যেভাবে যত্ন নিলে সুন্দর হয় শিশুর চুল; বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে ১০টি সহজ টিপস!

যেভাবে যত্ন নিলে সুন্দর হয় শিশুর চুল; বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে ১০টি সহজ টিপস!

কোলের শিশুর মেঘবরণ চুল হবে, এমন স্বপ্ন তো সব মা-বাবাই দেখেন। কিন্তু সঠির যত্নআত্তি, বা আরও ঠিক ভাবে বলতে গেলে যত্নআত্তির টিপসগুলো না জানা থাকায় খানিক গোলমাল হয়ে যায়। হতে পারে শিশুর চুল তেমন হলই না, কিংবা হয়েও চুল পড়ার সমস্যায় জেরবার বেচারি, অথবা চুলের গোছা রুক্ষ, শুষ্ক। মা হয়ে এমন অবস্থায় মন খারাপ তো হবেই। আমরা বলছি, মন খারাপ নয় বরং জেনেবুঝে আর একটু সতর্ক হোন আপনি। একদম কচি বয়স থেকেই শিশুর চুলের যত্ন নিলে এমন সমস্যা কিন্তু এড়ানো যায় সহজেই। এখনের যুগে নিউক্লিয়ার পরিবারের গেড়োয় বড়দের থেকে হয়তো টিপসগুলো পাচ্ছেন না, তবু চিন্তা নেই। পুরনো সেই টিপসগুলো নিয়েই আজ আলোচনা করব আমরা। প্রতিবেদনটা একবার আওড়ে নিলেই হল, শিশুর চুলের যত্নে চাবিকাঠি থাকবে আপনার হাতে! (Shishur chuler jotno. Effective Tips for Baby Hair Care In Bangla)

শিশুর চুলের যত্নে ১০টি টিপস (10 Effective Tips for Baby Hair Care)

শিশুর চুল নিয়ে অনেকর অনেক ভ্রান্ত ধারণা আছে। কেউ মনে করেন জন্মের সাত দিনের মধ্যে চুল কেটে ফেলতে হবে। কেউ বলেন, ছোট বয়সে চুল লম্বা রাখলে পরর্বতীতে চুল পাতলা হয়ে যায়। সন্তান জন্মের পর অনেকের এমন নানা অযাচিত উপদেশ, পরামর্শ ভাবনায় ফেলে দিতে পারে মাকে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনেই তাই শিশুদের চুলের যত্নে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিন।

আরও পড়ুনসময়ের আগেই জন্ম নেওয়া শিশুর পরিচর্যায় টিপস!

চিকিত্‍সকরা সব সময় জানান, শিশুর বয়স অন্তত এক মাস হওয়ার পরে চুল ফেলা উচিত। এর আগে চুল কাটতে গেলে শিশুর নানা রকম সমস্যা হতে পারে। তবে খুব বেশি গরম আবহাওয়ায় শিশুর চুল কাঁচির সাহায্যে কিছুটা ছোট করে রাখা যেতে পারে। অনেকে বলেন ছোটবেলায় বারবার সব চুল কেটে ফেলে দিলেই চুল ঘন হবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা জানান, এ কথার কোনও ভিত্তিই নেই। আসলে চুল কাটলে চুলের গোড়া মোটা হয়, কিন্তু চুলের গোছ বা ঘনত্ব বাড়ে না। এখানে দেখে নিন শিশুর মাথার সুস্থ ত্বক আর ঝলমলে চুলের কিছু রহস্য!

#1. নিয়মিত স্নান (Bathing)

শিশুর মাথার ত্বক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে নিয়মিত স্নানের কোনও বিকল্প নেই। শিশুকে হালকা গরম জলে স্নান করালেও মাথা ধোওয়ানোর সময় স্বাভাবিক তাপমাত্রার জল ব্যবহার করুন। শিশুর মাথায় খুশকি হলে তা ভালো হয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত শিশুর চুলে একেবারেই তেল ছোঁয়াবেন না। শিশুর মাথায় জল দিতে হবে আস্তে আস্তে, যাতে কানে না জল ঢুকে যায়। সেই সঙ্গেই আঙুল দিয়ে চুল আঁচড়ানোর মতো করে শিশুর মাথার ত্বক পরিষ্কার করে দিতে হবে।

#2. শ্যাম্পু করা (Shampooing)

অনেক অভিভাবকই ঠান্ডা লাগার ভয়ে ছোট শিশুদের খুব একটা নিয়ম মেনে শ্যম্পু করান না। ভুল তো এখানেই করেন তাঁরা। রোজ দরকার নেই, তবে সপ্তাহে অন্তত তিনবার শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে শিশুর নরম চুল ধুইয়ে দেওয়ার প্রয়োজন থাকে বই কি। এই কাজে শিশুর উপযোগী শ্যাম্পুই ব্যবহার করুন। বাজারে অনেক ধরনের শিশুর জন্য়ই তৈরি শ্যাম্পু পাবেন। বড়দের শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না, কারণ এতে যে উপাদান থাকে তা বাচ্চার জন্য সহনশীল নয়!

#3. তেলের ব্যবহার (Oil Massage)

পুরো শরীর হোক কিংবা মাথার ত্বক, শিশুর জন্য় তেল মালিশ সবসময়ই উপকারি। এতে শিশুর ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, চুলের গোড়ায় পুষ্টি যায়। রাতভর শান্তিতে ঘুমাতেও পারে ছোট্ট সোনা। এরই সঙ্গে তেল মালিশের ফলে শিশুর মাথার ত্বক আর্দ্র থাকে, খুশকি হয় না। আন্দাজ মতো তেল হাতে নিয়ে শিশুর মাথায় গোল গোল করে মালিশ করুন, তবে চাপ দেবেন না। যে কোনও প্রাকৃতিক তেল ব্যবহার করুন, যেমন অলিভ অয়েল, নারকেল তেল ইত্যাদি।

#4. আঁচড়ানো (Combing)

নবজাতকের মাথার তালুতে হলদে বা বাদামি আঁশের মতো একটা স্তর পড়ে। একে ক্রেডল ক্যাপ (Cradle Cap) বলে। ক্রেডল ক্যাপ হয় মূলত মাথার তালুতে অনেক বেশি সিবাম বা তেল তৈরি হওয়ার ফলে। নিয়মিত চুল আঁচড়ে দিতে পারলে মাথায় রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং এই সিবাম থেকে নোংরা জমতে পারে না। এই সময় মাথায় কোনও ভাবেই পাউডার ছোঁয়াবেন না। বড় দাঁতের, নরম চিড়ুনি দিয়ে শিশুর চুল আঁচড়ে দিন। দিনে এক-দু’বারই যথেষ্ট।

#5. নেড়া মাথা, চুল কাটা (Shaved Head, Trim Hair)

যদি আপনি কর্মরতা হন, তা হলে ছোট্ট শিশুর চুলের যত্নে সবচেয়ে সহজ উপায় হল ওকে নেড়া করে দেওয়া। রোজের ঝক্কি তা হলে পোহাতেই হবে না। আর যদি নেড়া করতে মন না চায় তা হলে নিয়মিত চুল ছেঁটে দেওয়ার অভ্যাস করুন। চুলের আগা যদি নিয়মিত কাঁটছাঁট হয় তা হলে চুলও থাকে স্বাস্থ্যকর, সুন্দর। চুল ছোট থাকলে শিশুও থাকে অনেক স্বস্তিতে!

#6. লম্বা চুলের বাড়তি যত্ন (Extra Care for Long Hair)

যদি মনে হয় শিশুর মুখখানি লম্বা চুলেই বেশ মানায়, তা হলে বাড়তি সর্তক থাকতে হবে আপনাকে। এক্ষেত্রে নিয়মিত তেল মালিশ আর মাথার তালু পরিচ্ছন্ন রাখা মূল শর্ত। তবে তেল মালিশ করলেও তেলা মাথা বেশিক্ষণ রাখবেন না, এতে ধুলো, নোংরা বসতে পারে। অনেকেই আছেন, শিশুর মাথায় মজা করে ঝুটি বেঁধে দেন। এটা করবেন না, কেননা আপনার শিশু কথা বলতে পারে না। চুল শক্ত করে বাঁধলে কষ্ট হলেও সে বলতে পারবে না।

#7. জট এড়াতে কন্ডিশনার (Tangled Hair)

বড় চুল রাখলে সঙ্গে থাকবে জট পাকার সমস্যাও। আমরা বড়রা টেনে টেনে চুল আঁচড়ে জট ছাড়িয়ে নিতে পারি, ছোটদের ক্ষেত্রে কিন্তু সেই পদ্ধতি কাজে আসবে না। জোর করে জট ছাড়াতে গেলে ওর আঘাত লাগতে পারে। শিশুর চুলের জট ভাগানোর জন্য ছোট বয়স থেকেই তাই কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। শ্যাম্পুর পর আলতো হাতে কন্ডিশনার দিন শিশুর মাথায়। মিনিট দুয়েক রেখে ধুয়ে ফেলুন। শিশুর ত্বকের উপযুক্ত শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার কিনুন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে। চুল শুকালে আলতো করে আঁচড়ে দিন। Effective Tips for Baby Hair Care in Bangla. 

আরও পড়ুনভালো থাকুক ছোট্ট সোনার মণিজোড়া

#8. ঠিকঠাক জিনিস কিনুন (Choose the Right Product)

চুল কেন, শিশুর ব্যবহারের কোনও জিনিসই যেন বড়দের না হয়। বেবি প্রোডাক্টগুলো শিশুর শরীর আর সংবেদনশীল ত্বকের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই তৈরি হয়েছে। ওদের শ্যাম্পুগুলো এমন উপাদানেই তৈরি হয়, যা চোখে গেলেও চোখ জ্বলে না। মোট কথা, শিশুর চুলের যত্ন নেওয়াটা হাতিঘোড়া এমন কিছুই নয়!

#9. গরমে শিশুর চুলের যত্ন (Care in Summer)

গরমের দিনে শিশুরা সবচেয়ে বেশি সমসার সম্মুখীন হয়ে থাকে। অতিরিক্ত গরমের কারণে শিশুর মাথায় ঘাম হতে থাকে। এই ঘাম ঠিক সময় মুছে না দিলে শিশুর ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। ফলে সর্দি, কাশি শিশুদের লেগেই থাকে। তাই গরমকালে শিশুদের জন্য চাই বাড়তি যত্ন। অতিরিক্ত গরমে চুলের ত্বকে খুশকি বা ঘামাচি দেখা দিতে পারে। তাই শিশুকে দিনে অন্তত একবার চুল ধুয়ে দিতে হবে। গরমের দিনে চুল ছোট করে কেটে দিতে হবে। গরমে চুল যতটা সম্ভব ছোট রাখাই ভালো।

#10. ডাক্তারের পরামর্শ (Consult a Doctor)

শিশুর চুল ও মাথার ত্বকের যত্নে একবার অন্তত অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিন। বাচ্চাদের জন্য সাবান, শ্যাম্পু ও তেল ব্যবহারের আগে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারলে ভালো। এছাড়াও শিশুর চুলে চুলকানি বা ‌র‌্যাশ হলে সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। নির্দিষ্ট কোনও কোম্পানির তেল বা শ্যাম্পুতে শিশুর সমস্যা হলে এগুলোর ব্যবহার বন্ধ করে দিতে হবে।

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null