ছোট্ট সোনা পেট ভরে ব্রেস্ট মিল্ক খাচ্ছে কি না, বুঝবেন যেভাবে!

ছোট্ট সোনা পেট ভরে ব্রেস্ট মিল্ক খাচ্ছে কি না, বুঝবেন যেভাবে!

নতুন মা হয়েছেন যারা, তারা সবকিছুতেই বড্ড বেশি ভাবেন, বড্ড বেশি ভয় পান। নানারকম চিন্তা তাদের মাথায় সারাদিন ঘুরে বেড়ায়। আমাদের কাছেও অনেক প্রশ্ন আসতেই থাকে। অনেক কিছুর মাঝে যে চিন্তা নতুন মা’কে অস্থির করে দেয় সেটা হল, বাচ্চা পেট ভরে খাচ্ছে কি না! আরে, এতো আর বড় মানুষ নয় যে পেট না ভরলে আর কয়েক হাতা ভাত চাইবে বা খিদে না থাকলে বাটিতে বাড়তি খাবার তুলে দেবে! এই একরত্তি মানুষগুলোর একটাই ভাষা জানা আছে, তা হল কান্না। তাই, খুদে পেট ভরে দুধ খেলো কি না বা তার খিদে মিটছে কি না; এই নিয়ে মায়ের প্রশ্ন থাকা অস্বাভাবিক কিছুই নয়। (How to Tell If Your Newborn is Getting Enough Milk)

আজকের প্রতিবেদন তাই নতুন মায়েদের জন্য। বাচ্চা ঠিকমতো ব্রেস্ট মিল্ক পাচ্ছে কি না বা পর্যাপ্ত খাবার ওর পেটে যাচ্ছে কি না, সেটা বোঝারই কিছু ফন্দি বাতলে দিচ্ছি আমরা!

নিশ্চিন্ত থাকতে প্রতিবেদনটা পড়ে ফেলুন। আপনাদের থেকে এই প্রশ্ন পেয়েছি বহুবার। তাই চেষ্টা করলাম আপনাদের একটু স্বস্তি দিতে। দেখে নিন একনজরে। (How to Tell Whether Your Baby’s Getting Enough Breast Milk)

 

ছোট্ট সোনা যে পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাচ্ছে বা ও পেট ভরে খাচ্ছে; সেটা বুঝবেন কীভাবে? (Ways to Tell If Your Baby Is Getting Enough Breast Milk)

#1. বারবারই দুধ খাবে ও: সারাদিনে প্রায় ৮ থেকে ১২ বার মায়ের কাছে দুধ খাওয়ার আবদার করবে ও! বাচ্চা যে দুধ খেয়ে আরাম পাচ্ছে; এ আপনি দেখেই বুঝতে পারবেন। শান্ত হয়ে নিজের মনে হাত-পা নেড়ে চুকচুক করে দুধ খাবে ও।

#2. খাওয়া হয়ে যাওয়ার পরে বেশ খুশি থাকবে খুদে: যদি ঘুমনোর ধান্দায় থাকে, তা হলে অবশ্য সে খেয়ে নিয়ে আরাম করে ঘুমিয়ে যাবে। আর যদি ঘুম না পায়; তা হলে পেট ভরে খাওয়ার পরে বেশ মজাসে থাকবে; ঘ্যানঘ্যান করবে না; খেলতে চাইবে মায়ের সাথে (How Do I Know My Baby is Done Breastfeeding)।

#3. ওজন বাড়বে নিয়মমতো: সাধারণ নিয়ম মেনেই ওজন বাড়বে পুঁচকের। চারমাস বয়স না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক সপ্তাহে ওজন মেপে দেখুন দেখি! প্রত্যেক সপ্তাহে প্রায় ১৫৫-২৪০ গ্রাম করে ওজন বেড়ে যাবে ছোট্টটার।

#4. খাওয়ার সময় খেয়াল করুন আওয়াজে: বাচ্চা যখন দুধ খাবে, ও যদি ঠিক করে দুধ টানতে পারে তা হলে একটু খেয়াল করলেই ঢোক গেলার আওয়াজ পাবেন আপনি। লক্ষ্য করবেন গলার কাছে ওঠানামাও। বাচ্চা খাবে, ল্যাচ করার সময় বদলাবে তার ছন্দও। কখনও আস্তে আস্তে টানবে, কখনও জোরে টানবে আবার কখনও হয়তো কিছুই না করে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিল। (How Do I Know My Baby is Full When Breastfeeding) বাচ্চা যে ঠিকমতো ল্যাচ করতে পারছে, তা আপনি বুঝতে পারবেন একটু ভালো করে ওকে লক্ষ্য করলেই।

#5. ডায়াপার ভিজবে বেশ ক’টা: বাচ্চার জন্মের প্রথম ৪৮ ঘণ্টায় ২টি ডায়াপার ভিজবে। ডিসপজেবল ডায়াপারগুলি দেখে ভেজা মনে না হলেও ওজনে ভারী হয়ে যাবে। অনেক উন্নত মানের ডায়াপারে তো আবার ওয়েটনেস ইনডিকেটর থাকে;

বাচ্চার বয়স পাঁচদিন হয়ে গেলে সারাদিনে ৫-৬ টি ন্যাপি ভিজিয়ে ফেলবে সে। বাচ্চা যে যথেষ্ট খাবার খাচ্ছে এবং তা হজম করে ইউরিন হোক বা পটির মাধ্যমে বর্জ্য পদার্থ বার করছে; এটাও কিন্তু তারই একটা সিগন্যাল।

#6. লক্ষ্য রাখুন পটিতেও: ৫ দিন বয়স হতে হতে ওর পটিও হলুদ রঙের একটু বীজের মতো দানাদার প্রকৃতির হয়ে যাবে। সারাদিনে ৩-৪ বার পটি করতে শুরু করবে ৪/৫ দিন বয়স হয়ে গেলেই। বাচ্চা যে ঠিকঠাক দুধ টানতে শিখে গেছে, এটাও তার বড় একখানি প্রমাণ। (How Do You Know if Your Baby is Getting Enough Colostrum)

 

আরও পড়ুন: বড়দের পরামর্শে দুধ বাড়াতে অনেক কিছুই তো খাচ্ছেন। এই রেসিপিগুলো ট্রাই করেছেন কি?

 

#7. চনমনে ছোট্ট সোনা: যখন জেগে থাকবে; তখন হাত-পা ছুঁড়ে বা চোখ পিটপিটিয়েই আনন্দে থাকবে খুদে। আমরা যেমন পেট ভরা থাকলে, ভালো করে খেতে পেলে বেশ আনন্দে, ভালো মুডে থাকি; একদম সেইরকম। খাওয়াদাওয়া ভালো মতো হলে শরীরের বাকি অঙ্গগুলোও বেশ চনমনে থাকবে, আনন্দে থাকবে শিশুটিও।

#8. বাড়বে তরতরিয়ে: যখন ডাক্তারবাবুর কাছে নিয়ে যাবেন, উনি বলে দেবেন আপনার বাচ্চা ঠিকভাবে পেট ভরে খাচ্ছে কি না! শুধু ওজন না, যে বয়সে যে কাজটা করা দরকার ঠিকঠিক করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেবে খুদে। তা সে বিছানায় উল্টে যাওয়াই হোক বা মায়ের হার ধরে টেনে একগাদা আবোল-তাবোল বকা। বেড়ে ওঠার মাইলস্টোনগুলো দিব্যি পেরিয়ে যাবে সময়মতো (How to Tell If Baby is Swallowing Breast Milk)।

#9. ব্যথা পাবে না মা: স্তন্যপান শিশুর জন্য যতটা আনন্দের, মায়ের জন্যও ততটাই আরামদায়ক। বাচ্চা যদি ঠিকমতো ল্যাচ করতে না পারে বা দুধ ওর মুখে না যায়; তা হলেই কিন্তু দুধ খাওয়ানোর সময় মায়ের নিপলে ব্যথা হবে বা খুদে নিপলে কামড় বসাবে। তাই, বাচ্চাকে সঠিকভাবে দুধ খাওয়াতে হলে ল্যাচিং-এর পজিশন ঠিক আছে কি না; সেটা দেখে নেওয়া প্রয়োজন।

#10. নরম হবে স্তন: বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর ঠিক পরে পরে মায়ের স্তন হাল্কা মনে হবে; নরম হয়ে আসবে। নিপল থাকবে আগের মতোই। বাচ্চা ঠিকভাবে ল্যাচ করতে পারলে নিপল ফ্ল্যাট হওয়া, সাদাটে হয়ে যাওয়া বা দুমড়ে যাওয়া; এই ধরনের ঘটনা ঘটে না। এর অর্থ; বুকে যে পরিমাণ দুধ তৈরি হচ্ছে; সেটা বাচ্চার পেটে যাচ্ছে। বাচ্চার পেটও ভরছে। বাচ্চা খিদের সময় পেট ভরে খেতে পাচ্ছে বলেই খিদে পেলেই আবার মায়ের দিকে তাকিয়ে ‘হাঁ’ করে দুধ খাওয়ার আবদার জানাচ্ছে। (How to Measure How Much Breast Milk Baby is Getting)

 

বাচ্চাকে দিনে কতবার ব্রেস্ট মিল্ক খাওয়াবেন? (How Much Breast Milk Does a Baby Need?)

কোনও বাচ্চা খিদে পেলে খায়, কেউ বা আবার সারাটাদিনই খাই-খাই করে নেহাতই মজা পেয়ে। জন্মের প্রথম ১-২ দিন এত ঘুম পায় ওর যে, ওকে উঠিয়ে উঠিয়েই খাওয়াতে হয় মা’কে। কিন্তু তারপরে, মোটামুটি দিনে কতবার খেলে বাচ্চার পেট ভরা থাকে, তার একটা ধারণা ছকে দিচ্ছি। ব্যতিক্রম কিন্তু হতেই পারে।

  • ১-৭ সপ্তাহ: সারাদিনে প্রত্যেক ২-৩ ঘণ্টা অন্তর, প্রায় ৮-১২ বার।
  • ২-৫ মাস: প্রত্যেক ২.৫-৩.৫ ঘণ্টা অন্তর সারাদিনে ৭-৯ বার।
  • ৬ মাসের পরে: ৫-৬ ঘণ্টা অন্তর সারাদিনে ৪-৫ বার।

 

বাচ্চাকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাওয়াচ্ছেন কি? (How To Tell If You’re Overfeeding Baby)

হ্যাঁ, এটাও সম্ভব যদি আপনি বোতলে ব্রেস্ট মিল্ক বার করে নিয়ে খাওয়ান বা ফর্মুলা খাওয়ান। বাচ্চা যখন সরাসরি মায়ের কাছ থেকে মায়ের দুধ খায়; তখন ও নিজের ইচ্ছেমতো কখনও কম বা কখনও বেশি খায়। কিন্তু বোতলে নিয়ে খাওয়ালে সেটা হয় না। বাচ্চা হয়তো একটু গলা ভেজাতে চায়; কিন্তু বোতলের নিপলে দুধ আসার বেগ এতই দ্রুত হয় যে খুদে তার সাথে তাল মেলাতে না পেরে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি দুধ খেয়ে ফেলে।
এটা নিয়ে বিভ্রান্তি এড়াতে বাচ্চার যতটা প্রয়োজন ততটাই দুধ বোতলে রাখুন। একটা সাধারণ মাপ বলে দিলাম এখানে, যাতে মোটামুটি একটা আন্দাজ হয়। বাচ্চাকে জোর করে খাওয়াবেন না। প্রয়োজনে ওর চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

  • এক মাস বয়সের কম বাচ্চারা বোতল থেকে সাধারণত ২ ১/২-৩ আউন্স ব্রেস্ট মিল্ক খায়; সারাদিনে ৮ বার খেলে যা দাঁড়ায় ২০-২৪ আউন্সের মধ্যে।
  • ৬ মাস বয়সের মাপকাঠি ছুঁয়ে ফেলা পর্যন্ত বাচ্চা সারাদিনে ২৪-৩০ আউন্স দুধ খাবে সারাদিনে। ৬-৮ বারে ভাগ করে। এরপর সলিড খাওয়া শুরু করলে বুকের দুধ খাওয়া একটু কমিয়ে দেবে বাচ্চা।

বাচ্চাকে নিয়ে আনন্দে থাকুন। অযথা প্যানিক করে নিজে ভয় পাবেন না। আর বাচ্চার প্রশ্নে একদম নিশ্চিন্ত থাকতে চান? প্রত্যেক সপ্তাহে ওর ওজন মাপিয়ে নিন প্রথম পাঁচ মাস, পরামর্শ নিন চিকিৎসকেরও।

 

আরও পড়ুন: সময় বিশেষে ব্রেস্ট মিল্ক ও ফর্মুলার যুগলবন্দীতেই বাচ্চার সম্পূর্ণ পুষ্টি

 

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

 

null

null