গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের প্রভাব ও কীভাবে সুস্থ রাখবেন নিজেকে, জেনে নিন বিশদে!

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের প্রভাব ও কীভাবে সুস্থ রাখবেন নিজেকে, জেনে নিন বিশদে!

রক্তে চিনির মাত্রা বেশি! আজকাল ঘরে ঘরে এই রক্তে বেশি চিনি বা পোশাকি ভাষায় ডায়াবেটিস যেন বড্ড সাধারণ এক রোগ হয়ে গিয়েছে। যতই সাধারণ হোক, সঠিক চিকিৎসা না হলে, এই ব্লাড সুগার বা ডায়াবেটিস বা মধুমেহর পরিণাম কিন্তু মোটেই মধুময় হয় না। সাধারণত এই ডায়াবেটিস পরিবারের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বা জিনবাহী রোগ হলেও, অন্যদেরও এই রোগ হতে পারে। গর্ভাবস্থায় শরীরে বিভিন্ন হরমোনের দাপাদাপির কারণেও হবু মায়ের ডায়াবেটিস দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের প্রভাব ও কীভাবে সুস্থ রাখবেন নিজেকে, এই নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা। (Diabetes During Pregnancy: Symptoms, Risks and Treatment in Bangla. Pregnancy te diabetes)

#1.গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কেন হয়? (Causes of diabetes during pregnancy  in Bangla)

গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা এমন কিছু হরমোন নিঃসরণ করে, যা মায়ের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। হবু মায়ের প্যাঙ্ক্রিয়াস যে ইনসুলিন তৈরি করে, তা যদি ওই গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারে, তা হলে রক্তে চিনি বা শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। এভাবেই হবু মা গেসটেশনাল ডায়াবেটিসে (gestational diabetes) আক্রান্ত হয়। বাচ্চার ডেলিভারির পরেই এই ব্লাড সুগার কমে যায় ও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। Diabetes During Pregnancy.

#2.কোন কোন ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে? (You are likely to face diabetes during pregnancy if)

  • কনসিভ করার আগে যদি আপনার ওজন অত্যন্ত বেশি থাকে।
  • ব্লাড সুগারের মাত্রা বেশির দিকে।
  • আগে সন্তানের জন্ম দেওয়ার সময় ডায়াবেটিস হয়ে থাকলে।
  • পরিবারে নিকটাত্মীয়ের কারও ডায়াবেটিস থাকলে।
  • আগে বেশি ওজনের বা মৃত সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকলে।
  • ব্লাড প্রেসার হাই থাকলে বা অন্য কোনও শারীরিক জটিলতায় ভুগলে।
  • অনিয়মিত খাওয়া-দাওয়া ও জীবনযাত্রা।

#3.ডায়াবেটিস রোগের উপসর্গ (Symptoms of diabetes during pregnancy)

  • বার বার গলা শুকিয়ে যাওয়া।
  • ঘন ঘন প্রস্রাব পাওয়া।
  • যোনি মুখে বারবার ইনফেকশন হওয়া।
  • অতিরিক্ত ক্লান্তি ভাব।

#4.গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকার ঝুঁকি (Risks of having diabetes while pregnant)

গর্ভাবস্থায় হাই ব্লাড সুগার যদি সঠিক মাত্রার ওষুধ ও ডায়েটের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ না করা হয় তা হলে,

  • গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকলে মায়ের রক্তচাপ বেড়ে যায়।
  • হবু মায়ের প্রি-এক্লাম্পশিয়ার ঝুঁকি অনেকাংশেই বেড়ে যায়।
  • গর্ভস্থ বাচ্চার ওজন বেশি হয় এবং বাচ্চা আকারেও বড় হয়। ফলস্বরূপ, বাচ্চা প্রসবের সময় অসুবিধা ও জটিলতা দেখা দেয়।
  • বাচ্চা মৃত অবস্থায় জন্মানোর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • সময়ের আগে প্রসব বেদনা উঠতে পারে এবং প্রসব হয়ে যেতে পারে।
  • সদ্যোজাত বাচ্চার জন্ডিস হতে পারে বা রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যেতে পারে।

#5.যাদের আগে থেকেই ডায়াবেটিস আছে, তারা কী করবেন? (How should you plan your pregnancy if you are diabetic?)

যেসব মহিলা ডায়াবেটিক বা নিয়মিত ব্লাড সুগারের ওষুধ খান, তারা প্রেগন্যান্সি বিষয়ে সতর্ক থাকুন। একটা সুস্থ স্বাভাবিক ডেলিভারির জন্য আপনার প্রয়োজন উপযুক্ত প্ল্যানিং–এর। যে সময়ে আপনি কনসিভ করতে আগ্রহী, তার অন্তত ৬-৭ মাস আগে ডাক্তারের কাছে ভালো করে পরীক্ষা করিয়ে নিন। ওষুধ ও ডায়েটের সাহায্যে ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে এলেই কনসিভ করার চেষ্টা করুন। কনসিভ করার পরে নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিন ও ব্লাড সুগার মাপান। একজন ডায়েটিশিয়ানের কথামতো খাওয়া দাওয়া করা সবথেকে ভালো হবে আপনার জন্য।

#6. কী কী বিষয়ে সতর্ক থাকবেন? (Be careful about these)

  • শুধু প্রেগন্যান্ট হবার পরেই না, নিজের জীবনযাত্রার মান উন্নত করুন কনসিভ করার আগে থেকেই।
  • যারা প্রেগন্যান্ট হওয়ার কথা ভাবছেন, নিজের শরীরের যত্ন নিন। অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে ফেলুন। মায়ের ওজন ঠিক থাকলে অনেক শারীরিক সমস্যার মোকাবিলা সহজেই করা যায়।
  • উপসর্গের ওপর ভিত্তি করে ব্লাড সুগার মাপানোর সময় ঠিক করবেন না।নির্দিষ্ট সময় অন্তর ব্লাড সুগার মাপিয়ে নিন।
  • ডাক্তার বা ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার খান।
  • দিনে প্রচুর পরিমাণে জল খান।
  • ব্লাড সুগার থাকলে মিষ্টি জাতীয় কোনও খাবার, চিনি, কোকজাতীয় পানীয়,কেক, আলু ইত্যাদি খাবেন না।
  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ খান। ওষুধের ডোজ ডাক্তারকে ঠিক করতে দিন। কারও কথা শুনে বা নিজে নিজে ওষুধের ডোজ কমানো-বাড়ানো করবেন না।
  • ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে প্রেগন্যান্ট থাকাকালীন একটু হাঁটাচলা করুন বা হাল্কা ব্যায়াম করুন। প্রেগন্যান্ট থাকা অবস্থায় হাল্কা শারীরিক কসরত বা হাঁটা, মা ও সন্তান দুজনের জন্যই ভালো। এটা প্রসবের জটিলতাও কম করে। ব্যায়াম করলে তা অবশ্যই পেশাদার ট্রেনারের তত্ত্বাবধানে করবেন।
  • অনেক মায়ের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইনসুলিন ইঞ্জেকশন দেওয়ার প্রয়োজন হয়।ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এই ইঞ্জেকশন নিন।
  • অনেক মহিলারই কনসিভ করার পরে ডায়াবেটিস হয়। বাচ্চা জন্মের কিছুদিনের মধ্যে যদি ব্লাড সুগার লেভেল স্বাভাবিক না হয়,দেরি না করে ডাক্তার দেখান।

একটু সচেতন থাকা আর নিয়ম মেনে চললেই হাই ব্লাড সুগার বা ডায়াবেটিসের মোকাবিলা করা যায়। মা ও সন্তানের স্বাস্থ্যের ওপরও এর কোনও খারাপ প্রভাব পড়ে না। প্রয়োজন শুধু সঠিক সময়ে চিকিৎসা আর নিয়মিত জীবনযাত্রা। মা হওয়ার সময় অনেক চ্যালেঞ্জই নিতে হয় মেয়েদের। ভয় পাবেন না, অহেতুক চিন্তা করবেন না। মন ভালো রাখুন, শরীরও ভালো থাকবে।

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null