শিশুর বয়স অনুসারে তাকে কী ধরনের খাবার খাওয়ানো উচিত, ছোট খসড়া থাকল এখানে!

শিশুর বয়স অনুসারে তাকে কী ধরনের খাবার খাওয়ানো উচিত, ছোট খসড়া থাকল এখানে!

‘খাওয়াবো এমন খাওয়া ভোজ কয় যাহারে’!

আপনিও জানেন, আমিও জানি, একরত্তি শিশুর ক্ষেত্রে এই কথাটা একেবারেই প্রযোজ্য নয়। নুন নেই, চিনি নেই, সবই তো ঘাঁটাঘাঁটি করা সেদ্ধ খাবার। তাই বলে তো আর বাচ্চাটিকে বুঝতে দেওয়া যায় না যে, তাকে এমন খাবার খাওয়ানো হচ্ছে, যাতে তেলমশলা একটু উঁকি দিয়েই পালায় বা থাকেই না। বাচ্চাও কিন্তু স্বাদ বোঝে, মাঝে মাঝে স্বাদবদলও পছন্দ করে। চিন্তা নেই, তেলে আদা-রসুন কষিয়ে রান্না করা খাবারের স্বাদ বা বিরিয়ানির গন্ধ, এখনও কোনও টাই পায়নি সে। তাই আপনি ভালোবেসে যা খাওয়াবেন, সোনামুখ করে তাই খাবে দস্যি ছানা। তবে আমাদেরও যেমন রোজ একঘেয়ে খাবার খেতে ভালো লাগে না, পুঁচকেগুলোরও তাই। ৬ মাস বয়স পেরোলেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সহজপাচ্য নানা রকম খাবার বানিয়ে দিন ওকে। লক্ষ্য রাখুন, যাতে ও বুকের দুধ ও খাবার মিলিয়ে প্রয়োজনীয় সমস্ত পুষ্টিগুণ পেয়ে যায়। শিশুর বয়স অনুসারে তাকে কী ধরনের খাবার খাওয়ানো উচিত বা কত রকমের মজাদার খাবার বানিয়ে খাওয়াতে পারেন আপনি, তারই একটা খসড়া দেওয়ার চেষ্টা করলাম আজ। দেখুন তো, ছোট্ট সোনার কাছে আপনি সেরা রাঁধুনি হয়ে ওঠেন কি না! (Best foods for baby under 1 year in Bangla)

শিশুর বয়স যখন ৬-৮ মাস (Diet chart for 6-8 months old babies)

ঘুম থেকে উঠে (Early morning):

বুকের দুধ/ ফর্মুলা।

জল খাবার (Breakfast)

গাজর-বিটের স্যুপ/ আপেল ভর্তা/ ডালের জল/ চটকে মাখা কলা/ কুমড়ো আলুর ভর্তা/ রাঙা আলুর ভর্তা/ কুমড়োর ভর্তা/ চিকেন স্যুপ, সুজির ক্ষীর।

দুপুরের খাওয়া (Lunch)

ডাল-সব্জি দিয়ে খিচুড়ি/ চারাপোনার পাতলা ঝোল দিয়ে ভাত/ সবজি, মুসুরি ডাল, ডিমের কুসুম চটকে মাখা/ ঘি দিয়ে ভাত চটকে মাখা, বাড়িতে পাতা দই খুব অল্প/ পালংশাক ও মুসুরি ডালের স্যুপ/ আলু, ডিমের কুসুম, ভাত অল্প ঘি দিয়ে চটকে মাখা/ সবরকম সবজি সেদ্ধ, অল্প মাছ ও ডিমের কুসুম চটকে মাখা।

 

আরও পড়ুন: সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর কিছু রেসিপি, আপনার বাচ্চার জন্য

বিকেলের টিফিন (Evening snacks)

বার্লি/মুগ ডালের জল/ গাজরের জুস/ বাড়ির তৈরি সেরেল্যাক/ একটু ড্রাই ফ্রুটস গুঁড়ো করে গাজরের ক্ষীর/ ছাড়ানো খেজুর থেঁতো করা/ মরসুমি ফল।

রাতের খাওয়া (Dinner)

বাড়িতে তৈরি সেরেল্যাক/ ওটস ক্ষীর/ উপমা/ সুজির হালুয়া/ সেরেল্যাক/ ওটস ও ফর্মুলার মিশ্রণ।

শুতে যাওয়ার আগে (Before bed)

বুকের দুধ/ ফর্মুলা।

Diet Chart for 6-8 months babies

শিশুর বয়স যখন ৮-১০ মাস (Diet chart for 8-10months old babies)

শিশুর বয়স ৮ মাস হলে তাকে ডিম খাওয়ানো শুরু করুন। তবে শুধু ডিমের কুসুম।আর ১৮ মাসের আগে গরুর দুধ বাচ্চাকে খাওয়াবেন না।

ঘুম থেকে উঠে (Early morning): বুকের দুধ/ ফর্মুলা

জল খাবার (Breakfast)

আপেল ভর্তা/ ওটস/সব্জির উপমা/ সুজি ও কলার হালুয়া/ টম্যাটো স্যুপ/ সব্জির স্যুপ/ একটি ডিমের কুসুম আলু দিয়ে চটকে/ সবজি ও চিকেন স্টক দিয়ে স্যুপ/ ডালের জল।

দুপুরের খাওয়া (Lunch)

ভাত, মুসুরি ডাল,আলু ও ডিমের কুসুম চটকে মাখা/ শাক বা অন্য সবুজ তরকারি, ডাল ও চাল দিয়ে খিচুড়ি/ আধপিস মাছ সেদ্ধ করে ভাত, ডাল ও আলুর সাথে চটকে মাখা/ সমস্ত সবজি সেদ্ধ করে ভর্তা/ সবজি দিয়ে খিচুড়ি/ মাখন দিয়ে ভাত,আলু, ডালের জল চটকে মাখা/ চারাপোনার পাতলা ঝোল দিয়ে ভাত।

বিকেলের টিফিন (Evening snacks)

বিটের হালুয়া/ সুজির উপমা/ কলার প্যানকেক/ মিষ্টি আলুর পায়েস/ সুজির পায়েস/আপেল সুজি ক্ষীর/ কলার কুকিজ/ স্মুদি/ আপেল মাফিন/গাজরের হালুয়া/ মরসুমি ফল/পেঁপের ভর্তা/ ড্রাই ফ্রুটস গুঁড়ো করে ফর্মুলা বা মায়ের দুধে মিশিয়ে।

রাতের খাওয়া (Dinner)

আটার হালুয়া/ চিকেন স্টু/ ডাল- সবজির স্যুপ/ ভাত আর ডাল চটকে মাখা/ সাবুর খিচুড়ি/ সেরেল্যাক/ বেকড আলু।

শুতে যাওয়ার আগে (Before bed)

বুকের দুধ/ ফর্মুলা।

Diet-Chart-for-8-10-months-babies

শিশুর বয়স যখন ১০-১২ মাস (Diet chart for 10-12 months old babies)

ঘুম থেকে উঠে (Early morning): বুকের দুধ/ ফর্মুলা।

জল খাবার (Breakfast)

ওটস পায়েস/ আপেল ভর্তা/ নরম পাস্তুরাইজড চিজ/ ছাতুর শরবত/ সুজি ও কলার হালুয়া/ স্মুদি/ টম্যাটো স্যুপ/ সব্জির স্যুপ/ একটি ডিমের কুসুম আলু দিয়ে চটকে/ সবজি ও চিকেন স্টক দিয়ে স্যুপ/ডালের জল।

দুপুরের খাওয়া (Lunch)

ভাত,মুসুরি ডাল, আলু ও ডিমের কুসুম চটকে মাখা/ শাক, বিন্স ইত্যাদি সবুজ তরকারি, ডাল ও চাল দিয়ে খিচুড়ি/ আধপিস মাছ সেদ্ধ করে ভাত, ডাল ও আলুর সাথে চটকে মাখা/ এক টুকরো মুরগির মাংস ভালো করে সেদ্ধ করে ডাল ও ভাতে চটকে মাখা, স্বাদের জন্য সামান্য গন্ধরাজ বা পাতিলেবুর রস দিন/ গাজর/ মুসুর ডাল/ রাজমা/ মটরশুঁটি, বিন্স সেদ্ধ করে ভর্তা/ মাখন দিয়ে ভাত,আলু, ডালের জল চটকে মাখা/ ফুলকপি/ ব্রকলি দিয়ে চারাপোনার পাতলা ঝোল ও ভাত/ ভেজিটেবিল পোলাও।

বিকেলের টিফিন (Evening snacks)

বিটের হালুয়া/ সুজির উপমা/বার্লি/ কলার প্যানকেক/ মিষ্টি আলুর পায়েস/ সুজির পায়েস/আপেল সুজি ক্ষীর/বাড়িতে বানানো কেক/ ভাপানো ধোসা/ ইডলি/ কলার কুকিজ/ স্মুদি/ আপেল মাফিন/গাজরের হালুয়া/নরম পিঠে/ মরসুমি ফল ছাড়াও পেঁপে, আপেল, কলা /পেঁপের ভর্তায় ড্রাই ফ্রুটস গুঁড়ো করে ফর্মুলা বা মায়ের দুধে মিশিয়ে।

রাতের খাওয়া (Dinner)

আটার হালুয়া/ পোহা/ চিকেন স্টু/ সেরেল্যাক/ দালিয়া/ ডাল- সবজির স্যুপ/ মুরগির মাংস খুব ভালো করে সেদ্ধ করে সব্জির সাথে মিশিয়ে/ ভাত আর ডাল চটকে মাখা/ সাবুর খিচুড়ি/ সেরেল্যাক/ বেকড আলু।

শুতে যাওয়ার আগে (Before bed)

বুকের দুধ/ ফর্মুলা।

Diet Chart for 10-12 months babies

আরও পড়ুনবাড়ন্ত বাচ্চার সুস্বাস্থ্যে আয়রন সমৃদ্ধ ১০টি খাবার

সবশেষে বলি, খুব ছোটবেলা থেকেই যদি এভাবে সুষম খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা যায়, সেটা সুদূর ভবিষ্যতেও কাজে দেয়। শিশুর জন্মের পাঁচ মাস থেকেই ধীরে ধীরে নানা স্বাদের নরম খাবারের সঙ্গে তাকে পরিচিত করে তোলা উচিত। নরম খিচুড়ি, মিষ্টি আলু, ডাল, সবজি ইত্যাদি খাওয়াতে পারেন অনায়াসেই। খেয়াল রাখুন স্বাদের দিকেও। কেননা আপনার মুখে যা স্বাদহীন, নিঃসন্দেহে শিশুর মুখেও তা একই রকম। যখন আপনার শিশু ছয় মাস বয়সে পা দেবে, তখন তার খাবারের প্রতি আরও একটু মনোযোগী হন। চেষ্টা করুন ছোট্ট সোনার জন্য নির্ধারিত একটা খাবারের তালিকা মেনে চলার। আজকে এটা, তো কাল সেটা; এভাবে না খাইয়ে একটা সুনির্দিষ্ট ডায়েট চার্ট অনুসরণ করুন। যা-ই খাওয়ান না কেন, খেয়াল রাখুন রোজের খাবারের তালিকায় প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদানগুলো থাকছে কি না। আয়রনের পরিমাণ যাতে ঠিক থাকে, সেদিকেও নজর দিন। ৬ থেকে ১২ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য দিন প্রতি ১১ মিলিগ্রাম আয়রনসমৃদ্ধ খাবার প্রয়োজন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি একজন পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে একরত্তিটার খাবারের তালিকা আপনি তৈরি করে ফেলেন! (Best Foods For Baby Under 1 year)

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null