন গায়ে কাঁটা দিচ্ছে তাই না? কিন্তু অবাক ব্যাপার, পুঁচকের চিন্তার পাশাপাশি আপনার মাথায় নিত্য নতুন খাবারের কথা ঘুরছে কেনো? খালি মনে হচ্ছে, আজ এটা খাই, কাল ওটা আনবো, পরশু সেটা বানাবো। সত্যি বলতে অবাক হওয়ার কিছু নেই এতে। গর্ভাবস্থায় হবু মায়ের শরীরে হরমোনের যে নাচানাচি চলে, তার কারণে নানারকম খাবার খাওয়ার ইচ্ছে, তরিবত করে রান্না করে আঙুল চাটার ইচ্ছে আপনার হতেই পারে। ইচ্ছে হলেই যে উপায় হয়, এমনটাও বোধ করি সবসময় হয় না। বাড়ির গুরুজনেরা রে রে করে তেড়ে এসে অনেক কিছু খাবার খেতে বারণ করতে পারেন। এ ব্যাপারে কম যান না ডাক্তাররাও। মন খারাপ করবেন না; এঁরা প্রত্যেকেই আপনার ও আপনার ভাবী সন্তানের শুভাকাঙ্ক্ষী। গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস কোন ১০ টি খাবার না খাওয়াই ভালো, সেটা আপনি জানেন কি? (Pregnancy-r prothom tin mas ei 10 ti khabar ekdom noy. Foods You Should Avoid In The First Trimester Of Pregnancy in Bangla)
কাঁচা ডিম বা আধসেদ্ধ ডিম গর্ভাবস্থায় খাবেন না। কাঁচা ডিমে সালমনেল্লা ভাইরাসের সংক্রমণ হলে, সেই ডিম খেয়ে মায়ের ডায়েরিয়া, ফুড পয়েজনিং, জ্বর, বমি, মাথা ঘোরা বা পেটে ব্যথা হতে পারে। গর্ভস্থ শিশুর প্রত্যক্ষভাবে কোনও ক্ষতি না হলেও, মায়ের অসুস্থতার কারণে তারও অসুবিধা সৃষ্টি হয়। কাঁচা ডিম যেমন খাবেন না, তেমনি যেসব খাবারে কাঁচা ডিম মেশানো থাকে, সেগুলিও এসময় বর্জন করুন। মেয়নিজ, কাস্টার্ড বা কোনও স্যালাড ড্রেসিং এসময় ব্যবহার না করাই ভালো, কারণ এগুলিতে কাঁচা ডিম মেশানো থাকে।
বাইরে দোকানে বা রেস্তোরাঁয় রান্না হওয়া চিংড়ি মাছ খাবেন না। স্বাদ ও গন্ধ বজায় রাখার জন্য এসব জায়গায় চিংড়ি মাছ ভালো করে সেদ্ধ করা হয় না বা ঠিকমতো পরিষ্কার করাও হয় না। চিংড়ি মাছ প্রোটিন ও ওমেগা ৩(Omega 3)-র ভালো উৎস হলেও আধসেদ্ধ চিংড়ি মাছ হবু মাকে পেটের সমস্যায় নাজেহাল করে দিতে পারে। ভালো করে রান্না না করা হলে, চিংড়ি মাছে থাকা বিভিন্ন প্যারাসাইট নষ্ট হয় না ও শরীরের ক্ষতি করে। এছাড়াও চিংড়ি মাছে অনেকের সাংঘাতিক এলার্জি থাকে। চিংড়ির মতো অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ অর্ধেক রান্না করে খেলে লিস্টেরিয়া নামক ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে রক্ত দূষিত হয়ে যেতে পারে ও গর্ভস্থ শিশুর সমূহ ক্ষতি হয়।
গর্ভাবস্থায় আধসেদ্ধ মাংস খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। মাংস ভালো করে রান্না না করা হলে, এর মধ্যে উপস্থিত সালমনেল্লা, ই কোলাই ইত্যাদি মাইক্রোঅর্গানিজম নষ্ট হয় না এবং মারাত্মক ফুড পয়েজনিং-এর কারণ হতে পারে। কাঁচা মাংস ভালো করে ধোয়ার পর রান্নাঘরের বেসিন এবং নিজের হাত খুব ভালো করে জীবাণুনাশক সাবান দিয়ে পরিষ্কার করুন। মাংস সুসিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত রান্না করে তবেই খান।
এসময় কাঁচা সবজি খাবেন না। সবজি ভালো করে ধুয়ে, ঠিকমতো রান্না করে তবেই খান। কাঁচা সবজিতে বিভিন্ন প্যারাসাইট বা পরজীবী ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা আপনার এবং গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি করতে পারে। বাজার থেকে কাটা ফল বা সবজি কোনও ভাবেই কিনে আনবেন না। ফল বা সবজি অনেকক্ষণ কাটা থাকলে অক্সিডেশনের কারণে তার গুণাগুণ কমে যায় আবার ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ভয়ও বাড়ে। গোটা ও তাজা সবজি কিনে আনুন এবং ভালো করে রান্না করে তবেই খান।
এই সুস্বাদু ফলটি আপনি খেতে পারেন তবে খুবই কম পরিমাণে এবং আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে। আনারসে উপস্থিত ব্রোমিলিন নামের উৎসেচক গর্ভপাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগেই প্রসব হয়ে যেতে পারে। প্রথম তিন মাস এই ফলটি একটুও না খাওয়াই ভালো।
গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেপে একেবারেই খাবেন না। কাঁচা পেপের পেপ্সিন ও প্যাপাইন ভ্রূণের ক্ষতি করে। আবার পেপের ল্যাটেক্স গর্ভপাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
মৌরি বা মেথি দানা বেশি খেলে নির্দিষ্ট সময়ের আগে প্রসবের সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং প্রি-ম্যাচিওর বাচ্চার জন্ম হয়। রান্না করার সময়, অল্প পরিমাণে মশলা হিসেবে ব্যবহার করলে কোনও অসুবিধা হবে না। কিন্তু প্রত্যেকদিন অতিরিক্ত পরিমাণে মৌরি বা মেথি খাবেন না।
অনেক চাইনিজ খাবারে আজিনামোটো দেওয়া থাকে। ভালো স্বাদ ও গন্ধের জন্য এই আজিনামোটো ব্যবহার করা হয়। অনেকেরই এটা সহ্য হয় না। আজিনামোটো দেওয়া খাবার খেলে অনেকের মাথা ঘোরা, পেশীতে টান, হঠাৎ প্রচণ্ড ঘাম হওয়া ইত্যাদি অসুবিধা হয়ে থাকে। আপনারও যদি এই উপাদানটি থেকে এরকম শরীর খারাপ হওয়ার পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে, তা হলে কোনও ভাবেই গর্ভাবস্থায় এটি খাবেন না।
আনপাস্তুরাইজড দুধে অনেক রকম ক্ষতিকর মাইক্রোবস থাকতে পারে যা আপনার ও গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি করতে পারে। দুধ অবশ্যই খাবেন; তবে খাওয়ার আগে ভালো করে ফুটিয়ে খান বা পাস্তুরাইজড দুধ খান।
গর্ভাবস্থার কোনও সময়েই কোনও রকম মদ্য পান বা অ্যালকোহল সেবন করা উচিত নয়। অ্যালকোহল মায়ের রক্ত থেকে গর্ভস্থ শিশুর রক্তে চলে যায় এবং শিশুর মস্তিস্ক ও শিরদাঁড়ার ক্ষতি করতে পারে। অত্যধিক অ্যালকোহল সেবনে গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে বা মৃত শিশুর জন্ম হতে পারে।
এছাড়াও এসময় অতিরিক্ত তেল মশলা দেওয়া খাবার খাবেন না বা বেশি ভাজাভুজি খাবেন না। সহজপাচ্য খাবার খেলে শরীর ঝরঝরে থাকে। কোনও খাবার খেয়ে সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিন বা ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ মতো খাবার খান।
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null