গর্ভকালে হাল্কা শরীরচর্চাই উপকারী হতে পারে হবু মা ও বাচ্চার জন্য; সচেতন থাকুন ঝুঁকি নিয়েও!

গর্ভকালে হাল্কা শরীরচর্চাই উপকারী হতে পারে হবু মা ও বাচ্চার জন্য; সচেতন থাকুন ঝুঁকি নিয়েও!

ছিপছিপে চেহারার সুন্দরী তন্বীটি আজ মা হতে চলেছে। নারীত্বের পূর্ণতার সংজ্ঞা খুঁজে পেয়ে একদিকে যেমন সে আনন্দে ভাসছে, আবার অন্যদিকে তাকে অস্থির করে তুলছে তার ভাবী সন্তানের চিন্তা। আসলে, প্রত্যেক গর্ভবতী মায়েরই এই ধরনের চিন্তা আসা স্বাভাবিক; যে তার সন্তান সুস্থভাবে পৃথিবীতে আসবে তো বা গর্ভাবস্থায় সন্তানের কোনও ক্ষতি হবে না তো? মা হওয়া মেয়েদের জীবনে সবথেকে সুন্দর অথচ কঠিন সময়। তাই হবু মায়েদের উচিত যতটা সম্ভব নিজেদের ভালো রাখা, সুস্থ রাখা। বাড়িতে একটা পুঁচকে সদস্যকে স্বাগত জানাতে নিজেকে তৈরি রাখা। এখন, আধুনিক মেয়েরা স্বাভাবিক অবস্থায় অনেকেই শরীরচর্চা বা যোগব্যায়ামের গুরুত্ব বোঝে এবং শরীরের প্রতি যত্নশীল। কিন্তু জানেন কি; গর্ভাবস্থায় হাল্কা কিছু যোগব্যায়াম বা শরীরচর্চা হবু মা এবং বাচ্চার জন্য কতটা উপকারী? (Benefits of Yoga during pregnancy. Be careful before you start practicing yoga.)

গর্ভাবস্থায় যোগব্যায়ামের উপকারিতা (Benefits of Yoga during pregnancy in Bengali)

#1. মর্নিং সিকনেস ও অস্বস্তি কম করে (Reduces morning sickness and illness)

গর্ভবতী মায়েদের, বিশেষ করে যারা প্রথমবার সন্তানের মা হবেন, তারা মর্নিং সিকনেসে বেশি ভুগে থাকেন। এসময় ঘন ঘন বমি পায়, সব কিছুতেই গন্ধ লাগে, খাবারে অরুচি ধরে যায়, শরীরে এনার্জি থাকে না। গর্ভাবস্থায় শরীরে যেসব পরিবর্তনগুলো আসে, তার সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে খুবই অস্বস্তি বোধ করেন। এই সময় যদি হাল্কা ব্যায়াম করা যায়, তা হলে এই সমস্যাগুলো কম হয়। ব্যায়ামের ফলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য মাংসপেশী ও হার্ট শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং হবু মায়ের শরীরকে এই সময়ের জন্য প্রস্তুত করে দেয়। ব্যায়ামের ফলে কোমর বা জয়েন্টে ব্যথা এবং পিঠের ব্যথারও উপশম হয়।

#2. মানসিক উদ্বেগ কমায় ও ঘুম ভালো হয় (Reduces anxiety and promotes better sleep)

গর্ভাবস্থায় সারাক্ষণ শুয়ে বসে থাকলে, রাতে ঘুম আসতে চায় না। আবার এসময় হরমোনের কারণে মায়েদের প্রায়ই মন খারাপ হয় বা দুশ্চিন্তা হয়। দিনের কিছুটা সময় ব্যায়াম করলে, শারীরিক কর্মক্ষমতাও ঠিক থাকে, অকারণ উদ্বেগ কমে আর রাত্রে ঘুমও ঠিকমতো হয়। যেসব মায়েরা গর্ভাবস্থায় নিয়মিত যোগব্যায়াম করেন, তারা প্রসবের পর খুব তাড়াতাড়ি শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠেন এবং অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলতে পারেন।

#3. স্বাভাবিক প্রসবে সাহায্য করে (Helps in normal delivery)

যোগব্যায়াম স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা বাড়ায় এবং প্রসবকালীন যন্ত্রণাও কম করে। ব্যায়ামের ফলে কোমর, ঊরু, পিঠ এবং শরীরের নিম্নাঙ্গের পেশী শিথিল হয় এবং শরীর স্বাভাবিক প্রসবের জন্য প্রস্তুত হতে শুরু করে।

#4. গর্ভাবস্থায় জটিলতা কম করে (Reduces complications during pregnancy)

অনেক মায়েরই গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের সমস্যা হতে পারে। আবার অনেকের ওজন মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়, পায়ে জল জমতে থাকে,পায়ের শিরা ফুলে যায়, কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।এই সবকিছুর ওষুধ একমাত্র যোগব্যায়াম।

#5. বাচ্চার মস্তিষ্কের বিকাশ হয় (Makes baby’s brain stronger by improving blood circulation)

যেসব মায়েরা গর্ভাবস্থায় নিয়মিত যোগব্যায়াম করেন, তাদের গর্ভস্থ বাচ্চার শরীরেও রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা বাড়ে। ব্যায়াম করলে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে তা মা এবং গর্ভস্থ সন্তান, দু’জনের জন্যই উপকারী। এতে শিশুর মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশ হয় এবং স্মৃতিশক্তিও বেশি হয়।

কোন কোন অবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের যোগব্যায়াম করা উচিত নয় (Do not exercise if you are suffering from any of these)

  • আগে কখনও মিসক্যারেজ বা গর্ভপাত হয়েছে এবং উচ্চ রক্তচাপ আছে।
  • রক্তাল্পতা এবং অপুষ্টিজনিত শারীরিক সমস্যা আছে।
  • হার্ট বা ফুসফুসে কোনও সমস্যা রয়েছে।
  • প্লাসেন্টা প্রিভিয়া বা ফুল নীচের দিকে থাকলে।

যোগব্যায়াম শুরুর আগে এসব বিষয়ে সতর্ক থাকুন (Be careful before you start practicing yoga)

  • গর্ভাবস্থায় যোগব্যায়াম বা অন্য যে কোনও শরীরচর্চা শুরু করার আগে ডাক্তারের অনুমতি নিন। ডাক্তার যদি বলেন যে আপনার প্রেগন্যান্সিতে কোনও জটিলতা নেই এবং যোগব্যায়াম করলে আপনার গর্ভস্থ সন্তানের কোনও ক্ষতি হবে না, একমাত্র তবেই তা শুরু করুন।
  • ইউটিউব ভিডিও বা বাজারচলতি কোনও ক্যাসেটের ভিডিও দেখে নিজে নিজে কোনও যোগব্যায়াম করতে যাবেন না। এই পেশায় দক্ষ ট্রেনারের কাছেই যোগাভ্যাস করুন। যোগব্যায়াম সঠিক পদ্ধতিতে করা না হলে ফল বিপরীত হয়। আপনি যে পদ্ধতিতে ব্যায়াম করছে, সেটি যে আপনার জন্য নিরাপদ ও সঠিক, সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
  • একটানা ব্যায়াম করবেন না। মাঝেমধ্যে দম নিয়ে নিন ও বিশ্রাম নিন। এসময় হাল্কা ঢিলে সুতির জামা পরুন যাতে যথেষ্ট বাতাস চলাচল করতে পারে। ব্যায়াম করার সময় কোনও ভাবেই যেন পেটে চাপ না পড়ে। যেসব ব্যায়ামে শরীরে ব্যালেন্স
  • রাখার প্রয়োজন হয়, সেইসব ব্যায়াম গর্ভাবস্থায় করবেন না।
    আপনার ডাক্তার বা ট্রেনারের পরামর্শমতোই সময় ধরে ব্যায়াম করুন। এসময় আধঘণ্টা হাঁটাহাঁটি করাও খুব ভালো।

বিপদ বুঝলে কখন ডাক্তার দেখাবেন (Consult with a doctor immediately if you notice any of these)

  • কোনও ভাবে ব্যায়াম করার সময়ে বা তার পরে যোনি থেকে রক্ত বা অন্য কোনও তরল বেরোলে ।
  • ব্যায়াম করার মাঝে শান্ত হয়ে বিশ্রাম নিলেও যদি হার্টবিট কম না হয় বা একটুতেই প্রচণ্ড হাঁপিয়ে যান।
    মাথা ব্যথা বা মাথা ঘোরানো।
  • গর্ভস্থ বাচ্চা যদি নড়াচড়া না করে।
  • নির্দিষ্ট সময়ের আগেই প্রসববেদনার মতো ব্যথা হলে।

গর্ভাবস্থার বিভিন্ন ধাপে যে যোগব্যায়ামগুলি করতে পারেন (Some exercises you may follow during pregnancy)

  • পর্বতাসন (Mountain pose)
  • বীরভদ্রাসন (Warrior pose)
  • শবাসন (Corpse pose)
  • উত্থানাসন (Utthanasan)
  • বজ্রাসন (Vajrasana)
  • ত্রিকোণাসন (Triangle pose)
  • নিশ্বাসের ব্যায়াম বা প্রাণায়াম (Breathing exercises or Pranayamas)
  • উপবিষ্ট কোণাসন (Upavistha konasana)
  • মার্জারাসন (Cat stretch)
  • বন্ধকোণাসন (Butterfly pose)
  • বিপরীত করণী (Legs up the wall pose)
  • যোগনিদ্রা (Yogic sleep)

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null