ডিমকে কেন শিশুর খাদ্যতালিকায় অবশ্যই রাখবেন, রইলো তারই বিশদ আলোচনা!

ডিমকে কেন শিশুর খাদ্যতালিকায় অবশ্যই রাখবেন, রইলো তারই বিশদ আলোচনা!

ছোট্টখাট্টো একটা সাদা রঙের নরম-সরম গা, আর ভেঙে ফেললেই ভিতরে হলুদ বা লালচে রঙের আরও ছোট্ট একটা বল। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন, ডিম সেদ্ধর কথাই বলছি। এই ডিম সেদ্ধ খেতে ভালোবাসে না, এমন আমিষভোজী মানুষ হাতে গুণে কয়েকটাই পাওয়া যাবে মাত্র। আর বাচ্চাদের তো কথাই নেই। ডিমে ওই দস্যিগুলোর না নেই কখনও। আকারে ছোট বলে, ভুল করেও যেন এই ডিমকে হেয় করবেন না। শিশুর জন্য আদর্শ ও সুষম খাদ্যের মধ্যে অন্যতম একটি হল ডিম। কেন এই ডিমকে বাচ্চার খাদ্যতালিকায় অবশ্যই রাখবেন, রইলো তারই বিশদ আলোচনা। (Shishur pushtite dimer bhumika. Benefits of Including Eggs In Your Baby’s Diet In Bangla)

ডিমে কী কী পুষ্টিকর পরিপোষক আছে ? (Essential nutrients found in egg)

ডিম যে শুধুমাত্র উচ্চমানের প্রোটিনে ভরপুর, তাই শুধু নয়। ডিমে অন্তত ১৩ টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনও আছে, যার মধ্যে ভিটামিন B12, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই অন্যতম। জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম, তামা ইত্যাদি খনিজ বা মিনারেলসেরও ভাণ্ডার একটি ছোট্ট ডিম। বাড়ন্ত শিশুর সম্পূর্ণ পুষ্টিতে জরুরি ফোলেট, কোলিন, ফ্যাটি অ্যাসিড, ওমেগা-৩ ইত্যাদি পরিপোষকও ডিমে সঠিক মাত্রায় উপস্থিত।

ডিমে থাকা পুষ্টিকর পরিপোষকের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা (Nutritional value of an egg for your baby)

  • ক্যালোরি – ৭২ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট – ০.৬ গ্রাম
  • ফ্যাট – ৫ গ্রাম
  • প্রোটিন – ৬.৩ গ্রাম
  • কোলেস্টেরল – ২১৩ মিলিগ্রাম
  • সোডিয়াম – ৬৩ মিলিগ্রাম

বাচ্চার বয়স কত হলে তাকে ডিম খাওয়ানো শুরু করবেন? (When should you introduce an egg to your baby?)

বাচ্চার বয়স আট মাস হলেই তাকে ডিম দেওয়া যায়। তবে অবশ্যই মনে রাখবেন, আটমাসের হয়ে গেলে বাচ্চাকে শুধুমাত্র ডিমের কুসুম দেওয়া উচিত। এক বছর বয়স হওয়ার পরেই বাচ্চাকে ডিমের সাদা অংশ খেতে দিন।

Also read: ইকিড় মিকিড় দাঁতের সারি, শক্ত হবে তাড়াতাড়ি

বাচ্চা সপ্তাহে কয়টি ডিম খেতে পারে (How many eggs should you feed your baby in a week?)

যদি বাচ্চার প্রয়োজন হয় বা তার চিকিৎসক কোনও কারণে বলেন, তা হলে বাচ্চা সপ্তাহের প্রত্যেকদিনই একটি করে ডিম খেতে পারে। তবে, মনে করা হয় যে, সপ্তাহে ৩-৪ টি গোটা ডিম অর্থাৎ কুসুম শুদ্ধ ডিমের সাদা অংশ, খাওয়া স্বাস্থ্যকর। এর ফলে অতিরিক্ত খাওয়াও হয় না আবার পরবর্তীকালে কোলেস্টেরল বেশি হওয়ার ভয়ও থাকে না। যদি আপনি বাচ্চাকে সপ্তাহে ৩/৪ টির বেশি ডিম খাওয়াতে চান, তা হলে ৩ দিন ডিমের কুসুম ছাড়া শুধু সাদা অংশটা বাচ্চাকে দিন। প্রয়োজন হলে বাচ্চার ডায়েটিশিয়ান বা ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

বাচ্চার খাদ্যতালিকায় ডিম কেনো রাখবেন? (Health benefits of including eggs in your baby’s diet)

#1. মগজ হবে শক্তিশালী (Makes brain healthy)

ডিমের কুসুমে কোলেস্টেরল এবং কোলিন থাকে, যা শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক বিকাশ এবং মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে। মগজ ও স্নায়ুর মধ্যে বোঝাপড়াও বাড়ায় এই কোলিন। কোলেস্টেরল শরীরকে ফ্যাট পাচনে সাহায্য করে আবার কিছু হরমোনও তৈরি করে।

#2. রোগ প্রতিরোধ ও পাচন ক্ষমতা বাড়ায় (Boosts immunity and metabolism)

ডিমের মধ্যে সঠিক মাত্রায় উপস্থিত সেলেনিয়াম, জিঙ্ক ও আয়রনের মতো খনিজ বাচ্চার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে। ডিমের সাদা অংশ সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের যোগান দেয়। ডিমের মধ্যে যে ফোলেট থাকে, তা শিশুর শরীরে নতুন কোষ তৈরি এবং তার বাড়বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে সহায়তা করে।

#3. ভালো থাকে হৃদযন্ত্র (Boosts heart health)

ডিমের কুসুমে থাকা ফসফোলিপিড শিশুর হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রাও সঠিক রাখতে সাহায্য করে এটি। ডিমে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল খুবই কম মাত্রায় থাকে এবং ডিম বাচ্চাকে HDL বা ভালো কোলেস্টেরলের জোগান দেয়। তবে অতিরিক্ত ডিমের কুসুম খাওয়ানো একেবারেই উচিত না।

#4. লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়ায় (Enhances liver function)

ডিমে পর্যাপ্ত পরিমাণে সালফার থাকে। এই সালফার শিশুর শরীরে কোলাজেন এবং কেরাটিন উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ায়। ভিটামিন B12 শোষণে শরীরকে সাহায্য করে বলে লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়ে এবং লিভার ভালো থাকে। এর ফলে, শিশুর চুল এবং ত্বকের স্বাস্থ্যও ভালো হয়।

#5. চোখ ভালো রাখে (Good for eyes)

ডিমের কুসুমে লুটেইন (lutein) এবং জেক্সান্থিন (zeaxanthin) নামের দুটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে, যারা বাচ্চার চোখদুটিকে ক্ষতিকর আলট্রাভায়লেট রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করে এবং চোখের স্বাস্থ্যও ভালো করে। চোখের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।

#6. হাড় সুগঠিত হয় (Helps in bone development)

ডিমে উপস্থিত ভিটামিন এ, ই, কে এবং ডি শিশুর হাড়ের বিকাশ ও স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে।

#7. চনমনে শিশু (Gives energy)

ডিমের সাদা অংশে রাইবোফ্লাভিন (riboflavin) থাকে, যা কার্বোহাইড্রেট থেকে এনার্জি তৈরি করে শিশুকে চনমনে রাখে। এছাড়াও ডিমের সাদা অংশে থাকা প্রোটিন এনার্জির ভাণ্ডার বললে ভুল বলা হয় না।

Also read: বাড়ন্ত বাচ্চার সুস্বাস্থ্যে আয়রন সমৃদ্ধ ১০টি খাবার

মনে রাখুন কিছু কথা (Keep these in mind)

  • বাচ্চাকে আধসেদ্ধ ডিম বা কাঁচা ডিম কোনও ভাবেই খেতে দেবেন না। ডিমের কুসুমে সালমনেল্লা এনটারাইটিডিস (Salmonella Enteritidis) নামের ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে যা শিশুর শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ডিম ভালো করে সেদ্ধ করা হলে এবং রান্না হলে এই ব্যাকটেরিয়া পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়।
  • ডিমের সাদা অংশ থেকে অনেকের এলার্জি হতে পারে। যদিও এই ধরনের এলার্জি খুবই বিরল। ডিম খাওয়ানো শুরু করার পর বাচ্চাকে একটু পর্যবেক্ষণে রাখুন। কোনও রকম অসুবিধা মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
  • প্রথম প্রথম ডিমের কুসুম খাওয়ানোর পর বাচ্চার পটির দিকে নজর রাখুন। বাচ্চা ঠিকভাবে ডিম হজম করতে পারছে কি না, বা তার শরীরে কোনও অস্বস্তি হচ্ছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখুন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null