একদম দুধের শিশুই হোক বা সারা বাড়ি দাপিয়ে বেড়ানো বাড়ন্ত বাচ্চা, খাবার নিয়ে ঝামেলা করে না, এরকম নিপাট ভালোমানুষ বোধ হয় খুব কমই আছে। মা-বাবারাও এতে অভ্যস্ত। আজগুবি গল্প বলে বা নিত্যনতুন খেলা আবিষ্কার করে বাচ্চাকে তারা খাইয়েও দিতে পারেন। বাচ্চা খাবার খাওয়ার সময় খেতে না চাইলে তাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে খাওয়াতে হয়তো একটু বেশি সময় লাগে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে খেয়ে নেয়। এতে শরীরের কোনও ক্ষতি হয় না। কিন্তু জানেন কি, একটু বড় বাচ্চাদের বা যারা সদ্য স্কুল যেতে শুরু করেছে, তাদের একটা মানসিক রোগের লক্ষণ, খাবার খেতে না চাওয়া। আবার হতে পারে প্রচুর খেয়ে ফেলা। কিছু কিছু উপসর্গ দেখে সহজেই আপনি বুঝে যাবেন আপনার বাচ্চা এই রোগের শিকার কি না। এই পরিস্থিতিতে কী হয় বা কী করা উচিত? (Eating disorders in children – causes, effect and treatment in Bangla)
খাবারের ওপর এই ভীতি বা অনীহা কী কারণে হয় সেটা বিশেষজ্ঞরা এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। মনে করা হয়, এই রোগ জিনগত। আবার কোনও বাচ্চা যদি প্রচণ্ড মানসিক চাপে ভোগে, সবকিছু নিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকে বা ডিপ্রেশনের শিকার হয়, তা হলেও এই রোগ দেখা দিতে পারে।
স্কুলে যাওয়া বাচ্চারা বেশ মোটাসোটা হলে বা খুবই রোগা হলে বন্ধুরা, এমনকি অনেক সময় বাবা-মাও বাচ্চার চেহারা নিয়ে হাসাহাসি করে থাকে বা খোঁটা দিয়ে থাকে। কচি মনে এই জাতীয় সমালোচনা নেওয়ার ক্ষমতা থাকে না এবং বাচ্চা ডিপ্রেশনে ভোগে। ফল স্বরূপ খাবার খেতে চায় না বা ভাবে যে, খাবারের ওপরই চেহারা মোটা বা রোগা হওয়া নির্ভর করে।
৭-১২ বছরের বাচ্চারও এই রোগ হতে পারে।এতে বাচ্চা খাবার সময় বা খাবার গিলতে অস্বস্তি বোধ করে। হয়তো কোনও খাবার সে খুব আনন্দ করে খেতো, এখন সেই খাবার সে কিছুতেই খেতে চাইছে না। বাচ্চার মনে হয়, সে খাবার খেলে পেটে ব্যথা হবে বা সে বমি করবে। কেউ খাবার খেতে বললে বাচ্চা প্রচণ্ড রেগে যেতে পারে। এইভাবে দিনের পর দিন খাবার না খাওয়া বা অরুচি করে খাওয়ার জন্য বাচ্চার শরীর সঠিক পুষ্টি পায় না এবং সে ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ে।
এই রোগে আক্রান্ত বাচ্চা খাবার ছাড়া অন্য সবকিছু নিয়ে খেতে যায়। যে জিনিসগুলো খাবার জন্য নয় যেমন, সাবান, চক, বরফ, নোংরা, পড়ে থাকা চুল ইত্যাদি নিয়ে সে মুখে দেয়। একদম ছোট বাচ্চা, যে সবে হামা দিচ্ছে বা হাঁটছে, সে যদি এসব কিছু মুখে দিয়ে দেয়, তা হলে সেটা তার দুষ্টুমি। কিন্তু যে বাচ্চার বোধ-বুদ্ধি হয়েছে, স্কুলে যেতে শুরু করেছে বা আগে কখনও এই ধরনের আচরণ করেনি, সে এরকম করলে ভয়ের কারণ অবশ্যই।
অ্যানোরেক্সিয়া ছোট ছেলে বা মেয়ে, যে কারও হতে পারে। আশেপাশের মানুষ যেসমস্ত বাচ্চাদের দেখে বলেন যে ওজন কম বা অপুষ্টিতে ভুগছে, তারাই নিজেদের অতিরিক্ত মোটা বা overweight ভাবতে শুরু করে। তারা নিজেদের ওজন নিয়ে অত্যধিক সচেতন হয়ে পড়ে এবং খাবার খাওয়া কমিয়ে দেয়। আবার কখনও এমনও হয় যে প্রচুর খাবার খেয়ে নিয়ে বমি করে দেয়। প্রত্যেক গ্রাস খাবারের পরিমাণ যাচাই করতে শুরু করে এবং খাবারকে সন্দেহের চোখে দেখে। অ্যানোরেক্সিয়া বাচ্চার শরীরে ও মনে খুবই খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। সময়মতো ডাক্তার দেখালে এই ইটিং ডিসঅর্ডার সম্পূর্ণ নিরাময় হয়ে যায়। তবে কিছু অভ্যেস বাচ্চা ছোট থাকতেই গড়ে তোলা ভালো, এতে অনেক মানসিক ব্যাধি বা শারীরিক অসুস্থতা আটকানো যায়। যেমন, বাচ্চার চেহারা নিয়ে কখনও কারও সামনে হাসাহাসি করবেন না বা বাচ্চাকেও বলবেন না। কোনও খাবার কখনও ‘ঘুষ’ বা উপহার হিসেবে বাচ্চাকে দেবেন না। বাচ্চার মধ্যে কোনও অদ্ভুত আচরণ লক্ষ্য করলে তার স্কুলের বন্ধুরা কেমন এবং সে স্কুলে কেমন থাকে, সে বিষয়ে খোঁজ খবর নিন। সতর্ক থাকুন আর বাচ্চার সাথে বন্ধুর মতো মিশুন। রোগ-ব্যাধি এলেও তারা বেশি দিন থাকবে না কিছুতেই।
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null