মাসিক মিস হলে মিলিয়ে নিন প্রেগন্যান্সির প্রাথমিক কিছু লক্ষণ। সুখবর হয়তো আপনার দোরগোড়ায়!

মাসিক মিস হলে মিলিয়ে নিন প্রেগন্যান্সির প্রাথমিক কিছু লক্ষণ। সুখবর হয়তো আপনার দোরগোড়ায়!

যারা প্রথমবার মা হতে চলেছে, গর্ভধারণের পর এক-দুই মাস তারা অনেক সময়েই বুঝতে পারে না যে তারা গর্ভবতী। শারীরিক কিছু পরিবর্তন হয়তো হয়, কিন্তু তার দিকে গুরুত্বই দেওয়া হয় না। যেসব মহিলারা নিজেদের মাসিকের সময়ের হিসেব রাখে, তারা সাধারণত মাসিক না হলে এই সন্দেহটি করে থাকে। আবার আজকাল ব্যস্ত যুগে, অনেকেই নিজের মাসিকের নির্দিষ্ট সময়টি মনে রাখতে পারে না। কোনও একমাসে যদি আপনার মাসিক না হয়, তার ১-২ সপ্তাহের মধ্যে শরীরে কিছু পরিবর্তন ঘটে। আপনি যদি প্রেগন্যান্ট হয়ে থাকেন, তা হলে মাসিক না হওয়ার ১-২ সপ্তাহের মধ্যে যদি এই লক্ষণগুলো আপনি বুঝতে পারেন, তাহলে অবশ্যই একবার প্রেগন্যান্সি টেস্ট করিয়ে নিন। (First 10 signs of pregnancy in Bangla)

গর্ভাবস্থার প্রথম দশটি লক্ষণ (First 10 signs of pregnancy)

#1.পেট ফুলে যাওয়া ও গ্যাস হওয়া (Discomfort in belly)

স্বাভাবিক অবস্থাতেও অনেক মেয়ের মাসিকের আগে পেট ফেঁপে যায়। শরীরে হরমোনের তারতম্যের কারণেই এমনটা হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে ঠিক একই অনুভূতি হতে পারে। এসময় পেটে খুব গ্যাস তৈরি হয় এবং তা বেরিয়ে যেতে থাকে।

#2.খাবারে অরুচি (Food aversion)

অনেক খাবারেই আপনার গন্ধ লাগতে পারে। হয়তো, যে খাবার খেতে খুব ভালবাসতেন, সেটাই এখন অসহ্য লাগছে। ঠিকমতো খাবার খেতে ইচ্ছে হয় না বা খাবারে রুচি চলে যায়। শরীরে হরমোনের তারতম্যের কারণেই এই খাবারে অরুচি হয়ে থাকে। প্রেগন্যান্ট হলে, মেয়েদের শরীরে ইস্ট্রোজেন নামক হরমোন নিঃসরণ বেড়ে যায়। মনে করা হয়, এই হরমোনই এইসব অসুবিধার সৃষ্টি করে।

#3.বারে বারে প্রস্রাব (Urge to urinate many times)

হরমোনের কারণেই প্রেগন্যান্সির প্রথম দিকে কিডনিতে রক্ত সঞ্চালনের হার বেড়ে যায়। এর ফলে মূত্রথলি সাধারণ অবস্থার থেকে বেশি দ্রুত হারে ভর্তি হয়ে যায় এবং বারবার প্রস্রাব পায়। প্রেগন্যান্সির পরবর্তী দিকে এই সমস্যা আরও বাড়ে কারণ শিশু যত বড় হয়, জরায়ুর আকারও বাড়ে এবং মূত্রথলির ওপর চাপ পড়তে থাকে।

#4. ক্লান্তি বোধ (Fatigue)

এসময় ক্লান্তি বোধ বেড়ে যায় এবং ঝিমুনি ভাব আসে। ঘুমও বেশি পায়।মনে করা হয়, প্রোজেস্টেরন হরমোনই এই ঘুম ঘুম ভাবের জন্য দায়ী।

#5.অল্প রক্তপাত বা স্পটিং (Sight bleeding or spotting)

অনেকেই হাল্কা রক্তপাত বা স্পটিং লক্ষ্য করে থাকে। এটা মাসিক ভেবে ভুল করবেন না। এটা আসলে ইমপ্ল্যান্টেশন ব্লিডিং। জরায়ুতে ভ্রূণ ইমপ্ল্যান্টেশনের সময় এই রক্তপাত হতে পারে। ওভুলেশনের এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে এই ইমপ্ল্যান্টেশন হয়ে থাকে। স্পটিং হওয়ার পরে বাড়িতে প্রেগন্যান্সি কিট এনে একবার টেস্ট করে দেখতে পারেন।

#6.বমি বমি ভাব বা মর্নিং সিকনেস (Nausea and morning sickness)

কনসিভ করার পরে ২-৪ সপ্তাহ পর থেকেই বমি বমি ভাব দেখা দেয়। সাধারণত, সকালে ঘুম থেকে উঠে এই গা বমি ভাব ও মাথা ধরা বেশি হয় বলে একে মর্নিং সিকনেস বলে। মর্নিং সিকনেস শুধু সকালে নয়, দুপুর বা রাতেও হতে পারে। কনসিভ করার ৪ সপ্তাহ পর থেকে মর্নিং সিকনেস শুরু হয় এবং ১৪-১৫ সপ্তাহ পর্যন্ত চলে। কারও কারও ক্ষেত্রে এই সময়ের কম-বেশি হয়ে থাকে।

#7.স্তনে ফোলা ভাব ও স্পর্শকাতরতা (Tender and swollen breasts)

মাসিকের আগে যেমন অনেকের স্তন ফুলে যায় বা স্পর্শকাতর হয়ে যায়; ঠিক সেরকমই কনসিভ করার পরে এই অনুভূতি হতে পারে। স্তন ফোলা ফোলা লাগে, হাত দিলে ব্যথা অনুভব হয়। এক কথায়, স্তন অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। পুরো প্রেগন্যান্সির সময় জুড়েই স্তনের আকারে পরিবর্তন হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে নিপল চেপে ধরলে এক ধরনের তরল বেরিয়ে আসে।

#8.মুড সুইংস (Mood swings)

হরমোনের লাফালাফির কারণেই হবু মায়েদের মুড সুইংস বা মেজাজের তারতম্য হয়ে থাকে। কখনও মন খুব ভালো থাকে, আবার কখনও খুব বিষণ্ণ হয়ে পড়ে।অনেকে এসময় বেশি উচ্ছ্বাসপ্রবণ হয়ে পড়েন আবার অনেকে ডিপ্রেসনে ভুগতে পারেন।

#9.শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় (Raised body temperature)

একটানা ১৮ দিন বা তার থেকে বেশি সময় ধরে দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকা, কনসিভ করার লক্ষণ।

#10.মাসিক না হওয়া (Missing period)

ঠিক সময়ে যদি আপনার মাসিক না হয়,তা হলে বাকি সব লক্ষণ দেখা না গেলেও আপনি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে পারেন। অনেকেরই মাসিক অনিয়মিত হয়, সেক্ষেত্রে বাকি লক্ষণগুলো বুঝতে পারলে টেস্ট করিয়ে নিন।

শরীরে কোনও রকম পরিবর্তন হলে বা ওপরের লক্ষণগুলি বুঝতে পারলে, বাড়িতে প্রেগন্যান্সি কিটের মাধ্যমে টেস্ট করে দেখতে পারেন। কিন্তু,কখনই শুধু কিটের ওপর ভরসা করে থাকবেন না। ডাক্তার দেখিয়ে তবেই প্রেগন্যান্সি সম্বন্ধে নিশ্চিন্ত হোন। আপনি যে কনসিভ করেছেন, সেটা বুঝতে পারার আগে থেকেই বাচ্চার গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়; তাই নিজেকে সুস্থ রাখুন ও যত্নে থাকুন সবসময়।

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null