চটজলদি গলার কাঁটা নামাবেন কী করে? ঘরোয়া পদ্ধতির চেকলিস্ট হাতে আছে তো!

চটজলদি গলার কাঁটা নামাবেন কী করে? ঘরোয়া পদ্ধতির চেকলিস্ট হাতে আছে তো!

গত বছর এই সময় সে কী কান্ড! সেই দিনটা মধুমিতা কোনও ভাবেই ভুলতে পারবে না। মধুমিতা যখন ছোট ছিল, তখন থেকেই বর্ষাকালের প্রতি ওর একটা অন্য আকর্ষণ। বর্ষা মানে পাতে পড়বে ইলিশ। ছোটবেলার সেই সময়, শনি-রবিবার ছিল বাবার ছুটির দিন। মানে, সাত সকালে মাছের ব্যাগ নিয়ে বাবা যাবে বাজারে। কিনে আনবে রুপোলি শস্য। আর মা সরষে দিয়ে ঝাল ঝাল রাঁধবে সেই ইলিশ। কিন্তু এখন সেই প্রিয় মাছের নাম শুনলেই, মধুমিতার গায়ে জ্বর আসে। এর জন্য দায়ী গত বছরের ওই দিনটা। (Fish Bone Stuck in Throat: Ways to Get It Out)

গত বছর মধুমিতার মেয়ে মিতি তিন বছরে পড়ল। নিজেরা এত প্রিয় মাছ মেয়েকে খাওয়াবে না? এই মনে করে, প্রথমবার মেয়েকে ইলিশ খাওয়াতে গিয়েছিল মধুমিতা। আর তাতেই পাকলো ঝামেলা! নরম কাঁটা হওয়া সত্ত্বেও মিতির গলায় আটকালো ইলিশের কাঁটা (Macher Kanta)। সে একেবারে কেঁদে-কেটে অস্থির। মেয়েকে প্রথমবার খাওয়াবে বলে অনেক শখ করে ইলিশ রেঁধেছি মধুমিতা। সে তো পুরোটা খাওয়ানো হলই না, পাশাপাশি মধুমিতা আর সুকান্ত—নিজেরাও খেতে পারল না মাছটা।

দুপুর থেকে সন্ধে পর্যন্ত চলল মিতির কান্না আর প্রচণ্ড ভয় পেয়ে তাকিয়ে থাকা। তারপর সন্ধেবেলা ডাক্তারবাবুর কাছে নিয়ে যেতে, উনি বের করে দিলেন কাঁটা। তারপর থেকে আর নয়! রক্ষে করো! (Fish Bone Stuck in Throat)

এবারও বর্ষা এসে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই নিজের মায়ের ফোন পেয়েছে মধুমিতা। ‘কী রে ইলিশ খেলি? একদিন করে পাঠিয়ে দেবো তোর বাবার হাত দিয়ে?’ হ্যাঁ-না, কিছুই বলেনি মধুমিতা। শুধু বলেছে, এখন দরকার নেই। পরে জানাবে। তখন থেকেই দুরুদুরু বুকে বসে আছে! (Macher Kata Ber Korar Upay) আবার ইলিশ! নিজে না-হয় রাঁধলাম না। কিন্তু মা রেঁধে পাঠিয়ে দিলে? মিতিকে কি এই মাছ আর খাওয়ানোই যাবে না! এরই মধ্যে হঠাৎ মধুমিতার বোন শুভমিতার ফোন।

‘কী রে দিদি, ইলিশ খেলি?’ (Hilsha Fish) ওহ্! কী জ্বালা! মধুমিতা উগড়ে দিল পুরো সত্যিটা। শুনে শুভ হেসেই খুন। বলল, ‘এই জন্য তুই মিতিকে মাছ খাওয়াতে ভয় পাচ্ছিস! তোকে কয়েকটা সহজ টোটকা বলে দিই তা হলেই দেখবি, মাছের কাঁটা আটকে গেলেও কত সহজে মিতির গলা থেকে তা বের করে ফেলতে পারবি!’

শুভ পাশ করা ডাক্তার। এখন বিদেশে মেডিক্যাল সায়েন্স নিয়ে গবেষণারত। ছোট বোনের কথা মধুমিতা সহজে ফেলতে পারল না। যা যা ফোনে শুনল তা টুকে রাখল খাতায়। সেই তালিকায় এখানে দেওয়া হল। (Fish Bone In Your Throat- What To Do When Choking?)

 

প্রথমেই বলে নেওয়া যাক,

শিশুর গলায় কাঁটা আটকানোর লক্ষণগুলো কী কী (What are the signs and symptoms of fish bone stuck in baby’s throat)

  • খেতে না-চাওয়া: একদম ছোট বাচ্চা হলে, কোনও ভাবেই খেতে চাইবে না। মুখ ফিরিয়ে নেবে। একটু বড় বাচ্চা, গলার সমস্যাটা জানিয়ে খেতে চাইবে না।

 

  • গলায় খোঁচা লাগা ব্যথা: গলায় সারাক্ষণ খচখচ করবে। মুখে অস্বস্তির চিহ্ন থাকবে। (Golay Kanta Bidhle)

 

  • ক্রমাগত কাশি: শিশুর গলায় কাঁটা আটকালে সে ক্রমাগত কাশতে থাকে।

 

  • কাশির সঙ্গে রক্ত: অবস্থা খুব গুরুতর হলে বাচ্চার কাশির সঙ্গে রক্তও উঠে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে ততক্ষণাৎ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

 

তবে প্রথমেই চিকিৎসকের কাছে না-নিয়ে গিয়ে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতিতে শিশুর গলায় আটকানো কাঁটা নামিয়ে দেওয়া সম্ভব। ছোটবোনের কাছ থেকে তেমনই পরামর্শ পেয়েছে মধুমিতা। তার নোটের খাতা থেকেই সেই তালিকা।

 

 

গলা থেকে মাছের কাঁটা বের করার সহজ, ঘরোয়া উপায়
(How to save a baby when he has a fish bone stuck in throat)

 

#1. কাশতে বলুন: গলায় টনসিল বা তার চারপাশের কোনও জায়গায় কাঁটা সাধারণত আটকায়। আপনার সোনার গলায় কাঁটা আটকালে, তাকে জোরে জোরে কাশতে বলুন। সে ক্ষেত্রে গলার কাঁটা বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা আছে। যদি কাঁটা একটু বেশি গভীরে আটকে যায়, তা হলে এই পদ্ধতি কাজ করবে না। সে ক্ষেত্রে অন্য রাস্তা নিতে হবে। (Fish Bone Stuck in Throat: Ways to Get It Out)

 

#2. অলিভ অয়েল: সোনাকে স্যালাড খাওয়াবেন বলে বাড়িতে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল রেখেছিলেন। সোনার গলায় কাঁটা ফুটলে সেই অলিভ অয়েল অন্য কাজে লেগে যেতে পারে। তিন চার চামচ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল আপনার ছোট্ট সোনামণির গলায় ঢেলে দিন। অলিভ অয়েল প্রাকৃতিক লুব্রিকেন্ট-এর কাজ করে। গলার কাঁটা (Macher Kanta) অলিভ অয়েলের দৌলতে নেমে গেলেও যেতে পারে।

 

#3. ভিনিগার: অনেকের মতেই শিশুদের গলায় আটকানো কাঁটা নামানোর সরলতম রাস্তা ভিনিগার ব্যবহার। কারণ এই ভিনেগার প্রচন্ড অ্যাসিডিক একটি তরল। সরাসরি এক চামচ ভিনিগার আপনার সোনামণির গলায় ঢেলে দিতে পারেন। তা না-হলে এক কাপ জলে দুই চামচ ভিনিগার মিশিয়ে নিয়ে তা-ও ওকে খাইয়ে দিতে পারেন। (Fish Bone Stuck in Throat Child) ভিনিগারে থাকা অ্যাসিড কাঁটাকে অনেকটাই নরম করে দেয়। ফলে তাকে গিলে ফেলা সহজ হয়ে যায়।

 

আরও পড়ুন: বাচ্চার ভাইরাল ইনফেকশনে যত্ন নেবেন কীভাবে?

 

#4. গরম জল আর পাউরুটি: শিশুর গলায় কাঁটা আটকালে বিদেশে অনেকেই তাদের মার্শমেলো খাওয়ান। এ দেশে মার্শমেলো পাওয়া তুলনায় কঠিন। কিন্তু পাউরুটি দিয়েও আপনি একই রকম ভাবে আপনার সোনার গলায় আটকে থাকা কাঁটা নামিয়ে দিতে পারেন। এক গ্লাস গরম জল বা দুধে পাউরুটি বড়-বড় করে ছিঁড়ে ভিজিয়ে নিন। তারপর ওকে বলুন পাউরুটি ঢক করে গিলে নিতে। পাইরুটির খড়খড়ে গা গলার কাঁটা নামিয়ে দিতেই পারে।

 

#5. সোডা: সোডা, বিশেষ করে কোলা জাতীয় পানীয় শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য মোটেই খুব ভালো নয়। কিন্তু গলায় আটকানো কাঁটা নামানোর ক্ষেত্রে এই সোডা বড় ভূমিকা নিতে পারে। ওকে খানিকটা সোডা বা কোলা জাতীয় পানীয় খাইয়ে দিলে ওর ঢেকুরের সঙ্গে পেটের থেকে খানিকটা গ্যাস উপরে উঠে আসবে। (Fish Bone Stuck in Tonsil) তার চাপে কখনও বেরিয়ে যেতে পারে গলায় আটকানো কাঁটা।

 

#6. সাদা ভাত: ছোটবেলায় যখন মধুমিতার গলায় কাঁটা আটকাতো, তখন ওর ঠাকুমা ওর মুখে একদলা ভাত দিয়ে বলতেন, না-চিবিয়ে গিলে নিতে। পদ্ধতিটা অনেক পুরনো হলেও মোটেই ‘সেকেলে’ নয়। এখনও একই রকম ভাবে সফল এই পদ্ধতি। আপনার সোনার গলায় কাঁটা আটকালে ওকে খানিকটা সাদা ভাত দিয়ে গিলে নিতে বলুন। (Chicken Bone Stuck in Throat) কাঁটা তার সঙ্গে নেমে গেলেও যেতে পারে। খুব ছোট শিশুদের গলার কাঁটা নামানোর জন্য এই পদ্ধতি বিপজ্জনক হয়ে যেতে পারে। তাই শিশুর বয়স অন্তত চিন-চার বছর না-হলে এই রাস্তায় হাঁটবেন না।

 

#7. কলা: শিশুদেরই হোক বা বড়দেরই হোক, গলার কাঁটা নামানোর ক্ষেত্রে কলার কোনও বিকল্প নেই। আপনার সোনাকে বলুন, কলায় একটা বড় করে কামড় বসাতে। তারপর সেই কলার টুকরোটা যত ক্ষণ সম্ভব মুখে রেখে দিতে বলুন। এতে মুখের ভিতর বিপুল পরিমাণে লালার নিঃস্বরণ হবে। এরপর ওকে বলুন, মুখে থাকা কলার টুকরো একবারে গিলে ফেলতে। অতিরিক্ত লালা কাঁটা সমেত কলাকে পেটে নেমে যেতে সাহায্য করবে। এটিও একদম ছোট বাচ্চাদের জন্য বিপজ্জনক পদ্ধতি। বছর চার-পাঁচ না-হলে এই রাস্তায় হাঁটবেন না। (Macher Kata Ber Korar Upay)

 

মনে রাখবেন, গলার স্নায়ু খুবই স্পর্শকাতর বা সেনসিটিভ (Sensitive)। ফলে গলায় কিছু আটকালে সেখান থেকে ক্রমাগত মস্তিষ্কে সিগন্যাল যেতে থাকে। এমনকী বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কাঁটা আর আটকে নেই। কাঁটার খোঁচায় গলা চিরে গিয়েছে মাত্র, তারপরেও মনে হচ্ছে কাঁটা আটকে রয়েছে। তাই অযথা উতলা হয়ে পড়বেন না। কিন্তু যদি দেখেন সোনার মুখ থেকে কাশির সঙ্গে রক্ত উঠছে বা চার-পাঁচ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও গলার ব্যাথা বা খচখচানিটা কমছে না, সেক্ষেত্রে দ্রুত ওকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। না-হলে বিষয়টি বাড়াবাড়ির জায়গায় পৌঁছে যেতে পারে।

বোনের কথা শুনে এ বছরেও মধুমিতার পাতে ইলিশের (Hilsha Fish) জায়গা হয়েছে। এমনকী মিতিও তার থেকে বঞ্চিত হয়নি। ‘মা খুব কাঁটা!’ বলে একবার ঘ্যানঘ্যানানির রোল উঠেছিল বটে, কিন্তু মধুমিতার ধমকে সেই কান্নাও ধোপে টেকেনি। (Fish Bone Stuck in Throat: Ways to Get It Out)

 

আরও পড়ুন: শিশুর কানে ব্যথার উপশমে ১০টি ঘরোয়া টোটকা

 

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null