বিয়ের পর প্রথমবার একসঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার জন্য স্বস্তিক আর নিবেদিতা বেছে নিয়েছিল প্যারিস। বিয়ের পর প্রথমবার। মানে, যাকে বলে মধুচন্দ্রিমা। তার উপর দু’জনেরই প্রথমবার বিদেশ ভ্রমণ। প্যারিস-ভ্রমণ যেমন হয়েছে, তা নিয়ে কী-ই বলার থাকতে পারে। কিন্তু ফ্রান্সে আসা ইস্তক দু’জনেই যেটা দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেটা হল ছোট বাচ্চাদের নিয়ে তাদের বাবা-মায়েরা কীভাবে বেড়াতে আসে! কত গোছানো তাঁরা! বাচ্চার খুঁটিনাটি কত কিছু, কী সহজে আগে থেকে সাজিয়ে রাখেন তাঁরা। একেক বয়সের বাচ্চার জন্য কী আধুনিক কায়দায় একেক ধরনের পরিকাঠামো তৈরি করে রাখেন বাবা-মায়েরা। তা থেকে দু’জনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ভবিষ্যতে তাদের সন্তান হওয়ার পর তারাও যখন বাচ্চাকে নিয়ে বেড়াতে যাবে, আগে থেকে এমন ভাবে সবকিছু গুছিয়ে নেবে, যাতে কোনও অসুবিধা না-হয়। একদম পশ্চিমি দেশের বাবা-মায়েদের মতো করেই। (Child travel safety tips in Bengali, Shishuder niye bhromon korben? Jene nin kichhu tips, Child travel safety tips in Bangla.Child Travel Safety Tips in Bengali.)
স্বস্তিক আর নিবেদিতার বিয়ের পর প্রায় ছ’বছর কেটে গিয়েছে। এখন ওদের এক মেয়ে, এক ছেলে। মেয়ে সাইনার বয়স তিন বছর। আর ছেলে নীল সবে আট মাসের। স্বস্তিকের অফিসের ছুটি, নিবেদিতার একটা প্রমোশন, সঙ্গে ট্যুর অপারেটর-এর বিশেষ ছাড়ের সুযোগ— সবমিলিয়ে ওদের সামনে সেই সময়টা এসে গিয়েছে, যখন ওরা একসঙ্গে বেড়াতে যেতে পারে। এবং ডেস্টিনেশন (destination) হিসেবে ওদের পছন্দ কাম্বোডিয়ার আংকোর ভাট। পুরনো পরিকল্পনা মতোই স্বস্তিক আর নিবেদিতা ঠিক করেছে চারজনে প্রথমবার একসঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার আগে সবকিছু ভালো করে গুছিয়ে নেবে। একদম পশ্চিমি দেশের বাবা-মায়ের মতোই। ফলে তারা দ্বারস্থ হয়েছে ইন্টারনেটের এবং একই সঙ্গে নিয়মিত ঘুরে বেড়ান যাঁরা— এমন কয়েক জন শুভাকাঙ্ক্ষির। তা থেকে মোটামুটি যা জানতে পেরেছে, তার তালিকাটা অনেকটা এইরকম:
প্রথম হল যাতায়াত বা ট্রান্সপোর্ট। সকলেরই মত, যে যানবাহনেই চাপুন না কেন, বিমান বা ট্রেন— বাচ্চাদের জন্য কয়েকটা বিষয় মাথায় রাখতেই হবে। যা মোটামুটি এই রকম:
হোটেলে পৌঁছে বাচ্চার সুরক্ষার জন্য কোন কোন দিকে খেয়াল রাখতে হবে, সেটাও মাথায় রাখা দরকার।
স্বস্তিক আর নিবেদিতার ক্ষেত্রে এর বাইরেও আরও একটা জিনিস আছে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওদের যাওয়ার জায়গাটা বিদেশ। ফলে সেক্ষেত্রে বাচ্চা দু’জনের জন্য মাথায় রাখতে হবে আরও কয়েকটা জিনিস। আপনিও শিশুসন্তান নিয়ে বিদেশ যাত্রা করলে এগুলো মাথায় রাখবেন।
উপরে লেখা বিষয়গুলো অবস্থাভেদে আপনাকে মনে রাখতে হবে। কিন্তু এর বাইরেও থাকে বেশ কিছু বিষয়। যেখানেই যান না কেন, আপনাকে মাথায় রাখতে হবে এই বিষয়গুলো। একনজরে তারই চেকলিস্ট।
#1. আপনার সোনাকে আরও ভালো করে চিনুন (Know your child): আপনার সোনা ঠিক কী কী পছন্দ করে, তা যাওয়ার আগে ভালো করে জেনে নিন। কারণ বেড়াতে গিয়ে সে কী কী ভাবতে পারে, এবং কী কী পদক্ষেপ করতে পারে, তা বুঝে যাবেন ওকে ভালো করে চেনা থাকলে। বেড়াতে যাওয়ার আগে ওর সঙ্গে একটু বেশি সময় কাটান। যেখানে যাবেন, সেই জায়গাটা কেমন, সে বিষয়ে ওকে একটা ধারণা দিয়ে রাখুন।
#2. কী কী বিপদ হতে পারে ভেবে রাখুন (Know your risks): কোথায় বেড়তে গেলে ঠিক কী কী ধরনের সমস্যা বা বিপদ হতে পারে, তা ভালো করে জেনে রাখুন। ধরুন যেখানে যাচ্ছেন, সেখানে ধস নেমে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটে। এটা আগে থেকে জানা থাকলে, আপনার ছোট্ট সোনার যাতে সেই সময় অসুবিধা না হয়, তার ব্যবস্থা করে রাখতে পারবেন।
#3. জলের বিষয়ে সাবধান (Be careful about water): পানীয় জল তো বটেই, ছোট্ট সোনার স্নানের জলও যেন পরিষ্কার হয়। যেখানেই যান না কেন, ওকে ভালো করে ফিল্টার করা জল ছাড়া অন্য কোনও জল পান করাবেন না।
#4. বেড়ানোর ওষুধের বাক্সে নজর (Update your travel medical kit): এর আগে যখন শুধু দু’জনে বেড়াতে গিয়েছেন, তখন যা যা ওষুধ নিতেন, এখন তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। মনে রাখবেন আপনার ওষুধ আর ছোট্ট সোনার ওষুধ আলাদা। তা ছাড়া বিদেশে বা দেশে তেমন তেমন জায়গায় গেলে ওষুধ না-ও পেতে পারেন। তাই আগে থেকে সেই সব ওষুধ গুছিয়ে নিন, যা দরকার পড়লেও পড়তে পারে।
#5. অতিরিক্ত সময় রাখুন (Go easy on schedule): প্রাপ্তবয়স্করা যেমন ঝটপট কাজ সেরে নিতে পারেন, বাচ্চারা মোটেই তা পারে না। তাই হাতে কিছুটা অতিরিক্ত সময় রাখুন। যাতে আপনার খোকা বা খুকুর উপর চাপ না পরে, তাকে তাড়া না-দিতে হয়। হাতে একটা বা দুটো অতিরিক্ত দিনও রাখতে পারেন। যদি ওর শরীরটা খারাপ লাগে, তা হলে এক বা দু’দিন যাতে বিশ্রাম নিতে পারে, তার জন্য এই বন্দোবস্ত।
#6. পরিচয় লেখা কাগজপত্র (Written identity and contact number): আপনার বাচ্চার ব্যাগে বা ব্রেসলেটের মধ্যে ছোট কাগজে লিখে রাখুন ওর নাম, ওর ঠিকানা। আপনার কাছে স্থানীয় ফোন নম্বর থাকলে, সেটাও লিখে রাখুন। পাশাপাশি আপদকালীন বা ইমারজেন্সি (Emergency) নম্বরও দিয়ে রাখুন। ও আপনার থেকে আলাদা হয়ে গেলে, যাতে সহজে কেউ যোগাযোগ করতে পারেন, এটা তার ব্যবস্থা।
#7. ওকে প্রস্তুত রাখুন (Make your child prepare): কোনও বিপদ হলে বা বাবা-মা’র থেকে আলাদা হয়ে গেলে, কী করতে হবে, সে বিষয়ে ওকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত রাখুন। হয়তো বিপদে ও মাথা ঠান্ডা রাখতে পারবে, সেখান থেকে সহজে বেরিয়ে আসতে পারবে।
স্বস্তিক, নিবেদিতা, সাইনা আর নীল কম্বোডিয়া থেকে খুব আনন্দ করে ঘুরে এসেছে। একদিন নীলের একটু পেটের সমস্যা হয়েছিল বটে। কিন্তু বাকিটা দারুণ কেটেছে। সৌজন্যে এই চেকলিস্ট। আপনিও পরের ট্রিপের আগে এই চেকলিস্ট মিলিয়ে যাচ্ছেন তো?
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null