জন্মের পর প্রথম ছ’টা মাস বাচ্চার সার্বিক পুষ্টির জন্য মায়ের দুধই যথেষ্ট। কিন্তু একবারটি মুখে ভাত হয়ে যাওয়ার পর শুধু মায়ের দুধ বা ফরমুলা দুধে পেট আর ভরতেই চায় না ওর, শরীরও পায় না যথেষ্ট পুষ্টি। তখনই ধীরে ধীরে সলিড খাবারে অভ্যস্ত করতে হয় ছোট্ট ছানাকে। আর এই কাজটা কিন্তু মোটেই সোজা নয়। দুধ খেয়েই যার বড় হওয়া, আজব স্বাদের হরেক খাবারের প্রতি তার ঝোঁক তৈরি করাটাই মায়ের কাছে বড় চ্য়ালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। তারই সঙ্গে মনে তৈরি হয় নানান প্রশ্ন। শুরুর দিকে সলিড হিসেবে কী-ই বা খাওয়ানো যায় বাচ্চাকে? কেমনই বা হবে সেটা তৈরি করার পদ্ধতি? তা থেকে কতটাই বা পুষ্টি পাবে শিশু? (9 Alternative Options Of Cerelac)
এমতাবস্থায় ঝামেলা এড়াতে অনেকেই হাত ধরেন সেরেলাকের। (Bachader Khabar Recipe) কেনার চেয়ে অনেক মা-ই পছন্দ করেন ঘরেই বানিয়ে নিতে। এই যেমন আমি বানিয়েছিলাম ক’দিন আগে। শেয়ার করলাম তার রেসিপিও-> ঘরোয়া পদ্ধতির সেরেল্যাক রেসিপি
কিন্তু তাতেও যদি মন না ভরে ছানার? (Pustikor Khabar Ki Ki) একঘেয়ে স্বাদে মেজাজ বিগড়ে যায় তার? কুছ পরোয়া নেই বন্ধু! এই প্রতিবেদনে আপনার সেই সমস্যারই সুস্বাদু সমাধান দেব আমরা। এমন কিছু রেসিপির হদিস দেব, সেরেলাকের বদলি হিসেবে যেগুলো বানিয়ে কামাল আপনি দেখাতেই পারেন। রেসিপির ঢিলে পুষ্টি পাবে ছানা, পেট ভরবে ওর, আর মন ভরবে আপনার! (‘Cerelac’ Alternatives that You Can Make at Home)
সেরেলাকের বদলি ৯টি মজার খাবার, বানিয়ে ফেলুন বাড়িতেই (9 ‘Cerelac’ Alternatives that You Can Make at Home )
#1. সেদ্ধ করা চটকানো সবজি
এক চিমটে দারুচিনি গুঁড়ো আর অল্প মাখন মিশিয়ে এই পদটা খাওয়াতেই পারেন আপনার ছানাকে। হরেক সবজির মিশেলে সঠিক পুষ্টি পাবে একরত্তি, সেই সাথে দুপুর বেলায় পেটটাও ঠেসে ভরবে ওর। সবজি বাছাইয়ে মন খুঁতখুঁত করলে তারও হদিস দিচ্ছি আমরা। নিতে পারেন রাঙা আলু, স্কোয়াশ, বিনস, আলু, গাজর। ভালো করে ধুয়ে, খোসা ছাড়িয়ে এগুলোকে প্রথমে সেদ্ধ করে নিন। (Easy And Delicious Alternative Options Of Cerelac) তারপর ব্লেন্ডারে পেস্ট করে থকথকে মিশ্রণ বানিয়ে ফেলুন। চামচে করে বাচ্চাকে খাওয়ান দুপুরের দিকে। মাস ছয়েকের বাচ্চার জন্য ৩-৪ চা-চামচ-ই যথেষ্ট। পেট ভরবে এতেই, মনের খিদে মেটাতে মায়ের দুধ তো আছেই।
#2. ওটসের জাউ
পুষ্টিগুণের দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে বোধহয় সব্বার প্রিয় ওটস-ই! ওটস একাধারে শিশুর শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে, সাথে সাথে ওর হজম-ক্ষমতারও বিকাশ ঘটায়। (Baby Recipes) জলে ফুটিয়ে প্রথমে ওটমিল বানিয়ে ফেলুন। থকথকে এই মিশ্রণটার সাথেই এবার দুধ মিলিয়ে আপনার বাচ্চাকে খাওয়ান। দেখে নেবেন, দলা যাতে পাকিয়ে না থাকে। আরও একটা পরামর্শ, চেষ্টা করুন গ্লুটেন ফ্রি ওটস কেনার। (Baby Food) আরও বিশদে জানতে হলে চোখ বুলিয়ে নিন সঙ্গের ছবিতে। মনে রাখুন, যদি ফরমুলা মেলান তো সেটা গরম করা বা ফোটানোর প্রশ্ন নেই!
#3. ডালিয়ার ঘ্যাঁট
জানি না আপনারা কী নামে ডাকেন একে। (Baby Food Recipes) আপনার সুবিধাতেই বলে নিই, যাহাই ডালিয়া, তাহাই ভাঙা গম! পেট ভরা, এনার্জিতে ঠাসা, হজমে সহায়ক এই খাবার তাই অবশ্য থাকুন আপনার বাচ্চার খাদ্য তালিকায়।
নোনতা চাইলে সবজি মিলিয়ে খিচুড়ি করুন, পুঁচকে মিঠে স্বাদের ভক্ত হলে ক্ষীর বানান। মোটামুটি মাস দশেক বয়স হলে ডালিয়ার পদগুলি বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন আপনি। কিছু পদ বানানোর আগে শুকনো তাওয়ায়, অল্প আঁচে অবশ্যই ডালিয়া রোস্ট করে নিন। (Homemade Baby Food) রোস্ট করার সময় ঘী-ও মেলাতে পারেন! নরম, মজাদার আরও রেসিপি চান? হদিস রইল এখানে-> মুখে ভাত হলো সারা, এবার তবে সলিড খাবার শুরুর পালা!
#4. হরেক স্বাদের হরেক খিচুড়ি
চাল-ডালের এই মিশ্রণই জাদুর মতো কাজ করতে পারে আপনার বাচ্চার পুষ্টিতে। (6 Month Baby Food) চেষ্টা করুন মুগ ডাল নিতে। এতে আপনার বাচ্চার ওজনও বাড়বে খুব তাড়াতাড়ি। স্বাদ বাড়াতে, দেখতে আরও মজাদার করতে মেলাতে পারেন হরেক সবজিও। দুপুরের খাবার হিসেবে এই পদটাই অনবদ্য বলে আমার মত। পুঁচকে যদি ১০ মাসের নীচে হয়, তবে খিচুড়ি বানিয়ে ব্লেন্ডারে পেস্ট করে চামচে করে খাওয়ান। (One Year Baby Food) থকথকে মিশ্রণটি চেটেপুটে খাবে ও!
হরেক খিচুড়ির রেসিপি থাকল এখানে>ছোট্ট ছানার জন্য সহজ-স্বাস্থ্যকর ১০ ধারার খিচুড়ির রেসিপি!
#5. ফল মেলানো দই
৬ মাস থেকেই দই থাকুক শিশুর পাতে। (Healthy Baby Food) এই প্রোবায়োটিক খাবারটাই ওর হজম প্রক্রিয়া আরও সহজ করে দেবে। চেষ্টা করুন বাচ্চাকে ঘরে পাতা দই দিতে। দইকেই আরও আকর্ষণীয়, সুস্বাদু করতে সেটাকে ফলের দই মানে ফ্লেভারড দই বানিয়ে ফেলতে পারেন। স্ট্রবেরী, ব্লু-বেরী, আমের মতো ফল দারুণ যায় দইয়ের সাথে। (Baby Food Chart)
#6. রাগির জাউ
এই এক-মুঠো রাগিতেই আপনা একসাথে পেয়ে যাবেন প্রোটিন, ক্য়ালসিয়াম, আয়রন সব কিছু। দুধ থেকে সলিড খাবারে পা দেওয়ার পথে তাই রাগি-ই হতে পারে সবচেয়ে সেরা খাবার। (1 Year Old Baby Food) রাতভর রাগি ভিজিয়ে রাখুন, সকালে উঠে প্লেটে ছড়িয়ে পরিষ্কার-সুতির কাপড় দিয়ে চাপা দিয়ে রেখে দিন। এরপর খোলা জায়গায় রাগি শুকিয়ে নিতে হবে, খটখটে হলে ব্লেন্ডারে দিয়ে গুঁড়ো করতে হবে। বাচ্চাকে খাওয়াবেন যখন, দু-চামচে রাগি-গুঁড়োর সাথে দুকাপ জল মিশিয়ে নিন তখন। মিনিট দশেক ফুটতে দিন। (Baby Food Recipes 8 Months) থকথকে হলে কুসুম গরম অবস্থায় বাচ্চাকে খাওয়ান। ডিটেল রেসিপি থাকল ছবিতে,
,
#7. চাল-ডাল-রাগি-গমের খিচুড়ি
মেলান্তি এই পদটা বানানোর একটাই শর্ত। (Puree Baby Food) সমস্ত উপকরণ হতে হবে সম পরিমাণের। ১০০ গ্রাম চাল যদি নেন, বাকি সব উপকরণও ১০০ গ্রাম করেই নিতে হবে। ফুটো বাটিতে সমস্ত উপকরণ নিয়ে কচলে ধুয়ে নিন। এবার কাগজ বিছিয়ে শুকতো দিন। ৪-৫ ঘণ্টা লাগবে পুরোটা শুকিয়ে যেতে। খটখটে হলে ব্লেন্ডারে সব দিয়ে মিহি পাউডার বানিয়ে নিন। এয়ারটাইট কন্টেনারে এই পাউডারটি সংরক্ষণ করতে পারেন আপনি। বাচ্চাকে খাওয়ানোর সময় দুই চামচে পাউডার নিন, তার সাথে তিন কাপ জল মেলান। ভালো করে ফেটিয়ে মিশ্রণটি এবার অল্প আঁচে গ্যাসে বসান। (8 Month Baby Food) দেখবেন, ধীরে ধীরে থকথকে হয়ে যাচ্ছে খাবারটা। যতক্ষণ না আপনার মন-মতো ঘনত্ব আসছে, নাড়তে থাকুন। খেয়াল রাখুন, যাতে একটু পাউডারও দলা না পাকিয়ে থাকে। হলফ করে বলতে পারি, রেসিপিটা দিব্য মনে ধরবে দস্যি ছানার!
#8. রাঙা আলু-চিড়ের জাউ
দুধ ছাড়িয়ে সলিড শুরুর পালায় রাঙা-আলুও কিন্তু পিছিয়ে নেই মোটেই। (Baby Food Recipes 9 Months) মায়েদের এক নম্বর পছন্দও এটাই। ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ রাঙা আলুই বাচ্চার রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। কীভাবে বানাবেন? রেসিপি খুবই সহজ। চিড়ে ধুয়ে খানিক ভিজিয়ে রাখুন প্রথমে। নরম হতে দিন। এবার প্রেসার কুকারে ৩-৪টে সিটি দিয়ে সেদ্ধ করে নিন রাঙা আলু। স্বাদ বাড়াতে গলানো গুড় দিতে পারেন। নরম চিড়ের সাথে এই মিশ্রণ মিলিয়ে এবার মিনিট পাঁচেক রান্না করে নিলেই কেল্লাফতে। (Baby Health Food) আরও একটা মজার পদ আছে; রেসিপি থাকল সঙ্গের ছবিতে!
#9. সয়া আর গমের জাউ
সয়বিনে আছে ফাইবার, প্রোটিন আর ভুরি ভুরি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। সেই সাথে এই সয়বিনই হলো ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের অন্যতম উৎসও। তাই বলি, আপনি বা আপনার ছানা যদি মাছ-প্রেমী না হয়, তা হলেও ক্ষতি নেই কোনও। (Substitute of Cerelac for 10-12 Months Baby) আপনাদের শরীরে মাছের গুণাবলীর জোগান দিতে পারে সয়বিনও। জাউ বানাতে হলে সয়হিন আর গম আলাদা আলাদা করে শুকনো খোলায় প্রথমে ভেজে নিতে হবে আপনাকে। এবার ব্লেন্ডারে ঘুরিয়ে এর পাউডার বানিয়ে নিন। এই পাউডারটাই এয়ার-টাইট কৌটোয় রাখতে পারেন আপনি। (Baby Food)
বাচ্চাকে খাওয়ানোর সময় ১ টেবিল-চামচ গুঁড়োয় খানিক গরম জল মিলিয়ে নিন। (7 Month Baby Food) এর সাথে মেলাতে পারেন যে কোনও ফলেন পিউরি বা চটকানো কলাও। ভালো করে ঘেঁটে খাইয়ে দিন বাচ্চাকে। মোটামুটি মাস আষ্টেকের বাচ্চাকে এই জাউ খাওয়াতে পারেন। (9 Alternative Options Of Cerelac)। আরও রেসিপি থাকল এখানে-> ছোট্ট বাচ্চার খাবার-দাবার; (আট-বারো মাস)
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null