একজন মা তার বাচ্চার জন্য সবসময় এমন কিছুই খোঁজে, যা তার জন্য পুরোপুরি নিরাপদ এবং কার্যকরী হয়। একদিকে যেমন ছোট্ট শিশুর শারীরিক কষ্ট বা কান্না সে দেখতে পারে না, অন্যদিকে খুব বেশি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়াতেও তার ভয় হয়। যখন একটি বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন সে খিটখিটে এবং খামখেয়ালী হয়ে যায়। আর এই সময়ই মায়েরা প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন আর অস্থির হয়ে পড়ে এমন কিছু উপায় খুঁজতে, যা তার শিশুকে একটু আরাম দেবে। এইরকম পরিস্থিতিতে, মায়েরা সাধারণত ডাক্তারের কাছেই দৌড়ে যায়, যিনি বাচ্চার শরীরে হওয়া ইনফেকশন বা অসুস্থতা কাটাতে কিছু অ্যান্টিবায়টিক ওষুধ খাওয়াতে বলেন। আবার কেউ কেউ এই পরিস্থিতিতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার ব্যাপারেও ভাবেন। (Is Homeopathy Safe for Babies?)
যদিও অ্যান্টিবায়টিক ওষুধ খুব তাড়াতাড়ি কাজ করে এবং বাচ্চাকে আরাম দেয়, কিন্তু দীর্ঘদিনের ব্যবহারে এর অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। খুব বেশি অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং শরীরের স্বাভাবিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দিতে পারে। সেজন্য, বিকল্প হিসেবে প্রাকৃতিক পদ্ধতি বেছে নেওয়াই বেশি ভালো বলা যায় । যদি আপনি জানেন যে, বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে আপনার বাচ্চার কিছু ইনফেকশন বা অ্য়ালার্জি যেমন সর্দি, জ্বর হয়, সেক্ষেত্রে আপনার আগে থেকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কিছু মায়েরা এটাও জানতে চায় যে, তারা বাচ্চাকে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ দিতে পারে কি না।এই হোমিওপ্যাথি পদ্ধতি ২০০ বছরেরও আগে জার্মানিতে আবিষ্কৃত হলেও এখনও অনেক মায়েরা বাচ্চাদের শরীরের ক্ষেত্রে এর গুণমান এবং নিরাপত্তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
হোমিওপ্যাথি ওষুধের নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা ডাঃ নেহা হিমাংশু স্মার্ট (হোমিওপ্যাথি বিশেষজ্ঞ) –এর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ওনার মতে,
“ অনেক মানুষ এখনও এই ওষুধের ব্যবহার সম্বন্ধে জানেন না। হোমিওপ্যাথি, ওষুধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে অন্যতম নিরাপদ পদ্ধতি।এর কারণ হল, এর কাজ করার নীতি; ‘বিষে বিষে বিষক্ষয়’। ধরুন, একজন ডায়রিয়া রোগীর ক্ষেত্রে এমন একটা হোমিওপ্যাথি ওষুধ কাজ করবে যার জন্য ডায়রিয়া হতে পারে।এটা ওই চিরাচরিত চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে পড়ে না, যার নীতি, ‘বিপরীত প্রভাব বা বিদ্বেষ নীতি’। ”
ডাঃ নেহা বলছেন, “ আমরা জানি যে সাধারণ সর্দিকাশি , নাক বন্ধ, পেট খারাপ এবং কোষ্ঠকাঠিন্য এসব ক্ষেত্রে প্রায়শই হোমিওপ্যাথিক ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু যখন বাচ্চা মায়ের দুধ হজম করতে পারছে না, বা দাঁত ওঠার সময় বাচ্চা ঠিক মত খাচ্ছে না, এসব ক্ষেত্রেও হোমিওপ্যাথিক ওষুধ খুব ভালো কাজ করে। বাচ্চার দাঁত ওঠার সময় ব্যথা কম করতে এবং বাচ্চাকে আরাম দিতে কাল্কেরিয়া ফস 6x (Calcarea phos 6x) সবথেকে জনপ্রিয় ওষুধ।” Is homeopathy safe for babies?
হোমিওপ্যাথি শুধু রোগকেই সারায় না, এটা একজন রোগীর রোগ সংক্রান্ত সব উপসর্গগুলোরও চিকিৎসা করে এবং সমস্ত ওষুধ গাছপালা এবং খনিজ পদার্থ থেকে বানানো হয়ে থাকে। ওষুধ দেওয়ার আগে একজন হোমিওপ্যাথ অনেক কিছু যাচাই করে তবেই ওষুধ দিয়ে থাকেন। যেমন, রোগীর খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা, প্রত্যেকদিনের নিয়ম, পুরনো অসুস্থতা, ঘুমনোর সময় এবং আবেগ সংক্রান্ত তথ্য। হোমিওপ্যাথি কড়া নয় অথচ ভীষণ কার্যকরী একটি চিকিৎসা পদ্ধতি এবং যদি যথাযথ প্রয়োগ হয়, তা হলে সদ্যজাত বাচ্চা এবং শিশুরা এতে খুবই লাভবান হয়।
খনিজ পদার্থ এবং গাছপালা থেকে তৈরি হওয়ায় এবং যথেষ্ট মিশ্রণ হিসেবে থাকার কারণে, কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।
অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের মতো কড়া এবং শক্তিশালী না হওয়ার জন্য এটা লিভার বা পেটের কোনও ক্ষতি করে না।
যেহেতু হোমিওপ্যাথরা একজনের শরীরে সমস্ত উপসর্গকে বিচার করে ওষুধ দেন, ফলস্বরূপ এটা বাচ্চার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
গাছপালা এবং খনিজ থেকে তৈরি হওয়ার কারণে সদ্যজাত বাচ্চা এবং শিশুদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ।
শুধু ঠান্ডা এবং অন্ধকার জায়গায় রেখে দিন। এই ওষুধ ভালো রাখতে আপনাকে কোনও পরিশ্রম করতে হবেনা বা রেফ্রিজারেটরও ব্য়বহার করতে হবে না।
যেহেতু কোনও রাসায়নিক বা মাদক থাকে না, এই ওষুধগুলো কাউকে এর উপর আসক্ত করে দেয় না। যেমন, অনেক অ্যালোপ্যাথি ওষুধ, বিশেষত কাশির সিরাপের উপর অনেকে আসক্ত হয়ে পড়ে।
বাচ্চারা সাধারণ অ্যালোপ্যাথি বা অ্যান্টিবায়টিক ওষুধের স্বাদ পছন্দ করে না। হোমিওপ্যাথিক ওষুধের মিষ্টি বড়ি তারা সহজেই খেয়ে নেয়।
হোমিওপ্যাথি আপনার বাচ্চার জন্য খুবই উপকারী হতে পারে। আপনার বাচ্চার জন্য কেন হোমিওপ্যাথি বেছে নেওয়া উচিত, তার কয়েকটি কারণ হলঃ
হোমিওপ্যাথি ও অ্যালোপ্যাথির পার্থক্যঃ
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সঙ্গে সঙ্গে আরাম পেলেও সেটা স্থায়ী হয় না। অতএব, বহু বছর আগে গান্ধীজীও যেমন বলে গিয়েছেন, “ যে কোনও চিকিৎসা পদ্ধতির তুলনায় হোমিওপ্যাথি অনেক শতাংশে বেশি সফল।অর্থনৈতিক সামর্থ্য এবং অহিংসভাবে রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি আধুনিক এবং নির্ভেজাল পদ্ধতি।” এই কথা আজকের দিনেও সত্যি। Is homeopathy safe for babies?
বিঃদ্রঃ – হোমিওপ্যাথি কাজ করতে সময় নেয়, সেজন্য আগে এবিষয়ে আপনার শিশুর চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।যদি, আপনার বাচ্চার শরীর খুব খারাপ হয়, তা হলে একজন পেডিয়াট্রিশনের সাহায্য নেওয়াই যুক্তিযুক্ত।
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null