বাচ্চার ঘুম যতটা চিন্তার, তার চেয়েও বেশি চিন্তার বুঝি তার পটির রং! বাচ্চা যদি দিনে বেশ কয়েকবার পটি করে তাতে চিন্তা, কিছুদিন না করলে তাতেও চিন্তা। আবার রঙের প্রকারভেদেও চিন্তা। বাচ্চার কি কোনও অসুবিধা হচ্ছে, না ও সুস্থ আছে। ওর পটির কোনটা স্বাভাবিক, কোনটা অস্বাভাবিক বুঝতে গিয়েই নাজেহাল অবস্থা হয় সদ্য়ো অভিভাবকদের।
কিন্তু সত্য়ি বলছি, এত চিন্তার আসলে কিছুই নেই। পটির রঙই সব বাতলে দেবে আপনাকে, একবার শুধু জেনে নিলেই হল। আসলে জন্মের পর থেকে প্রথম বছরে কয়েক দফায় বাচ্চার খাবারদাবারে রদবদল আনি আমরা। তাতেই এক এক সময় এক এক রকম পটি হয়। তাই কোনটা স্বাভাবিক, কোনটা নয় তা মায়েদের জেনে রাখা দরকার।
তা ছাড়া কোন বয়সে বাচ্চা দিনে কতবার পটি করবে সেটাও জেনে রাখুন। এতে সুবিধা হবে আপনারই। (What Does Your Baby’s Poop Color Say About Their Health? Guide to baby poop colors in Bengali.)
সদ্য়োজাত বাচ্চার মলের রং কালো হওয়াটাই স্বাভাবিক। কেননা মায়ের গর্ভে থাকাকালীন বাচ্চার পেটে মিকোনিয়াম নামে এক পদার্থ জমা থাকে। জন্মানোর পর সেটিই মলের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। নবজাতকের প্রথম মল খানিক আঠালো আর আর্দ্র হয় এই মিকোনিয়ামের কারণেই। মিকোনিয়াম আর কিছুই নয়, মিউকাস, মৃত কোষ ও একরকমের তরল। ফলত এর রং হয় কালো। শতকরা ৯০ ভাগ বাচ্চাই জন্মের প্রথম ২৪ ঘণ্টা ও বাকিরা প্রথম ৩৬ ঘণ্টার মধ্য়ে পটি করে। এই সময় বাচ্চাকে শুধু বুকের দুধই দিন। মিকোনিয়াম পুরোটা বেরিয়ে গেলেই বাচ্চার পটি ফের স্বাভাবিক রঙের হয়ে যাবে। তবে পরে যদি ফের আপনার বাচ্চা কালো পটি করে, অবশ্য়ই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান ওকে।
বুকের দুধ খেতে শুরু করলে বাচ্চার পটির রং কালচে থেকে ধীরে ধীরে সবজে বাদামি আর তার পর চার-পাঁচদিনের মাথা থেকে হলদে রঙের হতে শুরু করে। এভাবে ওর পেট থেকে সমস্ত মিকোনিয়াম বের হয়ে গেলে পটির রং ধীরে ধীরে গাঢ় হলুদ হতে যাবে। বুকের দুধ খাওয়া বাচ্চাদের পটি এমন রঙেরই হয়। এবং এটাই স্বাভাবিক।
বুকের দুধ কিংবা ফরমুলা মিল্ক খাওয়া বাচ্চাদের এমন উজ্জ্বল হলদে কিংবা সাদাটে হলদে রঙের পটি হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু এরকম পটিই যদি ঘনঘন হতে থাকে, এবং পটি যদি সাধারণের চেয়ে পাতলা হয় তা হলে চিন্তার কারণ আছে বই কি। এ ক্ষেত্রে আপনার বাচ্চার ডায়রিয়া হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। এর থেকে ডিহাইড্রেশনের সমস্য়াও হতে পারে। দেরি না করে তাই ডাক্তারের কাছে যান তখনই।
বাচ্চার পরিপাকতন্ত্রে পিগমেন্টশনের কারণে এমন কমলা রঙের পটি হতে পারে। প্রধানত ০-৬ মাসের শিশুদের ক্ষেত্রে এমন হয়। বাচ্চা বুকের দুধই খাক কিংবা ফরমুলা মিল্ক, কমলা রঙের পটি দেখে ঘাবড়ে যাবেন না যেন!
মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশিই বাচ্চা যখন ধীরে ধীরে সলিড খেতে শুরু করে, তখন এমনটা হতে পারে। যেমন ধরুন আপনি ওকে ডালিমের রস কিংবা টম্য়াটো জুস কিংবা বিটের রস খাওয়ালেন। এতে ওর পটি লাল হবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে যদি ও তেমন কোনও খাবার না খেয়ে থাকে, তা হলে অপেক্ষা না করে তখনই ডাক্তার দেখান। হতে পারে, আপনার বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্য় হয়েছে, আর ওর মলদ্বার ফেটে রক্ত বেরোচ্ছে। কিংবা ওর পেটের ভিতর কোনও সংক্রমণ থেকেও এমন হতে পারে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে দুধে অ্য়ালার্জি থেকেও বাচ্চাদের এমন হয়। মাকেই এর খেয়াল রাখতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ন্যাপি ছাড়িয়ে পটিতে বসানোর সাধারণ সমস্যা ও তার সহজ সমাধান
যে বাচ্চারা শুধুই ফরমুলা মিল্কই খায়, তাদের সবুজাভ হলদে পটি হওয়ায় কোনও অস্বাভাবিকতা নেই। বুকের দুধ খাওয়া বাচ্চাদের চেয়ে খানিক শক্তও হবে পটি। এটাই স্বাভাবিক, ভয় পাওয়ার কোনও কারণই নেই। কিন্তু যদি দেখেন পটির সঙ্গেই ফেনা ফেনা বেরোচ্ছে, তা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। হয়তো গ্য়াস হয়েছে আপনার বাচ্চার!
বাচ্চারা যখন সলিড খাবার খেতে শুরু করে তখন গাঢ় সবুজ পটি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। পালং শাক, মটরশুঁটি এসব থেকে এমন পটি হতেই পারে। বাচ্চাকে কোনও আয়রন সাপ্লিমেন্ট খাওয়ালেও গাঢ় সবুজ পটি হতে পারে। তবে পটি যদি ফেনাযুক্ত, দানা দানা আর পিচ্ছিল হয়, তা হলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে নিন একবার। হয়তো ওকে গ্য়াসের কোনও ওষুধ খাওয়াতে হবে।
বাচ্চা যখন সাদা কিংবা ধূসর পটি করছে, ধরে নিতে হবে যে ও ওর লিভারে যথেষ্ট পরিমাণ বিলিরুবিন তৈরি করতে পারছে না। যার জন্য় খাবারটা ঠিকঠাক হজমই হচ্ছে না ওর। যে কোনও খাবারই আমাদের পাকস্থলীতে যাওয়ার পর তাতে বিলিরুবিন মিশে যায়, যার জন্য় পটির স্বাভাবিক রং হয় হলুদ। বাচ্চা সাদা বা ধূসর পটি করলে এক মুহূর্ত সময় নেবেন না। তৎক্ষণাৎ ডাক্তার দেখান।
সব মায়ের কাছেই এটা খুবই সাধারণ একটা প্রশ্ন। সবার জন্য়ই বলি, যদি আপনার বাচ্চা রোজ পটি না করে তা হলে চিন্তিত হয়ে পড়ার কোনও কারণ কিন্তু নেই। নবজাতকের সব কিছুর সঙ্গে মানিয়ে গুছিয়ে নিতে বেশ খানিকটা সময় কিন্তু লেগেই যায়। মোট কথা যতক্ষণ ওর পটি নরম হচ্ছে, কিংবা পটি করার সময় ও কান্নাকাটি কিছুই করছে না, ততক্ষণ নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন আপনি।
যদি আপনার বাচ্চা শুধু বুকের দুধই খায়, তিন-ছয় সপ্তাহ অবধি দেখবেন হপ্তায় হয়তো একবারই পটি করছে ও। আবার এটাও হতে পারে, যে ঘুম থেকে উঠলেই পটি হচ্ছে ওর। দুটোই স্বাভাবিক। আর যদি সে ফরমুলা মিল্ক খায়, তো দিনে অন্তত একবার পটি হবেই হবে। তবে এর চেয়েও কম পটি হলে বুঝতে হবে শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য় হচ্ছে। সলিড খাবার শুরু হওয়ার পর ওর পটি বাড়বে, পটির ঘনত্বও বাড়বে।
খাওয়ার পরই দেখবেন হয়তো পটি হচ্ছে ওর, কিন্তু সেটা একের বেশি হলে ডায়রিয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। বাচ্চার প্রথম বছরে ক্ষণে ক্ষণে ও পটির ঘনত্ব ও রং বদলানোটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু যেটা দরকার, সেটা হলো সবসময় নজর রাখতে হবে আপনাকে। বেগতিক দেখলেই ডাক্তার দেখান।
আরও পড়ুনঃ ডায়রিয়া ও লেজুড় দোস্ত ডিহাইড্রেশন; কারণ ও প্রতিরোধের উপায়
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null