যদিও শিশুর জন্য মায়ের দুধের থেকে ভালো কিছুই হয় না, তাও অনেক পরিস্থিতিতেই বাচ্চাকে ফর্মুলা খাওয়াতে হয় বুকের দুধের বিকল্প হিসেবে। একজন সুস্থ মা তার বাচ্চার ৬ মাস বয়স না হওয়া পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধই খাওয়াবে, সেটাই উচিত এবং সঠিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু, পরিস্থিতি বা শারীরিক অবস্থা যেহেতু সবার সমান হয় না, তাই কিছু ক্ষেত্রে এর পরিবর্তন হতে পারে বই কি!
ডেলিভারির পর যদি মা বেশ অসুস্থ থাকেন, বুকে পর্যাপ্ত দুধ তৈরি না হয় বা শিশু মায়ের দুধ খেতে না চায়, এরকম অনেক পরিস্থিতিতেই বাচ্চাকে খাওয়ানোর জন্য বিকল্প হিসেবে ফর্মুলার ওপরই ভরসা করতে হয়। (Mayer Dudher Srestho Bikolpo Formula milk. Baby Formula: A healthy Substitute for Breast Milk)
বাচ্চার ফর্মুলা মায়ের দুধের অনুকরণে শিশুর খাদ্যোপযোগী করে তৈরি করা হয়। দুধ বা সয়, ভুট্টা বা ব্রাউন রাইস সিরাপ, ভেজিটেবিল অয়েল, প্রয়োজনীয় কেমিক্যাল এবং শিশুর পুষ্টিতে অনিবার্য কিছু মিনারেলস এবং ভিটামিনের মিশ্রণে তৈরি করা হয় এই বেবি ফর্মুলা। বেশিরভাগ উন্নত সয় ফর্মুলায় একেবারেই কোলেস্টেরল থাকে না এবং বেবি ফর্মুলাতে স্যাচুরেটেড ফ্যাটও কম থাকে।
বাচ্চার খাবার জন্য কিছু অরগানিক ফর্মুলাও পাওয়া যায়। এই অরগানিক ফর্মুলাগুলি যে সমস্ত উপাদান ব্যবহার করে তৈরি হয়, তাদের ওপর কোনও ভাবেই হরমোনাল ওষুধ বা কীটনাশক পদার্থ ব্যবহার করা হয় না। পাউডার, কনসেনট্রেটেড আর ‘রেডি টু ইট’; বাজারে এই তিন প্রকারে বেবি ফর্মুলা বিক্রি হয়ে থাকে।
কনসেনট্রেটেড ফর্মুলায় জল মিশিয়ে বাচ্চাকে খাওয়াতে হয়। খাওয়ার জন্য একেবারে তৈরি ‘রেডি টু ইট’ ফর্মুলা বেশ দামি হয়। ফর্মুলার এই তিন প্রকারের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সাশ্রয়ী হল পাউডার ফর্মুলা। এই পাউডার ফর্মুলায় জল মিশিয়ে বাচ্চাকে খাওয়াতে হয়।
এই ফর্মুলাগুলিতে প্রধান উপাদান হিসেবে বিশেষভাবে প্রসেস করা গোরুর দুধ থাকে। গোরুর দুধে প্রোটিন হিসেবে যে কেসিন থাকে, তা মায়ের দুধে উপস্থিত কেসিনের পরিমাণের প্রায় দশ গুণ বেশি। সাধারণ গোরুর দুধ তাই শিশু হজম করতে পারে না। শিশুর খাদ্যোপযোগী করার জন্য ফর্মুলায় ব্যবহৃত প্রোটিনকে ভেঙে দেওয়া হয়। এছাড়াও ফর্মুলায় শিশুর উপকারী ভিটামিন, মিনারেলস এবং খনিজ থাকে।
গোরুর দুধ থেকে প্রধানত দুই ধরনের বেবি ফর্মুলা তৈরি করা হয়। First-stage formula; যা এক বছর বয়সের কম বাচ্চার কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয় এবং এটা প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণে ভরপুর হলেও সহজপাচ্য হয়। আর, Second-stage formula; এই ফর্মুলায় ক্যালোরি ও ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকে।
মায়ের দুধ ও গোরুর দুধের ফর্মুলা, দুই ক্ষেত্রেই শিশু পর্যাপ্ত ল্যাকটোজ পায়। এই ল্যাকটোজ শিশুর শরীরে ক্যালসিয়ামের শোষণ ক্ষমতা বাড়ায়, শক্তি বাড়ায় ও শিশুর আভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এখন উন্নত আধুনিক ফর্মুলাগুলিতে DHA (docosahexaenoic acid) এবং ARA (arachidonic acid) থাকে। এই উপাদানগুলি মায়ের দুধেও বর্তমান এবং শিশুর মস্তিষ্ক, চোখ এবং স্নায়ুর বিকাশে সাহায্য করে।
বেশিরভাগ বাচ্চারই এই গরুর দুধের ফর্মুলা খেতে কোনও অসুবিধা হয় না। কিন্তু যদি বাচ্চা ল্যাকটোজ সহ্য করতে না পারে, তা হলে তাকে ল্যাকটোজ ছাড়া ফর্মুলা খাওয়ানো উচিত।
যেসব বাচ্চা গোরুর দুধের ফর্মুলা খেতে পারে না বা ল্যাকটোজ সহ্য করতে পারে না, সয় মিল্ক ফর্মুলা তাদের জন্য অন্যতম বিকল্প বলা যায়। তবে, সয় মিল্কের স্বাদ বাচ্চারা সবসময় পছন্দ নাও করতে পারে। সয় মিল্ক ফর্মুলা, সয় প্রোটিনের সাথে ভেজিটেবিল অয়েল এবং সুক্রোজ বা ভুট্টার সিরাপ মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এই উপাদানগুলি শিশুর বাড়ন্ত শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেট জোগান দিতে পারে।
আরও পড়ুন: আঠারো মাস হতেই মায়ের দুধ খাওয়ার ইতি!
যেসব বাচ্চারা ওপরের দুটি ফর্মুলার কোনও টাই খেতে পারে না বা হজম করতে পারে না, তাদের জন্য হাইড্রোলাইজ ফর্মুলা পাওয়া যায়। গোরুর দুধে যেসব প্রোটিন থাকে, সেসব প্রোটিন হাইড্রোলাইজ করে amino acids-এ ভেঙে দিয়ে শিশুর হজমের উপযোগী করে তোলা হয়। এই বেবি ফর্মুলা অন্য ফর্মুলাগুলির থেকে তুলনামূলক বেশি দামি হয়। অন্য ফর্মুলাগুলির মতো মিষ্টি খেতে হয় না বলে, বাচ্চারা অনেক সময় এই ফর্মুলা খেতে চায় না।
বাচ্চা যদি অসুস্থ থাকে এবং তার পুষ্টির জন্য কিছু বিশেষ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে, তখন ডাক্তাররা বাচ্চাকে মেটাবলিক ফর্মুলা খাওয়াতে বলেন।
ফিডার ব্যবহারের নিয়ম
আরও পড়ুন: স্তন্যপান না করিয়ে কীভাবে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন, তারই কিছু উপায় বাতলে দিলাম আমরা
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null