ছোট্ট তুতানের বয়স ১ মাস। বড্ড ঘুমোয় সে; একেবারে চিতমাত দিয়ে হাত-পা তুলে ঘুমচ্ছে তো ঘুমচ্ছেই। তা বেশ, ভালো কথা; বাচ্চারা তো ঘুমবেই। এতে কোনও অসুবিধাই নেই! গতকাল তুতানের দিদা এসেছেন নাতির সাথে দেখা করতে। নাতিকে কোলে নিয়েই অভিজ্ঞ হাত বুঝে গেছে যে নাতির মাথার বামদিকটা আর নিটোল গোল নেই। কেমন যেন একটু চেপ্টে গেছে। তুতানের মা তরী এই প্রথম “মা” হয়েছে; আরও দশদিকে সামলাতে গিয়ে বাচ্চার মাথার আকার নিয়ে মাথা ঘামানোর সুযোগই পায়নি বেচারি। আজ মা বলতে তরী খেয়াল করে দেখলো যে, সত্যি তুতানের মাথার একপাশটা চেপ্টে যাচ্ছে। (Tips to Prevent a Flat Head in Babies)
ভয়ের কোনও কারণ না থাকলেও বড় হয়ে চ্যাপ্টা মাথা দেখে তুতান যে মোটেই খুশি হবে না! নাতির মাথা নিটোল গোল রাখতে দিদুন লেগে পড়লেন বালিশ বানাতে আর তরী একফাঁকে আলোচনা সেরে নিল তার ডাক্তার-বন্ধুনীর সাথে। সবকিছু জেনে আমরাও সাজিয়ে দিলাম প্রতিবেদন। ছোট্ট বাচ্চার গোল মাথাটির স্বার্থে পড়ে নাও এখনই। (Preventing Flat Heads in Babies Who Sleep on Their Backs)
একদম ছোট্ট বাচ্চাদের মাথার পিছনের দিকটা বা পিছনের দিকের একটা পাশ চ্যাপ্টা হয়ে যায়। খুব বেশি হয়ে গেলে এই চ্যাপ্টা আকার কিন্তু পরবর্তীতে আর ঠিক হয় না। বড় বয়সে চুলে বোঝাই হয়ে সেরকম বোঝা না গেলেও মাথার পিছনের অংশের আসল আকার কিন্তু চ্যাপ্টাই থেকে যায়। এই ঘটনাটিকেই মাথা চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া বা ফ্ল্যাট হেড সমস্যা বলা হয়।
বাচ্চার জন্মের পর প্রথম ৬ মাস বাচ্চাকে চিত করে শোওয়ানোই উচিত। এভাবে ঘুমলে বাচ্চার অকালমৃত্যু বা সাডেন ডেথ সিন্ড্রোমে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও অনেকটাই কমে যায়।
এবারে, নবজাতকের স্কাল বা মাথার খুলি খুব নরম হয়। এতটাই নরম হাড় দিয়ে মাথার খুলির কাঠামো তৈরি থাকে, যে ক্রমাগত চাপ পড়লে তা নিজের আকারই বদলে ফেলতে পারে। (Why Do Some Babies Develop Flat Spots on Their Heads?) বাচ্চার ঘাড় পুরোপুরি শক্ত হতেও প্রায় ৫-৬ মাস সময় লেগে যায়। তাই, বাচ্চা যখন ঘুমোয় নিজের চাহিদামতো ঘাড় ঘোরাতে পারে না ফলে যে কোনও একদিকে ঘাড় কাত করে ঘুমনোর প্রবণতা তার মধ্যে দেখা যায়।
একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝাই? ধরুন, আপনার বাচ্চা সারাক্ষণ বাঁদিকে ঘাড় কাত করেই ঘুমোয়। এর ফলে মাথার বাঁদিকের স্কালের হাড়ে একটানা চাপ পড়তে থাকে এবং বাচ্চার মাথা বাঁদিকে চেপ্টে যায়। ডাক্তারি পরিভাষায় এরই নাম পজিশনাল প্ল্যাজিওসেফালি (Positional plagiocephaly)।
যেসব বাচ্চার মাথা একটু আধটু চ্যাপ্টা হয়, সেটা পরে বড় হলে ঠিকও হয়ে যায়।
একেবারেই না, বাচ্চার মাথা চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়ার মধ্যে ভয়ের কিছুই নেই। বাচ্চার মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশে কোনও ভাবেই বাধা সৃষ্টি করে না। আর চ্যাপ্টা তো ঠিক নয়; মাথার পিছনের দিকের অংশ একটু যেন টাল খেয়ে যায়। বামদিক বা ডানদিক বা মাথার পিছনে সোজাভাবেই মাথার আকার গোল থাকে না। খুদের যখন চুল কম থাকবে, তখন এরকম হয়ে গেলে চোখে পড়বে। ভবিষ্যতে চুলের গোছা এসে ঢেকে দেবে ছানার চ্যাপ্টা মাথা।
আসলে, মাথা চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া দেখতেই খারাপ লাগে। অল্প হল, ঠিক আছে; কিন্তু খুব বেশি হয়ে গেলে পরে চুলের গোছাও কিন্তু ঢেকে দিতে পারে না তাকে। (Do You Need to Worry if Your Baby Has a Flat Head?) তাই ছোট বয়স থেকেই তার যত্ন নেওয়াটা একান্ত দরকার।
আরও পড়ুন: বাচ্চাকে দেদার সাজাচ্ছেন চোখে কাজল টেনে; অজান্তে ওর ক্ষতি করছেন না তো?
কীভাবে বানাবেন সর্ষের বালিশ?
কীভাবে বানাবেন শিমুলের বিড়া বালিশ?
মনে রাখুন, বাচ্চা মানুষ; তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোও বড্ড বাচ্চা এবং কাঁচা। টানাহেঁচড়া করতে গিয়ে সে যেন কোনও ভাবেই আঘাত না পায়। (How to Fix Baby Flat Head) ঘাড়ের ব্যায়াম হোক বা মালিশ, বা ঘুমের মাঝে জায়গা বদল; সবটাই করুন অতি সাবধানে। সামান্য সতর্কতা নিলেই বাচ্চার মাথা চ্যাপ্টা আকার নেবে না; নিলেও সেটা সেরে যাবে বয়সের সাথে। মাথা চ্যাপ্টা নিয়ে ভয়ের কোনও কারণ নেই; তবে যদি দেখেন বাচ্চার ঘাড় নমনীয় নয় একেবারেই বা ঘাড় ঘোরাতে গেলে বাচ্চার অস্বাভাবিক কষ্ট হচ্ছে বা লক হয়ে যাচ্ছে; ডাক্তারবাবুকে দেখাতে দেরি করবেন না। ঘাড় শক্ত হলেই তো ছোট্ট নিটোল গোল মাথাটি ‘মাথা তুলে’ দাঁড়াবে। (Tips to Prevent a Flat Head in Babies)
আরও পড়ুন: ছোট্ট ছানাকে কীভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবেন? রইল সহজ গাইডলাইন!
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null