পরের মাসেই দিশার সন্তান হওয়ার কথা রয়েছে। অর্থাৎ পরের মাসেই ও ভর্তি হবে হাসপাতালে। ওর কোলে সন্তান আসবে। অন্যের মুখে মা হওয়ার কথা শুনে এলেও নিজে মা হওয়ার অভিজ্ঞতাটা যে একেবারে আলাদা, সেটা দিশা জানে। একটা সময় তো প্রসবযন্ত্রণার কথা ভাবলে ওর ভয়ই করত। আর কয়েকদিন পরে সেই দিনটি আসতে চলেছে। যেদিন একইসঙ্গে অসহ্য কষ্ট সইতে হবে। আবার তার পরের মূহূর্তটা হবে ওর জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত! (Risks and Benefits of Epidural for Delivery)
এর মধ্যেই ও আবার চিকিৎসকের কাছে চেক-আপ এর জন্য গিয়েছিল। কথা হতে হতেই ও জিজ্ঞেস করল, প্রসবের সময় যে অসহ্য ব্যথা তা কোনওভাবে কমানো যায় না? চিকিৎসক তখন বললেন এপিডিউরাল-এর কথা। প্রসবের আগে মায়ের স্পাইনাল কর্ডে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে বিশেষ ওষুধ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে দিশা আগে জানত না (Using Epidural Anesthesia During Labor: Benefits and Risks)। ও চিকিৎসককে এই ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলার অনুরোধ করলো।
এপিডিউরাল আসলে স্পাইনাল কর্ডের একটি বিশেষ স্থান। এই অংশকে অবশ করার পদ্ধতিকেই এপিডিউরাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা সংক্ষেপে এপডিউরাল বলা হয়। এই পদ্ধতিতে ব্যবহৃত ওষুধের নামও এপিডিউরাল। চিকিৎসক দিশাকে বোঝালেন অবশ করার ওষুধ হলেও এটি পুরোপুরি অ্যানাস্থেসিয়ার ওষুধ নয়। বরং অ্যানালজেসিক ও অ্যানাস্থেটিক দু’য়ের মিশ্রণে তৈরি হয় এপিডিউরাল। অ্যানালজেসিক-এর অর্থ এটি ব্যথার অনুভূতিকে মস্তিষ্কে যেতে বাধা দেয়। অন্যদিকে অ্যানেস্থেটিকের কাজ হল নির্দিষ্ট অঙ্গের স্নায়ুগুলোকে নিস্ক্রিয় করে দেওয়া। এই দুইয়ের প্রভাবে প্রসবের সময় মায়ের কষ্ট একেবারেই কমে যায়।
এপিডিউরাল প্রয়োগের পদ্ধতি অনুসারে বিশেষজ্ঞরা একে তিনভাগে ভাগ করে থাকেন।
আরও পড়ুনঃ সন্তান প্রসবের সময় সিজারিয়ান সেকশন; কোনও জরুরি অবস্থা না ঐচ্ছিক সিদ্ধান্ত!
#1. ব্যথা কমানো (Pain Relief): এপিডিউরাল প্রয়োগের মূল উদ্দেশ্যই হল প্রসবকালীন ব্যথা কমানো। এটি প্রয়োগের ফলে কোমরের নীচের অংশের বেশ কিছু সময়ের জন্য অবশ হয়ে যায়। তাই ডেলিভারির সময় লেবার প্রয়োগে মায়ের কষ্ট হয় না। (Medications for Pain Relief During Labor and Delivery)
#2. সজাগ থাকতে সাহায্য করে (It Helps to Stay Alert): এপিডিউরাল যেহেতু লোকাল অ্যানেস্থেটিক, তাই প্রসবের সময় এটি মাকে সজাগ থাকতে সাহায্য করে। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রসবের সময় অসহ্য কষ্টের ফলে মা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এক্ষেত্রে তেমন পরিস্থিতি তৈরি হয় না। বরং প্রসবের পুরো প্রক্রিয়াটিই তিনি চোখের সামনে দেখতে পান।
#3. বিশ্রাম নিতে সাহায্য করে (Helps to Take Rest): এপিডিউরাল প্রয়োগের ফলে মা বেশি বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পান। যাঁদের ক্ষেত্রে বেশি সময় লেবার প্রয়োগ করতে হয়, তাদের ক্ষেত্রে এটি বেশি উপকারী।
#4. অবসাদ কমায় (It Reduce Postpartum Depression): মা হওয়ার পর অনেক মহিলাই তীব্র মানসিক অবসাদের সম্মুখীন হন। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রসবকালীন যন্ত্রণা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনের সূচনা করে। তাই এপিডিউরালের ব্যবহার অবসাদের সম্ভাব্য বিপদ থেকে মাকে দূরে রাখে।
#5. ডেলিভারির সুবিধা (Effective for Surgical Procedure): অনেক মায়ের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ডেলিভারির জন্য নির্ধারিত সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সময় প্রয়োজন হচ্ছে। এই সময় চিকিৎসক এপিডিউরাল-এর সাহায্যে ডেলিভারিকেই সবচেয়ে নিরাপদ মনে করেন।
চিকিৎসক এপিডিউরালের সুবিধাগুলোর পাশাপাশি এর সম্ভাব্য বিপদের দিকগুলোও উল্লেখ করলেন। তার মতে, এপিডিউরালের সব ক’টি দিকই দিশার জেনে রাখা প্রয়োজন।
চিকিৎসকের কথা শুনে দিশা অনেকটাই আশ্বস্ত হল। এতদিন ওর এপিডিউরাল সম্পর্কে কোনও ধারণাই ছিল না। দিশার এরপর আর কোনও চিন্তাই ছিল না। সপ্তাহ তিনেক পরে যখন ওর ডেলিভারি হল, চিকিৎসক স্বাভাবিকভাবেই এপিডিউরাল প্রয়োগ করেন। এতে ওর কষ্ট অনেকটাই কম হয়। আর প্রথম যখন সন্তানের মুখ দেখল তখন আনন্দে ওর মন কানায়কানায় পূর্ণ। (Risks and Benefits of Epidural for Delivery)
আরও পড়ুনঃ কষ্টের দিন শেষ! ঘরোয়া উপায়ে সারিয়ে তুলুন কোষ্ঠকাঠিন্য
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null