তেল মালিশের হরেক গুণ। সোনাকে মালিশ করবেন কীভাবে? জেনে নিন এখনই!

তেল মালিশের হরেক গুণ। সোনাকে মালিশ করবেন কীভাবে? জেনে নিন এখনই!

কথা বলা শিখতে শিশুদের অনেকটা সময় লেগে যায়। কিন্তু তার আগেই শিশুরা পৃথিবীকে চিনতে শিখে যায়। পৃথিবীর সঙ্গে, আশপাশের মানুষের সঙ্গে তাদের একটা বন্ধন তৈরি হয়। তারা নিজেদের ঘনিষ্ঠ মানুষের সম্পর্কে একটা মনোভাব তৈরি করে নেয়। কিন্তু কীভাবে? (Benefits Of Baby Massage and Tips)

এমন কথা সব চিকিৎসকই হবু মায়েদের বা সদ্য মা হয়েছেন যাঁরা, তাঁদের জানান। অনেক সময় সময় চিকিৎসককে বলতেও হয় না। মায়েরা নিজেরাই অনুভব করেন, এই সত্যিটা। (Baby Massage: Tips and Benefits) কথা বলতে বা বুঝতে শেখার আগে শিশুর সঙ্গে পৃথিবীর বন্ধন তৈরি হয় স্পর্শের মাধ্যমে।

তাই যদি হয়, তা হলে কি মাসাজ এই চেনা বা জানার পথটা আর একটু সুগম করতে পারে? চিকিৎসককে এমন প্রশ্নই করেছিল স্নিগ্ধা। বিষয়টায় একেবারেই তাই। স্বল্প কথায় জানিয়ে দিলেন চিকিৎসক (Why Baby Massage is Important)। কিন্তু শিশুদের মাসাজ বা মালিশ করার আগে কতগুলো জিনিস মাথায় রাখতে হবে, সেটা স্নিগ্ধাকে বলে দিলেন তিনি।

শিশুদের মালিশ বা মাসাজ করার উপকারিতা অনেক। শরীরে রক্তসঞ্চালন বাড়ানোর থেকে মনের বিকাশ—অল্প কথায় উপকারিতার সব ক’টা বিষয় বলা সম্ভব নয়। তবু সংক্ষেপে রইল সেই তালিকা। (Benefits of Baby Massage)

 

শিশুদের মালিশ বা মাসাজ করার উপকারিতা (Benefits of Baby Massage)

  • স্বাস্থ্যের উন্নতি: রক্তসঞ্চালন বাড়াতে মালিশ বা মাসাজের জুড়ি নেই (Health Benefits of Baby Massage)। এ কথা বোঝা কঠিন নয়, রক্তসঞ্চালন বাড়লে শিশুর রোগ প্রতিরোধ থেকে শুরু করে শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা—সবই বাড়বে। রক্তসঞ্চালন বাড়লে বাইরে থেকে আসা জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করার জন্য শিশুর শরীর আরও শক্তি সঞ্চয় করবে। এমনকী মাসাজের ফলে খাবার হজম করার ক্ষমতা, পুষ্টিলাভের পরিমাণও বেড়ে যায় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

 

  • মনের সংযোগ: যে কথা দিয়ে শুরু হয়েছিল, সেই মনের সংযোগ বা চারপাশের মানুষের সম্পর্কে শিশুর মনোভাব তৈরি করার ক্ষেত্রে মাসাজের জুড়ি নেই। মা কিংবা বাবা যদি শিশুদের নিয়মিত মাসাজ বা মালিশ করে দেন, তা হলে ওই স্পর্শের মাধ্যমেই শিশুর সঙ্গে তাঁদের একটা বন্ধন তৈরি হয় (Infant Massage)। শিশু বুঝে নেয়, এরাই তার সবচেয়ে কাছের মানুষ।

 

  • শান্ত করে: মাসাজের ফলে অক্সিটোসিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে। মজার কথা, এটা যে শুধুমাত্র শিশুর একার বাড়ে, তা নয়, যিনি মাসাজ করছেন, তাঁরও বাড়ে। ফলে শিশুর মালিশ করে দিলে ওর পাশাপাশি একই সঙ্গে বাবা বা মায়ের শরীরেরও এই হরমোনের ক্ষরণ বাড়বে। এই হরমোনের কাজই হল মনকে শান্ত করা। তা ছাড়া মাসাজের ফলে শিশুর স্নায়ুও আরাম পায়, ফলে ওর ঘুম ভালো হয়।

 

  • আরাম দেয়: মাসাজ বা মালিশের ফলে শিশুর পেশির মধ্যেও রক্তসঞ্চালনের পরিমাণ বাড়ে। এতে ওর আরাম হয়। তা ছাড়া ফুসফুসেরও উপকার হয় এই মালিশের ফলে। শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা তাতে বৃদ্ধি পায়। (Benefits of Baby Massage And Tips To Do It Right) যে তেল দিয়ে ওকে মাসাজ করা হয়, তা ত্বকের জন্য উপকারী। প্রয়োজনীয় ভিটামিনের কিছুটা এই তেল থেকে ত্বক সংগ্রহ করে নিতে পারে। এবং ত্বকের নীচে থাকা স্নায়ুর বিকাশের জন্যও এই মালিশ খুব কার্যকর।

 

  • আত্মবিশ্বাস জোগায়: শিশুর জন্য এই মাসাজ যেমন দুনিয়া চেনার রাস্তা, তেমনই বাবা-মায়ের জন্য এই মালিশ হল শিশুকে আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করার রাস্তা। আপনি আপনার সন্তানকে যত বেশি করে মাসাজ করবেন, তত বুঝতে পারবেন, ওর কীসে ভালো লাগে, কীসে সমস্যা হয়। (The Benefits of Baby Massage) আপনার সোনা আপনার জীবনে আসার পর, যে আড়ষ্টতা ছিল ওকে নিয়ে, সেটাও ক্রমশ কেটে যায় এই মাসাজের ফলে।

 

মাত্র মাস দুয়েক স্নিগ্ধা মা হয়েছে। বাড়িতে চিরকালই সে শুনে এসেছে বাচ্চাদের মালিশ বা মাসাজ করতে হয়। কিন্তু কী ভাবে সেই মাসাজ করতে হয়, সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না ওর। তাই চিকিৎসকের থেকেই সেটা জেনে নিতে গিয়েছিল। মাসাজের উপকারিতার বিষয়ে তো জানা হল। কিন্তু কী ভাবে এই মাসাজ হবে, সেটাও জানা দরকার।

চিকিৎসক ওকে বুঝিয়ে দিলেন, পেট, মাথা বা মুখ, ঘাড়, হাত-পা, পিঠ, বুক—শরীরেরর প্রতিটা অংশ আলাদা আলাদা করে কী ভাবে মাসাজ করতে হবে। স্নিগ্ধাও সেই বিষয় নোট করে নিল। পরে সেই তালিকা শেয়ার করে নেওয়া যাবে আপনাদের সঙ্গেও। কিন্তু এবার জানিয়ে রাখা যাক, শিশুকে মাসাজ করার সাধারণ কয়েকটা নিয়ম। যা আপনার কাজে লাগবে সোনামণিকে মাসাজ করার সময়।

 

আরও পড়ুন: ছোট্ট ছানার ত্বকের যত্নে কোনও ত্রুটি হচ্ছে না তো? কীভাবে দেখভাল করবেন, চেকলিস্ট ছকে দিলাম আমরা!

 

শিশুকে মালিশ বা মাসাজ করার টিপস (General Tips for Baby massage):

#1. শান্ত যখন: আপনার খোকা-খুকুর মাসাজ দরকার। কিন্তু ও যখন খুব ক্লান্ত রয়েছে, তখন ওকে মাসাজ করতে যাবেন না। কারণ শিশুরা খুব ক্লান্ত থাকলে, তাদের বিশ্রাম দরকার। সেই সময় তারা মালিশটাকে খুব বেশি উপভোগ করতে পারে না। বরং ওরা যখন বিশ্রাম নিয়ে শান্ত হয়ে রয়েছে, তখনই ওদের মাসাজ করুন (Baby massage: Tips and Benefits)।

#2. ইমিউনাইজেশন বা কোনও টিকা দেওয়ার ঠিক পরেই নয়: ইমিউনাইজেশনের ঠিক পরে-পরেই মাসাজ করা উচিত নয়। সেক্ষেত্রে শিশুদের জ্বর এসে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কয়েকদিন পরে আবার মাসাজ শুরু করতে হবে। ইমিউনাইজেশনের পর ঠিক কত দিন মাসাজ বন্ধ রাখা উচিত, তা ওর চিকিৎসকের থেকে জেনে নিন।

#3. সুরসুরি না-লাগে: ওকে মাসাজ করার সময়, খুব যত্ন নিয়ে হাত বোলান। আপনার হাতের মুভমেন্টের মধ্যে যেন আত্মবিশ্বাস থাকে। যদি কোনও কারণে ওর সমস্যা হয়, তা হলে ততক্ষণাৎ মাসাজ করা বন্ধ করুন (Baby Massage Tips)। এমন ভাবে মাসাজ করতে হবে, যেন শিশুর সুরসুরি না-লাগে। সেক্ষেত্রে ওর অস্বস্তির ফলে মাসাজ থেকে পুরোপুরি লাভ ও পাবে না।

#4. প্রতিদিন নিয়ম করে: প্রতিদিন নিয়ম করে ওকে মাসাজ করুন। কোনও দিন যেন বাদ না-পড়ে। দিনের কোন সময় মাসাজ করবেন, সেটারও যেন বিশেষ পরিবর্তন না-হয়।

#5. সাবধান থাকুন: মাসাজ করার সময় কয়েকটা বিষয়ে নজর দিতেই হবে। আপনার হাতে যদি ভারী গয়না বা এমন কোনও অলঙ্কার থাকে, যা থেকে শিশুর আঘাত বা খোঁচা লাগতে পারে, তা হলে তা মাসাজ করার আগে খুলে রাখুন। যিনি মাসাজ করবেন, তাঁর হাতে বড় নখ না-থাকাই ভালো। (Infant Massage Techniques) ফুলহাতা জামাকাপড়ের বোতাম বা হুকের বিষয়েও সচেতন থাকবেন। এগুলো থেকে শিশুদের চোট লেগে যেতে পারে।

#6. পেটের কাছে সাবধান: শিশুর পেটের অংশে মাসাজ করার সময় বেশি পরিমাণে সতর্ক থাকুন। এই অংশে বেশি চাপ পড়লে শিশু অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।

#7. কোন তেল: এক একটা তেল, এক এক জনের জন্য ভালো। আপনার সোনার জন্য সঠিক তেলটিই আপনাকে বেছে নিতে হবে। অলিভ অয়েল, সরষের তেল থেকে শুরু করে পিনাট অয়েল—বহু রকমের তেল দিয়েই শিশুর মাসাজ করা যায়। কিন্তু কোন তেলটা আপনার সোনার জন্য ভালো হবে, তা নির্বাচনের বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কোন তেল থেকে কোন ধরনের উপযোগিতা পাওয়া যাবে, তা একমাত্র উনিই বলতে পারবেন।

#8. কতক্ষণ মাসাজ: প্রত্যেক বাবা-মা চিকিৎসককে এই প্রশ্ন করেন। প্রকৃতপক্ষে এই বিষয়ে কোনও বাধা ধরা নিয়ম নেই। তবে ১০ মিনিট থেকে শুরু করে আধ ঘণ্টা পর্যন্ত মাসাজ করাই যেতে পারে (Benefits of Infant Massage)। তবু চিকিৎসকের মতামত জেনে নিন।

#9. কোন বয়স থেকে: এটারও কোনও বাধা ধরা নিয়ম নেই। মোটামুটি শিশুর মাস ছয়েক বয়স থেকেই মাসাজ শুরু করা যেতে পারে (Baby Massage Guide)। তবে এটাও চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত। তাই ওঁকে জিজ্ঞেস করেই মাসাজ শুরু করুন।

#10. ঘুমিয়ে পড়লে বন্ধ করুন: অনেক সময় শিশুরা মালিশের সময় ঘুমিয়ে পড়ে। এ সব ক্ষেত্রে মাসাজ করা বন্ধ করুন। না-হলে ওর সমস্যা হতে পারে। (Benefits Of Baby Massage and Tips)

চিকিৎসকের থেকে জানা কিছু সাধারণ টিপস রইল স্নিগ্ধার খাতা থেকে। আপনার সোনার মাসাজের ক্ষেত্রে এই টিপস কাজে লাগবে আশা করা যায়। ছোট্ট শিশুর শরীরের কোন কোন অংশ কী ভাবে মাসাজ করবেন, তার পরামর্শ দেওয়া যাবে অন্য লেখায়। তার জন্য লক্ষ্য রাখুন এই ওয়েবসাইটে। (Benefits Of Baby Massage and tips)

 

আরও পড়ুন: ৭টি টোটকা, উজ্জ্বল ত্বক পাবে তোমার খোকা!

 

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

 

 

null

null