কী কী খাওয়ালে এই মরসুমেও ভালো রাখতে পারবেন আপনার পুচকুকে?

কী কী খাওয়ালে এই মরসুমেও ভালো রাখতে পারবেন আপনার পুচকুকে?

মাত্র কয়েকদিন আগে হইহই করে গুড্ডুসোনার প্রথম জন্মদিনের অনুষ্ঠান হয়ে গেল। অনুষ্ঠানের পরে পরেই পামেলা আর বিশাল তাদের ছোট্ট সোনাকে নিয়ে পুরী বেড়াতে গিয়েছে। কিন্তু পুরী গিয়েই গুড্ডুর শরীর খারাপ! বেড়াতে বেরিয়ে অধিকাংশ সময় ঝিমিয়ে রয়েছে। খাওয়ার সময় শুধু কেঁদেই চলেছে, সহজে কিছুই খেতে চাইছে না। পামেলার কপালে রীতিমতো চিন্তার ভাঁজ। চতুর্থ দিন তো কোনারক থেকে ফেরার পথেই গুড্ডুর পেটের গণ্ডগোল শুরু হয়ে গেল। লুজ মোশন থামতেই চায় না! এই ঘটনার দিন রাতের ফ্লাইটেই তিনজন কলকাতা ফিরে এলো। গুড্ডুর ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করে কথা বলার পর স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো পামেলা আর বিশাল। কী হয়েছিল গুড্ডুর? ডাক্তারবাবুর কথায়, পুরীর প্রচণ্ড গরমে ওর ছোট্ট শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়েছিল‌। ওর ডায়েট চার্টে এই ক’দিন লিকুইডের পরিমাণ খুব কম থাকায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। সেই কারণেই এত মারাত্মক রকমের পেটের গণ্ডগোল হয়েছে। (Summer special lunches for kids in Bengali, Garame shishuke ki khaoyaben, Garame shishur khabardabar, Summer special lunches for kids in Bangla.Amazing Summer Foods for Kids to Keep Them Energetic in Bengali.)

গুড্ডুর একার এমন শরীর খারাপ হচ্ছে তা অবশ্য নয়। গরমের থাবায় ওর মতো অনেক বাচ্চাই এমন কাহিল হয়ে পড়ছে। এর প্রধান কারণ হল গরমের কারণে শরীরে জল কমে যাওয়া। একরত্তি শিশু তো বোঝে না, তার শরীরে কতটা জল প্রয়োজন! মাকেই খেয়াল রাখতে হয় শিশুর শরীরের। তাই গরমে বাচ্চার ডায়েট চার্ট নতুন করে তৈরি করুন। বাচ্চাকে খাওয়ানো খাবারে যদি জলের ভাগ ঠিক থাকে তবে প্রচন্ড গরমেও বাচ্চার শরীর সুস্থ থাকবে। এমনিতে গরমকালে দিনের মধ্যে দুপুরবেলায় তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে। সেই কারণে দুপুরে ডিহাইড্রেশন (dehydration) হওয়ার বা শরীরে জল কমে যাওয়ার আশঙ্কাও বেশি। তাই সবার আগে ভাবতে হবে বাচ্চার লাঞ্চের মেনু নিয়েই, কোন কোন খাবার দুপুরের প্রচণ্ড গরমেও ছোট্ট শরীরকে হাইড্রেটেড রাখবে।

 

গরমে বাচ্চার খাবার-দাবার (Amazing Summer Foods for Kids to Keep Them Energetic)

সদ্য মা হওয়ার পর রান্নাঘরে ঢুকলে প্রিয় সোনামণির কথাই প্রথম মনে আসে। কোন খাবার খেলে ওর সমস্যা হবে, কোন খাবার খেলে পুষ্টি হবে— এ সবই মনে‌ ঘুরপাক খায়। এর মধ্যে গরমে যদি বাচ্চার শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে, তবে মায়েদের দায়িত্ব আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। লাঞ্চে বাচ্চাকে কী খাওয়ালে বাচ্চাকে সুস্থ রাখা যায়, সেটাই ভাবছেন তো? দেখে নেওয়া যাক গরমে দুপুরে বাচ্চার লাঞ্চে কী কী খাবার রাখা উচিত। (Summer special lunches for kids in Bengali, Garame shishuke ki khaoyaben, Garame shishur khabardabar, Summer special lunches for kids in Bangla.)

 

#1. দই ভাত (curd rice): গরমের দুপুরে দই ভাত সলিড খেতে শুরু করা বাচ্চার জন্য দারুণ খাবার। তা বলে শুধু দই আর ভাত নয়, এতে মেশাতে পারেন সবজিও। যেমন গাজর, বিনস্-এর মতো পুষ্টিকর উপাদান।

 

  • হাঁড়ি বা প্রেশার কুকারে এককাপ চাল ভালো করে সিদ্ধ করে ফ্যান গেলে ফেলুন। ভাত ঠান্ডা হতে সময় দিন।

 

  • এর মধ্যে গাজর, বিনস্ ভালো করে ধুয়ে বাইরের স্তরটা ছাড়িয়ে নিন। সেগুলো ছোট ছোট টুকরো করে কেটে প্রেশার কুকারে সিদ্ধ করে নিন।

 

  • ভাত ঠান্ডা হয়ে এলে অল্প দই আর দুধ দিয়ে ভাতটা চটকে নিন।‌ সিদ্ধ করা গাজর, বিনস আলাদা করে চটকে মিশিয়ে দিন দই ভাতে।

 

  • পুরো মিশ্রণটি কিছুক্ষণ রেখে ঠান্ডা করুন। ঠান্ডা হলে বাচ্চাকে খাওয়ান।

 

 

#2. খিচুড়ি (khichdi): চাল আর ডাল দিয়ে বাচ্চার জন্য দুপুরে খিচুড়ি বানাতে পারেন। খিচুড়িতে জলের ভাগ বেশি বলে এটি বাচ্চার দুপুরবেলার আদর্শ খাবার।

 

  • রান্নার আগে গরম জলে চাল আর মুগ ডাল অন্তত ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন‌। চাইলে খিচুড়িতে গাজর, বিনসও দিতে পারেন। এতে খিচুড়ি যেমন রঙিন হবে, তেমন পুষ্টিকরও হবে।

 

  • গাজর আর বিনস ধুয়ে ছোট ছোট করে কেটে নিন। রান্নার জন্য হাঁড়িতে অল্প তেল দিয়ে জিরে ফোড়ন দিন। এরপর কেটে রাখা সবজি হাঁড়িতে দিয়ে অল্পক্ষণ নাড়ুন। পরিমাণ বুঝে হলুদ দিতে পারেন মিশ্রণে (চিকিৎসকের পরামর্শ নিন হলুদ আপনার বাচ্চার বয়স অনুযায়ী ঠিক কি না, তা জানতে)।

 

  • এবার ভিজিয়ে রাখা চাল ও ডাল ঢেলে দিন হাঁড়িতে। অল্পক্ষণ নেড়ে হাঁড়িতে পরিমাণ মতো জল দিন। এবারে ঢাকনা দিয়ে সিদ্ধ হওয়া পর্যন্ত মাঝারি আঁচে ফোটান।

 

  • প্রেশার কুকারে পুরো রান্নাটা করলে তিন চারটি সিটি দিয়ে নিন। এবার ঢাকনা তুলে চামচ দিয়ে খিচুড়ি তুলে নিন বাটিতে।

 

  • বাচ্চাকে খাওয়ানোর আগে পুরোটা চটকে নিতে ভুলবেন না।

 

 

#3. সুস্বাদু ডাল (lentil soup): ডালজাতীয় খাবারে জলের ভাগ বেশি। তাই নানারকম সবজি দিয়ে রাঁধা ডাল বাচ্চার লাঞ্চের জন্য দারুণ মেনু হতে পারে।

 

  • অল্প মুসুর ডাল গরম জলে ভিজিয়ে রাখুন।

 

  • এবার কড়াইয়ে তেল দিয়ে গরম করে নিন। ছোট ছোট করে কাটা সবজি কড়াইতে দিয়ে অল্পক্ষণ নেড়ে নিন। এরপর ভিজিয়ে রাখা মুসুর ডাল আর পরিমাণমত জল কড়াইতে ঢেলে ভালো করে ফোটান।

 

  • ডাল সিদ্ধ হয়ে এলে সবজিগুলো নরম হয়েছে কি না দেখে নামিয়ে নিন। খাওয়ানোর আগে সবজিগুলো ভালো করে চটকে নিন।

 

আরও পড়ুনঃ ছানার স্নানের সময় হোক আরাম আর স্ফূর্তির

 

#4. চটকানো সবজি ও ফল (Smashed vegetables and fruit): জলের ভাগ বেশি এমন সবজি আর ফল দুপুরের খাবারে থাকলে বাচ্চার শরীর সহজে ডিহাইড্রেটেড হবে না। একইসঙ্গে ছোট্ট শরীর পুষ্টিও পাবে।

 

  • গাজর বিনস ইত্যাদি সবজি ছোট ছোট করে কেটে সিদ্ধ করে নিন। সম্পূর্ণ সিদ্ধ হলে আলাদা আলাদা বাটিতে ভালো করে চটকে বাচ্চার লাঞ্চ সাজিয়ে ফেলুন।

 

  • খাওয়ানোর সুবিধার জন্য একই বাটিতে সব সবজি চটকে নিতে পারেন। এতে খাবারের স্বাদ মোটেই কমবে না।

 

 

দুপুরের খাবার চিন্তা মিটল, কিন্তু লাঞ্চের আগে, সকালে, বিকালেও শরীর যাতে হাইড্রেটেড থাকে, সেটা দেখা জরুরি। এই সময়গুলোতে বিভিন্ন ফলের রস  খাইয়ে আপনার একরত্তিকে চাঙ্গা রাখতে পারেন।

 

  • মৌসম্বির রস (lemon juice): মৌসম্বি লেবুর রস ভিটামিন সি-এ সমৃদ্ধ। একইসঙ্গে জলের ভাগ বেশি হওয়ায় লেবু শরীর হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। গরমের সকালে লেবু চিপে রস বের করে, সেটা ছেঁকে তার রস খাওয়ান আপনার একরত্তিকে।

 

  • তরমুজের রস (water melon juice): শরীর হাইড্রেটেড রাখতে তরমুজের জুড়ি মেলা ভার। তাই এই গরমে তরমুজের রস বানিয়ে খাওয়ান আপনার বাচ্চাকে। তরমুজের বীজ ছেঁকে ফেলে দিতে ভুলবেন না যেন।

 

  • আমের শরবত (mango juice): গরমকালে আম না-খেলে যেমন আপনার জীবন বৃথা, তেমনই আপনার ছোট্ট সোনারও। ছোট্ট সোনার বয়স কম বলে, ওকে আম থেকে বঞ্চিত করবেন না। ওকেও তার স্বাদ নিতে দিন। আমেও জলের ভাগ যথেষ্ট বেশি। আমের রস বের করে আঁশগুলো ছেঁকে ফেলে দিন। এই রস খাওয়ান ছোট্ট সোনাকে।

 

একরত্তি শিশুকে প্রচন্ড গরমে কী করে সুস্থ রাখবেন, তা তো জানা গেল। কিন্তু তার খাবার বানানোর আগে

মাথায় রাখুন নীচের কিছু টিপস্, এগুলো একরকম সাবধানতাও বলতে পারেন। (Precautions before cooking for your child):

 

  • মশলা কম (Less spice): বাচ্চা সবেমাত্র সলিড খাবার খেতে শিখেছে। তাই ভাত, ডাল, সবজি সিদ্ধ করে চটকে খাওয়াতে পারেন। এই পর্যন্ত সবই ঠিকঠাক। কিন্তু বাচ্চার খাবারে মশলার ব্য়বহার নিয়ে সতর্ক থাকুন সর্বদা। বিশেষ করে তখন, যখন আপনার বাচ্চার বয়স বারো মাসের আশেপাশে! বাচ্চার খাদ্যতন্ত্র অত্যন্ত সংবেদনশীল বা সেনসিটিভ। খাবারের অতিরিক্ত মশলা বাচ্চার পেটে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।

 

  • পুষ্টিকর খাবার (nutritious food): গরমে বাচ্চার খাবারে জলের ভাগ বেশি থাকা দরকার। তা বলে পুষ্টির সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করলে চলবে না। জলের সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চার যতটা পুষ্টি দরকার, পুরোটাই তাকে দিতে হবে‌। তাই গরমে ছোট্ট শরীর হাইড্রেটেড রাখবে, এমন খাবার যেমন বাছতে হবে, তেমনই নজর থাকুক খাবারের পুষ্টিগুণের দিকেও।

 

  • চিনি আর নুন বাদ (no sugar and salt): অনেক শিশু বিশেষজ্ঞ বা পেডিয়াট্রিশিয়ানরা বলেন, এক বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চার খাবারে চিনি বা নুন কোনওটাই দেওয়া উচিত নয়। তাই আপনার বাচ্চার রান্নায় চিনি বা নুন দেবেন কি না তা জিজ্ঞেস করে নিন বাচ্চার চিকিৎসককে।

 

  • বাচ্চার প্রতিক্রিয়া দেখুন (see baby’s reaction): গরমে শরীর সুস্থ রাখে এমন রান্না রেঁধেছেন। কিন্তু বাচ্চাকে প্রথমে অল্প পরিমাণে খাওয়ান। দেখুন সে খাবারটা পছন্দ করছে কি না। পছন্দ না হলে জোরাজুরি করে না খাওয়ানোই ভালো।

 

  • অ্যালার্জি (allergy): নতুন খাবারের কোনও উপকরণ থেকে বাচ্চার অ্যালার্জি  হতেই পারে। খাওয়ানোর সময় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। পরের বার রান্নার সময় সেই উপকরণ রান্নায় রাখবেন না ।

 

  • বেশি নয় (not too much): গরমে বাচ্চার শরীরের জল প্রয়োজন। তবে তার পরিমাণ নির্দিষ্ট। বাচ্চার বয়স ও ওজন অনুযায়ী তার পরিমাণ একেকরকম হয়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন প্রতিদিন কতটা জলীয় খাবার খাওয়ানো উচিত।

 

  • স্টেরিলাইজ করুন (sterilize cooking instruments): প্রেশার কুকার বা হাঁড়ি যাতেই রাঁধুন না কেন, বাচ্চার খাওয়ার জন্য সবকিছুই গরম জলে ফুটিয়ে ভালো করে স্টেরিলাইজ করে নিন। নয়তো ইনফেকশনের সম্ভাবনা থেকে যায়।

 

গরমে ডিহাইড্রেশন মারাত্মক সমস্যা ঘটাতে পারে। যেখানে শক্তসমর্থ প্রাপ্তবয়স্করা ডিহাইড্রেশনে কাবু হয়ে পড়ে, সেখানে ও তো ছোট্ট একরত্তি। বমি থেকে ডায়ারিয়া কোনও কিছুই বাদ যায় না ডিহাইড্রেশনে। বাচ্চা যদি এখনও স্তন্যপান করে তবে এর পাশাপাশি জলীয় খাবারই ডিহাইড্রেশনের হাত থেকে বাঁচাতে পারে ওকে। এরপর মায়ের হাতের রান্নার গুণ তো আছেই!

 

আরও পড়ুনঃ নবজাতকের পরিচর্যায় কিছু টিপস, যা আমরা খেয়াল করি না!

 

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null