কথা বলতে বলতেই অদিতি আর প্রীতির আলোচনায় উঠে এল বাচ্চাদের টনসিলাইটিস আর এডিনয়েডের সমস্যার কথা। ওরা দু’জনেই ছোটবেলার বন্ধু। কাজের সূত্রে বর্তমানে একজন থাকে আমেরিকায়, আরেকজন বেঙ্গালুরুতে। অদিতির মেয়ে অস্মি পাঁচের কোঠায় পড়ল। প্রীতির মেয়ে ঐশির বয়স এখন ছ’বছর। খুদেগুলোকে বড় করে তোলার নানা অভিজ্ঞতা ওরা কফিতে চুমুক দিতে দিতে ভাগ করে নিচ্ছিল। (Remedies for Enlarged Tonsils & Adenoids in Kids)
ঐশির যখন সাড়ে চার বছর বয়স, তখন ওর টনসিলাইটিস হয়। ওই সময় গলার কাছটা বেশ ফুলে গিয়েছিল। বাচ্চাদের যে এমনটা হয়, তা প্রীতি জানত না। ও যথেষ্ট ভয় পেয়ে যায়। তবে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পর তিনি নিশ্চিন্ত হতে বলেছিলেন। অদিতি জানতে চায়, চিকিৎসক কী কী বলেছিলেন? প্রীতি তখন সবটা বিস্তারিতভাবে জানাল।
জিভের পিছনে গলার দু’পাশে যে দু’টি লিম্ফ নোড থাকে, তাদেরই বলা হয় টনসিল। বিশেষজ্ঞদের কথায়, এই অংশ দু’টি বাইরের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে শরীর ভিতরের অঙ্গগুলোকে রক্ষা করে। এরা প্রতিরোধক অঙ্গের মতো কাজ করে। তবে বেশ কয়েকটি বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়ায় আক্রমণে টনসিলই সংক্রামিত হয়ে পড়ে। এতে ওই অংশ দু’টি ফুলে ওঠে। ডাক্তারি পরিভাষায় এই সংক্রমণেরই নাম টনসিলাইটিস।
টনসিলাইটিস খুদের যে কোনও বয়সেই হতে পারে। তবে দুই বছর বয়সের কমবয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা খুব বিরল। প্রিস্কুল বয়স অর্থাৎ তিন-চার বছর বয়সের পর থেকে যে কোনও সময়েই টনসিলাইটিস দেখা দিতে পারে।
টনসিলাইটিসের কয়েকটি সাধারণ লক্ষণের কথা চিকিৎসকরা প্রায়ই উল্লেখ করে থাকেন। প্রীতি সেগুলোই এক এক করে বলল।
টনসিলে সংক্রমণের প্রকৃতি অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা মূলত তিনপ্রকারের টনসিলাইটিস রোগের কথা বলেন।
#1. অ্যাকিউট টনসিলাইটিস (Acute Tonsillitis): ছোট্ট খুদের মধ্যে টনসিলাইটিস অত্যন্ত সাধারণ একটি সমস্যা। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রায় সব বাচ্চার ক্ষেত্রেই এই সংক্রমণ অন্তত একবার হয়েই থাকে। টনসিলের এই সংক্রমণ দশ দিনের কম সময় স্থায়ী হলে ডাক্তারি পরিভাষায় একে অ্যাকিউট টনসিলাইটিস বলা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অ্যাকিউট টনসিলাইটিস ঘরোয়া পদ্ধতিতেই সারিয়ে তোলা সম্ভব।
#2. ক্রনিক টনসিলাইটিস (Chronic Tonsillitis): টনসিলের সংক্রমণ দশ দিনের বেশি স্থায়ী হলে চিকিৎসাশাস্ত্রের পরিভাষায় একে ক্রনিক টনসিলাইটিস বলা হয়। এক্ষেত্রে টনসিল দুটো শক্ত হয়ে যেতে পারে। তবে চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে নিজে থেকেই অংশ দু’টি আগের মতো হয়ে যায়।
#3. রিকারেন্ট টনসিলাইটিস (Recurrent Tonsillitis): খুদের পরপর বেশ কয়েকবার টনসিলে সংক্রমণ হলে তাকে রিকারেন্ট টনসিলাইটিস বলা হয়। রিকারেন্ট টনসিলাইটিস সাধারণত বছরে চার থেকে পাঁচ বার ও পরপর দুই-তিন বছর হয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসক টনসিলেকটমি পদ্ধতিতে টনসিল দু’টিকে কেটে বাদ দিয়ে দেন। এই অপারেশনে শরীরের অন্য অঙ্গের কোনও ক্ষতি হয় না। খুব কম ক্ষেত্রেই এই অপারেশনে জটিলতা দেখা দেয়।
প্রীতির মুখে টনসিলাইটিস-এর বিস্তৃত বিবরণ শোনার পর অদিতির মনে পড়ে গেল অস্মির কথা। গতবছরেই অস্মি ভুগছিল এডিনয়েডের সমস্যায়। প্রীতি জিজ্ঞেস করলো অস্মির চিকিৎসক কী বলেছিল সে সময়? অদিতি চিকিৎসকের কথাগুলোই একে একে জানালো প্রীতিকে।
আরও পড়ুন: ছোট্ট শিশুকে সর্দির হাত থেকে বাঁচাতে বাড়িতেই বানান চ্যবনপ্রাশ ও কফ সিরাপ, পদ্ধতি রইল এখানে!
টনসিলের মতো এডিনয়েডের কাজ হল বাইরের বায়ুতে থাকা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করা। ছোট্ট খুদেদের শারীরিক প্রতিরোধক্ষমতা কম হওয়ায় ওদের এডিনয়েড সক্রিয় থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটির আকৃতি কমতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে টিন এজে এটি অবলুপ্ত হয়ে যায়। আমাদের নাসাপথের একদম শেষে থাকে এডিনয়েড। নাক দিয়ে শরীরে যাওয়া বায়ুর জীবাণুকেই প্রতিরোধ করে এই অঙ্গটি।
এডিনয়েডাইটিস হল এডিনয়েডের বড় হয়ে যাওয়া অবস্থা। পাঁচ বছরের কম বয়সি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই অঙ্গটিই প্রতিরোধক অঙ্গের মতো কাজ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাইরের ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে লড়তে লড়তেই এই অঙ্গটি ফুলে যায়। ডাক্তারি পরিভাষায় যার নাম এডিনয়েডাইটিস। এটি আসলে একপ্রকার সংক্রমণ যা ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া থেকেই হয়।
এডিনয়েড সম্পর্কে প্রীতি তেমন কিছু জানতই না। এতগুলো তথ্য শুনে ও রীতিমতো অবাক! তবে দু’জনেই দুজনের অভিজ্ঞতা শুনে উপকৃত তা বোঝা গেল। দু’জনেই ঠিক করলো, ছোট্ট ছোট্ট সোনাদের আর কী কী সমস্যা হতে পারে তা নিয়ে খোজখবর রাখবে। সেই মতো ওদের সুরক্ষাও দেবে। মা ছাড়া এমনটা আর কেই বা ভাবতে পারে! (Remedies for Enlarged Tonsils and Adenoids in Children)
আরও পড়ুন: ঘনঘন সংক্রমণ? স্বাস্থ্যরক্ষায় খুদেকে খাওয়ান প্রোবায়োটিকস্ সমৃদ্ধ খাবার!
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null