বাচ্চাকে কোন বয়স থেকে গোরুর দুধ খাওয়ানো উচিত এবং এর উপকারিতাই বা কী?

বাচ্চাকে কোন বয়স থেকে গোরুর দুধ খাওয়ানো উচিত এবং এর উপকারিতাই বা কী?

‘দুধ না খেলে, হবে না ভালো ছেলে’, আমাদের খুব পরিচিত একটি গানের লাইন এইটি। লেখক কি আর এমনি এমনিই গান লিখে ফেলেছেন নাকি? এই লাইনের প্রসঙ্গটা যে বড্ড বেশি বাস্তব-ছোঁয়া। দুধের গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে আছেন মা, সামনে কাঁচুমাচু মুখ করে বসে আছে তার পুত্ররত্ন বা কন্যারত্নটি। বা ধরুন, বাড়ন্ত বাচ্চাটি গ্লাস ভর্তি দুধ যতটা না খাচ্ছে, দুধ দিয়ে নিজের ছোট্ট ঠোঁটের ওপর গোঁফ বানাতে তার আগ্রহ বেশি। আবার হতে পারে, অতিশয় লক্ষ্মী ছানা একটি, ঢকঢক করে গ্লাসের দুধ শেষ ১ থেকে ১০ গোণা শেষ না হতেই। ছবিগুলো যতই ছড়ানো ছিটানো হোক, কেন্দ্রবিন্দু কিন্তু একটাই; দুধ। নির্দিষ্ট একটা বয়সের পর বাড়ন্ত বাচ্চার সম্পূর্ণ বিকাশে দুধের অর্থাৎ গোরুর দুধের গুরুত্ব অপরিসীম। চটপট বেড়ে ওঠা ছটফটে দস্যিদের জন্য উপযুক্ত সুষম খাবারের মধ্যে অন্যতম একটি গোরুর দুধ। জন্মের পর থেকে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত বাচ্চাকে মায়ের দুধ ছাড়া অন্য কিছু খাওয়ানোর প্রশ্ন আসে না। তার পরে সে ফর্মুলা খেতে শুরু করে; সেই ফর্মুলা হতে পারে গোরুর দুধকে বিশেষ ভাবে প্রসেস করে তৈরি। কিন্তু গোরুর দুধ বাচ্চাকে সরাসরি খাওয়ানোর একটা নির্দিষ্ট বয়স আছে। বাচ্চাকে কখন থেকে গোরুর দুধ খাওয়াবেন এবং এর উপকারিতাই বা কী? দেখে নিন একনজরে। (When to introduce COW MILK to your baby? Sishuke kokhon gorur dudh deben? Cow’s milk for babies in Bangla)

গোরুর দুধ খাওয়ানো শুরু করতে বাচ্চার আদর্শ বয়স (When should you introduce cow’s milk to your baby)

বাচ্চার বয়স ১৮ মাস হলে তবেই ওকে গোরুর দুধ খেতে দিন।

১৮ মাসের কম বয়সি বাচ্চাকে গোরুর দুধ দেওয়া উচিত নয় কেন?( Reasons you should not give cow’s milk for babies before 18 months)

যেসব বাচ্চারা বুকের দুধ ঠিকভাবে পায় না বা যাদের বয়স ৬ মাস পেরিয়ে যায়, তারা বিশেষ ভাবে প্রসেস করা গোরুর দুধের ফর্মুলা খায়। গোরুর দুধে প্রোটিন হিসেবে যে কেসিন থাকে, তা মায়ের দুধে উপস্থিত কেসিনের পরিমাণের প্রায় দশ গুণ বেশি। সাধারণ গোরুর দুধ তাই শিশু হজম করতে পারে না। শিশুর খাদ্যোপযোগী করার জন্য ফর্মুলায় ব্যবহৃত প্রোটিনকে ভেঙে দেওয়া হয়। গোরুর দুধে উপস্থিত প্রোটিন ও মিনারেলস কচি বাচ্চা হজম করে উঠতে পারে না এবং কচি পাচনতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে গোরুর দুধ। আবার একদম ছোট্ট বাচ্চাদের পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি, আয়রন এবং অন্যান্য পরিপোষক গোরুর দুধে পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে না। এছাড়াও, ১৮ মাসের কম বয়সি বাচ্চার সার্বিক পুষ্টিতে উপযুক্ত উন্নতমানের ফ্যাটের চাহিদা মেটাতেও অপারগ এই দুধ।

গোরুর দুধের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ (Nutritional benefits of cow’s milk)

একটা নির্দিষ্ট বয়সের পরে অর্থাৎ ১৮ মাস হয়ে যাওয়ার পরে গোরুর দুধকে অন্যতম সুষম খাবার হিসেবে ধরা হয়। বাড়ন্ত বাচ্চার পূর্ণ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই গোরুর দুধ; যেমন,

  • প্রোটিনের অন্যতম ভালো উৎস গোরুর দুধ বাড়ন্ত বাচ্চার পেশী তৈরিতে সাহায্য করে ও পেশী মজবুত করে তোলে।
  • ক্যালসিয়ামে ভরপুর গোরুর দুধ দাঁত ও হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো করে। বাচ্চার ত্বক ও চুলও ভালো হয়।
  • গোরুর দুধে ভিটামিন ডি থাকে, যা শরীরকে ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে।
  • গোরুর দুধে থাকা ফসফোলিপিড (phospholipids) ও গ্লাইকস্ফিঙ্গলিপিড (glycosphingolipids) বাচ্চার স্নায়ুতন্ত্রের কোষ তৈরিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। মস্তিষ্কের বিকাশও হয় ভালো ভাবে।
  • গোরুর দুধের কার্বোহাইড্রেট শিশুকে সারাদিনের এনার্জির জোগান দেয়।
  • গোরুর দুধে উন্নতমানের সমস্ত পুষ্টিগুণ থাকার কারণে বাড়ন্ত বাচ্চার জন্য এটি আদর্শ।

Also read: বাচ্চার ওজন বাড়াতে বেশি খাওয়াচ্ছেন? সাবধান!

প্রতি ১০০ গ্রাম গোরুর দুধে উপস্থিত পরিপোষকের নাম এবং পরিমাণ (Nutritional value per 100 gram of whole cow-milk)

United States Department of Agriculture-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি ১০০ গ্রাম গোরুর দুধে উপস্থিত পরিপোষকের নাম এবং পরিমাণ নীচে চার্টের আকারে দেওয়া হল।

chart

বাড়ন্ত বাচ্চাকে দৈনিক কতটা করে গোরুর দুধ খাওয়ানো যায়? (How much cow-milk should a baby have?)

আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স (American Academy of Pediatrics (AAP)) -এর মতে, ১৮ মাসের বাচ্চার জন্য প্রতিদিন ১-১.৫ কাপ গোরুর দুধ যথেষ্ট। বাচ্চার বয়স ২ বছর হলে তাকে রোজ ২ কাপ করে গোরুর দুধ দিতে পারেন।

কীভাবে বাচ্চাকে অভ্যেস করাবেন গোরুর দুধ খাওয়া (How to introduce cow’s milk for babies)

গোরুর দুধ বোতলে নিয়ে বাচ্চার হাতে ধরিয়ে দেওয়ার আগে ওকে একটু একটু করে স্বাদ চিনিয়ে দিন। মায়ের দুধ এবং গোরুর দুধ ১:৩ অনুপাতে মিশিয়ে বাচ্চাকে খেতে দিন। আস্তে আস্তে এই মিশ্রণে গোরুর দুধের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। বাচ্চা যে ফর্মুলা খেয়ে অভ্যস্ত, সেই ফর্মুলার সাথে গোরুর দুধ মিশিয়েও দিতে পারেন বাচ্চাকে। গোরুর দুধ মিশিয়ে দিতে পারেন ওটস, সুজি, বা হালুয়াতেও।এ তে হঠাৎ করে স্বাদবদলের হাত থেকে বাঁচবে শিশুটি। একটু একটু করে দিব্যি অভ্যেস করে নেবে গোরুর দুধ খাওয়া।

শিশুকে গরুর দুধ খাওয়ানো কি ঠিক? Cow’s Milk for Babies – Benefits, Side Effects & more

Also read: বাচ্চাকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর বিকল্প কিছু উপায়

মনে রাখুন কয়টি কথা (Special tips for mothers)

  • বাচ্চাকে প্রথম প্রথম নন-ফ্যাট গোরুর দুধ খাওয়াবেন না। গোরুর দুধে যে ফ্যাট থাকে, বাড়ন্ত বাচ্চার বিকাশে তা উপকারী। আবার এই ফ্যাট ভিটামিন এ এবং ডি শোষণ করতেও শরীরকে সাহায্য করে। বাচ্চা খুব মোটা না হলে ওকে ফ্যাট ছাড়া গোরুর দুধ খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই। এছাড়া লো-ফ্যাট গোরুর দুধে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম, সোডিয়াম, প্রোটিন ও ক্লোরাইড থাকে; যা বাচ্চা হজম করতে পারে না।
  • খুব বেশি চিনি খাওয়ানোর অভ্যেস না করাই ভালো। স্বাদের জন্য গোরুর দুধে মিশিয়ে দিতে পারেন মধু বা অল্প গুড়। বাচ্চা বড় হয়ে গেলে তার জন্য তো আছেই রকমারি মিল্ক শেক, দুধ-ফলের স্মুদি বা ফ্রুট কাস্টার্ড।
  • বাচ্চা যদি গোরুর দুধ দিয়ে তৈরি ফর্মুলা খেয়ে অভ্যস্ত থাকে, তা হলে গোরুর দুধে ওর কোনও রকম অসুবিধা বা এলার্জি থাকার কথা নয়। তাও গোরুর দুধ দেওয়া শুরু করার প্রথম ক’দিন বাচ্চার পটি কেমন হচ্ছে বা বাচ্চার কোনও অস্বস্তি হচ্ছে কি না খেয়াল রাখুন।
  • বাচ্চাকে পাস্তুরাইজড এবং ফরটিফায়েড গোরুর দুধ খাওয়ান।
  • গোরুর দুধ দেওয়া শুরু করার পর বাচ্চার শরীরে কোনও রকম অসুবিধা বুঝলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

বাচ্চাকে গোরুর দুধ খাওয়ানো শুরু করবেন কখন থেকে?
(When to introduce COW MILK to your baby?)

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null