সত্যি বাবা, নতুন মায়েদের কাছে প্রত্যেকটা দিন যেন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে শুরু হয়। এক তো ওই একরত্তি পুতুলের মতো প্রাণের কান্না-হাসির ভাষা বোঝার চেষ্টা, অন্যদিকে নিজের শরীরকে সুস্থ করে তোলা। আবার এসবের মাঝেই হঠাৎ করে সব কিছু নিয়ে যেন বিদ্রোহে নেমে পড়ে ওই পুঁচকেটা। সারা রাত জেগে থাকবো, কিছুতেই ঘুমোবো না, মায়ের দুধ খাবো না, কিছু হলেই কাঁদতে শুরু করবো, এরকম কত যে পরিকল্পনা থাকে তার, আপনি বুঝতেও পারেন না। ফলস্বরূপ, সময় বিশেষে বাচ্চার সাথে সাথে আপনারও ইচ্ছে হয় চিৎকার করে কাঁদতে। কিন্তু, মেয়েরা তো সহনশীলতার প্রতিমূর্তি। কাজেই, অস্থির হলে কি চলে? সদ্য মায়েরা প্রায়শই চিন্তিত হয়ে পড়েন বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো নিয়ে। অনেক বাচ্চাই কিন্তু মায়ের বুকের দুধ প্রথমে টানতে চায় না বা অনেক ক্ষেত্রে মায়েদেরও সময় ধরে বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো সম্ভব হয় না। স্তন্যপান না করিয়ে কীভাবে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন, তারই কিছু উপায় বাতলে দিতে পারি আমরা। দেখে নিন এক নজরে। (Alternate methods to feed mother’s milk or breastmilk)
• বাচ্চা কিছুতেই বুকের দুধ টানতে চাইছে না।
• মায়ের নিপলে র্যাশ হয়েছে বা ফুলে গিয়ে ব্যথার জন্য সরাসরি স্তন্যপান করাতে পারছে না।
• কর্মরতা মা অফিসে যাওয়ার জন্য সময় ধরে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারছে না।
• পাবলিক প্লেসে মা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে স্বচ্ছন্দ নয়।
বাচ্চাকে ফিডিং বোতলে দুধ খাওয়ানো সম্ভবত সবচেয়ে সোজা ও পুরানো পদ্ধতি। প্যাকেটের দুধ বাচ্চা এই বোতলেই খেয়ে থাকে। আবার মায়ের বুকের দুধও বোতলে করে বাচ্চাকে খাওয়ানো যায়। এখন অনেক নামী দামি কোম্পানির ব্রেস্ট পাম্প কিনতে পাওয়া যায়। এই ব্রেস্ট পাম্প ব্যবহার করে আপনি বুকের দুধ সংগ্রহ করে রাখতে পারেন। দুধ বার করে নেওয়ার পরে সাধারণ প্লাস্টিকের বোতলে এই দুধ না রাখাই ভালো। চেষ্টা করুন কাঁচের বোতলে বা ফুড গ্রেড যুক্ত বোতলে বুকের দুধ সংরক্ষণ করে রাখতে। এই দুধ ৪-৮ ঘণ্টা পর্যন্ত যে কোনও সময় ফিডিং বোতলে ঢেলে বাচ্চাকে খাওয়ানো যায়। আর ফ্রিজে রাখতে চাইলে দুধ বার করে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ফ্রিজে ঢুকিয়ে দিন। এতে ৩-৪ দিন বাচ্চা ওই দুধ খেতে পারবে। মনে রাখবেন, দুধ ফ্রিজের নীচের দিকে জায়গায় রাখবেন এবং কখনও গরম করবেন না। বাচ্চাকে খাওয়াতে হলে কিছুক্ষণ আগে থেকে বাইরে রেখে দিন। ঘরের তাপমাত্রায় এলে বাচ্চাকে খাওয়ান।
যেসব বাচ্চারা কোনও কারণবশত বুকের দুধ টানতে পারছে না, তাদের চামচে করেও দুধ খাওয়ানো যেতে পারে। চামচে করে অল্প অল্প দুধ বাচ্চার মুখের কাছে ধরলে, বাচ্চা সেটা নিজের সুবিধামতো খেতে পারে। যে সমস্ত বাচ্চারা জন্মের সময় কোনও অসুস্থতার কারণে বা কোনও ওষুধ প্রয়োগের কারণে ঝিমিয়ে থাকে, তারা কোলোস্ট্রাম অর্থাৎ প্রসবের পরপরই যে গাঢ় হলুদ রঙের দুধ বেরোয়, সেটা খেতে পারে না। এই সময় চামচে করে তাদের এই দুধ খাওয়ানো সম্ভব।
বাচ্চাদের কাপ ফিডিং-এর মাধ্যমে বুকের দুধ খাওয়ানো খুবই নিরাপদ এবং ভালো উপায়। অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন কাপটি জীবাণুমুক্ত ও পরিষ্কার থাকে। সদ্যজাত বাচ্চাদের কাপ ফিডিং করালে, তারা জিভ ওপর নীচে করে প্রয়োজনমতো দুধ খেতে পারে এবং নিজেদের সুবিধামতো শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, যে সমস্ত বাচ্চা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই জন্ম নেয়, তাদের জন্য এই কাপ ফিডিং খুব কার্যকরী হয়। এর মাধ্যমে তারা মায়ের দুধের গন্ধ ও স্বাদের সাথে পরিচিত হয় এবং কোনও অসুবিধা ছাড়াই কিছুদিনের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে স্তন্যপান করতে পারে। একেবারেই ছোট বাচ্চার ক্ষেত্রে কাপের আকার ছোট হয় এবং একটু বড় বাচ্চার ক্ষেত্রে কাপ বড় হয়ে থাকে।
কাপ ফিডিং-এর মতোই, ঝিমিয়ে থাকা সদ্যজাতকে আঙুলে করে দুধ তুলে খাওয়ালে, সে মায়ের দুধের স্বাদ ও গন্ধের সাথে পরিচিত হয় এবং স্তন্যপানে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
মনে রাখবেন, বাচ্চাকে খাওয়ানোর সময় ধৈর্য ধরে খাওয়ান। ৬ মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধই বাচ্চার জন্য সবথেকে ভালো। বাচ্চা বুকের দুধ খেতে অনীহা প্রকাশ করলে দুঃখ পাবেন না বা অস্থির হবেন না; এতে হিতে বিপরীত হবে। বাচ্চাকে সরাসরি স্তন্যপান এবং অন্য কোনও উপায়ে বুকের দুধ খাওয়ানো, দুই ভাবেই অভ্যস্ত করার চেষ্টা করুন। এতে আপনি বাইরে গেলে বাচ্চার কোনও অসুবিধেও হবে না আবার একটা নির্দিষ্ট সময়ে সে মায়ের সাথে স্কিন টু স্কিন টাচের মাধ্যমে আদরও খাবে মনের সুখে।
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null