স্তন্য়পান করানোর দিনগুলোয় মায়ের সঠিক ভাবে পুষ্টি নেওয়া খুবই আবশ্যক। দেখে নিন ডায়েট চার্ট!

স্তন্য়পান করানোর দিনগুলোয় মায়ের সঠিক ভাবে পুষ্টি নেওয়া খুবই আবশ্যক। দেখে নিন ডায়েট চার্ট!

আপনি কি সদ্য মা হয়েছেন এবং বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন? প্রেগন্যান্সির পরে অনেক দিন কেটে গেলেও, কেন বারবার খিদে পাচ্ছে এই নিয়ে ভাবছেন, তাই তো? আপনার ছোট্ট সোনা যখন আপনার বুকের দুধ থেকেই পুষ্টি পাচ্ছে, তখন আপনার সঠিক খাদ্যতালিকা কী হওয়া উচিত তাই নিয়ে কি খুব চিন্তা হচ্ছে?
প্রেগন্যান্সির সময়ে কী খাওয়া উচিত এবং কী খাওয়া উচিত নয়, এ ব্যাপারে অনেক উপদেশ শোনা যায়। কিন্তু, বাচ্চার জন্মের পর, বাচ্চাই যেন ধ্যানজ্ঞান হয়ে ওঠে। আপনি যেহেতু বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন, এক্ষেত্রে আপনার শরীরেও সাধারণ অবস্থার তুলনায় বেশি ক্যালোরির প্রয়োজন হয়। এজন্যই এইসব মায়েদের ঘনঘন খিদে পায়।  
শুধুমাত্র ক্যালোরি নয়, বুকের দুধ থেকে বাচ্চারা প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যেমন ক্যালসিয়াম, আয়রন পেয়ে থাকে। যদি এইসময় মায়েরা পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার না খায়, তা হলে তার নিজের শারীরিক ক্ষমতা কমে যেতে থাকে। সেজন্য বাচ্চাকে স্তন্য়পান করানোর দিনগুলোয় মায়েরও সঠিক ভাবে পুষ্টি নেওয়া খুবই আবশ্যক। আবার এটাও সত্যি যে, আপনার খাদ্যাভ্যাস যত ভালো হবে, আপনার বুকের দুধের গুণমান এবং পরিমাণও তত ভালো হবে।
সেজন্য, বাচ্চার যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি, আপনিও যাতে সঠিক ভাবে খাবার খান বা পুষ্টি নিতে পারেন, সেই বিষয়ে এখানে কিছু সহজ আলোচনা করা হলঃ

কী ধরনের খাবার আপনার খাওয়া উচিত? (What foods should you eat?)

কিছু খাবার আছে, যারা গ্যালেকটাগোজ (galactagogue) নামে পরিচিত। এইসমস্ত খাবার বুকের দুধের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। বাঙালিদের জন্য এরকম অনেক কিছু আছে, যা তারা খাদ্যতালিকায় ঢোকাতে পারে, যেমন,

  • মৌরি
  • মেথি
  • পোস্ত
  • গোটা জিরা
  • রসুন
  • লাউ
  • তিল
  • বার্লি

এছাড়াও, আরও অনেক কিছু আছে, যা আপনার বুকের দুধের পুষ্টিগুণ বাড়িয়ে আপনার বাচ্চার বেড়ে ওঠায় সাহায্য করতে পারে। এতে আপনার শরীরও সুস্থ থাকে। সেরকম কিছু খাবার হল,

  • অ্য়ামন্ড
  • দেশি ঘি
  • দুধ
  • জল
  • ডাবের জল
  • অঙ্কুরিত ছোলা
  • গাজর
  • অ্যাপ্রিকট

স্তন্যপান করানো মায়েদের খাদ্যতালিকা

স্তন্যপান করানো মায়েদের জন্য সুষম খাদ্যতালিকা (Healthy Diet For Breastfeeding Moms)

ওপরে উল্লিখিত সমস্ত কিছু মাথায় রেখে, এখানে আপনার জন্য একটি খাদ্যতালিকা বানানো হল, যা বাচ্চাকে স্তন্যপান করানো কালীন তিনটি আলাদা পর্যায়ে আপনার কাজে লাগবে।

প্রথম পর্যায়ঃ জন্মের পর থেকে ৪০ দিন (Stage 1: Birth to 40 Days)

এই সময়ে আপনার শরীরও ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকে। তাই, আপনার এমন কিছু খাওয়া প্রয়োজন যা সহজপাচ্য। বেশি পরিমাণে গ্যালেকটাগোজ (galactagogue), ফারমেনটেড ফুডস আর তরলজাতীয় খাবার খেলে এই সময়ে উপকার পাবেন।

  • তেলে ভাজা এবং মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • যেসব সব্জিতে গ্যাস হতে পারে, যেমন ফুলকপি, আলু, ভারী ডাল যেমন ছোলার ডাল, মাসকলাইয়ের ডাল এসব খাবেন না। মুগ ডাল খাওয়া এসময় ভালো।
  • আমিষ খাবার যেহেতু হজম হতে সময় নেয়, তাই এই সময় আমিষ এড়িয়ে চলাই ভালো।
  • প্রোটিনের জন্য ডিমের সাদা অংশ খেতে পারেন বা মুরগী মাংস দিয়ে স্যুপ বানিয়ে খেতে পারেন। কারণ, আমিষ স্যুপ সহজেই হজম হয়।

দ্বিতীয় পর্যায়ঃ ৪০ দিন থেকে ছয় মাস (Stage 2: 40 Days To Six Months)

এই সময়ে আপনি আপনার খাদ্যতালিকায় আরও অনেকরকম খাবার যোগ করতে পারেন। আপনার বাচ্চাও এই সময় বুকের দুধে অন্যরকম স্বাদ নেওয়ার জন্য তৈরি হয়ে যায়। যদিও, খাদ্যাভ্যাসে খুব বেশি রদবদল বারবার করা ঠিক হবে না। দুধের স্বাদ যেন প্রত্যেকদিন ভীষণভাবে পাল্টে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
যদি আপনার বাচ্চার পেটে ব্যথা হয় বা হজমে গোলমাল দেখা দেয়, তা হলে এটাও হতে পারে যে, আপনি নতুন কিছু খাওয়া শুরু করেছেন যা বাচ্চা হজম করতে পারছে না।
এই সময় আমিষ খাবার ও বেশি পরিমাণে ফল খাওয়া শুরু করতে পারেন। বেশি তেল-মশলা দেওয়া খাবার খাবেন না। বাচ্চা পাঁচ মাসের হয়ে গেলে, ভাজাভুজি জাতীয় খাবার খাদ্যতালিকা বা ডায়েটে আনতে পারেন। বাচ্চার বয়স পাঁচ মাস হবার পরেই এই খাবারগুলো খাওয়া ভালঃ

  • মুরগী বা ছাগলের মাংস
  • টক জাতীয় ফল
  • আলু
  • বিনস
  • ধোসা বা ইডলি
  • পেঁয়াজ
  • গোলমরিচ বা সামান্য ঝাল-মশলা দেওয়া খাবার

বুকের দুধের মাধ্যমে নতুন নতুন খাবারের স্বাদ পেলে, ৬ মাস বয়সের পর বাচ্চার বুকের দুধ খাওয়ার অভ্যেস ছাড়াতে সুবিধে হয়।

তৃতীয় পর্যায়ঃ ছয় মাস থেকে ২ বছর (Stage 3: Six Months To 2 years)

এই সময়ে বাচ্চা বুকের দুধ ছাড়াও অন্য খাবার খেতে শুরু করে। যদিও, বাচ্চা শক্ত খাবার খেতে শুরু করলেও একই পরিমাণে বুকের দুধ তাকে দিতে হতে পারে। সাত থেকে আট মাস বয়সের বাচ্চারা আস্তে আস্তে নতুন খাবারের স্বাদ বুঝে যায় এবং বুকের দুধ খাওয়া কমাতে শুরু করে।বাচ্চার হজমশক্তিও বেড়ে যায়।  তাই, আট মাসের পর আপনি স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া শুরু করে দিতে পারেন। অত্যধিক ঘি বা ফ্যাট জাতীয় খাবার খাওয়া আস্তে আস্তে কমিয়ে দিন।

স্তন্যপান করানোর দিনগুলোয় কী করবেন ও কী করবেন না (Do’s And Don’ts Of Eating When Breastfeeding)

  • প্রচুর পরিমাণে জল খান। শরীর আর্দ্র থাকলে বুকের দুধের পরিমাণ বাড়ে।
  • প্রথম তিন থেকে পাঁচ মাস সময়ে ওজন বাড়া নিয়ে চিন্তা করবেন না। আপনি কিছুদিন পরেই আপনার জীবনযাত্রার স্বাভাবিক নিয়মে ফিরে আসতে পারেন।
  • ৩ বার ভারী খাবার খাওয়া ছাড়াও দিনে ৫-৬ বার অল্প অল্প করে খান। ডেলিভারির পরে আপনার দুর্বল হয়ে যায়। তখন হজমশক্তি এইভাবেই ঠিক হতে পারে।
  • কোনও খাবার বাচ্চার পেটের সমস্যা তৈরি করলে, সেটা খাবেন না।
  • বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের একদম সকালে আর বেশ রাত্রে কিছু টুকিটাকি খাওয়ার প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে, ডেলিভারির পরের ৪০ দিন। এতে মায়ের শরীর সুস্থ থাকে এবং মা বাচ্চাকে পর্যাপ্ত দুধ খাওয়াতে পারে।
  • বাদাম খেলে তা আগে সারারাত জলে ভিজিয়ে খান, এতে তাড়াতাড়ি হজম হবে।
  • ক্যালোরি বিহীন খাবার খাবেন না। প্যাকেটের খাবার, প্রসেসড খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • মরশুমি বা স্থানীয় এবং পরিচিত খাবার খান, এতে আপনার শরীর সহজেই তা হজম করতে পারবে।

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null