কানে হঠাৎ ব্যথা-ইনফেকশন? ছোট্ট সোনাকে চটপট আরাম দেওয়ার রসদ আছে রান্নাঘরেই!

কানে হঠাৎ ব্যথা-ইনফেকশন? ছোট্ট সোনাকে চটপট আরাম দেওয়ার রসদ আছে রান্নাঘরেই!

দিব্যি খেলছিল হাত পা ছড়িয়ে, খেলনাপাতি জড়িয়ে; হঠাৎ কানে হাত দিয়ে একটু চুলকে, কান টেনে, এদিক ওদিক দেখে শুরু চিল- চিৎকার। বা নিঝুম রাতে সবাই ঘুমে কাদা, একরত্তির কান্নার আওয়াজে মাঝরাতে চোখ কচলে উঠে বসলো সব্বাই। দুই ক্ষেত্রেই, আপনি প্রথমে বুঝতেই পারলেন না, আপনার ছোট্ট সোনাটি অত কাঁদছে কেন? সবই তো ঠিকঠাক বাইরে থেকে, ন্যাপিও দিব্যি শুকনো, পেট কামড়ানোর কথাও তো না, তা হলে বাচ্চা কাঁদছে কেন? শান্ত হয়ে একটু খেয়াল করলেই বুঝে যাবেন, বাচ্চার হাত তার কানে এবং তার আশেপাশেই ঘুরছে। এবার বুঝলেন তো? বাচ্চার কানে ব্যথা শুরু হয়েছে। (Home remedies for ear infections in kids)

শিশুর কানে হঠাৎ ব্যথা? আছে সহজ সমাধান (Home Remedies For Ear Infections In Kids)

বাচ্চাদের মধ্যে এই কান ব্যথা হওয়ার প্রবণতা একটু বেশিই বলা চলে। নরম শরীরের ভিতর বা বাইরে, একটু এদিক ওদিক হলেই শুরু হয় তার অস্বস্তি। কানে ইনফেকশন বা শোওয়ার দোষ, কারণটা যাই হোক, ফলফলটা যে বড্ড কষ্টের, সেটাও কি আর আপনাকে বলে দিতে হয়! কানে ব্যথা হওয়া যে কতটা বিরক্তিকর, অস্বস্তিকর এবং কষ্টকর, সেটা আমরা সবাই কম বেশি জানি। কানে ইনফেকশন বা কানে ব্যথা হলে ওই ছোট্ট ছানাগুলোর কত কষ্ট হয়, ভাবুন তো! বাচ্চার সাথে সাথে মা-ও অস্থির হয়ে পড়েন তাকে একটু আরাম দিতে। শিশুর কানে অসময়ে হঠাৎ ব্যথা শুরু হলে, কী করলে চটজলদি আরাম পাবে শিশুটি; আপনার রান্নাঘরেই আছে তার উপায়। দেখে নিন একনজরে।

আরও পড়ুন: ফোকলা মুখে দাঁতের উঁকিঝুঁকি; কী করলে স্বস্তি পাবে ছোট্ট শিশুটি?

কেন হয় কান ব্যথা বা কানে ইনফেকশন? (Reasons for ear infections in kids)

কান ব্যথা হওয়ার কারণগুলি হল;

  • কোনও কারণে কানে সংক্রমণ।
  • সাইনাস।
  • কানে ময়লা মোমের মতো শক্ত হয়ে বসে গেলে।
  • দাঁতের অসুখ, ক্যাভিটি বা দাঁত ওঠা।
  • কোনও কারণে কানের পর্দায় আঘাত।
  • একদম ছোট বাচ্চার কানের ইউস্টেশিয়ান টিউব যদি কোনও কারণে তরলে ভর্তি হয়ে যায়, তা হলে কান ও গলার মধ্যে বাতাসের চাপের তারতম্য ঘটে। এর থেকে কানে ব্যথা হতে পারে। আবার বাচ্চার কানের এই ইউস্টেশিয়ান টিউব পুরোপুরি সুগঠিত হওয়ার আগেই কোনও কারণে বায়ুচাপের পার্থক্য হলে বা কানের ভিতরে অসুবিধা দেখা দিলে সেই পরিস্থিতি সামলাতে পারে না। ফলস্বরূপ, কানে ব্যথা হয়। বাচ্চার ক্ষেত্রে এই টিউবটি বড়দের তুলনায় সরু ও সমান্তরাল হয়, তাই এটি ব্লক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

বাচ্চার কানে ব্যথা বা ইনফেকশনের উপসর্গ (Symptoms of ear infection in kids)

  • বার বার কানে হাত দেওয়া বা কান টানা।
  • শিশু অস্থির হয়ে পড়ে।
  • ব্যথার কারণে কাঁদতে থাকে।
  • জ্বর।
  • ঘুমোতে পারে না।
  • চিবোতে বা খেতে চায় না।
  • কান থেকে তরল জাতীয় কিছু বেরিয়ে আসা।

ব্যথার উপশমে ঘরোয়া টোটকায় বাজিমাত! (Effective home remedies to cure ear pain in kids)

#1. রসুন-পোঁটলা (Garlic)

৩-৪ টি রসুনের কোয়া ছাড়িয়ে নিয়ে একটু জলে সামান্য নুন দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। এবার অল্প নুন জল সহ ওই কোয়াগুলো চটকে নিন। তারপর ওই চটকানো রসুন একটি ফ্লানেল বা উলের কাপড়ে মুড়ে, শিশুর যে কানে ব্যথা সেখানে চেপে রাখুন। রসুনের ব্যাকটেরিয়া নাশক ধর্ম কানের ব্যথায় আরাম দেয়। এছাড়াও রসুনে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও কানের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

#2. পেঁয়াজ সেঁক (Onion)

পেঁয়াজ গ্রেট করে নিন। এরপর ওই গ্রেট করা পেঁয়াজ থেকে হাতে চিপে রস বার করুন। ১-২ ফোঁটা রস শিশুর ব্যথা কানে দিন। পেঁয়াজের রসে তুলো ডুবিয়েও সেই তুলো বাচ্চার কানে আলতো করে চেপে ধরতে পারেন। পেঁয়াজের টুকরো যেন কোনও ভাবেই শিশুর কানে না ঢোকে সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখুন।

#3. পুদিনা পাতার রস (Mint leaves)

পুদিনা পাতার রস দুই ফোঁটা দিতে পারেন শিশুর ব্যথা কানে। পুদিনার জীবাণুনাশক ক্ষমতা কানের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

#4. কান ধরে দিন হালকা টান (Massage your baby’s ear)

না, কখনই বাচ্চার কান টানতে বা মুলতে বলছি না, বলবোও না। কথা হচ্ছে কান ধরে হালকা নাড়ানোর। কানের মধ্যে ইউস্টেশিয়ান টিউব কোনও কারণে তরল পূর্ণ হয়ে গেলে শিশুর কানে ব্যথা হয়। শিশুর কান ধরে হাল্কা হাল্কা নাড়াচাড়া করে দিলে, কানের ব্যথা কমতে পারে।

#5. অ্যাপেল সিডার ভিনিগার (Apple cider vinegar)

শিশুর যে কানে ব্যথা, সেখানে ১-২ ফোঁটা অ্যাপেল সিডার ভিনিগার দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে শিশুর মাথা কাত করে দিন। এতে কান দিয়ে আবার ওই ভিনিগার গড়িয়ে বেরিয়ে আসবে। এই ভিনিগারও কানের ব্যথা কমাতে কার্যকরী।

#6. ঈষদুষ্ণ সরষের তেল (Warm mustard oil)

সরষের তেল কুসুম গরম করে তার ১-২ ফোঁটা দিতে পারেন শিশুর কানে। একটা রসুনের কোয়া একটু থেঁতো করে নিয়ে সেটা তেলে ফুটিয়ে, তেল কুসুম গরম অবস্থায় এলে শিশুর কানে দিন ১-২ ফোঁটা।

#7. গরম সেঁক (Hot compress)

নুনের পোঁটলা করে বা তোয়ালে দিয়ে শিশুর কানে সেঁক দিন। গরম সেঁক যে কোনও ব্যথায় খুব কাজ করে। শিশুকে সেঁক দেওয়ার সময় নিজের কনুই দিয়ে তোয়ালে বা পোঁটলার উষ্ণতা দেখে নিন। সেঁক যেন আরামদায়ক হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।

আরও পড়ুনশিশুর জ্বর হলেই ওষুধ নয়, হাতে আছে ঘরোয়া উপায়!

#8. জল, ভিক্স আর ইউক্যালিপটাস অয়েল (Water, vicks and eucalyptus oil)

বাচ্চা একটু বড় হয়ে গেলে, এই টোটকাটি তার কাজে আসবে। একটা পাত্রে জল নিয়ে সেটা না ফোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর ওতে কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপটাস তেল আর ১ চা চামচ ভিক্স গুলে দিন। এরপর ওই মিশ্রণ থেকে বেরোনো ভাপ নাক দিয়ে টানতে বলুন বাচ্চাকে। এতে ব্যথা কমে, কানের ভিতর বায়ুচাপ কম হয় এবং কানের মধ্যে জমা তরল বেরিয়ে আসে।

#9. নাক পরিষ্কার করা ও সঠিক ভাবে শোওয়ানো (Clean your baby’s nose and keep right position in bed)

বাচ্চার যদি খুব সর্দি হয়ে থাকে, তবে নাকে জমা সর্দি কানের মধ্যে চলে আসলে কানে ব্যথা হয়। শিশুর নাক পরিষ্কার করে দিন সাবধানে। শিশুর কানে ব্যথা কমাতে নজর দিতে হবে শোওয়ানোর পদ্ধতির ওপরও। চিত হয়ে শিশুকে শুইয়ে দেবেন না। শিশুর তোষকের তলায় একটি বা দুটি বালিশ দিয়ে একটু উঁচু করে দিন, এরপর শিশুকে শোওয়ান। তোষকের ওপর বালিশ দিয়ে কিন্তু না, বালিশ দিতে হবে তোষকের নীচে। বাচ্চার যে কানে ব্যথা, সেই কান ওপর দিকে রেখে বাচ্চাকে অন্য পাশে শুতে দিন। এতে কানে জমা তরল সরে যেতে পারে এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামের ফলে বাচ্চাও চনমনে হয়ে ওঠে।

#10. চিউইং গাম (Chewing gum)

বড় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বিমানে চাপলে বা পাহাড়ি জায়গায় যদি বায়ুচাপের তারতম্যে কানে ব্যথা হয় বা কান বন্ধ মনে হয়, তা হলে তাকে চিউইং গাম চিবোতে দিন। এর ফলে কান খুলে যায় ও ব্যথাও হয় না।

কয়েকটি বিশেষ তথ্য:

  • শিশুর বয়স এবং কানে ব্যথার তীব্রতা মাথায় রেখে ঘরোয়া টোটকার প্রয়োগ করুন।
  • শিশুর কান থেকে যদি পুঁজ, রক্ত বেরিয়ে আসে তা হলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার দেখান।
  • শিশুর কান পরিষ্কার করার জন্য কোনও কিছু দিয়ে খোঁচাখুঁচি করবেন না। বিশেষজ্ঞের হাতেই শিশুর কান পরিষ্কার করান।
  • শিশুর জ্বর খুব বেশি হলে বা খুব কাঁদলে সত্বর ডাক্তার দেখান।
  • ঘরোয়া টোটকায় সাময়িক আরামের পর, কিছু সময় পরেই যদি আবার শিশুর ব্যথা শুরু হয়, তা হলে ডাক্তার দেখান।
  • কানে ব্যথার উৎস বোঝার চেষ্টা করুন। সাইনাসের কারণে কানে ব্যথা হলে সাইনাস কমানোর চিকিৎসা করান। আবার ক্যাভিটি থেকে ব্যথা হলে বা দাঁত ওঠার কারণে কানে ব্যথা হলে সেই অনুসারে ব্যবস্থা নিন।
  • বাচ্চাকে কোনও পেন কিলার নিজে নিজে কিনে খাওয়াবেন না। ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null