টুকটাক অসুখ-বিসুখে সহজ-ঘরোয়া টোটকা; শিশুর সুস্থতায় সব মায়েরই যা জানা দরকার!

টুকটাক অসুখ-বিসুখে সহজ-ঘরোয়া টোটকা; শিশুর সুস্থতায় সব মায়েরই যা জানা দরকার!

মনে পড়ে সেই দিনগুলো, টুকটাক কিছু হলেই যখন তোমার দিদা-ঠাম্মা ছুটতেন রান্নাঘরে। কিছু না কিছু ওষধি বেরোতোই বেরোতো তাঁর হেঁসেল থেকে। আর সেটা খেলেই কেল্লাফতে!
আমাদের সব্বার জীবনেই এমনটা ঘটেছে, কিন্তু আজও সেই টোটকাগুলো যেন রহস্যই থেকে গিয়েছে! ওষুধপত্তরও কখনও সখনও হার মেনেছে, কিন্তু দমে যায়নি দিদা-ঠাম্মার টোটকা। এখন মা হয়েছো তুমি, কোলের শিশুর জন্য তোমারও কখনও সখনও প্রয়োজন হবে বাঙালিয়ানার মজ্জায় মজ্জায় মিশে থাকা চিরাচরিত সেই টোটকাগুলো। আজকের প্রতিবেদনে সেগুলো নিয়েই আলোচনা করব আমরা। রান্নাঘরেই যার হদিস পাবে তুমি, টুকটাক অসুখ-বিসুখে স্বস্তি পাবে তোমার সন্তান! (Bengali home remedies. dadi nani ke nuskhe)

দেখে নাও দিদা, ঠাম্মার ১১ টোটকা; শিশুর সুস্থতায় সব মায়েরই যা জানা দরকার!

#1. জ্বর হলে পেঁয়াজ (Onion for fever)

বাঙালি হোন বা না হোন, পেঁয়াজের উপকারিতার কথা জনে জনে জানা! হয় রান্নায় নয় নানা ঘরোয়া টোটকায়, বাঙালি ঘরে পেঁয়াজ থাকবেই থাকবে। আপনার শিশুর যদি জ্বরজারি হয়, তা হলে দেখবেন দিদা-ঠাম্মারা এগিয়ে এসে কাঁপা কাঁপা গলায় বলছেন, ‘নাতির পায়ের তালুতে খানিক পেঁয়াজ ঘষে দে-রে, জ্বর কমে যাবে এখনই’। আপনি এই যুগের মা মানছি, ওষুধপত্তরেই আপনার ভরসা বেশি, তা-ও জানি। তা সত্ত্বেও বলছি, পেঁয়াজ ব্যবহারে কোনও ক্ষতি কিন্তু নেই। এতে আপনার শিশুর জ্বর তো কমবেই, হাতে-পায়ে ব্যথা থাকলে তা-ও পালাবে!

#2. কলিক পেন-এ হিং (Asafetida for colic pain)

কলিক পেন সারানোর অন্য়তম ঘরোয়া টোটকা হল হিং। এক টেবিল-চামচ গরম জলে অল্প হিং-গুঁড়ো মিশিয়ে বাচ্চাকে দিতে পারেন। হিং-এর স্বাদ বা গন্ধ আপনার শিশুর ভালো না লাগলে কিছুটা হিং হাতে নিয়ে ওর পেটে মালিশও করতে পারেন। এতে কলিক পেন তো পালাবে বটেই, সেই সঙ্গে আপনার শিশু রেহাই পাবে কোষ্ঠকাঠিন্য়ের সমস্যা থেকেও। তা-ও বলব, যদি হিং-এর জলটা খাওয়াতে পারেন, সেটাই অনেক বেশি কার্যকরী হবে।

আরও পড়ুনবমি, পেট খারাপ? বাচ্চার জন্য ঘরোয়া প্রতিকার

#3. সর্দি-কাশিতে কর্পূর (Camphor for chest congestion)

শিশুর সর্দি-কাশিতে বাজার চলতি কোনও ভেপার রাব কিনে ঘরে মজুত করার কোনও প্রয়োজনই নেই, যতক্ষণ টোটকাগুলো জানা থাকবে আপনার। ঋতুবদলে বুকে কফ জমা, সর্দি-কাশি, তার থেকে জ্বর জারি হতেই পারে আপনার শিশুর। নারকেল তেলে কিছুটা কর্পূর গরম করে নিন। গলা ধরা, বুকের কফ দূর হয়ে যাবে সহজেই। কর্পূর আর নারকেল তেলের মিশ্রণ শিশুর শরীর গরম লাগে, সর্দি-কাশি আবার হওয়া থেকে প্রতিরোধো করে। তা বাদে নারকেল তেলেও আরাম পায় আপনার শিশু, যার জন্য রাতভর নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে ও।

#4. সদ্যোজাতর গ্যাস আর কলিক পেন-এর সমস্যায় সরষের তেল (Mustard oil massage for gas and colic pain in infants)

কলিক পেন থেকে শিশু যদি খিটখিটে, কাঁদুনি হয়ে ওঠে, তা হলে ওকে আরাম দিতে পারে কেবল সরষের তেল! শিশুর পেটে হালকা গরম সরষের তেল মালিশ করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, শিশুর হজম ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে তারও দ্রুত নিষ্পত্তি হয়। সরষের তেল মালিশে আরাম পায় শিশু, রাতভর ওর ঘুমও হয় ভালো। সদ্যোজাত শিশুর গ্যাস-এর সমস্যা সমাধানে জাদুর মতো কাজ করে এই টোটকা!

#5. সংক্রমণে হলুদ-দুধ (Haldi doodh for infections)

খুদে হোক কিংবা বড়, সংক্রমণের সাথে লড়াই করতে হলুদ দেওয়া দুধের চেয়ে ভালো কিছুই হয় না। গরম দুধে এক চিমটে হলুদ সংক্রমণ, ইনফেকশন এড়াতে
মোক্ষম ওষধি। রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে এতে। হলুদে আসলে জীবাণুনাশক উপাদান থাকে, পরবর্তীতে শরীরে যাতে আর কোনও জীবাণু বাসা না বাঁধতে পারে, সেটাই নিশ্চিত করে হলুদ মেশানো দুধ।

#6. কাটাছেঁড়ায় হলুদ (Turmeric for cuts and scrapes)

কাটাছেঁড়ায় হলুদ গুঁড়ো, কিংবা কাঁচা হলুদের পেস্ট-এর চেয়ে ভালো টোটকা আর কিছুই হতে পারে না। হলুদের অ্যান্টি-সেপটিক উপাদান খোলা ঘায়ে লাগালে সংক্রমণের ভয় থাকে না। এরই পাশাপাশি হলুদের গুণে ক্ষত স্থানের ব্যথা সেরে যায় প্রায় সঙ্গে সঙ্গে। ক্ষত নিরাময়ও হয় খুব তাড়াতাড়ি।

#7. সর্দি-কাশিতে গোলমরিচ, জিরা, গুড় (Black pepper, cumin and jiggery concoction for colds)

শিশুর যদি নাক বন্ধ হয়ে যায়, শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয় , গোলমরিচ-জিরা-গুড়ের মিশ্রণই আরাম দিতে পারে ওকে। বুকে কফ জমে থাকলেও নিরাময় মেলে এতে, শ্বাষকষ্টের সমস্যা থাকলে আরাম মেলে তাতেও। গোলমরিচ-জিরা জীবাণু প্রতিরোধেও সাহায্য করে, সংক্রমণ ঠেকাতেও সাহায্য করে এই টোটকা!

#8. পেট খারাপে কলা (Banana for loose motions)

শিশ যদি পেট খারাপের সমস্যায় ভোগে, তা হলে ওর শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম বেরিয়ে যায়। কলা-ই অসুস্থতায় শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা ঠিক রাখে। এ ছাড়াও কলায় আছে প্রচুর আঁশ মানে ফাইবার, যাতে পেট খারাপের সমস্যা তাড়াতাড়ি মিটে যায়। চটজলদি আরাম পায় আপনার শিশু।

#9. পেটে ব্যথায় আদা (Ginger for tummy aches)

হজমের সমস্যা সমাধানে সবচেয়ে পুরনো টোটকা হলো আদা! আপনার শিশু যদি পেটে ব্যথায় কষ্ট পায়, গা বমি ভাবে দিনভর কিছুই মুখে না তোলে, তা হলে আদা আর মধুই নিমেষে আরাম দিতে পারে ওকে। আদা থেকেই হজমে সাহায্যকারী কিছু তরল তৈরি হয়, যাতে শিশুর হজম তাড়াতাড়ি হয়। হজম সম্পর্কিত যে কোনও সমস্যাতেই শিশুর জন্য নির্ভয়ে আদার সাহায্য নিতে পারেন।

#10. গুটি বসন্তে নিমের পেস্ট (Neem paste for chicken pox)

ছেলেবেলায় কোনও না কোনও সময় একবারটি অন্তত হাম, বসন্ত বা গুটি বসন্ত হবেই হবে আপনার শিশুর। দরকারি ওষুধপত্রের সাথে ওর শরীরে যদি নিমের পেস্ট লাগানো যায়, অথবা শিশুর স্নানের জলে কয়েকটা নিমের পাতা ফেলে দেওয়া যায় তা হলে এ ধরনের সংক্রমণ থেকে কোনও দাগ থেকে যায় না শরীরে। এতে ত্বকের চুলকানি ভাব, অস্বস্তিও কমে। সবই নিমের জীবাণুনাশক, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতার কামাল!

আরও পড়ুনবাচ্চার সর্দি-কাশির ভয়? আর নয়!

#11. গা-বমি ভাব এড়াতে লেবু (Lemon for motion sickness)

বেড়াতে গেলেই কাহিল হয়ে পড়ে শিশুটি? এক টুকরো লেবু হাতে নিয়ে গাড়িতে উঠতে বলুন ওকে, ঠিক যেমনটি আপনার দিদা-ঠাম্মা করতে বলতো আপনাকে। গা-বমি ভাব হলেই মুখে নিয়ে চুষে নিক, লেবু রসের স্বাদ গা-গুলানো কমিয়ে দিতে সাহায্য করবে অনেকটাই!

দেখুন, বলতে বলতে ১১টি টোটকার হদিস দিয়ে দিলাম। আপনার শিশুর জন্য আদৌ এগুলো কাজে লাগলো কি না, জানাতে ভুলবেন না যেন। যে কোনও দরকারে পাশে আছি, আমরা। হাত বাড়িয়ে বন্ধুত্ব করে নিলেই হলো! (Dadi nani ke nuskhe in Bangla)

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null