মাত্র কয়েকমাস হল শুভমিতা আর রথীন মা-বাবা হয়েছে। তাদের ছোট্ট সোনার ডাকনাম ফুলকি। তবে মা-বাবা হওয়ার আনন্দও যেমন, দায়িত্বও তো তেমনই। সেটা এখন দু’জনেই পদে পদে বুঝতে পরছে। ফুলকিকে দুধ খাওয়ানো থেকে পটি করানো পর্যন্ত সবমিলিয়ে একেবারে নাজেহাল অবস্থা। রথীন তো অফিস থেকে ফিরেই তাদের ছোট্ট সোনার দেখভাল করতে বসে পড়ে। এমনিতে ফুলকি বেশি কান্নাকাটি করে না, দুধ খায় শান্ত মেয়ের মতো। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে ডায়াপার পাল্টানোর সময় (Different Types of Diaper Rash) ও বেশ কান্নাকাটি করছে। ব্যাপারটা কী?
শুভমিতা আর রথীন, দু’জনের মনেই প্রশ্ন, পাশাপাশি ভয়ও। ডায়াপার পাল্টানোর সময় কোনও কারণে ব্যথা লাগছে না তো ছোট্ট ফুলকির? পরপর তিন দিন এমন কান্নাকাটির পর চতুর্থ দিন রথীন লক্ষ্য করল ফুলকির ডায়াপারের নীচের ত্বক বেশ লাল হয়ে গিয়েছে (Diaper Rash Pimples)। শুভমিতাকে দেখাতে সেও অবাক হল। এরপর দু’জনেই আর দেরি না-করে ফুলকিকে নিয়ে গেল শিশুস্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞের কাছে।
চিকিৎসক সমস্ত ঘটনা শুনে বললেন, ‘ফুলকির ত্বক এমন লাল হয়ে যাওয়ার কারণ ডায়াপার র্যাশ (Sisur Diaper Rash)। যা প্রায় সব শিশুদেরই হয়ে থাকে। তবে ফুলকির ব্যাপারটা একটু বাড়াবাড়ির দিকে গড়িয়েছে।’ তিনি ফুলকির জন্য ওষুধ লিখে দিলেন, পাশাপাশি বললেন এই নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু চিন্তার কিছু নেই বললেই তো, চিন্তা কমে না। সে দিন দু’জনের মাথাতেই একই প্রশ্ন ঘুরছিল। তা হল, ডায়াপার র্যাশ-টা কী (Baby Care Tips)? আর তা কতটা গুরুতর হতে পারে? ইন্টারনেটে এ নিয়ে সার্চ করার পর শুভমিতা সব কিছু বিস্তারিত জানতে পারল।
ডায়াপার র্যাশ সাধারণত দু’বছরের কম বয়সি শিশুদের ক্ষেত্রেই হয়। বিশেষ করে নতুন বসতে শেখা শিশুদের এমনটা হয়ে থাকে। তা ছাড়াও শক্ত খাবার খাওয়া শুরু করলে তা থেকেও ডায়াপার র্যাশ হতে পারে (Baby Health Tips)। এসবের পাশাপাশি ডায়াপার র্যাশ কতটা গুরুতর হতে পারে, গোড়া থেকে শেষ পর্যন্ত তারও একটা আন্দাজ পেল শুভমিতা। দেখে নেওয়া যাক সেগুলো।
#1. অতিসামান্য: র্যাশের গুরুত্ব অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা মোট ৫ রকম র্যাশের কথা বলেন, যার প্রথমটা হল অতিসামান্য ডায়াপার র্যাশ। ছোট্ট সোনার ডায়াপারের নীচে অল্প জায়গা জুড়ে সামান্য গোলাপিভাব ফুটে উঠলে বুঝতে হবে এটি ডায়াপার র্যাশের (ফুসকুড়ি/ Fuskuri) লক্ষণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি প্রায় সব শিশুরই হয়ে থাকে । তাই এ নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। আর এই ধাপে ওষুধেরও প্রয়োজন হয় না।
#2. সামান্য: ছোট্ট সোনার ডায়াপারের নীচে কিছুটা জায়গা জুড়ে হালকা গোলাপি ভাব ছড়িয়ে পড়েছে। গোলাপি অংশের মাঝেই খুব অল্প পরিমাণে লালভাব দেখা যাচ্ছে। লাল ভাব বলতে, সেখানে লাল রঙের ছোট ছোট ফুসকুরি (papules)-র মতো বৃদ্ধি দেখা যায়। চিকিৎসার পরিভাষায় এই র্যাশকে মাইল্ড বা সামান্য র্যাশ বলে। এর জন্য চিকিৎসকরা শিশুকে ওষুধ না দিলেও বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দেন।
#3. মাঝারি: এই ক্ষেত্রে ছোট্ট সোনার ডায়াপারের নীচের ত্বক শুষ্ক হতে থাকে। ত্বকে বেশ কিছুটা জায়গা জুড়ে গোলাপি ভাবটা ছড়িয়ে পড়ে। গোলাপি অংশের ভিতর বিভিন্ন জায়গায় লাল-লাল ভাবও বেড়ে যায়। এর সঙ্গে বাড়তে থাকে ফুসকুরির মতো বৃদ্ধিগুলোও। মাঝারি ধরনের এই র্যাশ সময় মতো চিকিৎসা না-করালে আরও বেড়ে যেতে পারে (How to Identify Diaper Rash)। মডারেট র্যাশের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ একান্ত জরুরি।
#4. মাঝারি থেকে গুরুতর: শিশুর ত্বকে এই ধরনের র্যাশ দেখা দিলে, তা সত্যিই চিন্তার বিষয়। কারণ আগের ধাপগুলোয় ত্বকের গোলাপিভাব হালকা থাকলেও এই ধাপে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে গোলাপি অংশের ভিতর বিভিন্ন জায়গায় থাকা লালভাবটাও স্পষ্ট হতে থাকে। ত্বকের কিছু অংশে আরও গভীর লালচে ভাব ফুটে ওঠে। ফুসকুরির সংখ্যাও বেড়ে যায়।
ফুসকুরি এক্ষেত্রে চোখে পড়ার মতো। ডায়াপারের নীচের ত্বক এই ধাপে প্রায় শুষ্ক হয়ে যায়। এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এই র্যাশ সারাতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধের প্রয়োজন।
#5. গুরুতর: র্যাশের এই ধাপটি সবচেয়ে ভয়ের। কারণ এই ধাপের ত্বকের বিভিন্ন রকম ক্ষতি হতে পারে। এই ধাপের লক্ষণগুলোও সহজেই চোখে পড়ে। এক্ষেত্রে ডায়াপারের নীচের ত্বক যথেষ্ট গোলাপি হয়ে ওঠে। গোলাপি অংশের ভিতর লাল জায়গাগুলো আরও ঘন হয়ে যায়। একদম টকটকে লাল রং-ও হয়ে যেতে পারে। ফুসকুরির সংখ্যাও অনেকটাই বৃদ্ধি পায়। ডায়াপারের নীচের ত্বকের আর্দ্রতা একেবারে হারিয়ে যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ এই সময় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নেওয়া উচিত (Sisur Diaper Rash)। নয়তো শিশুর ত্বকের বড়সড় ক্ষতি হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ প্যামপারস প্রিমিয়াম কিনুন, নিশ্চিন্তে থাকুন
র্যাশের প্রকৃতি অনুযায়ীও সমস্যাটিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেন শিশুস্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞরা। প্রকৃতি অনুযায়ী বলতে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়াপার র্যাশ শুধু যে ডায়াপার বা হাগু-হিসুর কারণে হয়, তা নয়। বরং এর পিছনে থাকতে পারে ফাংগাস, ব্যাকটেরিয়ার মতো কারণও। তাই চিকিৎসার আগে বুঝে নিতে হয় কোন ধরনের র্যাশে শিশুর ত্বক আক্রান্ত (Types of diaper rash)!
ডায়াপার র্যাশ গুরুতর হওয়ার আগেই যদি কিছু নিয়ম মেনে চলা যায়, তবে বাড়িতেই তা সারিয়ে তোলা সম্ভব (Sisur Jotno)। বিশেষজ্ঞরা এর জন্য বেশ কিছু উপায় বাতলে দিচ্ছেন।
কীভাবে সারিয়ে তুলবেন বাচ্চার ডায়াপার র্যাশ (Tips for Diaper Rash Treatment)
ডাক্তারের লিখে দেওয়া ওষুধ আর তার সঙ্গে কয়েকটা নিয়ম মেনে চলায় কয়েকদিনেই সুস্থ হয়ে ওঠে ফুলকি (Types of Diaper Rash)। পাশাপাশি হাঁফ ছেড়ে বাঁচে শুভমিতা আর রথীন। ডায়াপার র্যাশ সম্পর্কে শুভমিতার এখন সম্পূর্ণ ধারণা রয়েছে। আপনার বাচ্চাকে ভালো রাখতে তাই আপনিও মিলিয়ে নিন এই প্রতিবেদন।
আরও পড়ুনঃ ডায়াপার র্যাশ কেন হয়; সারিয়ে তুলতে ঘরোয়া উপায়
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null