সামান্য ধৈর্য থাকলেই বাচ্চার চোখের যত্ন নেওয়া যায়। জেনে নিন দরকারি টিপস!

সামান্য ধৈর্য থাকলেই বাচ্চার চোখের যত্ন নেওয়া যায়। জেনে নিন দরকারি টিপস!

আমাদের জীবনে চোখের মূল্য যে কী বা কতখানি, তা কি কারও বলার অপেক্ষা রাখে? ঝলমলে পৃথিবীর রঙগুলো আমাদের চোখের আয়নাতেই নিজেদের ঠিকানা খোঁজে। তাই, এই ইন্দ্রিয়টিকে মানুষের জীবনের সারথি বললে ভুল কিছু বলা হয়তো হয় না। অত্যন্ত নরম, কোমল এই চোখের পরিচর্যার প্রয়োজন কিন্তু জন্মের পর থেকেই। বাচ্চা অবস্থা থেকে যদি এই চোখের সঠিক যত্ন ও পরিচর্যা করা যায়, তা হলে ভবিষ্যতে চোখ সংক্রান্ত কোনও গভীর সমস্যায় পড়তে হয় না। কী ভাবছেন, বাচ্চার চোখের মতো একটা স্পর্শকাতর ইন্দ্রিয়ের যত্ন করাও নিশ্চয় কোনও হাতি- ঘোড়া, বিশাল ব্যাপার হবে! একেবারেই তা নয়। সামান্য ধৈর্য থাকলেই বাচ্চার চোখের যত্ন নেওয়া যায়। শুধু প্রয়োজন বিষয়টি সম্পর্কে একটু সাধারণ জ্ঞান আর সতর্ক মানসিকতা। (How to care for your baby’s eyes in Bengali)

বাচ্চার চোখ কীভাবে পরিষ্কার করবেন? (How should you clean your baby’s eyes?)

আমরা যেমন রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে , স্নান করার সময় বা দিনের যে কোনও সময়ে চোখে ভালো করে জলের ঝাপটা দিয়ে চোখ পরিষ্কার করি; আপনার সদ্যজাত সোনামণি বা বাড়ন্ত দস্যিটা কিন্তু সেটা করতে পারে না। তাই বাচ্চার চোখ পরিষ্কার করার কাজটা আপনাকেই করে দিতে হবে।

  • মা হয়েছেন, কিছু ত্যাগ স্বীকার তো করতেই হবে; তাই না? বাচ্চা একটু বড় না হওয়া পর্যন্ত আপনার হাতের আঙুলের সুন্দর লম্বা নখগুলো কেটে ছোট করে রাখুন। বাচ্চার চোখ-মুখ পরিষ্কার করার সময়, বাচ্চা নড়াচড়া করলে অসাবধানে বাচ্চার লেগে যেতে পারে।
  • বাচ্চারা একটুতেই ইনফেকশন বা এলার্জির খপ্পরে পড়ে যায়। তাই বাচ্চার চোখ পরিষ্কার করার আগে নিজের দুই হাত খুব ভালো করে পরিষ্কার করে নিন। জীবাণুনাশক কোনও ভালো তরল সাবান দিয়ে নিজের হাত পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন।
  • পরিষ্কার বাটিতে কুসুম গরম জল নিন, এবং জলে পরিষ্কার তুলো ডুবিয়ে জল নিংড়ে নিয়ে বাচ্চার চোখের কোণা, চোখের চারিপাশ ভালো করে আস্তে আস্তে মুছিয়ে দিন। একই বাটির জল এবং তুলো দিয়ে দুই চোখ মোছাবেন না। দুটি চোখের জন্য আলাদা বাটিতে জল ও তুলো নিন। মোছানো হয়ে গেলে জল ও তুলো ফেলে দিন। কখনওই বাচ্চার চোখ ঘষবেন না এবং চোখের ভিতর পরিষ্কার করতে যাবেন না। বাইরে থেকে যতটা সম্ভব আস্তে আস্তে তুলো দিয়ে মুছিয়ে দিন। অনেক কারণে বাচ্চার চোখে পিচুটি হতে পারে,খুব সাবধানে বেশি চাপ না দিয়ে এই পদ্ধতিতেই পরিষ্কার করুন। বাচ্চা যদি চোখ পরিষ্কার করার সময় খুব ছটফট করে, তাকে ছেড়ে দিন। বাচ্চা শান্ত অবস্থায় থাকলে আবার পরিষ্কার করুন।
  • বাচ্চার চোখে ঠান্ডা লেগে বা কোনও ইনফেকশন হয়ে জল পড়লে বা বেশি পিচুটি হলে দিনে ২-৩ বার চোখ পরিষ্কার করে দিন। এতে চোখ তাড়াতাড়ি সেরে উঠতে পারে।
  • সাধারণত বাচ্চা জন্মের প্রায় একমাস পরে, কাঁদার সময় চোখ থেকে জল ফেলে। জন্মের পরেই বাচ্চার অশ্রুগ্রন্থি থেকে জল বের হয় না। কমপক্ষে ৩ সপ্তাহ বা এক মাস বয়স হলেই বাচ্চা চোখের জল ফেলে কাঁদতে পারে। অনেক সময় এই অশ্রুগ্রন্থিতে ব্লক হয়ে যায় ও হলুদ রঙের পিচুটি জাতীয় জিনিস জমে যায়। বাচ্চার চোখের ভিতরের কোণার অংশে, অর্থাৎ যে দিকটা নাকের দিকে থাকে; সেদিকে চোখের নীচে আলতো করে চাপ দিয়ে নীচ থেকে উপর দিকে ম্যাসাজ করে দিন। কখনওই চোখের ভিতরে হাত দেবেন না। দিনে বেশ কয়েকবারই এটা করতে পারেন তবে সবসময় হাত পরিষ্কার করে নেবেন।এক মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও যদি বাচ্চা চোখের জল না ফেলেই কান্নাকাটি করতে থাকে, ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
  • বাচ্চা যদি একটু বড় হয়ে গিয়েছে আর নিজের কাজ দিব্যি নিজেই করে নিচ্ছে, তাকে চোখে জলের ঝাপটা দিতে শেখান। ক্লান্ত লাগলে, বাইরে থেকে এসে, সকাল ও রাত্রে যেন অবশ্যই সে চোখ পরিষ্কার করে, সেই সুঅভ্যাস করিয়ে দিন।

কোন কোন ক্ষেত্রে সাবধান থাকবেন (Be cautious regarding any of these issues)

  • নিয়মিত চোখ পরিষ্কার করলেও বা যথেষ্ট সতর্কতা নিলেও যদি বাচ্চার চোখ লাল হয়ে যায়, ক্রমাগত জল পড়ে, বাচ্চা বারবার চোখ চুলকাতে চায়, তা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ডাক্তার যেরকম বলবেন সেভাবে চোখ পরিষ্কার করে ওষুধ দিন। নিজে নিজে কখনওই কোনও ওষুধ দেবেন না।
  • বাচ্চা যদি বেশির ভাগ সময় কোনও কিছু দেখতে হলে ঝুঁকে যায় বা কাছে আসতে চায়, এক চোখ চাপা দিয়ে আর এক চোখে দেখতে চেষ্টা করে, মাঝেমাঝেই হামা দিতে গিয়ে বা হাঁটতে গিয়ে পড়ে যায়, চোখ কাঁপে, আলোর দিকে তাকাতে না চায়, তা হলে দেরি না করে ডাক্তার দেখান।
  • বাবা মায়ের যদি হাই পাওয়ারের চশমা থাকে, তা হলে কোনও অসুবিধা না হলেও ৩ বছরের পর থেকে বাচ্চাকে নিয়মিত ভাবে চোখের ডাক্তার দেখান।
  • আপনার ৪-৮ বছরের ছোট্ট সোনার চোখে যদি পাওয়ার এসে যায় এবং ডাক্তার ওকে চশমা পরতে বলেছে, তা হলে ওকে চশমাই পরতে দিন। কন্ট্যাক্ট লেন্স দেবেন না, খবরদার। একটা নির্দিষ্ট বয়সের পরই কন্ট্যাক্ট লেন্স দিতে পারেন, তাও ডাক্তার অনুমতি দিলে। ২-৩ জোড়া চশমা বানিয়ে রেখে দিন। ছোট্ট দস্যি খেলতে গিয়ে বা ফেলে দিয়ে যখন তখন চশমা ভেঙে ফেলতেই পারে।

চোখের সমস্যা হওয়া এড়াতে যা করতে পারেন (What can you do to prevent eye problems?)

  • প্রেগন্যান্ট অবস্থায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার খান।
  • বাচ্চার টিকার মাধ্যমে নিয়ম করে ওকে ভিটামিন-এ টিকা দেওয়ান।
  • বাচ্চাকে প্রচুর শাকসবজি খাওয়ার অভ্যেস করান। হলুদ ও কমলা রঙের সবজি বা ফলে প্রচুর ভিটামিন-এ থাকে।
  • বাচ্চার ডায়রিয়া হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে জিঙ্ক এবং ভিটামিন-এ ওষুধ খাওয়ান।

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null