সামান্য সতর্ক ও নিজের প্রতি যত্নশীল হলেই পুরোপুরি সেরে যায় স্তন ক্যান্সারের মতো রোগও!

সামান্য সতর্ক ও নিজের প্রতি যত্নশীল হলেই পুরোপুরি সেরে যায় স্তন ক্যান্সারের মতো রোগও!

নারী শরীর যতটা সুন্দর ঠিক ততটাই জটিল ও বিস্ময়করও বটে। এই শরীরকে সুস্থ-সবল রাখতে গেলে যথোপযুক্ত যত্ন ও সতর্কতার প্রয়োজন। আর সবথেকে আগে যেটা প্রয়োজন, সেটা বোধ করি নিজের শরীর সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান আর অহেতুক লজ্জা না পাওয়া। মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার একটি অতি সাধারণ ঘটনা আর তার থেকেও সাধারণ, লজ্জাবশত এই রোগ লুকিয়ে গিয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করে নেওয়া। গবেষণা অনুযায়ী, পশ্চিম বিশ্বের মহিলারা এই স্তন ক্যান্সারে সবথেকে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। (A few facts about breast cancer in Bangla. Goratei nirmul kora shombhob ston cancer)

১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সি মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা বেশি। মহিলাদের এই বিষয়ে সচেতন করতে সারা বিশ্বে অক্টোবর মাস স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস (Breast Cancer Awareness Month) হিসেবে পালিত হয়।শুরু হয়েছে, ‘নো-ব্রা ডে’। এই ‘নো-ব্রা ডে’ শুনেই অনেকে নাক উঁচু করে ভাবতে বসেন যে, এটা হয়তো ব্রা না পরে অশ্লীল কোনও অঙ্গপ্রদর্শনী মাত্র। আদপেই ব্যাপারটা এরকম নয়। ‘নো-ব্রা ডে’ মানে, প্রত্যেক মাসে মহিলারা যেন অন্তত একবার নিজেদের ব্রা খোলার পরে স্তন দুইটি খুব ভালোভাবে পরীক্ষা করেন। সামান্য সতর্ক ও নিজেদের প্রতি যত্নশীল হলে স্তন ক্যান্সারের মতো প্রাণঘাতী রোগ প্রাথমিক অবস্থাতেই ধরা পড়ে যায় ও পুরোপুরি সেরে যায়। (A few facts about breast cancer in Bangla)

স্তন ক্যান্সারের কারণ (Underlying causes of breast cancer)

সঠিক কারণ নির্ণয় করা এখনও সম্ভব না হলেও, কাদের এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি, তার একটা আন্দাজ করা যায়। মেয়েদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।

  • মেয়েদের স্তনে দুই ধরনের টিউমার হতে পারে; বিনাইন ও ম্যালিগন্যান্ট। বিনাইন টিউমার ক্ষতিকারক নয় এবং চিকিৎসায় সেরে যায়। কিছু বিনাইন টিউমার আবার স্তন ক্যান্সারের আশঙ্কা বাড়াতেও পারে। ম্যালিগন্যান্ট টিউমারে এক ধরনের ক্যান্সার জীব কোষ থাকে, যা সময়ের সাথে সাথে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এই সব জীব কোষ স্তন ছাড়াও শরীরের অন্যান্য জায়গায় নতুন টিউমার তৈরি করতে শুরু করে।
  • স্তন ক্যান্সার জিনবাহী রোগগুলির মধ্যে একটি। BRCA1 ও BRCA2 জিন উত্তরাধিকার সূত্রে শরীরে এলে তা থেকে স্তন ক্যান্সার হতে পারে। অর্থাৎ, একই পরিবারের কোনও নিকটাত্মীয়ের স্তনে ক্যান্সার হওয়ার ইতিহাস থাকলে, সেই পরিবারের মেয়ের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। শুধু স্তন না,পরিবারে কারও ভ্রূণকোষ বা মলাশয়ে ক্যান্সার থাকলেও পরবর্তী প্রজন্মের
  • মেয়েদের স্তনে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
  • বেশি বয়সে সন্তান হলে বা সন্তান না হলে এই ক্যান্সার হতে পারে।
  • বেশি বয়সে মাসিক বন্ধ হওয়া, বাচ্চাকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, গর্ভনিরোধক ট্যাবলেটের অত্যধিক ব্যবহার স্তন ক্যান্সারের জন্য দায়ী হতে পারে।
  • প্রচুর ফ্যাট জাতীয় খাবার খাওয়া, শাক সবজি না খাওয়া, দীর্ঘদিন ধরে প্রিজারভেটিভ দেওয়া খাবার খাওয়া স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়।
  • অতিরিক্ত বেশি ওজন যে সব মহিলার, তাদের এতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
  • সঠিক সাইজের ব্রা ব্যবহার করা উচিত। ঘরে থাকলে এবং রাত্রে ব্রা খুলে ঘুমনো উচিত। এতে স্তনে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা কমে।
  • ডিওডোরেন্ট কেনার আগে ভালো করে যাচাই করে কেনা উচিত। ডিওডোরেন্ট-এ অ্যালুমিনিয়াম বেইজড নামক উপাদান স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
  • যে সব মহিলারা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি করিয়েছেন, তাদেরও এই ক্যান্সার হতে পারে।

স্তন ক্যান্সারের উপসর্গ (Symptoms of breast cancer) 

  • স্তন বা বগলের নীচের দিকে মাংসপিন্ড গজিয়ে ওঠে।
  • দুইটি স্তনের আকার ও আয়তন লক্ষণীয় ভাবে আলাদা হয়।
  • নিপল ভিতর দিকে ঢুকে যায়। স্বাভাবিক অবস্থায় নিপল টিপে ভিতরে ঢুকিয়ে দিলে কিছুসময়ের মধ্যেই সে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে।স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এমনটা হয় না।
  • স্তনের ত্বকের রং সামান্য পরিবর্তন হয়।
  • নিপল থেকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে হলুদ বা সাদা তরল বের হয়ে আসে।
  • স্তনের ত্বক কুঁচকে যায়।

কী করতে পারেন আপনি? (What can you do?)

  • মাথায় রাখুন ‘নো- ব্রা- ডে’।
  • স্তনে হাত দিয়ে পরীক্ষা করার সময় যদি কোনও মাংসপিন্ডর মতো কিছু বুঝতে পারেন, সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার দেখান।
  • অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলো বিনাইন টিউমার হয় এবং চিকিৎসায় সেরে যায়। কিন্তু যদি এই বিনাইন টিউমারও চিকিৎসা না করিয়ে ফেলে রাখেন, তা হলে পরবর্তীকালে স্তন ক্যান্সার হতেই পারে।
  • কোনও রকম অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখলে ম্যামোগ্রাফি এবং পরবর্তী সব পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে নিন, আদৌ আপনি স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত কি না।
  • স্তন ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে,সারিয়ে তোলা সম্ভব। শরীরের অন্যান্য জায়গায় ক্যান্সার থাবা বসানোর আগেই তাকে নির্মূল করতে পারেন আপনি । কষ্টকর অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে, লজ্জা ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হবে আপনাকেই।
  • নিজে জানুন, অন্যকেও জানান। বাড়ির অন্য কোনও সদস্য বা চেনা কেউ এই রোগে আক্রান্ত হলে তার পাশে দাঁড়ান। অপ্রাসঙ্গিক সমালোচনা ছড়াবেন না বা কাউকে করতেও দেবেন না। স্তন ক্যান্সার ছোঁয়াচে রোগ নয় বা একজনের হলে পরিবারের অন্য কারও হয় না।

মানসিক সাহস, সামান্য সহানুভূতির হাত আর নিজের প্রতি একটু ভালোবাসা থাকলে জীবনের পথে বহু বিপদকে অবলীলায় ছুঁড়ে ফেলা যায়। নিজেকে ভালোবাসুন সবার আগে, বাকি ভালোবাসাটা না হয় রইলো অন্যদের জন্য।

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null