অনেক স্বপ্ন আর প্রত্যাশা নিয়ে আপনার ছোট্টসোনাকে পৃথিবীতে এনেছেন আপনি। এই পৃথিবীকে তার বাসযোগ্য করাটা আপনার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাকে সমস্ত আঘাত, সংকট থেকে আপনি নিজেই বাঁচিয়ে রাখবেন বলে সংকল্প নিয়েছেন। এর প্রতিটা কথাই সত্যি। কিন্তু তার জন্য প্রাথমিক ভাবে কী কী করতে হবে, সে সম্পর্কে ধারণা আছে তো আপনার? (Basic Safety Rules Every Child Should Know)
একটা ছোট্ট ঘটনার কথা বলা যাক। স্বাতী আর কৌস্তুভ তাদের দু’বছরের কন্যা মাম্পাকে নিয়ে গত পুজোর পর-পর গিয়েছিল মানালি বেড়াতে। তিনজনে একসঙ্গে মলরোডে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হঠাৎই মাম্পা ভিড়ে হারিয়ে যায়। পরে ওরা জানতে পারে, মাম্পা অন্য একজন ভদ্রলোকের পাশেপাশে হাঁটতে হাঁটতে দূরে চলে যায়। (Shishu Suraksha) ভিড়ের মধ্যে পাশের সেই ভদ্রলোককে নিজের বাবা বলে ভুল করেছিল সে। আর ভিড়ের কারণে ভদ্রলোকও বুঝতে পারেননি, তাঁর গায়ে গায়ে একটা বাচ্চা হাঁটছে।
যখন টের পান, তখন তিনিও ঘাবড়ে যান। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও যখন শিশুটির অভিভাবকের কোনও সন্ধান তিনি পান না, তখন সোজা হাজির হন থানায়। বিকেলে হারিয়ে যাওয়া মাম্পা মধ্যরাতে আবার ফেরে স্বাতী আর কৌস্তুভের কাছে। (Important Safety Rules To Teach Your Children) সেই অচেনা ভদ্রলোক যদি সত্যিই ভদ্র না-হতেন, তা হলে কী সাংঘাতিক ঘটনা ঘটত, এখনও সে কথা ভেবেই কেঁপে ওঠে স্বাতী।
কিন্তু এটাও তো সত্যি, এমন ঘটনার মুখোমুখি হতে পারেন, যে কোনও বাবা-মা। তাই আগেভাগে ছোট্টসোনাকে বাঁচানোর রাস্তাটা ভেবে রাখাই ভালো। (Safety Rules All Kids Should Know ) কী ভাবে আপনার একরত্তিকে বিপদের আশঙ্কা থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন, লেখাতে-ছবিতে তারই কতগুলো সহজ টিপস রইল বিশেষজ্ঞদের ঝুলি থেকে।
অজানা বিপদের হাত থেকে বাঁচাতে কী কী শিখিয়ে রাখবেন আপনার বাচ্চাকে (General Safety Rules You Should Teach Your Children)
#1. অপরিচিতর কাছ থেকে কোনও খাবার নয়: শিশুদের মন জয় করাটা খুব সহজ। লোভনীয় খাবার সামনে দেখিয়ে যে কেউ তাদের অন্যত্র ডেকে নিয়ে যেতে পারে। আপনার খোকা বা খুকুর সঙ্গে যেন এমনটা না-হয়। তাই গোড়াতেই ওকে শিখিয়ে রাখুন, অপরিচিত কারও থেকে কোনও খাবার না-নিতে। বোঝান, এর ফলে কী কী বিপদ হতে পারে। (Basic Safety Rules Every Child Should Know) কী ভাবেই বা অপরিচিতের প্রস্তাব প্রত্যাখান করতে হবে, সেটাও সরল করে বুঝিয়ে দিন।
#2. আপনার নাম, ফোন নম্বর, ঠিকানা যেন মনে থাকে: ধরুন কোনও কারণে আপনার সোনামণি আপনার থেকে আলাদা হয়ে গেল। এক্ষেত্রে নিজের বাবা বা মায়ের পুরো নাম এবং ফোন নম্বরটা যদি ওর মুখস্থ থাকে, তা হলে সহজেই কারওর সাহায্য নিয়ে ও আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফেলতে পারবে। তাই ধরে-ধরে ওকে এগুলো মুখস্থ করিয়ে দিন। বাড়ির ঠিকানাও যেন ওর মনে থাকে। মাঝে মধ্যেই সব ক’টা তথ্য ওর মুখস্থ আছে কি না ঝালিয়ে দেখে নিন।
#3. আগুন বা বিদ্যুত নিয়ে খেলা নয়: সারা দিন আপনার সোনাকে চোখে-চোখে রাখাটা সম্ভব না-ও হতে পারে। বিশেষত যখন আপনি স্নান করতে গেলেন, বা রান্না করছেন। এই সব সময় ওর বিপদ ও হয়তো নিজেই ডেকে আনতে পারে। শিশুদের স্বাভাবিক ভাবেই কৌতূহলের মাত্রা বেশি। (Important Safety Rules To Teach Your Children) তার ফলে হয়তো ও আগুন নিয়ে খেলা করতে গেল বা বিদ্যুতের প্লাগে ধাতব কিছু দিয়ে খোঁচা দিয়ে ফেলল! এই সব ঘটনা মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই ওকে গোড়াতেই বুঝিয়ে দিন আগুন বা বিদ্যুত থেকে কী কী বিপদ হতে পারে।
#4. কেউ যেন খারাপ উদ্দেশে স্পর্শ না-করে: শিশুদের যৌনহেনস্থার মতো ঘটনা একেবারেই বিরল নয়। অপরিচিত মানুষের কে কেমন, তা জানা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়। এমনকী অনেক পরিচিতের মনেও কী আছে আপনি জানেন না। তাই গোড়াতেই আপনার সোনাকে সেখান, তাকে যেন কেউ কারণে-অকারণে স্পর্শ না-করতে পারে। (Basic Safety Rules Every Child Should Know) বুঝিয়ে দিন কোনটা ‘গুড টাচ’, কোনটা ‘ব্যাড টাচ’। এবং ‘ব্যাড টাচ’-এর মতো ঘটনা ঘটলে, সে কীভাবে মুক্তি পাবে, ততক্ষণাৎ কাকে এ বিষয়ে জানাবে, সেটাও জানিয়ে রাখুন।
#5. একা বড় রাস্তায় নয়: হতে পারে, আপনার পাড়া খুব শান্ত, আপনার বাড়ির সামনে দিয়ে বড় গাড়ি বিশেষ চলে না। কিন্তু তারপরেও আপনার সোনা যেন একা বাড়ি থেকে বেরিয়ে অনেক দূরে না-যায়। রাস্তায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা যদিও বা বাদই দেওয়া গেল, কিন্তু অসৎ মানুষের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা তো থেকেই যায়। (Teaching General Safety Rules to Children) তাই দোকান বা পাশের বাড়িতে যেতে হলেও, সে যেন আপনার সঙ্গেই যায়— এ বিষয়ে খেয়াল রাখবেন।
আরও পড়ুন: ছোট্ট বাচ্চার যেসব শারীরিক উপসর্গ এড়িয়ে গিয়ে ভুল করেন অধিকাংশ বাবা-মায়েরা
#6. ব্যাগে নাম লিখে দেবেন না: আপনার সোনা কি স্কুলে যাচ্ছে? আপনি কি ওর ব্যাগে বা অন্য জিনিসে বড়বড় করে ওর নাম লিখে দিয়েছেন? যদি ব্যাগটা সোনামণির হাতছাড়া হয়, তা হলে যাতে জিনিসটা আবার নিজের কাছে ফিরে আসে, সেই জন্য আপনার এই উদ্যোগ? এক্ষেত্রে বলে রাখা দরকার, এই পদক্ষেপও ওর জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। অসৎ উদ্দেশে কেউ যদি সেই নামটা দেখে নেয়, তা হলে সহজেই ওর সঙ্গে ভাব জমাতে পারবে (Safety Rules Chart)।
শিশুদের নিজেদের নামে কেউ ডাকলে, তারা ভাবে, ওই ব্যক্তি তার পূর্বপরিচিত। ফলে ওই অসৎ ব্যক্তি আপনার অনুপস্থিতিতে ওর বিপদ ডেকে আনতে পারে। ফলে এই নাম লিখে রাখার পরিকল্পনাটা বাদ দিন। আপনার খোকা বা খুকুকে বলুন, সেও যেন তার ব্যাগের ওপর বড়বড় করে নিজের নাম না-লেখে।
#7. পাঁচিলে ওঠা নয়: কমবেশি সব শিশুরাই খেলাধুলায় আগ্রহী হয়। ফলে তারা এমন অনেক কাণ্ড করে ফেলে, যা তাদের বিপদ ডেকে আনতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হল পাঁচিলে ওঠা। পাশের বাড়ির জমিতে বল পড়ে গিয়েছে, অতএব সে দৌড়ল পাঁচিল টপকে বল আনতে। এমন সময় হুড়োহুড়িতে পড়ে গিয়ে ও আঘাত পেতে পারে।
আর ছাদের পাঁচিলে ওঠার তো প্রশ্নই নেই। (Safety Rules All Kids Should Know) সেটা তো মারাত্মক বিপদের দিকে ওকে ঠেলে দিতে পারে। টেলিভিশন বা সিনেমার কোনও চরিত্রকে এই ধরনের কোনও কাজ করতে দেখে, সে যেন তাদের অনুকরণ না-করতে যায়, সেটাও ভালো করে বুঝিয়ে দিন।
#8. হারিয়ে গেলে ভয় না-পায়: ও যদি কোনও কারণে আপনার থেকে আলাদা হয়ে যায়, হারিয়ে যায়, তা হলে যেন ভয় না-পায়। সেক্ষেত্রে কী কী করতে হবে, সেটাও ভালো করে বুঝিয়ে দিন। ও যেন আপনার পুরো নাম, ফোন নম্বর এগুলো নিকটবর্তী কোনও পুলিশকে জানায়। যদি তেমন কাউকে দেখতে না-পায়, তা হলে চারপাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখে এমন কোনও মহিলাকে দেখতে পাচ্ছে কি না, যাঁর সঙ্গে কোনও শিশু রয়েছে। তেমন কাউকে দেখতে পেলে, তার কাছে সাহায্য চায়।
উপরে লেখা পরামর্শগুলো একেবারে প্রাথমিক স্তরেই আপনাকে মেনে চলতে হবে। এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এর বাইরেও থাকে অনেক কিছু, যা আপনার ছোট্ট সোনাকে বিপদের দিকে ঠেলে দিতে পারে। (Shishu Suraksha) তাই গোড়া থেকেই ওকে সচেতন করে তোলার চেষ্টা করুন। এমন কোনও কাজ, যা করতে ওর ভালো লাগছে না, তা করতে নিষেধ করুন। আর এটা কখনওই ভাববেন না, ও ছোট বলে, ওর বুদ্ধি নেই। আপনার দায়িত্ব হল বাবা-মা হিসেবে সেই বুদ্ধিটা কাজে লাগানোর সাহস জুগিয়ে দেওয়া। (Basic Safety Rules Every Child Should Know)
আরও পড়ুন: হঠাৎ বিপদে শিশুকে সুস্থ করবেন কী করে? কখনই বা যেতে হবে ডাক্তারের কাছে!
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null