একটি মেয়ে যখন প্রথম গর্ভবতী হয়, তার চারপাশে যেন রাজ্যের উপদেশ ডানা মেলে অবাধে বিচরণ করতে শুরু করে। পরিবার-পরিজন, আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষীর দল এমনকি মাঝে মাঝে অজানা অচেনা মানুষও তাদের মতামত শুনিয়ে যান হবু মাকে। অবশ্যই তারা প্রত্যেকে হবু মা ও সন্তানের মঙ্গলকামনা করেন। কিন্তু একজন মায়েরও সমস্ত কিছু নিয়ে চোখ-কান খোলা রাখা অবশ্যই প্রয়োজন। কখনই কোনও উপদেশ যাচাই না করে যেমন মেনে নেওয়া উচিত না, আবার অন্যদিকে সেগুলো একেবারেই না মানা যুক্তিযুক্ত নয়। যেমন, গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়া নিয়ে প্রচুর দ্বিমত রয়েছে। হবু মা যেন আনারস একেবারেই না খান, সে ব্যাপারে সজাগ থাকেন বাড়ির সদস্যরা। আবার বর্তমান চিকিৎসা শাস্ত্র এর সাথে পুরো একমত নয়। হবু মায়ের কি সত্যিই আনারস খাওয়া উচিত নয়? কী বলছে বিজ্ঞান আর কী বলছে বয়োজ্যেষ্ঠদের অভিজ্ঞতা? (Is it safe to eat pineapples during pregnancy in Bengali)
রস টুসটুসে আনারস খেতে কার না ভালো লাগে বলুন তো? আর সন্তান গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন এই ধরনের টকমিষ্টি খাবারই মায়েদের বেশি পছন্দ হয়। কিন্তু বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠরা আনারস খেতে সবসময় বারণ করেন। বিশেষ করে, গর্ভধারণের প্রথম ৩-৪ মাস তো একেবারেই না। আনারসের মতো সুস্বাদু একটা ফলকে কেন আসামীর কাঠগড়ায় তুলে দেওয়া হয় জানেন ?
আনারসে ব্রোমিলিন নামের এক ধরনের এনজাইম বা উৎসেচক থাকে। এই ব্রোমিলিন শরীরে প্রোটিন ভেঙ্গে দিয়ে অস্বাভাবিক রক্তপাত ঘটাতে পারে। যে সমস্ত ওষুধে ব্রোমিলিন উপাদানটি থাকে, সেই সব ওষুধ ডাক্তাররা কোনও হবু মা কে খেতে বলেন না। বলা হয়, গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে আনারস খেলে এই ব্রোমিলিনের প্রভাবে গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগে প্রসব বেদনা ওঠার ক্ষেত্রেও দায়ী হয় ব্রোমিলিন। যদিও এই উপাদানটি আনারসের যে শাঁসালো অংশ আমরা খেয়ে থাকি ,তাতে খুবই অল্প পরিমাণে থাকে।
বিজ্ঞান এবং চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী, আনারস সম্বন্ধে এই ধারণা একেবারেই যুক্তিযুক্ত নয়। পরিমিত মাত্রায় আনারস খেলে গর্ভস্থ সন্তানের কোনও ক্ষতি হয় না। অনেকেই বলে থাকেন, যে হবু মা যদি একটা গোটা আনারস একবারে খেয়ে ফেলেন, তা হলে সঙ্গে সঙ্গে প্রসব বেদনা শুরু হয়ে যায়। ডাক্তারদের মত অনুযায়ী, এই ধারণা সঠিক নয়। গর্ভাবস্থায় একবারে যদি কেউ কম করে ৮-১০ টি আনারস খেয়ে নিতে পারেন, তা হলেই তার গর্ভপাত বা সময়ের আগে প্রসব হতে পারে। অল্প পরিমাণে আনারস খেলে মায়ের বা বাচ্চার কোনও ক্ষতি হয় না। আবার অনেক বিশেষজ্ঞ বলেন যে, ১০টি আনারস একবারে খেলেও যে পরিমাণ ব্রোমিলিন মায়ের শরীরে ঢোকে, তা থেকে গর্ভপাত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি মাত্র ৩০%। টক ফল, যেমন আমড়া, কমলা লেবুতেও ব্রোমিলিন থাকে।
সবকিছু শুনে খুব স্বাভাবিক ভাবেই হবু মায়ের মনে দ্বিধা আসবেই। একজন মা তার শিশুকে নিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি চিন্তিত থাকে। বিশেষত, যে মা তার প্রথম সন্তানকে কবে দেখবে, সেই আশায় দিন গুনছে। মায়ের দিক থেকে যেন এতটুকু যত্নের ঘাটতি না হয় বা মায়ের অসাবধানতার কারণে বাচ্চার কোনও ক্ষতি না হয়ে যায়, মায়েরা সারাক্ষণ এই চিন্তাই করেন। আর তাই, কোথাও এতোটুকু নেগেটিভ কথা শুনলে সেটাই মনে গেঁথে যায়। বাচ্চাকে নিয়ে ঝুঁকি নেওয়ার স্পর্ধা যে কোনও মায়েরই আসে না। অহেতুক সবার কথা শুনে ভয় পাবেন না।
আপনার শরীর এবং আপনার বাচ্চার স্বাস্থ্য সবথেকে ভালো বোঝেন ডাক্তার। গর্ভাবস্থায় যদি আপনার আনারস খেতে ইচ্ছে হয়, ডাক্তারকে অবশ্যই জিজ্ঞেস করুন, ওনার অনুমতি নিন। পরিমিত মাত্রায় আনারস খেলে যদি আপনার শারীরিক কোনও অসুবিধা না হয়, অবশ্যই আনারস খাবেন। ডাক্তারের কাছে জেনে নিন, ঠিক কতটা পরিমাণ আনারস খেলে আপনার বা বাচ্চার কোনও ক্ষতি হবে না। আর একান্তই যদি নিজের মনকে বোঝাতে পারছেন না বা ভয় লাগছে, তা হলে কয়েকটা মাস না হয় আনারস খাবেন না। শুধু আনারস না, ভয় নিয়ে বা সন্দেহ নিয়ে কোনও খাবার খাবেন না, এতে শরীরের ক্ষতিই হয়।
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null