অধীর আগ্রহে দিন গুনছেন কবে আপনার ছোট্ট সংস্করণটি আসবে আপনার কাছে। আপনার জন্ম হবে “মা” হিসেবে। প্ল্যানিং শুরুর আগে থেকেই বাড়িতে রেডি করে রেখেছেন দু-তিন ধরনের প্রেগন্যান্সি কিট। একটা না হলে আরেকটা; বলা কি যায়; কখন কে সঠিক কথা বলে! (Things That Can Cause a False-Positive Pregnancy Test)
আপনার চিন্তা বা দুশ্চিন্তা; যাই বলুন সেটা আমরা বুঝি। ভালো কোম্পানির প্রেগন্যান্সি কিট যদি ব্যবহার করেন এবং ব্যবহারবিধি খুব ভালো করে পড়ে সময়মতো ব্যবহার করেন, তা হলে কিন্তু রেজাল্ট ঠিক আসার সম্ভাবনা শতকরা ৯৯ ভাগ।
কিন্তু, জানেন কি, এইসব টেস্ট কিটে ভুল রেজাল্ট আসার মানেই যে কিট খারাপ এমন কিন্তু নয়। অনেকক্ষেত্রেই হবু মায়ের শরীরের অন্দরে ঘটা কার্যকলাপ বিগড়ে দিতে পারে টেস্ট কিটের ফলাফল। নেগেটিভকে মনে হতে পারে পজিটিভ আবার হতে পারে উল্টোটাও।
আচ্ছা, হেঁয়ালি ছেড়ে আসল কথায় আসছি। যারা নতুন মা হতে চাইছেন; তাদের বিভ্রান্তির শেষ থাকে না কোনও সময়েই। আর প্রেগন্যান্সি কিট নিয়েও তাদের প্রশ্ন বা অনুসন্ধিৎসা প্রচুর। এই কিটে কখন কখন ভুল রেজাল্ট আসতে পারে, তা জানা থাকলে মনে হয় অনেকটাই সুবিধে হবে মায়েদের। অবস্থা অনুযায়ী উপযুক্ত ব্যবস্থাও নিতে পারবেন তারা। প্ল্যানিং পর্যায়ে আছেন যারা, পড়ে ফেলুন এই প্রতিবেদনটি।
যে কোনও প্রেগন্যান্সি টেস্টে ক্ষেত্রে শেষ হাসিটা হাসে হবু মায়ের শরীরে উপস্থিত একটি বিশেষ হরমোন। এই হরমোনকে আদর করে “প্রেগন্যান্সি হরমোন (pregnancy hormone)” বলা হয়ে থাকে। খটমট ডাক্তারি ভাষায় এর পরিচিতি হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন হরমোন (Human chorionic gonadotropin hormone/ HCG) হিসেবে। ভ্রূণ জরায়ুগাত্রে স্থাপিত হওয়ার ১০ থেকে ১৪ দিন পরে হবু মায়ের রক্তে এবং মূত্রে এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
কনসিভ করার পরে হবু মায়ের শরীরে এই HCG হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। অমরা বা প্লাসেন্টা তৈরির দায়িত্বে থাকা কোষই এই হরমোন নিঃসরণ করে। এইচসিজি(HCG) হরমোনের মাত্রার ওপর নির্ভর করেই প্রেগন্যান্সি টেস্টের ফলাফল নির্ধারিত হয়। কনসিভ করার ৮-১১ সপ্তাহের মধ্যে এই হরমোনের মাত্রা সবথেকে বেশি হয়।
#1. স্বতঃস্ফূর্ত গর্ভপাত: কনসিভ করার পরেই শরীরে এইচসিজি(HCG) হরমোনের মাত্রা বাড়তে থাকে। প্লাসেন্টার বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে এই প্রেগন্যান্সি হরমোনের লেভেলও।
এবার সব প্রেগন্যান্সির রাস্তা তো আর মসৃণ হয় না। অনেক সময় মা বুঝতেই পারেন না যে তিনি কনসিভ করেছেন, কোনও কারণে হয়তো প্রথম এক-দুমাসেই গর্ভপাত হয়ে গেছে। কিন্তু শরীরে এইচসিজি(HCG) হরমোনের মাত্রার পরিমাণ কমছে ধীরে ধীরে। শরীর সিগন্যাল দিলে এরকম অবস্থায় যদি কেউ টেস্ট করেন তা হলে প্রেগন্যান্সি কিট তার তত্ত্ব অনুযায়ী কাজ করে এবং এইচসিজি(HCG) হরমোনের লেভেল বিবেচনা করে “পজিটিভ” ফলাফল দেয়।
প্লাসেন্টা নষ্ট হয়ে গেলেও মায়ের রক্ত ও মূত্রে এই হরমোনের উপস্থিতি প্রায় ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত লক্ষ্য করা যায়। তাই, এর মাত্রা স্বাভাবিক হওয়ার আগেই যদি কেউ টেস্ট করেন, তা হলে টেস্ট কিটে ফলাফল পজিটিভ আসতেই পারে।
অনেক সময় কোনও কারণবশত যদি গর্ভপাত করানো হয়, তা হলেও এই এক তত্ত্বেই প্রেগন্যান্সি রেজাল্টপজিটিভ আসতে পারে।
আরও পড়ুন: আপনার প্রেগন্যান্সি টেস্ট: কোথায়, কখন, কীভাবে ও কেন
#2. ঠিকভাবে কিট ব্যবহার করতে না পারা: অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ব্যবহারকারী ঠিকভাবে প্রেগন্যান্সি কিট ব্যবহার করতে পারেনি, আর তাই ফলাফলও সঠিক আসেনি।
#3. এভাপোরেশন লাইনকে পজিটিভ লাইন ভেবে নেওয়ার ভুল: কিছু প্রেগন্যান্সি কিট ফলাফল দেখানোর জন্য লাইন ব্যবহার করে। এইচসিজি(HCG) হরমোনের উপস্থিতি নির্ধারণ করতে পারলে দুটো লাইন দেখায়। আর না হলে একটা লাইন।
এই লাইনগুলো সাধারণত উজ্জ্বল রঙের হয়; যেমন নীল, লাল বা গোলাপি। কোনও কোনও সময় একটা হাল্কা রঙের দ্বিতীয় লাইন কিটে দেখা যায়। এই লাইনটা এভাপোরেশন লাইনও হতে পারে বা কনসিভকরার প্রথম স্টেজকেও নির্দেশ করতে পারে।
দ্বিতীয় লাইনটা যদি সম্পূর্ণ বর্ণহীন হয়, সেক্ষেত্রে এটি এভাপোরেশন লাইন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ইউরিন সম্পূর্ণ এভাপোরেট বা বাষ্পীভূত হয়ে গেলে এই লাইন দেখা যেতে পারে। এই এভাপোরেশন লাইন সম্বন্ধে যদি ধারণা না থাকে, অনেক সময় ব্যবহারকারী ফলাফল পজিটিভ ভেবে নেন। (False-Positive Pregnancy Test: Possible Causes)
এই ধরনের গোলযোগ এড়াতে কিটের ব্যবহারবিধি খুব ভালো করে পড়ুন এবং যে রকম সময় ধরে টেস্ট করতে বলা হয়েছে বা টেস্টের রেজাল্ট দেখতে বলা হয়েছে, ঠিক সেইমতোই করুন।
#4. একটোপিক প্রেগন্যান্সি (Ectopic pregnancy): খুব বেশি না হলেও এই ধরনের প্রেগন্যান্সি বিরল নয় কিন্তু। এক্ষেত্রে নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুগাত্রে নির্দিষ্ট জায়গায় নিজেকে স্থাপন করতে পারে না। জরায়ু পর্যন্ত পৌঁছনোর আগেই ফ্যালোপিয়ান টিউবে আটকে থেকে যায়। এই ধরনের প্রেগন্যান্সিকে টিউবাল প্রেগন্যান্সিও বলা হয়।
এই প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রেও ভ্রূণ এইচসিজি(HCG) হরমোন তৈরি করে। ফ্যালোপিয়ান টিউব ছাড়াও জননতন্ত্রের অন্যান্য স্থানেও এই প্রেগন্যান্সি হতে পারে।
এক্ষেত্রে প্রেগন্যান্সি সফল হয় না। ভ্রূণ নষ্ট হয়ে যায়। কিটে পজিটিভ এলেও এর স্থায়িত্ব নেই। আর এই ধরনের প্রেগন্যান্সির চিকিৎসা যত শীঘ্র সম্ভব না করালে অদূর ভবিষ্যতে মায়ের প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে। মায়ের জননতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা প্রচুর রক্তপাত হওয়ার কারণে মায়ের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাই শারীরিক কোনও অসুবিধায় সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
#5. কেমিক্যাল প্রেগন্যান্সি: আপনি কনসিভ করেননি, অথচ কিটে পজিটিভ এলো; এও কিন্তু হতে পারে। যখন ভ্রূণ বা এম্ব্রাইও নিজেকে জরায়ুগাত্রে প্রতিস্থাপন করতে পারে না বা স্থাপন করলেও স্থায়ী হয় না; তখন প্রেগন্যান্সির একদম প্রথম দিকেই মিসক্যারেজ বা গর্ভপাত হয়ে যায়।
এক্ষেত্রে টেস্ট কিটে নেগেটিভ এলেও ব্লাড টেস্টে পজিটিভ আসতে পারে এবং ১ বা ২ সপ্তাহ পরেই গর্ভপাত হয়ে যায়। টেস্ট কিটে নেগেটিভ আসার কারণ মায়ের শরীর তখনও পর্যাপ্ত প্রেগন্যান্সি হরমোন তৈরি করতে পারে না।
জরায়ুতে ফাইব্রইয়েড, স্কার টিস্যু থাকলে বা জরায়ুতে গঠনগত কোনও সমস্যা বা প্রজেস্টেরনের মতো হরমোনের সাম্যতা না থাকলে থাকলে এই কেমিক্যাল প্রেগন্যান্সি হতে পারে।
নিজের শরীর সবচাইতে ভালো বোঝেন আপনি। তাই, শরীরের মধ্যে কোনও অস্বস্তি দেখা দিলে সেটা অগ্রাহ্য করবেন না। প্ল্যানিং এর পর্যায়ে তো একেবারেই নয়। নিজের প্রতি সামান্য সতর্কতা অনেক জটিলতা থেকে রক্ষা করবে আপনাকে এবং আপনার ভাবী খুদেকেও। (Things That Can Cause a False-Positive Pregnancy Test)
আরও পড়ুন: মাসিক মিস হলে মিলিয়ে নিন প্রেগন্যান্সির প্রাথমিক কিছু লক্ষণ। সুখবর হয়তো আপনার দোরগোড়ায়!
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null