‘ছয় মাস বয়স হয়ে গেল মেয়েটার। এখনও ওর রোগবালাই কমল না।’
শিখাদির কথা শুনে মনটা খারাপই হয়ে গেল অর্চনার। ছ’মাস হল অর্চনা মা হয়েছে। ছ’মাসের অপা অর্চনার দ্বিতীয় সন্তান। ওর ছেলে অভির বয়স এখন দু’বছর। অপার জন্মের পর নীলাদ্রি আর অর্চনা মিলে সবটা সামলে উঠতে পারছিল না। তাই অপার জন্মের পরপরই শিখাদিকে রাখা। উনি বাড়ির ছোটখাটো কাজকর্ম করে দেন। তবে ওঁর মূল দায়িত্বের মধ্যে পড়ে অপার যত্নের বিষয়ে অর্চনাকে সাহায্য করা, পাশাপাশি অভিকে অনেকটা সামলানো। আজ ছ’মাস ধরে দুই ভাই-বোনকে দেখছেন শিখাদি। তাই দু’জনের স্বাস্থ্য সম্পর্কেই কিছু অজানা নেই ওঁর কাছে। এবং ওঁর চোখের সামনেই জলের মতো পরিষ্কার, গত ছ’মাসে, মানে জন্মের পর থেকেই কীভাবে ভুগে চলেছে অপা। কী প্রচণ্ড রুগ্ন হয়েছে মেয়েটা! কিন্তু ওর দাদা অভির ক্ষেত্রে কিন্তু এমনটা কখনও হয়নি। ছোটখাটো শরীর খারাপ যে হয়নি, তা নয়। কিন্তু নিরন্তর এ ভাবে ভুগে চলেনি কখনও। আজ জ্বর তো, কাল পেটখারাপ, তো পরশু কান্নাকাটি করে খিদে উধাও—এমনটা কখনও হয়নি অভির সঙ্গে। (Ways to naturally boost your child’s immune system in Bangla, Shishur rog protirodh khomota briddhir sahoj upay, kibhabe baraben sishur rog-protirodh khomota.Boost Your Child’s Immune System Naturally in Bengali.)
‘দিদি, তুমি ডাক্তারবাবুর সঙ্গে কথা বলোনি?’ প্রশ্ন শিখাদির।
ডাক্তারবাবুর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছে অর্চনা-নীলাদ্রি। উনিও অপার সব কিছু পরীক্ষা করে বলেছেন, কোনও গণ্ডগোল নেই। তবুও এই সমস্যা কিছুতেই কাটে না। নিয়ম করে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো হয়, ডাক্তারবাবুর বলে দেওয়া তালিকা ধরে ওষুধ খাওয়ানো হয়। তারপরেও ঠিক হয় না অপা।‘আচ্ছা দিদি, ওর ঠিক মতো ঘুম হয় তো?’ শিখাদির এই প্রশ্নটা অর্চনাকে একটু চিন্তায় ফেলে। কারণ অভিকে যতটা সময় ঘুমোতে দেখেছে অর্চনা, অপাকে ততটা দেখেনি কখনও। এটাও ঠিক, অপার জন্মের আগে ওরা বাড়ি বদলেছে। নতুন বাড়িটা বড় রাস্তার অনেক কাছে। এখানে সকাল থেকে নানা শব্দ শুরু হয়। মাঝরাতেও পাড়া শান্ত হতে চায় না। বেশির ভাগ সময়ই অপাকে জেগেই থাকতে দেখে অর্চনা।
পরের দিন ডাক্তারবাবুকে এই কথাটা জানাতেই, সমস্যার গোড়াটা খুঁজে পাওয়া গেল। উনি বললেন, এই কারণেই অপার শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠছে না। মানে ওর ইমিউনিটি (Immunity) বাড়ছে না। এখন থেকে জানলা বা দরজার ভারী পর্দা লাগানোর পরামর্শ দিলেন তিনি। পাশাপাশি যতটা কম আওয়াজের মধ্যে রাখা যায় অপাকে, তার ব্যবস্থাও করতে বললেন। আর সেই পরামর্শ মেনে চলতেই মাস খানেকের মধ্যে সমস্যা একদম গায়েব।তবে ঘুম কম হওয়াই শিশুদের দুর্বল হয়ে পড়ার একমাত্র কারণ নয়। রয়েছে আরও অনেক কিছু। এক ঝলকে দেখে নেওযা যাক, শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিক ভাবে বাড়াবেন কী করে।
#1. ঘুমের সময় বাড়ান: ঘুমের কথা দিয়ে যখন শুরু হয়েছিল, তখন সেই প্রসঙ্গেই প্রথমে বলে নেওয়া যাক। ঘুম প্রতিটা মানুষের জন্যই অত্যন্ত দরকারি। কারণ ঘুমের মধ্যেই মানুষ রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা তৈরি করে। ক্যানসারের মতো মারণ রোগের পিছনে যে সমস্ত কোষের ভূমিকা থাকে, শরীর তাদেরও নষ্ট করে ঘুমের মধ্যেই। তাই পর্যাপ্ত ঘুম হওয়াটা খুব দরকারি। আর প্রশ্নটা যদি আপনার ছোট্ট সোনাকে নিয়ে হয়, তা হলে তো কথাই নেই।
#2. স্বাস্থ্যকর খাবার-দাবার: যত দূর সম্ভব স্বাস্থ্যকর খাবার দিন। কারণ এতে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা বৃদ্ধি পায়।
#3. স্তন্যপান করান নিয়ম করে: চিকিৎসকরা যতদিন বলেন, ওকে ততদিন স্তন্যপান করান। কারণ এতে শিশুর রোগ প্রতিরোধ শক্তি অনেকটাই বাড়ে।
আরও পড়ুনঃ শিশুর সুরক্ষায় কোন বয়সে কোন টিকা!
#4. সাপ্লিমেন্টে নজর: শিশুর যতটা খাদ্যগুণ প্রয়োজন, ততটা হয়তো খাবার থেকে সে পায় না। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, তাকে আলাদা করে সাপ্লিমেন্ট দেওয়া যেতেই পারে।
#5. মনে চাপ নয়: এখন প্রচন্ড দ্রুত গতিতে ছুটে চলা পৃথিবীর সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে বড়রা তো বটেই, ছোটদের মনেও মারাত্মক চাপ পড়ে। এই চাপের ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে।
#6. সবাই মিলে ব্যায়াম করুন: নিয়মিত যোগাসন বা অন্য ব্যায়াম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আপনার ছোট্ট সোনাকে সঙ্গে নিয়ে যদি আপনি ব্যায়াম করেন, তা হলে আপনার পাশাপাশি ওর শরীরও ভালো থাকবে। তাছাড়া আপনার সঙ্গে ব্যায়ামে বা ফ্রিহ্যান্ড এক্সারসাইজে অংশ নিলে ও খুব খুশি হবে।
#7. ওর সামনে ধূমপান নয়: ধূমপান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মারাত্মক কমিয়ে দেয়। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁরা তো নিজের ক্ষতি করেনই, পাশাপাশি সেই ধোঁয়ায় শিশুরও মারাত্মক ক্ষতি হয়।
কতগুলো সহজ বিষয় মাথায় রাখলে, এ ভাবেই শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ফেলা যায়। তাকে উপহার দেওয়া যায় একটা সুন্দর, স্বাস্থ্যকর জীবন।
আরও পড়ুনঃ অপুষ্টিই ঘটাতে পারে শিশু-মৃত্যু! সচেতন হোন আজই!
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null