পরের বার কৎবেল মাখা খাওয়ার আগে জেনে নিন উপকারিতা, ঝালিয়ে নিন ঝুঁকির দিকও!

পরের বার কৎবেল মাখা খাওয়ার আগে জেনে নিন উপকারিতা, ঝালিয়ে নিন ঝুঁকির দিকও!

কৎবেল মানেই বাঙালি মেয়েদের ভালোবাসা, বাঙালি মেয়েদের সবচেয়ে প্রিয় চটপটি খাবার। আর আপনি যদি সন্তানসম্ভবা হন, তা হলে তো কথাই নেই। লঙ্কা, তেল দিয়ে কৎবেল মাখাই যেন অমৃতসমান তখন। মুখে রুচি না থাকলে আগেভাগেই বেল মেখে খেতে শুরু করে দিই আমরা। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছন, গর্ভাবস্থায় কৎবেল খাওয়া নিরাপদ কি না? আজকে এই নিয়েই আলোচনা করব আমরা। (Is eating wood apple (Bael fruit) good during pregnancy? Bael fruit during pregnancy)

গর্ভবতী মায়েদের জন্য কৎবেলের উপকারিতা (Health Benefits of Bael Fruit During Pregnancy in Bengali)

মৌসুমী ফল হিসেবে কৎবেলের জুড়ি মেলা ভার! উষ্ণ গরমের এই সময়ে টকস্বাদের কৎবেলের ভর্তা বা শরবতই শরীর ঠান্ডা করবে, তেমনই এর নানা ওষধি আর পুষ্টিগুণ সুস্থ-সবলও রাখবে আপনাকে।

কৎবেলে আছে এমন কিছু উপাদান, অন্য় ফলে একসঙ্গে যা পাওয়া যায় না বললেই চলে। এই পুষ্টিকর উপাদানগুলির মধ্য়ে অন্য়তম হল কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন-সি, ক্য়ালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস ইত্য়াদি। এত গুণসমৃদ্ধ ফল, গর্ভাবস্থায় খেলে তা হলে অসুবিধা কী? এই প্রশ্ন আপনার মনে জাগতেই পারে এখন। তা হলে আগে দেখে নিন কৎবেল কেন ভালো। তারপরে এর ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়েও আলোচনা করব আমরা!

প্রতি ১০০ গ্রাম কৎবেলে থাকে ৮৫.৬ গ্রাম জলীয় অংশ, খনিজ পদার্থ ২.২ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৪৯ কিলোক্যালোরি, আমিষ ৩.৫ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, শর্করা ৮.৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫৯ মি. গ্রাম, ভিটামিন সি ৩ মি. গ্রাম। গুণাগুণের কথা সাজিয়ে দিলাম নীচে!

#1.শরীরে তরল পদার্থের ভারসাম্য রক্ষা করে (Balances the Level of Fluids in the Body)

কৎবেলে থাক পটাশিয়াম, শরীরে তরল পদার্থের ভারসাম্য রক্ষায় যার গুরুত্ব অপরিসীম। গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে যেহেতু রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়, তাই এই ভারসাম্য রক্ষার প্রয়োজন বেড়ে যায় আরও। এ ছাড়াও স্নায়ুতন্ত্রকে সচল রাখার কাজটাও করে পটাশিয়াম। গর্ভাবস্থায় শরীরে হঠাৎ হঠাৎ খিঁচুনির প্রবণতাও কমিয়ে দেয় সহজে।

#2. হজমক্ষমতা বাড়ায় (Aids in Digestion)

গর্ভাবস্থায় আরও একটা সমস্য়া হল বদহজমের প্রবণতা বেড়ে যাওয়া। গর্ভস্থ বাচ্চাটি ধীরে ধীরে যত বড় হয়, ততই পরিপাকতন্ত্রের উপর চাপ দিতে থাকে সে। এর থেকেই হবু মায়ের পেটের নানা সমস্য়া হতে থাকে, বদহজম তো প্রায় রোজের সঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়। কৎবেল খেলে এই সমস্য়া থেকে রেহাই পেতে পারেন। কেননা কৎবেল আঁশযুক্ত ফল, এই আঁশ বা ফাইবার হজমে মোক্ষম ওষধি। এই খাদ্য আঁশই আবার ত্বকের জন্যও খুব উপকারি। ত্বককে মসৃণ রাখে। ব্রনর সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয়।

#3. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে (Fights Constipation)

গর্ভকালে কোষ্ঠকাঠিন্য হবে না, এ হতেই পারে না। আমাদের সবার চেনা কৎবেলে জোলাপজাতীয় উপাদানও থাকে। গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য যখন মাত্রা ছাড়ায়, কৎবেল খেয়ে আপনি উপকার পেতে পারেন। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে যে পেটে ব্য়থা হয়, কৎবেল খেলে তার থেকেও রেহাই পাবেন আপনি।

#4. সংক্রমণ ঠেকায় (Fights infections)

কৎবেলের নির্যাস সংক্রমণ প্রতিরোধে খুবই উপকারী। এর ব্য়াকটেরিয়া আর সংক্রমণ প্রতিরোধক উপাদানগুলি শরীরে যে কোনও ধরনের ইনফেকশনই ছড়ানোর আগে আটকে দেয়। গর্ভাবস্থায় অনেক মায়েরই রোগ-প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে যায়। যা থেকে সহজেই নানা রোগভোগ দানা বাঁধে শরীরে। এই সময়টায় তাই সরবত করে খান, উপকার পাবেন।

#5. রক্ত পরিষ্কার রাখে (Keeps the blood clean)

বেল রক্ত পরিষ্কারক হিসাবে কাজ করে। রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে। এবং শরীর থেকে টক্সিন দূর করে শরীরকে পরিষ্কার রাখে। বেলে আছে ভিটামিন সি। জীবাণুনাশক উপাদানের সঙ্গে এই ভিটামিন-সিও দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে তোলে।

এই সব দেখে এতো বোঝাই গেলো যে বেল কত ভালো। কিন্তু কোনও কিছুই যে মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়, এ কথা আমাদের জানা উচিত। কৎবেল যতই স্বাদের হোক না কেন, তার কিছু ক্ষতিকর দিকও আছে। গর্ভাবস্থায় যথেচ্ছ খাওয়ার আগে সেগুলো একবার মিলিয়ে নিন।

গর্ভাবস্থায় কৎবেল কখন ক্ষতিকর হতে পারে (Side Effects of Having Bael fruit during pregnancy)

গর্ভাবস্থার দিনগুলো যে কারোর জন্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, যে এমনি সময় যে খাবারগুলো আপনার জন্য উপকারী বলে ধরা হয়, গর্ভাবস্থায় সেগুলোই ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। মায়ের জন্য তো বটেই, হবু বাচ্চার জন্যও। গর্ভাবস্থায় যে যে কারণে কৎবেল আশঙ্কার কারণ হয়ে উঠতে পারে সেগুলি হলো-

  • কৎবেল খানিক কষাটে হয়। গর্ভাবস্থায় টানা খেলে যার খুবই খারাপ প্রভাব পড়তে পারে বাচ্চার উপর। কোনও কোনও ক্ষেত্রে গর্ভপাতও হতে পারে।
  • .হজমে সাহায্য় করে ঠিকই। আবার একই সঙ্গে অতিমাত্রায় কৎবেল খেয়ে ফেললে উল্টো বিপদ হতে পারে। গ্যাসের সমস্যায় জেরবার হতে পারেন আপনি।

সব সত্য়িগুলো জানা থাকুক বা না থাকুক, বাড়ির বড়দের মধ্য়ে গর্ভাবস্থায় কৎবেল খাওয়া নিয়ে বিতর্ক চলেই। আমরা জানি, এর গুণ প্রচুর। তবে এর সঙ্গে এও প্রমাণ হয়েছে যে গর্ভাবস্থায় কৎবেল খাওয়া কিন্তু বিপজ্জনকও হতে পারে। তো, তাই বলছি ডাক্তারের সঙ্গে একবার কথা বলে নিন। ঝুঁকি নেওয়ার থেকে নিশ্চিন্ত হয়ে নেওয়াই ভালো। তাই না?

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null