ক’দিন আগে পর্যন্ত ওল্টাতেও পারত না। আজ হামাগুড়ি দিয়ে বাড়িময় ঘুরঘুর করছে!
বাড়ির সব্বার প্রাণ, পুঁচকে সদস্য়টার বাড়-বৃদ্ধির যেন হদিসই পাচ্ছেন না আপনি। হামাগুড়ি দিতে শিখে জীবনের প্রথম মাইলস্টোন তো সে পেরিয়েই গেল, বাকিটাও পেরিয়ে যাবে এভাবেই।
সাধারণত সাত মাস থেকে দশ মাস বয়সের মধ্য়ে বাচ্চারা হামাগুড়ি দেয়। কোনও কোনও বাচ্চার ক্ষেত্রে একটু আগে বা পরেও হয়। আবার কিছু বাচ্চা আছে, যারা হামাগুড়ি না দিয়ে প্রথমেই বুক চিতিয়ে এগোনোর চেষ্টা করে বা জিনিস ধরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে! আবার এরকমও অনেকে আছে যারা হামাগুড়ি দেয়ই না, বসতে শেখে আর তারপরই জিনিস সরিয়ে আস্তে আস্তে দাঁড়াতে শিখে যায়। তাই যদি আপনার বাচ্চা হামাগুড়ি না দেয়, সেটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু একবার যদি সে কায়দাটা রপ্ত করে ফেলতে পারে, তা হলে চিন্তার কারণ আছে বই কি। কেননা এবার আর বিছানার গণ্ডিতে আটকা থাকবে না সে। আপন হাতের মুঠোয় পুরে দেখতে চাইবে বিশ্বজগত!
হামাগুড়ি দেওয়ার এই সময়টাকেই শিশুর মনন-বিকাশের প্রথম স্তর বলে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। শিশুর শারীরিক ভারসাম্য রক্ষা, শক্তি, দৃষ্টি এবং দৃরত্ব মাপার দক্ষতা (visual spatial spills) ও মেরুদণ্ডের সুসম বিকাশ (spiral alignment) এবং ভাবাবেগ গঠনে খুবই প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে থাকে হামাটানার এই দিনগুলো। আমরা তার মধ্যে কয়েকটি সম্বন্ধে বলছি;
হামাগুড়ি দিতে শেখার সঙ্গে সঙ্গেই শিশু তার প্রধান প্রধান শারীরিক দক্ষতাগুলো অর্জন করে। এই শারীরিক দক্ষতাগুলো প্রয়োজন হয় যখন বড় হয়ে তারা হাঁটে, দৌড়ায় বা লাফায়। হামা দিতে দিতেই শিশু তার শরীরের ভারসাম্য রাখতে শেখে ও সেই সাথে তৈরি হয় আত্মবিশ্বাসের ভিতও। একই ভাবে এতে শিশুর চোখ এবং হাতও একসঙ্গে কাজ করতে শেখে।
হামাগুড়ি দিতে দিতে শিশুর মনে স্থান এবং দৃরত্ব সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়। যা পারিপার্শ্বিক পরিমণ্ডলে তার নিজের অবস্থান বুঝতে সাহায্য করে। এই অভ্য়াসই সামনে কোনও বাধা এলে, মুখ ফিরিয়ে অন্য় রাস্তা ধরার শিক্ষা দেয় বাচ্চাকে। এই শিক্ষাই আজীবন বিপদ কাটিয়ে বেঁচে থাকার শক্তি জোগায় তাকে। হঠাৎ কোনও সমস্য়ার মুখে পড়লে নিজেই তা সমাধানের শিক্ষা দেয়।
আরও পড়ুন: কী করলে চটজলদি হাঁটতে শিখে যাবে বাচ্চার দল; জেনে নিন ৭টি মজার-সহজ কৌশল!
আমরা জানি, আমারা রোজ যা যা করি, তার জন্য় মাথার দু’দিকের দু’টি অংশের সার্বিক সমন্বয় প্রয়োজন। এই দুটো দিকই সব অঙ্গের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। আপনার বাচ্চা যখন হামা দেয়, তার সাথে সাথেই মাথার দু’দিকের এই সমন্বয় শক্তি বৃদ্ধি পায়। কেননা হামাগুড়ি দেওয়ার সময় গতিবিধি, দৃষ্টি ও শ্রবণ- এই তিনটি জিনিসই একসঙ্গে কাজ করে। বাচ্চা যত বেশি হামা দেবে, ওর গতিবিধি ততই সামঞ্জস্য়পূর্ণ হবে এবং মাথার সক্রিয়তা বৃদ্ধি পাবে।
হামাগুড়ি দেওয়ার সঙ্গেই বাচ্চারা নিজেদের জীবনের সিদ্ধান্ত নিতে শেখে। তারা ঝুঁকি নেয়, কিছু ক্ষেত্রে সফল হয়, কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়। এর ফলে নিজেদের ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে তারা সচেতন হয়। এই প্রক্রিয়াই তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলে।
হামা দিতে দিতেই শিশুর তার পছন্দের জিনিসের কাছে পৌঁছতে পারে। সেই সাথে সেই জিনিসের দূরত্ব বুঝতে পারে, তার অবস্থান সম্পর্কে ধারণা করতে পারে। এর থেকেই ভবিষ্য়তে খেলনা গাড়ি চালানো, উড়ে আসা বল ধরা, ব্ল্য়াকবোর্ড দেখে কিছু লেখার মতো ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ওর।
একারণেই বলছি, হামা দিতে কক্খনও বাধা দেবেন না আপনার পুঁচকেটিকে। মনে রাখবেন, শিশু যতই হামা দেবে, ততই সে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য় প্রস্তুত হবে!
আরও পড়ুন: কীভাবে বুঝবেন আবোল-তাবোল কথার মানে? মায়েদের জন্য থাকল শিশুর ভাষার অর্থ বোঝার টিপস!
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null