ছোট্ট শিশুকে সর্দির হাত থেকে বাঁচাতে বাড়িতেই বানান চ্যবনপ্রাশ ও কফ সিরাপ, পদ্ধতি রইল এখানে!

ছোট্ট শিশুকে সর্দির হাত থেকে বাঁচাতে বাড়িতেই বানান চ্যবনপ্রাশ ও কফ সিরাপ, পদ্ধতি রইল এখানে!

আপনার বাড়ির ছোট্ট সদস্যটির শরীর ঠিক না থাকলে সবকিছুই যেন বড্ড মনমরা হয়ে পড়ে, তাই না? আর ছোট্ট বাচ্চাগুলোকে সবথেকে বেশি কাবু করে ঘনঘন আবহাওয়ার পরিবর্তন।  খামখেয়ালি পরিবেশ আজকাল আর নির্দিষ্ট ঋতু মেনে আচরণ করতেই চায় না। এই গরম, আবার এই স্যাঁতসেঁতে ভাব তো আবার দুদিন পরেই কেমন একটা ঠাণ্ডা হাওয়া। ছোট্ট বাচ্চাগুলোর শরীর আবহাওয়ার এই পাগলামি মানিয়ে নিতে পারে না সহজে। ফলস্বরূপ তাকে কব্জা করে ফেলে হাঁচি, কাশি, নাক দিয়ে জল গড়ানো বা ঘুসঘুসে জ্বরের মতো বিচ্ছিরি উপসর্গরা।

ঋতুবদলের সময় হোক বা বছরভর আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা, ফাঁদে পড়ে বাড়ির বাচ্চাগুলোই। মনে পড়ে, আগে শীত পড়তেই ঠাম্মা-দিদুনরা বাড়ির বাচ্চাদের তুলসি, বাসক, মধু, পিপুল,আদা দিয়ে তৈরি নানা আয়ুর্বেদিক পথ্য খাওয়াতে শুরু করতেন? এতে বাচ্চারা প্রায় সারা শীতকালটা সুস্থ থাকত এবং সর্দিকাশি, বিভিন্ন রোগ সংক্রমণের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেত। বাড়িতে বানানো হত চ্যবনপ্রাশ বা কাশির ওষুধও। আর এইসব ঘরোয়া টোটকা গুণগত দিক থেকেও অদ্বিতীয় ছিল।

এখন কি গ্রীষ্ম, কি বর্ষা আর কি শীত! দূষণের পাল্লায় পড়ে প্রকৃতি হারিয়েছে তার স্বাভাবিক ছন্দ। সারাবছরই তাই বাড়ির বাচ্চাগুলো সর্দি-জ্বরের কবলে পড়ে। প্রকৃতি বদলে গেলেও ভাগ্যিস ঘরোয়া টোটকাগুলোর গুণ বদলায়নি! বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, যখন তখন সর্দি কাশির হাত থেকে ওকে বাঁচাতে আপন করুন দিদা- ঠাকুমার টোটকাই। বাড়িতেই বানিয়ে ফেলুন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিহীন চ্যবনপ্রাশ ও কাশির ওষুধ । (Benefits and Recipes of Homemade Chavanprash and Cough syrup).

বাড়িতে বানানো হলেও শিশুর জন্য খুবই কার্যকরী এই চ্যবনপ্রাশ ও কাশির ওষুধ। বাড়িতে বানাবেন বলে কোনও কেমিক্যাল তো যাবেই না বাচ্চার শরীরে, ভবিষ্যতে একটুতেই কড়া কড়া অ্যানটিবায়টিকও গিলতে হবে না ওকে। কীভাবে বাড়িতেই বানাতে পারেন এই চ্যবনপ্রাশ ও কাশির ওষুধ , দেখে নিন এক নজরে।

 

বাড়িতে বানানো চ্যবনপ্রাশ ও কাশির ওষুধের উপকারিতা (Benefits of homemade chavanprash and cough syrup)

  • সম্পূর্ণ ঘরোয়া পদ্ধতিতে বানানো হয় বলে এর গুণগত মান খুবই ভালো হয়।
  • কোনও কেমিক্যাল প্রিজারভেটিভ মেশানো থাকে না।
  • আয়ুর্বেদিক বা ঘরোয়া ওষুধের কখনওই কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না।
  • বাজারে যে সমস্ত কফ সিরাপ বা কাশির ওষুধ পাওয়া যায়, সেগুলো খেলে ঘুমঘুম ভাব বা ঝিমুনি আসে। বাড়িতে বানানো কফ সিরাপে তা একেবারেই হয় না।
  • এইসব ঘরোয়া টোটকা সর্দি বুকে বসে যেতে দেয় না এবং বাচ্চার বুকে সর্দি, কফ জমে গেলে তা থেকে দ্রুত মুক্তি দেয়।

 

চ্যবনপ্রাশ ও কফ সিরাপ বাড়িতেই বানানোর কিছু সহজ উপায়  (Easy methods of preparing homemade chavanprash and cough syrup)

কীভাবে বানাবেন চ্যবনপ্রাশ (How to prepare chavanprash)

উপকরণ (Ingredients) 

  • আমলকি- ১/২ কিলো
  • এলাচ- ৬ টা
  • গোলমরিচ- দেড় টেবিল চামচ
  • দারচিনির টুকরো- ১ ইঞ্চি লম্বা
  • গোটা জিরে- ১ টেবিল চামচ
  • মৌরি- ১ টেবিল চামচ
  • চার মগজ -১/২
  • লবঙ্গ- ৮/৯ টা
  • গোটা গোলমরিচ- ৯/১০ টা
  • গুড়- এক বা দেড় কাপ
  • ঘি – ৫/৬ চামচ
  • মধু- প্রয়োজনমতো

 

পদ্ধতি (Method)

  • প্রথমে আমলকিগুলো ভালো করে ধুয়ে নিয়ে প্রেসার কুকারে একটা সিটি দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। ঠান্ডা হয়ে গেলে বীজগুলো ছাড়িয়ে একটু চটকে মেখে রাখুন।
  • সমস্ত শুকনো মশলা ব্লেন্ডারে গুঁড়ো করে নিন।
  • তলা মোটা হবে এরকম একটা পাত্র গ্যাসে বসিয়ে তাতে ঘি দিন। ঘি গরম হয়ে ছড়িয়ে গেলে, আমলকি সেদ্ধ দিয়ে নাড়তে থাকুন।
  • যখন দেখবেন পাশ থেকে তেল ছাড়তে শুরু করেছে, তখন গুঁড়ো মশলার মিশ্রণটা দিয়ে দিন।
  • বেশ ভালোভাবে কষানো হয়ে গেলে তাতে এক/দেড় কাপ গুড় দিয়ে আরও একটু রান্না করুন।
  • বেশ ঘন হয়ে এলে গ্যাস বন্ধ করে ঠান্ডা হতে দিন। ঠান্ডা হয়ে গেলে এতে ইচ্ছে হলে মধু মিশিয়ে নিন এবং একটি পরিষ্কার, শুকনো, এয়ারটাইট কৌটোতে ঢেলে রাখুন।
  • অনেকদিন ভালো রাখতে রেফ্রিজারেটরে রেখে দিন।

 

অনেকে সেদ্ধ আমলার সাথে, কিসমিস এবং খেজুরও দিয়ে থাকেন। মনে রাখবেন, চ্যবনপ্রাশ বানানোর জন্য চিনি দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। স্বাদমতো গুড়ের পরিমাণ ঠিক করুন। বানানোর সময় গরম অবস্থায় মধু দেবেন না। চ্যবনপ্রাশ ঠান্ডা হওয়ার পর ইচ্ছে হলে মধু মিশিয়ে বাচ্চাকে দিন। বাচ্চা এটা দুধের সাথেও খেতে পারে বা এমনিও খেতে পারে। আর শুধু বাচ্চাই নয়, বাড়ির যে কোনও বয়সি সদস্য/সদস্যাই এই চ্যবনপ্রাশ খেতে পারেন।

 

বাড়িতে কাশির ওষুধ বা কফ সিরাপ বানানোর কয়েকটি উপায় (How to make cough syrup at home)

#1. প্রথম পদ্ধতি

উপকরণ (Ingredients)

  • মধু-১ কাপ
  • থেঁতো করা আদা -১/২ কাপ
  • লেবুর রস- ১/২ কাপ
  • জল- ১ কাপ

 

প্রণালী (Method)

  • তলা মোটা এরকম একটি পাত্রে জল, লেবুর রস, আদা মিশিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিন। মিশ্রণ ভালো করে ফুটে উঠলে আঁচ কমিয়ে ৫-৬ মিনিট রেখে দিন।
  • এবার গ্যাস বন্ধ করে মিশ্রণটি ঠান্ডা হতে দিন। ঠান্ডা হয়ে এলে ভালো করে ছেঁকে নিয়ে এতে মধু মিশিয়ে নিন।
  • পরিষ্কার কাঁচের পাত্রে ঢেলে রেফ্রিজারেটরে রেখে দিন।
  • বাচ্চাকে এই সিরাপ ১/২ বা ১ টেবিল চামচ করে দিনে তিন থেকে চারবার খাওয়ান। খাওয়ানোর আগে রেফ্রিজারেটর থেকে পরিমাণমতো বার করে নিন এবং সিরাপ স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এলে বাচ্চাকে দিন।

 

আরও পড়ুনঃ ঋতু বদলের সময় ভাইরাস বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বাচ্চার যত্ন নেবেন কীভাবে? মিলিয়ে নিন চেকলিস্ট!

 

#2. দ্বিতীয় পদ্ধতি

উপকরণ (Ingredients)

  • দুধ-১ কাপ
  • মধু-১ টেবিল চামচ
  • এক চিমটে হলুদ গুঁড়ো

 

প্রণালী (Method)

  • ফোটানো দুধ একটু ঠান্ডা হয়ে ঈষদুষ্ণ অবস্থায় এলে হলুদ গুঁড়ো আর মধু মিশিয়ে বাচ্চাকে খাইয়ে দিন।
  • দিনের যে কোনও সময় এই মিশ্রণটি বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন।

 

#3. তৃতীয় পদ্ধতি

উপকরণ (Ingredients)

  • তিল-১ টেবিল চামচ
  • যষ্টিমধু- ১ টেবিল চামচ
  • লেবু- ১ টুকরো
  • জল -১ কাপ
  • ম্যাপেল সিরাপ- ১ কাপ

 

পদ্ধতি (Method)

  • একটি পাত্রে জল গরম করতে বসিয়ে দিন। জল গরম হয়ে এলে, এতে ম্যাপেল সিরাপ দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
  • আঁচ কমিয়ে তিল, যষ্টিমধু ও লেবু দিয়ে দিন। আঁচ কমানো অবস্থাতেই ১৫ মিনিট মতো জ্বাল দিন।
  • এবার ঠান্ডা করে মিশ্রণটি ছেঁকে নিন। বাচ্চাকে ১ টেবিল চামচ করে দিনে ৩ বার এই সিরাপ খাওয়াতে পারেন।

 

ঘরোয়া বা প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি এই চ্যবনপ্রাশ এবং কফ সিরাপ বেশ দ্রুত কাজও করে এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। তবে মনে রাখবেন, বাচ্চা যদি সর্দিকাশিতে খুবই কষ্ট পায় এবং এইসব ঘরোয়া পথ্য নিয়ম মেনে খাওয়ালেও অসুস্থতা যদি দীর্ঘমেয়াদি হয়ে যায়; অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

 

আরও পড়ুনঃ ছোট্ট বাচ্চার যেসব শারীরিক উপসর্গ এড়িয়ে গিয়ে ভুল করেন অধিকাংশ বাবা-মায়েরা

 

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null