গর্ভাবস্থায় সুস্বাদু চিংড়ি-ভোজনে কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে, দেখে নিন একনজরে!

গর্ভাবস্থায় সুস্বাদু চিংড়ি-ভোজনে কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে, দেখে নিন একনজরে!

চিংড়ি মাছ খেতে খুব ভালবাসেন বুঝি? তা সে যে ধরনের চিংড়ি মাছই হোক। গলদা, বাগদা, কুচো সবকিছুতেই আপনার আগ্রহ সমান আর রান্নাঘরে নিত্যনতুন তরিবত করে চিংড়ি রান্না করা, আপনার প্রিয় শখগুলোর অন্যতম। কি, ঠিক বলছি তো? জানি, আপনি এবার মা হতে চলেছেন। অনেক কটা ‘না’ এর দড়ি দিয়ে আপনার হাত-পা বেঁধে দিয়েছে আপনার ডাক্তার আর বাড়ির গুরুজনেরা। এই নিষেধাজ্ঞা আপনার প্রিয় খাবার, চিংড়ি মাছের ওপরেও এসে পড়েছে হয়তো। মা হতে চলেছেন, একটু-আধটু ত্যাগ স্বীকার করতে গিয়ে অত মুষড়ে পড়লে হয় না কি? সঠিক পদ্ধতি আর পরিমাণ মেনে খেয়ে দেখুন না, আপনার প্রিয় খাবারটা কোনও ক্ষতি করবে না। হ্যাঁ, গর্ভাবস্থায় চিংড়ি মাছ আপনি খেতে পারেন, তবে পরিমাণে অল্প। গর্ভাবস্থায় এই সুস্বাদু চিংড়ি-ভোজন করতে গেলে আপনাকে কী কী মাথায় রাখতে হবে, দেখে নিন এক নজরে। (Consuming prawns during pregnancy in Bangla. Pregnancy te chingri khawa)

গর্ভকালে চিংড়ি খাওয়া (Consuming prawns during pregnancy)

#1. চিংড়ি মাছ খাওয়ার উপকারিতা
(Health benefits of prawns)

  • চিংড়ি মাছে এমন অনেক ভিটামিন ও মিনারেলস আছে, যা হবু মায়ের জন্য খুবই উপকারী।
  • চিংড়ি মাছ প্রোটিনের খুব ভালো উৎস। গর্ভাবস্থায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে হবু মায়ের ব্লাড-সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে। ক্যালোরি এবং ফ্যাটের পরিমাণ কম হওয়ায়, এই চিংড়ি মাছ শরীরের অতিরিক্ত ওজন বাড়ায় না কিন্তু যথেষ্ট পুষ্টি সরবরাহ করে।
  • চিংড়ি মাছ ওমেগা ৩ (Omega 3)-এর অন্যতম উৎস।এই ফ্যাটি অ্যাসিড গর্ভস্থ বাচ্চার চোখ ও স্নায়ুতন্ত্র তৈরিতে সাহায্য করে।
  • চিংড়ি মাছে এমন অনেক ভিটামিনও আছে, যা হবু মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। ভিটামিন ডি (Vitamin D), ভিটামিন বি১২ (Vitamin B12), ক্লোরিন, আয়োডিন, জিঙ্ক, ফসফরাস, কপার; এগুলো সবই চিংড়ি মাছে উপস্থিত। এইসব ভিটামিন ও খনিজ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটায় আর থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। শরীরে হাড় এবং দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো করতেও এইসব উপাদান উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়ে থাকে।
  • চিংড়ি মাছে সেলেনিয়াম (Selenium) নামক একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আমাদের শরীরে কোষের ক্ষতি রোধ করে। অ্যামিনো অ্যাসিড (Amino acids) ক্ষতিগ্রস্ত কোষ সারিয়ে তোলে এবং নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে। আসাক্সান্থিন (Asaxanthin) নামক পরিপোষক
  • অ্যান্টি-এজিং(anti-aging) এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমাটরি(anti-inflammatory) হিসেবে কাজ করে। Consuming prawns during pregnancy.

#2.গর্ভাবস্থায় চিংড়ি মাছ খেতে কেন বারণ করা হয়?
(Why should prawns be avoided during pregnancy?)

  • গর্ভাবস্থায় শুধু চিংড়ি মাছ নয়, অন্য সব সামুদ্রিক মাছও খেতে বারণ করা হয়। এর প্রধান কারণ হল, অত্যধিক দূষণ। সামুদ্রিক মাছ হওয়ায় চিংড়ি মাছ ওই দূষিত জলেই বেড়ে ওঠে ও দূষিত পদার্থই খেয়ে থাকে। এইরকম চিংড়ি মাছ গর্ভাবস্থায় খাওয়া ক্ষতিকর। বিশেষ করে ভালো করে রান্না না করা চিংড়ি মাছ বা আধসেদ্ধ চিংড়ি খাওয়া একেবারেই ঠিক নয়।
  • কাঁচা চিংড়ি মাছ বা আধসেদ্ধ চিংড়ি মাছ খেলে ফুড পয়েসনিং হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গর্ভাবস্থায় পেটের সমস্যা হবু মাকে নাজেহাল করে দিতে পারে। ঠিকমতো রান্না না হলে সামুদ্রিক মাছে থাকা বিভিন্ন পরজীবি বা প্যারাসাইট নষ্ট হয় না এবং শরীরের ক্ষতি করে।
  • সামুদ্রিক মাছে মার্কারির পরিমাণ বেশি থাকে। খুব বেশি পরিমাণে এই চিংড়ি মাছ বা অন্য কোনও সামুদ্রিক মাছ খেলে গর্ভস্থ বাচ্চার স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
  • নদী থেকে ধরা চিংড়ি মাছেও প্রচুর ক্ষতিকর পদার্থ থাকে, যা গর্ভস্থ বাচ্চার শরীরের ক্ষতি করতে পারে। অর্ধেক রান্না করা মাছ খেলে লিস্টেরিয়া নামক ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে রক্ত দূষিত হয়ে যেতে পারে ও গর্ভস্থ শিশুর সমূহ ক্ষতি হয়।
  • চিংড়ি মাছে কোলেস্টেরলের মাত্রা খুব বেশি। যেসব হবু মায়ের কোলেস্টেরল বেশি, তাদের চিংড়ি মাছ না খাওয়াই ভালো।
  • চিংড়ি মাছ থেকে অনেকেরই মারাত্মক এলার্জি হয়ে থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, অন্য সময় চিংড়ি মাছ খেয়ে কোনও সমস্যা না হলেও গর্ভাবস্থায় এলার্জির আক্রমণ হয়। আর এই এলার্জি খুবই মারাত্মক এবং মা ও বাচ্চা দুজনেরই প্রচণ্ড ক্ষতি করতে পারে।

#3.গর্ভাবস্থায় চিংড়ি মাছ খেতে হলে কী কী বিষয় মাথায় রাখবেন?
(Tips if you are consuming prawns during pregnancy)

  • আপনি যদি স্বাভাবিক অবস্থায় চিংড়ি মাছ খেয়ে থাকেন এবং তাতে আপনার এলার্জি না হয়, তা হলেও গর্ভাবস্থায় খাবার আগে ডাক্তারকে জানান। যদি আপনার নির্দিষ্ট কোনও খাবার বা খনিজ থেকে এলার্জি হবার সম্ভাবনা থাকে, ডাক্তার সেটা জানিয়ে দেবেন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করুন।
  • প্রথমে একদম অল্প পরিমাণে চিংড়ি মাছ খেয়ে দেখুন, আপনার শরীরে কোনও অসুবিধা হয় কি না। যদি অসুবিধা না হয় বা ডাক্তারও বলেন, তবে আপনি চিংড়ি মাছ খেতেই পারেন। তবে কোনও ভাবেই বেশি পরিমাণে বা ঘন-ঘন নয়। গর্ভাবস্থায় কোনও খাবারই অতিরিক্ত বেশি খাওয়া ভালো নয়।
  • রেস্তোরাঁয় বা বাইরের দোকান থেকে রান্না করা চিংড়ি কিনে খাবেন না। ওইসব জায়গায় চিংড়ি মাছের স্বাদ-গন্ধ বজায় রাখার জন্য খুব ভালো করে সেদ্ধ করা বা রান্না করা হয় না। আবার ঠিক করে পরিষ্কারও করা হয় না। অর্ধেক সেদ্ধ বা ঠিকমতো রান্না না হওয়া চিংড়ি মাছ গর্ভাবস্থায় বিষ। আবার বাইরে কোনও জায়গা থেকে কাঁচা চিংড়ি মাছ কিনে আনা হয়,তাও আপনি জানতে পারেন না।
  • যে চিংড়ি মাছ কিনে আনছেন, সেটা যেন অবশ্যই পরিষ্কার জলের মাছ হয়, সে বিষয়ে সতর্ক হন। মাছ বাড়িতে এনে খুব ভালো করে পরিষ্কার করুন এবং ভালো করে রান্না করুন। তারপরেই খান।
  • আর, যদি নিজের ও বাচ্চার স্বাস্থ্যের সাথে আপনার কোনও রকম ঝুঁকি নেওয়ার সাহস না হয়, তা হলে চিংড়ির দাঁড়াগুলোকে কয়েক মাস ‘টা টা’ জানিয়ে দিন। পরে না হয় বাচ্চার সামনে বসেই চুটিয়ে চিংড়ি খাবেন। Consuming prawns during pregnancy.

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null