ছোট্ট বটে কিন্তু ধার খুব। সংক্রমণ, আঁচড় এড়াতে আজই শুরু করুন কচি নখের যত্নআত্তি!

ছোট্ট বটে কিন্তু ধার খুব। সংক্রমণ, আঁচড় এড়াতে আজই শুরু করুন কচি নখের যত্নআত্তি!

সক্কালবেলা উঠে পাশে ঘুমিয়ে থাকা ছোট্ট ফুটফুটে কাদার তালটাকে চুমু খেতে গেলেন এবং সেটা না করেই হাউমাউ করে চেঁচিয়ে উঠলেন। কারণ, পুঁচকের কচি মুখে চারদিকে লাল-লাল দাগ। কেউ যেন রেগে-মেগে আঁচড়ে দিয়েছে ওইটুকু বাচ্চার কচি মুখে। এদিকে আপনি নতুন মা হয়েছেন বলে কথা, ক্ষণে ক্ষণে চোখে হারান একরত্তিটিকে, তার মুখের এরকম ছিরি দেখে আপনি চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করলেন। যাই হোক, বাচ্চার ঠাম্মি ঘরে এসে একপলক দেখেই এবার হেসে বাড়ি মাথায় করলেন। আপনিও জানতে পারলেন, ওই কীর্তিটি করেছে আপনার খুদে নিজেই। মনের সুখে রাতে ঘুমের মাঝে আঁচড়েছে নিজের ছোট্ট নাক আর কুট্টুস মুখখানি। নখ দিয়ে নিজের মুখের চালচিত্র পাল্টে ফেলেছে আপনার সুপুত্র বা সুকন্যাটি। (How to take care of Baby’s Nails or Nail Care Tips in Bangla.)

নবজাতকের নখ কাটা ও নখের যত্ন (Nail Care for newborns)

ভাবছেন কী? বাচ্চার নখ পাতলা ও নরম বলে কী তাতে ধার নেই নাকি? জানতেন কি, বাচ্চার নখ বাড়ে হুড়মুড় করে? পায়ের নখের থেকে জলদি বেড়ে যায় হাতের আঙুলের নখ। সপ্তাহে একবারের বেশি নখ ছোট করতে হবে এই সব বিপদ এড়াতে গেলে। ছোট্ট ছোট্ট নখের প্রয়োজন পর্যাপ্ত যত্নেরও। বেখেয়ালে ভুলে গেলেই নখ থেকে আঘাত লাগতে পারে শিশুর চোখে, মুখে ও গায়ে। আঁচড় খেতে পারেন আপনিও, তবে সেটা আপনার কাছে “ফুলের ঘা”। নিয়মিত নখের যত্ন নিলে এসব উটকো বিপদ যেমন এড়ানো যায়, সেরকমই নখের স্বাস্থ্যও ভালো হয় এবং নখের কোণে হওয়া ইনফেকশন থেকে রক্ষা পায় বাচ্চাটি। বাচ্চার নখের যত্ন কীভাবে করবেন, তারই হদিস নিয়ে এলাম আমরা। দেখে নিন একনজরে।

 

বাচ্চার নখ পরিষ্কার করবেন কীভাবে ? (How to clean baby’s nails?)

বাচ্চাকে নিয়মিত স্নান করালেও অনেক মা-ই তার নখের যত্ন নিতে ভুলে যান। ওইটুকু আঙুলে দানার মতো নখ, তাতে আবার কী ধুলো ময়লা জমবে, এই ভেবে নখ পরিষ্কার করার কথা মনেও আনেন না। কিন্তু শিশুর নখও নিয়মিত পরিষ্কার করা দরকার। নখের কোণে ময়লা জমে  থাকে, যা হয়তো আমাদের চোখেও পড়ে না। এবার ওই নখ শুদ্ধ আঙুল বাচ্চা যদি মুখের মধ্যে পুরে নেয়, তা হলে ময়লা গেলো ওর পেটে। তারপরে কী হবে, সেটা আপনি দিব্যি আন্দাজ করতে পারছেন। তাই, বাচ্চার নখ নিয়মিত পরিষ্কার করে দিন। কীভাবে, দেখুন,

  • স্নানের আগে যখন বাচ্চাকে তেল মালিশ করেন, তখন আপনার ওই তেল মাখা আঙুলগুলো দিয়ে শিশুর নখেও একটু মালিশ করে দিন। অলিভ অয়েল হলে তো কথাই নেই, নখের স্বাস্থ্য চনমনিয়ে উঠবে। অলিভ অয়েল হাতে নিয়ে নখ এবং নখের চারপাশের চামড়া আলতো করে ম্যাসাজ করে দিন। সব আঙুলের নখেই করবেন কিন্তু।
  • একটা এক্সট্রা বেবি টুথব্রাশ কিনে রাখুন। একটা তো আছেই বাচ্চার দাঁত পরিষ্কার করার জন্য, এটা থাকবে নখ পরিষ্কার করতে। স্নানের সময় ঈষদুষ্ণ গরম জলে পরিষ্কার বেবি টুথব্রাশটি ভিজিয়ে নিন, এরপর আলতো করে ১-২ বার বাচ্চার সব আঙুলের নখের কোণে ও নখে বুলিয়ে দিন। এতে নখের কোণে জমে থাকা ময়লা বেরিয়ে যাবে। চিন্তা নেই, বাচ্চা এতে কাঁদবে না, বসে বসে দিব্য সুরসুরি খাবে।

আরও পড়ুন: ছানার স্নানের সময় হোক আরাম আর স্ফূর্তির

বাচ্চার নখ কাটবেন কীভাবে? (How to trim/cut baby’s nails?)

শুনেই যেন আপনার পেট গুড়গুড় করছে, তাই না? তার ওপর বাচ্চা বড্ড ছটফটে। নখ কাটতে হবে জানেন,অন্য বন্ধু-মায়েদের কাছে তার গল্পও শুনেছেন, নিজেকেও যে এই কাজটা করতে হবে সেটা ভুলে গিয়েছিলেন। তাই তো? ভয় লাগাটা স্বাভাবিক, ওরা যে বড্ড নরম। তবে, কয়েকটা কৌশল জানা থাকলে খুব একটা অসুবিধা হবে না আপনার, যেমন;

  • একদম ছোট্ট বাচ্চার নখ এতটাই নরম হয় যে, আপনি নখের ধারালো অংশগুলো নিজের আঙুল দিয়েই কেটে দিতে পারবেন। এই কাজটা করতে পারেন, তবে অবশ্যই বাচ্চার নখ কতটা বড় হয়েছে তার ওপর নির্ভর করে। কোনও ভাবেই যেন বাচ্চার আঙুলে বেশি চাপ না পড়ে বা নখ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ভেঙে না যায়।
  • বাচ্চা একটু করে বড় হতে থাকলে তার নখের জন্যও অন্য ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। বাচ্চার নখ কাটার জন্য বেবি নেল ক্লিপারস বা বাচ্চাদের স্পেশ্যাল নেল কাটার কিনতে পাওয়া যায়; সেটা নিয়ে আসুন। সঙ্গে কিনুন ছোট্ট একটা ফাইলার।
  • ফাইলারের সাহায্যে নখ ট্রিম করে দেওয়া সবথেকে সহজ একটা কাজ। যদি আপনি নিয়মিত বাচ্চার নখ ট্রিম করেন, তা হলে ফাইলার দিয়ে আলতো করে ঘষে দিলেই বাচ্চার নখ ট্রিম করা হয়ে যাবে এবং কোনও ধারালো অংশও থাকবে না।
  • বাচ্চার নখ কাটার সময় শুধুমাত্র বাচ্চাদের জন্য তৈরি নেল কাটারই ব্যবহার করুন। আপনারা বড়রা যা দিয়ে নখ কাটেন, কখনই সেটা ব্যবহার করবেন না ভুলেও। সামান্য এদিক-ওদিক হলে নখের জায়গায় কেটে উঠে আসতে পারে বাচ্চার আঙুলের অংশ। কাজেই ভীষণ, ভীষণ, ভীষণ সাবধান।বাচ্চাদের নেল কাটার বা নেল ক্লিপারস বিশেষভাবে তৈরি হয়, যাতে আঘাত লাগার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে।
  • অনেক আলো আছে, এরকম জায়গায় বাচ্চার নখ কাটবেন।
  • আপনার যদি চোখে পাওয়ার থাকে বা উত্তেজনা হলে হাত কাঁপে, তা হলে আপনি বাচ্চার নখ কাটবেন না। বাড়ির অন্য কাউকে দায়িত্ব দিন।
  • স্নানের ঠিক পরপর বাচ্চার নখ নরম থাকে। তখন নখ কেটে ফেলা খুবই সোজা। আবার সবথেকে ভালো, বাচ্চা যখন ঘুমবে তখন তার নখ কাটুন। এতে বাচ্চা ছটফট করার ভয়ও থাকবে না এবং বাচ্চার আঘাত লাগার সম্ভাবনাও থাকবে না। অথচ নখ কাটা হয়ে যাবে সুন্দর।

মাথায় রাখুন কিছু কথা (Don’t forget these)

  • বাচ্চার নখ খুব বেশি বড় হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না। একটু বড় হতে হতেই ট্রিম করে দিন।
  • নিজের দাঁত দিয়ে বাচ্চার নখ কাটতে যাবেন না কোনও ভাবেই।
  • কুসংস্কারগুলো ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিন দেখি! আপনার কাছে সবার আগে বাচ্চার ভালো  থাকা। তাই, ঘুমলে নখ কাটতে নেই এই ধরনের উপদেশ কানে নেবেন না।
  • নেহাৎ কোনও কারণবশত বাচ্চার নখ কাটতে পারছেন না, এরকম হলে ওকে মিটেন্স পরিয়ে রাখুন রাতে ঘুমনোর সময়। এর ফলে শিশু নিজেকে আঘাত করতে পারবে না।
  • যদি কোনও ভাবে নখ কাটতে গিয়ে একটু চামড়া কেটে রক্ত বেরিয়ে যায়, একদম ভয় পাওয়ার কিছু নেই। মনে রাখবেন, আপনি একা না, কম বেশি সব মায়েরই এই অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে।যে জায়গাটা কেটে গেছে সেটা একটা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে চেপে ধরুন, রক্ত বন্ধ হয়ে যাবে। তারপর বাচ্চার ডাক্তারকে ফোন করে আপনার করণীয় জেনে নিন। যদি রক্ত বন্ধ না হয় বা খুব বেশি কেটে গেছে মনে হয়, দেরি না করে আগে ডাক্তারের কাছে যাবেন।
  • ভয় পাবেন না, শুধু একটু বেশি সতর্ক থাকুন। বাচ্চার সাথে আনন্দে খেলুন “ইকিড় মিকিড় চাম চিকিড়”। আর পাশে উৎসাহ দিতে রইলাম তো আমরা।

আরও পড়ুন: কীভাবে নেবেন দুধের শিশুর দুধে দাঁতের সম্পূর্ণ যত্ন!

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null