বাচ্চার বটল ফিডিংয়ে কোনও ভুল হচ্ছে না তো? শুধরে নিন আজই!

বাচ্চার বটল ফিডিংয়ে কোনও ভুল হচ্ছে না তো? শুধরে নিন আজই!

এই সময় বিয়ে বাড়ি! রুপুর কারণেই এই নিমন্ত্রণটা রাখবে না বলে ভাবছিল দেবল। পাঁচ মাসের শিশু। তাকে নিয়ে এই সময় উত্তরবঙ্গে যাওয়াটা খুব সহজ হবে না। প্লেনের টিকিটের বিশাল দাম হয়ে গিয়েছে। যেতে হলে ট্রেনেই যেতে হবে। ঘণ্টা দশেকের জার্নি! কী ভাবে সামলাবে রাজরূপা! বিশেষ করে রুপুর খাওয়ার বিষয়টা। (Bottle-feeding Mistakes Every Mom Makes)

শেষ পর্যন্ত রাজরূপাই বলল, সে সামলে নিতে পারবে। স্তন্যপান করানোর বিষয়টা তো দেখে নেওয়া যাবে। আর ফিডিং বোতল থেকে দুধ খাওয়ানোর বিষয়টাও ও শর্টকাটে সামলে নেবে (Bottle Dudh Khawano)। কী ভাবে? ট্রেন জার্নির ১০-১১ ঘণ্টায় দুই থেকে তিন বার রুপুকে বোতলের দুধ খাওয়ানোর কথা। এটা পুরোটাই ও আগে থেকে গুলে নিয়ে রেডি করে রাখবে।

সময়ে সময়ে বোতলের ঢাকনা খুলে ওকে খাইয়ে দিলেই হল। দেবলের কেমন জানি খটকা লাগল কথাটা শুনে। এমন কি করা যায়? পরের দিন সকালেই ফোন রুপুর চিকিৎসককে। উনিও বললেন, খবরদার না (The Most Common Bottle-Feeding Mistakes)! শিশুদের বোতলের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে এমন ভুল অনেক মা করেন। তেমন অতিপরিচিত কয়েকটা ভুলের কথাও তিনি ততক্ষণাৎ বলে দিলেন।

 

বাচ্চাকে বোতলে দুধ খাওয়ানোর প্রশ্নে যে ভুলগুলি হামেশা হয় বাবা-মায়ের (Bottle Feeding Mistakes Every Parent Makes)

#1. বাইরে যাওয়ার আগে থেকে দুধ তৈরি করে রাখা: এই প্রশ্ন দিয়েই ঘটনার সূত্রপাত। ডাক্তারবাবুর কথায়, ফিডিং বোতলে আগে থেকে ফর্মুলা গুলে রাখা মোটেই কাজের কথা নয়। দু’ঘণ্টার বেশি সময় এই ফর্মুলা গোলা থাকলে, তার মধ্যে থাকা ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায়। একমাত্র যদি আইস প্যাকের মধ্যে এই বোতলগুলো রাখা যায়, তা হলে কাজ চালানো যেতে পারে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে অন্য সমস্যাও আছে। শিশুদের খুব ঠান্ডা খাওয়ানো উচিত নয় (Bottle-Feeding Mistakes Parents Must Avoid)। খাওয়ানোর আগে বোতলে গোলা দুধ হালকা হলেও গরম জলের বাটিতে রেখে গরম করে নিতে হবে।

#2. কাঁদছে মানেই খিদে পেয়েছে: একদম ভুল ধারণা। অনেক মা এই ভুলটা করেন। কাঁদলেই বাচ্চাকে ফিডিং বোতল থেকে খাওয়াতে শুরু করেন। কিন্তু ৪০ মিনিটের মধ্যে তাকে খাইয়ে ঢেকুর তুলিয়ে থাকলে, হলপ করে বলা যায় এই কান্নার সঙ্গে খিদের যোগ কম। বরং এমনটা হতে পারে, ওর পেটে গ্যাস হয়েছে। সেই ব্যথা থেকে ও কাঁদছে। ফলে একটু কাঁদলেই শিশুর মুখে বোতল তুলে দেবেন না।

#3. প্রতিবার ঢেকুর না-তোলালেও চলবে: অনেকেই এই ভুলটা করেন। ভাবেন যে শিশুকে প্রতিবার ফিডিং বোতলে খাওয়ানোর পর ঢেকুর না-তোলালেও চলে। এতে শিশুর পেটে তৈরি হওয়া গ্যাসটা বেরতে পারে না। শিশুর পেটে ব্যথা হতে পারে এর ফলে।

#4. মাইক্রোওয়েভে বোতলের দুধ গরম: এটাও একটা মারাত্মক ভুল। গবেষণায় প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে মাইক্রোওয়েভে ফর্মুলা দুধ গরম করলে তার পুষ্টিগুণ অনেকটাই কমে যায়। বিশেষ করে এতে থাকা ভিটামিন এবং মিনারেল মাইক্রোওয়েভের প্রয়োগে একেবারে নষ্ট হয়ে যায় (Bottle-Feeding Mistakes To Strictly Avoid)। এই যন্ত্র অনেকটা সময় বাঁচিয়ে দিলেও আপনার সোনার কোনও লাভই হয় না এই খাবার থেকে।

#5. অতিরিক্ত গরম করা: বোতলের দুধ শিশুকে দেওয়ার আগে যতক্ষণ খুশি গরম করার দিকেও (Overheating The Milk) অনেকের ঝোঁক থাকে। এতেও দুধের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়। সবচেয়ে ভালো রাস্তা, একটা বড় পাত্র বা গামলায় গরম জল নিন। ফর্মুলা-দুধ শিশুর বোতলে ভর্তি করে নিন। এ বার ওই বোতল গরম জলের পাত্রে ডুবিয়ে রাখুন। এতে দুধ অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে না (What Happens if Baby Milk is Too Hot)।

#6. শিশুদের জোর করে খাবার শেষ করাতেই হবে: এটাও ভুল পদক্ষেপ। শিশু যদি বোতলের পুরো দুধটা খেতে না-চায়, তা হলে তাকে জোর করে খাবার শেষ করানোর কোনও মানেই নেই। এতে তার খাবার হজম করার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

 

আরও পড়ুন: সময় বিশেষে ব্রেস্ট মিল্ক ও ফর্মুলার যুগলবন্দীতেই বাচ্চার সম্পূর্ণ পুষ্টি

 

#7. একবার বেঁচে যাওয়া দুধ, পরের বারে মিশিয়ে দেওয়া: খাবার নষ্ট না-করার অভ্যাস সব সময়ই ভালো। কিন্তু শিশুদের দুধের ক্ষেত্রে তা বড় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। শিশু একবারে পুরো বোতলের দুধ শেষ না-করলে অনেকেই পরের বারের দুধের সঙ্গে তা মিশিয়ে দেন। এটা মোটেই ভালো অভ্যাস নয় (Bottle-feeding Mistakes Every Mom Makes)।
দুধ খাওয়ার সময় শিশুর লালায় থাকা ব্যাকটেরিয়া বোতলের দুধে মিশে যায়। সেখানে তারা দ্রুত বাড়তে থাকে। পরে তার সঙ্গে অন্য দুধ মিশিয়ে, সেই মিশ্রণ শিশুকে খাওয়ালে বোতলে জন্ম নেওয়া নতুন ধরনের ব্যাকটেরিয়া শিশুর পেটে চলে আসে। সেখানে সংক্রমণের সৃষ্টি হতে পারে এর ফলে।

#8. যেমন খুশি নিপল থেকে বোতলের দুধ খাওয়ানো: অনেকেই মনে করেন, শিশুদের তাড়াতাড়ি খাওয়ানোর জন্য বোতলের নিপলের ছিদ্র বড় থাকলে ভালো। বড় ছিদ্রওয়ালা নিপল ব্যবহার করাটা খুবই ভুল কাজ। এতে শিশুর মুখে খাবারের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে বাতাস যেতে শুরু করে। এর ফলে শিশুদের কোলিক ব্যথা শুরু হয়। মনে রাখবেন, চিকিৎসক যে ছিদ্রের নিপল ব্যবহার করে শিশুদের বোতল থেকে ধুধ খাওয়াতে বলেন, সেই মাপের নিপল-ই ব্যবহার করতে হবে।

#9. নিজে নিজেই খেতে পারে: শিশুরা একটু বড় হলেই অনেক বাবা-মা এই পদক্ষেপটা নিয়ে ফেলেন। তাঁরা বাচ্চাদের হাতেই ফিডিং বোতলটা ধরিয়ে দেন। এটাও খুব ভুল সিদ্ধান্ত। ভুল ভাবে বোতল ধরা হলে, শিশুর গলায় দুধ আটকে যেতে পারে। ফলে যতক্ষণ ওকে বোতল থেকে খাওয়াবেন, বড় কেউ দায়িত্ব নিন বোতলটা ধরে রাখার।

#10. শুয়ে রেখেই খাইয়ে দেওয়া: বোতল থেকে দুধ খাওয়ানোর সময় অনেকেই শিশুদের শুইয়ে রাখেন। এটাও খুব ভুল কাজ। এতে যেমন গলায় দুধ আটকে যেতে পারে, তেমনই মুখ থেকে গড়িয়ে কানে ঢুকতে পারে দুধ। এর ফলে কানে সংক্রমণ হয় (Bottle-Feeding Mistakes Parents Must Avoid)। তাই শিশুকে যখনই বোতল থেকে খাওয়াবেন, ওকে ৪৫ ডিগ্রি কোণে বসিয়ে বা আধশোয়া করে রাখুন। এতে পেটের গ্যাস ঢেকুর হয়ে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনাও বাড়বে।

#11. জল মিশিয়ে পাতলা করা: হঠাৎ খেয়াল হল কৌটোর দুধ শেষ হয়ে এসেছে। আজকের দিনটা চালাতে আর চার বারের মতো দুধ লাগবে। কিন্তু আছে দু’বারের মতো। অতএব একটু বেশি করে জল মিশিয়ে পাতলা করে দিলেন। এটাও খুব খারাপ প্রবণতা। কারণ শিশুর দিনের মাথায় যতটা পুষ্টি দরকার, তার কথা মাথায় রেখেই এই ফর্মুলা-দুধ বানানো। তাকে বেশি পাতলা করে খাওয়ালে শিশু তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় না। ভবিষ্যতে এটা তার জন্য বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

#12. স্টেরিলাইজ না-করা: বোতল প্রথম বার ব্যবহারের সময় অনেকেই স্টেরিলাইজ করে নেন না। মনে করেন, সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিলেই চলবে। এটা অত্যন্ত ভুল সিদ্ধান্ত। নতুন বোতল এনে, তা বাচ্চাকে দেওয়ার আগে অবশ্যই স্টেরিলাইজ করতে হবে। আগে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিয়ে তারপর স্টেরিলাইজ করুন।

#13. তারিখ না-দেখা: কৌটো খুললেন, দুধ বের করলেন, মিশ্রণ বানিয়ে বাচ্চাদের খাওয়াতে থাকলেন। অত্যন্ত ভুল কাজ। মাঝে মাঝেই দেখে নিন, ফর্মুলা-দুধটির এক্সপায়ারি ডেট পেরিয়ে যায়নি তো! পেরিয়ে গেলে শিশুর জন্য তা অত্যন্ত খারাপ।

#14. যেমন খুশি জলের ব্যবহার: অনেকেই এমনি কলের জলে ফর্মুলা-দুধ গুলে শিশুদের খাইয়ে দেন। এতে তাদের পেটে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। মনে রাখবেন শুধুমাত্র ফোটানো বা খুব ভালো করে ফিল্টার করা জলই শিশুকে দেওয়া যায় (Filtered Water For Babies)। তাই এমন জলেই কৌটোর দুধ মেশান।

#15. যেমন খুশি বোতলে খাওয়ানো: দোকানে গিয়ে হয়তো খুব মজার দেখতে একটা বোতল কিনে ফেললেন শিশুর জন্য। তারপর তা দিয়েই ওকে দুধ খাওয়াতে শুরু করলেন। এর থেকে ভুল কাজ কমই হয়। ডিজাইন আকর্ষণীয় হলেই যে সেটা আপনার সন্তানের জন্য খুব ভালো হবে, এমনটা নয়। বরং এতে শিশুর ক্ষতি হতে পারে। তাই ব্যবহার করার আগে চিকিৎসকের থেকে জেনে নিন, নির্দিষ্ট বোতলটি আপনার সোনার জন্য ভালো কি না।

 

চিকিৎসকের পরামর্শে ফিডিং বোতলে তিন বারের খাবার গুলে নিয়ে রওনা হওয়ার পরিকল্পনাটা রাজরূপা বাদই দিল। যাওয়াটা বাতিলই করতে হবে মনে হচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সস্তায় প্লেনের টিকিট পাওয়া গিয়েছে। তাই রুপুর খাবারের চিন্তাটা এ যাত্রায় অনেকটাই হালকা হল। (Bottle-feeding Mistakes Every Mom Makes)

 

আরও পড়ুন: স্তন্যপানের পরেও কাঁদতে পারে শিশু, রইল কারণ-সমেত সমাধান!

 

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null