সব মা-বাবারই একটাই চাওয়া, সন্তান যেন তাঁদের হৃষ্টপুষ্ট হয়!
কিন্তু জন্মানোর পর যদি দেখা যায়, বাচ্চাটি ততটাও গোলগাল নয়, তখনই চিন্তায় ঘুম ছোটে তাঁদের। সন্তানের গায়ে যাতে একটু মাংস লাগে সেই আশাতেই কখনও ছোটেন ডাক্তারের কাছে, কখনও কাজে লাগান ঘরোয়া টোটকা। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ততটাও কাজে আসে না, কেননা কোনও ডাক্তারই বাচ্চাকে মোটা করার পরামর্শ দেন না। বাচ্চাকে আপনা আপনিই বড় হতে দেওয়ার পক্ষপাতী তাঁরা। সন্তানের প্রতি স্নেহ থেকেই সে কথাটা অনেক ক্ষেত্রেই তেমন মনে ধরে না বাবা-মায়ের। বাচ্চাকে গোলগাল করার চিন্তা থেকেই এবার শুর হয় বেশি করে, জোর করে খাবার খাওয়ানোর পালা। একই কারণে বাজার চলতি নানারকম দুধ খাওয়ানোর তোড়জোড়ও হঠাৎ বেড়ে যায়!
কিন্তু এটা অত্যন্ত খারাপ। বাচ্চার স্বাস্থ্য আরও ভালো করার জন্য মায়েরা এমন অনেক কিছুই করে থাকেন, যা কখনও কাম্য নয়। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। আপনি কি জানেন, অহেতুক মোটা হলে বাচ্চাদের মধ্যে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে ? বয়ঃসন্ধির সময় যদি বাচ্চা যদি ওভারওয়েট থাকে, তা হলে হার্টের সমস্য়াও হতে পারে তার!
তাই বলি, দেখে নিন ঠিক কী কী করলে ক্ষতি হতে পারে ওর। (Are you overfeeding your child? Be cautious.).
অনেকেরই ধারণা ঘি খাওয়ালে নাকি সন্তানের ওজন ঠিক ভাবে বাড়বে। এক চামচ ঘি হজম করতে শিশুর অনেক সময় লাগে। আর বাচ্চার সব খাবারে ঘি থাকা মানে বাচ্চা সেই খাবার দ্রুত হজম করতে পারে না এবং এর ফলে খিদেও কমে যায়। অতএব খুব বেশি ঘি দেওয়া খাবারদাবার বাচ্চাকে না দেওয়াই ভালো।
বাচ্চাকে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট আর স্টার্চ খাওয়ালে ওজন সহজে বৃদ্ধি হয়, কিন্তু অত্যাধিক কার্বোহাইড্রেট আর স্টার্চ থেকে হতে পারে কনস্টিপেশন, পেট ফাঁপা এবং পেট ব্যথা। শিশুকে কোনও ধরনের খাবারই অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ানো উচিত নয়। মাখন, চিজ, ভাত ইত্যাদি বাচ্চাকে খাওয়াতেই পারেন কিন্তু কম পরিমাণে।
বাচ্চাকে ঘরে ভাজা খাবারদাবার খাওয়ানো মানেই তার ওজন বাড়বে। ফলে অনেকেই সেদ্ধ বা রোস্টেড খাবার দাবারের বদলে বাচ্চাদের সবকিছুই ভেজে খাওয়াতে চেষ্টা করেন যাতে বাচ্চার ওজন বাড়ে। কিন্তু এর ফলে শিশুর হজমে সমস্যা, পেট ভার, অম্বল ইত্যাদির সমস্যা হতে থাকে।
বাচ্চাদের বেশি করে খাওয়াতে চান বা জোর করে খাওয়াতে চান? ভাবেন, বাচ্চারা নিজেদের খাবারের পরিমাণ বোঝে না! অসুবিধা হল এতে উল্টোটাই হয়। জোর করে খাওয়াতে গিয়ে বাচ্চারা শরীরের প্রয়োজন এবং খিদে নিজেরাই বুঝতে পারে না। তাই খাবার গিলতে শুরু করে। জোর করে খাওয়ালে কোনও দিন ওজন বাড়ে না, তাই শিশুর খিদে বুঝে ওর প্রয়োজনমতো খাওয়ান। আবার অনেকেই আছেন যাঁরা মনে করেন, বাচ্চাদের জন্য দুধ অপরিহার্য (milk as essential supplement) । দুধ
অপরিহার্য ঠিক, তবে এটাও মনে রাখতে হবে দুধ কিন্তু খাবারের পরিপূরক নয়। দুধ শুধুই খাবারের পুষ্টিগুণ বাড়িয়ে দেয়। বেশি দুধ খাওয়ালে সেটা বাচ্চার খিদেই উল্টে নষ্ট করে দেয়। তাই যতটা দরকার, ততটা দুধই দিন।
মায়েরা অনেক সময়ই তাদের সন্তানকে জাঙ্ক ফুড খাইয়ে দেন। বাচ্চারা একরকম খাবার দীর্ঘদিন খেতে চায় না, তাই খিদে মেটাতে আর ওজন বাড়াতে তাকে বাজার থেকে কেনা খাবারই খাওয়াতে থাকেন অনেকে। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না যে জাঙ্ক ফুডে থাকে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম, বিভিন্ন প্রিজারভেটিভ আর ক্ষতিকারক অনেক কিছু, যেগুলো আপনার শিশুর স্বাস্থ্য আর স্নায়ুতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকারক।
সব শেষে এটাই তাই বলছি, যদি চান সন্তান সুস্থ থাকুক। তা হলে তার ওজন, গড়ন নিয়ে এতটা চিন্তাভাবনা করা বন্ধ করুন। ওকে সুষম, পুষ্টিকর খাবার দিন। প্রিজারভেটিভ দেওয়া খাবার এড়িয়ে চলুন। যতটা সম্ভব, বাড়িতে তৈরি খাবারই দেওয়ার চেষ্টা করুন ওকে। এতে ওর শরীর ভালো থাকবে। আর সুস্থও থাকবে সে। যতক্ষণ আপনার শিশুর স্বাভাবিক কাজকর্মে কোনও গোলমাল নজরে না পড়ে, ততক্ষণ তার ওজন নিয়ে অকারণ চিন্তিত হবেন না। যারা ভাবেন মোটাসোটা বাচ্চা মানেই সুস্থ, সেটা কোনও ভাবেই ঠিক নয়। নাই বা হলো, গোলগাল, নাই বা নাদুসনুদুস। বাচ্চা মানেই তো মিষ্টি, বাচ্চা মানেই তো প্রাণের চেয়েও বেশি আদরের! (Are you overfeeding your child? Be cautious)
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null